চিত্র সৌজন্য: সত্রাগ্নি।
আজ মহাষ্টমী
মহাষ্টমীর সকালে শিবানী এল বসুন্ধরা ভিলায়। মা শুভ্রা মেয়ে ঈশানীকে সঙ্গে নিয়ে। সুরঙ্গমার আমন্ত্রণ উপেক্ষা করতে পারেনি শিবানী। বসুন্ধরা ভিলা থেকে গাড়ি গিয়েছিল ওদের আনতে। খুব স্বাভাবিকভাবেই সেদিন ছোটকা ধারেকাছে ছিল না। শিবানী সেন গুণী শিল্পী। একজন সফল মঞ্চ-অভিনেত্রী। সুরঙ্গমা ওর নাটক দেখে মুগ্ধ। বসুন্ধরা ভিলার পুজোতে একদিন আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে এসেছিল। বাড়ির লোকজন এটাই জানল। শুধু অমলকান্তি জানতেন সবটা। এখানে পুজোতে এত সিকিউরিটির কড়াকড়ি, তাই বাড়ির স্পেশ্যাল স্টিকার লাগানো গাড়ি দিয়েই ওদের আনা হয়েছে।
—মানছি আপনাদের বনেদি রীতি। কিন্তু শুধু মার জন্য দিলেই তো হতো।
—আমরা যে এটা প্রত্যেক অতিথিকেই দি ভাই! আলাদা করে তো কিছু করিনি।
সকালে অঞ্জলি দেওয়ার পর অল্প ফল মিষ্টি খাইয়ে বসুন্ধরা ভিলার গাড়ি শিবানীদের বাবুবাগানের বাড়িতে ছেড়ে এলো। ঠাকুরের ভোগ দেবার পর অতিথিদের ভোগ পরিবেশন হবে। শিবানী দুপুরের শো আছে। তাকে আটকে রাখা যাবে না।
গাড়িতে ওঠার সময় শিবানী, সুরঙ্গমার দুটো হাত ধরে বলেছিল।
—আপনার মতো মানুষকে বাড়িতে ডাকার স্পর্ধা আমাদের নেই। আমার ছোটবেলায় সিনেমা হলে গিয়ে বাবা-মা’র সঙ্গে আপনার মাল্যদান সিনেমাটা আমি প্রথম দেখেছিলাম। মা এখানে আপনাকে দেখার পর আমায় আস্তে আস্তে সেই কথাটাই বলছিল। মা আরও বলছিল, এরমধ্যে কবে যেন একটা রবিবার টিভিতে আপনার প্রথম ছবি রবীন্দ্রনাথের শুভাও দেখিয়েছে। আমি দেখতে পারিনি। শো ছিল। আমাদের পরিবারে সবার কাছে আপনি এখনও সেলিব্রিটি।
দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং..., ২য় খণ্ড, পর্ব-৩৯: আধুনিক সধবারা শঙ্খ ও উলুধ্বনি দিতে তত পটু নয়
শারদীয়ার গল্প-১: পুরুষোত্তম/৪
এতটা লেখার পর সুবর্ণ থমকে গেল। আগে একটানা বেশিক্ষণ লিখতে পারতো না। লিখতে লিখতে এখন অভ্যাস হয়ে গেছে। অনেকটা লেখার পর মন চাইলে থামে। না হলে গড়গড়িয়ে লেখার টানে বয়ে যেতে থাকে। ল্যাপটপের মনিটর স্ক্রিনটা হাতের টানে কিবোর্ডের সঙ্গে মিশিয়ে দিল। আবার খুললে যেখানে বন্ধ করেছিল সেখান থেকে চালু। মানুষের মন কিন্তু এমন নয়। যন্ত্রের মতো এত সহজে অন অফ হতে পারে না। সময় লাগে। সুবর্ণ লেখার মাঝে মাঝে একটা দুটো লাইন নিয়ে ভাবতে থাকে। সেটা থেকে যে পরবর্তী অংশটা তৈরি হবে সেরকম কোনো নিশ্চয়তা নেই। লেখার মধ্যে থেকেই একটা ভাবনা তাকে নতুন করে ভাবতে সাহায্য করে। হয়তো অন্য কোথাও অন্য কোনওখানে এই ভাবনাটা সে ব্যবহার করবে আবার না করতেও পারে।
মাকে সুবর্ণ একবার জিজ্ঞেস করেছিল।
—আচ্ছা মা তুমি তো একটা সময় সেলিব্রেটি ছিলে। তখন রাস্তায় ঘাটে মলে পাড়ায় পাড়ায় এখনকার তোমাদের দেখা যেত না তাই আকর্ষণটা অনেক বেশি ছিল। অনেক বেশি মানুষ তোমাদের দেখতে ছুটতো। কেমন লাগতো তোমার? এনজয় করতে? নাকি বিরক্ত লাগতো।
পরিযায়ী মন, পর্ব-১১: ঘরের কাছে জলমহল—চাঁদনি জলটুঙ্গি
