সদর স্ট্রিট, কলকাতা। ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
পরের দুটো দিন ঝড়ের বেগে কেটে গেল। নাচের সিকোয়েন্স বেশ ভালোভাবেই মিটে গেল। ডান্স ডিরেক্টর বললেন—
— বেটি তু আগ লগাদি! মেরা তরফ সে আজ শাম পার্টি হোগি।
বম্বের নামজাদা ডান্স ডিরেক্টর। তিনি প্রশংসা করছেন। শিবানী খুব খুশি। কিন্তু সেদিন তার বাড়ি ফেরার কথা সে কথা ইন্দ্রকে বলতে গিয়ে শিবানী দেখল অন্যদিনের তুলনায় ইন্দ্র একটু যেন অন্যমনস্ক। তার মধ্যে যেন কিছু একটা ঘটছে যেটা সে ভেতরে চেপে রাখার চেষ্টা করছে।
— প্রোডাকশন থেকে কিছু বলেছে কী?
— কী ব্যাপারে?
— পেমেন্ট? বা আর কোনও ডেটস লাগবে কিনা!
— না তো। তবে পেমেন্টের জন্য তো শুটিংয়ের শেষে ডাকবে বোধহয়।
— আমি কথা বলছি।
তারপর থেকে ইন্দ্রকে আর দেখেনি শিবানী। প্রোডাকশন কন্ট্রোলারের অ্যাসিস্ট্যান্ট এসে বলেছিল—
— দিদি হোটেলে আজ সন্ধেবেলায় আপনার পেমেন্ট ক্লিয়ার হয়ে যাবে। আমিই ভাউচার নিয়ে আসবো।
—হোটেলে মানে… কালতো আর আমার শুটিং নেই।
—না আপনার হোটেল বুকিং তো আজ পর্যন্ত আছে। মানে কাল সকালে চেক আউট। হোটেল থেকে কাল সকালে প্রোডাকশনের গাড়ি আপনাকে বাড়ি পৌঁছে দেবে।
—আমার বাড়ি তো কাছেই… আমি স্টুডিয়ো থেকেই চলে যেতে পারতাম।
—কী যে বলেন দিদি আপনার অনারে মাস্টারজি পার্টি দিচ্ছেন। আর আপনি থাকবেন না? সে আবার হয় নাকি? এরা সব বোম্বের লোক। এ সব ব্যাপারে খুব অফেন্ডেড হয়। আপনার কাজে উনি খুব খুশি হয়েছেন। বলা যায় না ওর ছবিতে হয়তো বম্বেতেই ডেকে নিলেন আপনাকে।
—কোথায় ছিলি তুই? আরে লোকজন তো খুঁজছে।
— কেন?
—কেন মানে? তুই তো জ্বালিয়ে দিয়েছিস। অডিয়েন্স আর একটা ডান্স চাইছে। আমি বলেছি পরপর পারবে না। একটু রেস্ট চাই।
— তুমি হ্যাঁ বলে দিলে?
— বলবো না? ফুল প্যাক্ট অডিয়েন্স এলাকার কাউন্সিলর তোকে মালা পরাবে। ওরা সেকেন্ড ড্যান্সের জন্য আমাদের আলাদা টাকা দেবে।
সেই মুহূর্তে শিবানীর মাথা ঝিমঝিম করছিল। একজনের তিনটি হিন্দি গানের পর আবার মঞ্চে গিয়েছিল শিবানী। কাউন্সিলারের ঢেউ খেলানো রং করা কুচকুচে কালো চুল। সরু গোঁফ। হাসি হাসি মুখ আধবোজা চোখ। হাতে একটা ফুলের ব্যোকে দিয়েছিলেন। একটু ঝুঁকে গলায় পরিয়ে দিয়েছিলেন দশ টাকার নোটের একটা বড় মালা। কাছাকাছি হতে শিবানী একটা গন্ধ পেয়েছিল। পান খাচ্ছিলেন। ছোট এলাচের গন্ধ গা থেকে একটা সস্তা সেন্টের গন্ধ। কিন্তু সবকিছু ছাপিয়ে নাকে একটা অজানা মিষ্টি গন্ধ পেয়েছিল। চড়া। মাথা ধরে যায়। ঠোঁটে একটা স্লো মোশন হাসি হেসে বললেন—
— তুমি জমিয়ে দিয়েচো বিউটিফুল!
দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-২৫: মাথায় নকল চুল, নকল চোখের পাতায় চড়া মেকআপ, যেন জেল্লা ঠিকরে বেরোচ্ছে
অজানার সন্ধানে: এক লিটার পেট্রলে গাড়ি ছুটবে ১০০ কিমি! যুগান্তকারী যন্ত্র আবিষ্কার করেও রহস্যজনক ভাবে উধাও হন বিজ্ঞানী ওগলে
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৫: আরও একটু বেশি হলে ক্ষতি কী?