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭২: রবীন্দ্রনাথ প্রয়োজনে কঠোর হতেও পারতেন
—তোমার মা অত বড় সেলিব্রিটি ছিল না সু। মাত্র কয়েকখানা ছবি করেছি। লোকে প্রশংসা করেছে। কাগজে পত্রে লেখালেখি করেছে। কিন্তু যাকে বলে মারকাটারি হিট ছবি – তেমন তো কিছু নয়। আর এখনকার মতো তখন প্রমোশন লঞ্চিং সাকসেস পার্টি এসব ছিল না। আর ছবি করলেও আমাদের বাড়ি অনেকটা সনাতনপন্থী ছিল। আমার মামার বাড়ির দাদু মানে দাদামশাই অল্প কিছুদিনের জন্য চিফ জাস্টিস ছিলেন। বাবাপড়াশোনার জগতের মানুষ। আমার ছবিতে অভিনয় করাটা মোটামুটি একটা অ্যাক্সিডেন্ট বলতে পারো।
—কিন্তু তবু তো লোকে তোমায় চিনতে পারতো সিনেমার পত্র-পত্রিকায় তোমার ছবি বের হতো। কেমন লাগতো তখন।
—খারাপ তো নিশ্চয়ই লাগত না। প্রশংসা কার না ভালো লাগে? তবেআমি কখনো ওপেন ফাংশন টাংশনে যাইনি তো। তাই ফ্যান ফলোইং ব্যাপারটা ঠিকঠাক জানিনা।
—লেখালেখি করি গল্প উপন্যাস ছাপা হয় অল্পস্বল্প বিক্রি হয়। কিন্তু সাহিত্যিক শব্দবন্ধটা বোধহয় এখনও কাঁধে তোলার মতো কলমের জোর বাড়েনি। আসলে শরৎচন্দ্র বঙ্কিমচন্দ্র এঁরা সাহিত্য সৃষ্টি করে গিয়েছেন, তাদের জন্য কথাসাহিত্যিক সাহিত্যসম্রাট শব্দবন্ধগুলো মানানসই। কয়েক লক্ষ মাইল দূরে হলেও একই রাস্তায় হাঁটছি বলে আমার ক্ষেত্রেও সেই সাহিত্যিক শব্দবন্ধটা তাই ঠিক মানায় না।
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৯: সুন্দরবনের জঙ্গল-জননী বিশালাক্ষী
শারদীয়ার গল্প-৩: আঁশ/২
যদি এমন ঘটে। রাস্তায় ঘাটে শুটিং স্পটে তাকে কেউ ফিরে দেখছে না। জোর করে বাজারে দোকানে রাস্তার ফুটপাতে ঘুরে বেড়াচ্ছে তার দিকে চোখ তুলে দেখার কারও সময় নেই। কী হবে সেই মানুষটার মানসিক অবস্থা। এতদিন যার চারদিকে হাজার হাজার উৎসুক মানুষের ভিড় যাকে বিদ্ধ করেছে সে জনতার মধ্যে একজোড়া চোখ খুঁজে বেড়াচ্ছে যে বা যারা তাকে হয়ত লক্ষ্য করছে কিন্তু তেমন একজনকেও পাচ্ছে না। মনে মনে নিজের পিঠ চাপড়ে দিয়ে সুবর্ণকান্তি বলে, ভালো ছবির সাবজেক্ট হতে পারে। বসুন্ধরা ভিলার অনেক ঘটনাই ভীষণ সিনেমাটিক। অবিশ্বাস্য রকমের নাটকীয়।
“ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে’ ঋতুর বিয়েটা এ ভাবেই হল। ঋতু আর আমি সমবয়সী। জন্মমাস ধরে হিসাব করলে বরং আমি মাস দেড়েকের বড়। ঋতু ভালো নাচত। ইউনিভার্সিটির অ্যানুয়াল প্রোগ্রামে রবি ঠাকুরের শ্যামা নৃত্যনাট্যে মূখ্যভুমিকায় ঋতু। কি ভাগ্যি বিয়ের আগের দিন প্রোগ্রাম হয়েছিল। উত্তীয়ের নিঃস্বার্থ প্রেমকে ব্যবহার করেছিল শ্যামা, বজ্রসেনকে পেতে। কিন্তু উত্তীয়ের জীবনদানে প্রাণভিক্ষা পাওয়ার যন্ত্রণা বজ্রসেনকে শান্তি দিল না, শ্যামার প্রেমকে প্রত্যাখান করল বজ্রসেন। বিয়োগান্তক পরিণতি ঘটল শ্যামা বজ্রসেনের প্রেমের। উত্তীয় মৃত্যুর পরেও রয়ে গেল তাদের প্রেমের মাঝে দেওয়াল হয়ে। মা আর আমি গিয়েছিলাম শ্যামা দেখতে। কোনক্রমে আমাদের সঙ্গে দেখা করে শ্যামার পোশাকেই প্রায় বাড়ি ছুটল ঋতু। পরদিন যে কাকভোরে দধিমঙ্গল।—চলবে।