সেদিন রাতের পার্টিতে ইন্দ্র আসেনি। মাস্টারজির দেওয়া পার্টি। বরাবরের জন্য না হোক এই ছবিতে তো ইন্দ্র তার অ্যাসিস্ট্যান্ট। ইন্দ্র না এলে মাস্টারজি কি কিছু মনে করবেন না? প্রডিউসার সিংহানিয়ার কয়েকজন ইয়ার দোস্ত এসেছিল। তাদের নজর ছিল শিবানীর ওপর। ক্লাস এইট টপকে যাওয়ার পর থেকেই পুরুষমানুষ তাকায়। কেউ ড্যাব ড্যাব করে। কেউ আড় চোখে। কেউ একবার তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়। কারও লোভী চোখ শরীরের উপর ঘোরাঘুরি করে। কেউ না তাকিয়ে পাশ দিয়ে চলে যাবার পর ফিরে ফিরে তাকায়। স্কুলপাঠ্য জীবনস্মৃতি’র রবি ঠাকুরের ছোটবেলায় দেখা ভিন্ন ভিন্ন প্রতিবেশীর নানা ধরনের স্নানের বর্ণনার সঙ্গে যেন মিল পেত। সম্ভবত ঘর ও বাহির অধ্যায়ে রবি ঠাকুর লিখেছিলেন—
সকাল হইতে দেখিতাম প্রতিবেশীরা একে একে স্নান করিতে আসিতেছে। তাহাদের কে কখন আসিবে আমার জানা ছিল। প্রত্যেকের স্নানের বিশেষত্বটুকুও আমার পরিচিত। কেউ বা দুই কানে আঙুল চাপিয়া ঝুপ ঝুপ করিয়া দ্রুত বেগে কতগুলা ডুব পাড়িয়া চলিয়া যাইত; কেউবা ডুব না দিয়া গামছায় জল তুলিয়া ঘন ঘন মাথায় ঢালিতে থাকিত…
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫: সুন্দরবন নামরহস্য
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১: রাজবাড়ির ইতিকথা—ইতিহাসের অন্তরে ইতিহাস
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৮: সাইনাস নাকি কখনওই সারে না?
ইন্দ্র আসেনি। প্রেসের কয়েকজন এসেছিল। তাদের সঙ্গে ছবির ডিরেক্টর মিউজিক ডিরেক্টর ও প্রডিউসার সিংহানিয়া বসে খানাপিনার সঙ্গ দিলেন। পার্টি মিটলো। এখনও তার পেমেন্টের ব্যাপারে কেউ কিছু কথা বলেনি। কাল সকালেই তো হোটেল ছেড়ে চলে যেতে হবে। প্রোডাকশনের ছেলেপুলেরা রয়েছে। পার্টি মিটতে সে কাউকে কিছু না বলে লিফটের দিকে এগোচ্ছিল। নিজের রুমে ফিরে যাবে। প্রোডাকশন ম্যানেজার নিজে এসে বলল—
— রুমে যাচ্ছেন?
—হ্যাঁ, কিছু বলবেন?
— আপনার ফ্লোরে-ই করিডোরের শেষে। সিংহানিয়াজির রুম। পাঁচ মিনিটের জন্য একবার যদি আসেন। আপনার পেমেন্টটা ক্লিয়ার করে দেবো।
—আমিতো রুম নম্বর জানি না। পাঁচমিনিট বাদে আমার ঘরে আসুন। আপনার সঙ্গে চলে যাব।
সিংহানিয়ার কামরায় ডান্স ডিরেক্টরও ছিলেন। ঘরটা অনেক বড়। ঘরের একদিকে বিরাট শোবার খাট বড়সড় কাবার্ড। সে অংশটা একটা পাতলা লেসের পর্দার আড়ালে। সেখানে হালকা আলো জ্বলছে। ঘরের অন্য প্রান্তে বড় সোফা সেন্টার টেবিল। ঘরে আসতেই মাস্টারজি বলে উঠলেন
—আও বেটি আও।
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২: মেয়েটি যেন গৃহলক্ষ্মী
দশভুজা: আমি আর কখনওই ফিরে আসার প্রত্যাশা করি না…
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪২: আশা-ভরসার ‘শঙ্কর নারায়ণ ব্যাঙ্ক’
ছবি সৌজন্য: সত্রাগ্নি।
বসুন্ধরা এবং… ২য় খণ্ড/পর্ব-২৭
গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম
‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com