রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

।। সৌভাগ্য না সাহস ।।

চলচ্চিত্রে অভিনয় বা নৃত্যের দৃশ্যে অংশ নেওয়া সৃষ্টিশীল কর্মকাণ্ড। অভিনয় বা নাচের ক্ষেত্রে চরিত্র বা কাহিনির দোহাই দিয়ে কে কতটা অশালীন বা বেআব্রু হবেন, সেটা যেমন একেবারেই ব্যক্তিগত রুচি বা সীমাজ্ঞান। তেমনই এই মাধ্যমকে ব্যবহার করে খ্যাতির শিখরে উঠতে, কে কতটা অন্যায়কে প্রশ্রয় দেবেন বা অন্ধকারের পথকে বেছে নেবেন সেটাও তাঁর একান্ত ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। সেই সিদ্ধান্তে ব্যক্তিগত সাফল্য বা ব্যর্থতার সম্পূর্ণ দায় তাঁর একার উপরে বর্তায়। তাঁর আর্থিক পারিবারিক বা পারিপার্শ্বিক অবস্থা বা তাঁর ব্যক্তিগত অসহায়তার সুযোগ নিয়ে অন্যায়ভাবে তাকে শোষণ বা নিপীড়নের অশ্রুসজল গাথা ধোপে টেকে না। কোন সিদ্ধান্তে কী পরিণতি হতে পারে মানুষ সেটা জেনে বুঝেই সাজানো ফাঁদে পা দেয়। সেই সিদ্ধান্তে লাভবান হলে তারিয়ে তারিয়ে সাফল্য উপভোগ করে আর ব্যর্থ হলে স্বাভাবিকভাবে পরিস্থিতি পারিপার্শ্বিক অবস্থা নিজের নির্বুদ্ধিতা এসবের উপর দায় চাপায়।
শিবানী সেন কিন্তু এসব করেনি। সবটাই মেনে নিয়েছিল। আসলে তখন ট্যাক্সির বদলে সস্তায় পুষ্টিকর অটোরিক্সার মতোই সিনেমার বদলে টেলিভিশনও ছিল না তো। এই দেখো এখানে কিন্তু কোনওভাবেই টেলিভিশনকে ছোট করার চেষ্টা হয়নি যে এই নিয়ে চোখে চোখ রেখে বিতর্ক হবে। সিনেমাতে ক’জনই-বা সুযোগ পায়। আর তখন তো বারো রীলের পূর্ণদৈর্ঘের সিনেমা। এখনকার বড় মেজ সেজো রাঙা ফুল, এসব নানান মাপের সিনেমা তো হতো না। তাই এখনকার মতো মোগলাই ফিস ফ্রাই আলুর চপ বেগুনি পেঁয়াজি ফুলুরি সকলেই করে কম্মে খেতে পেত না।

ভাগ্য বা যোগাযোগ যাই হোক ঘটনা ঘটল। বম্বের সেই নর্তকীর অ্যাপেনডিক্সের ব্যাথা জানান দিল অপারেশন না করলে বড় শারীরিক ক্ষতি। অপারেশন হলে প্রযোজকের আর্থিক ক্ষতি। ব্যস্ত হিরোর ডেট পাওয়া গড়া সেট ভাঙতে হবে। কিন্তু ইউনিটের অনেকেই দীপক চক্রবর্তী বা চিরঞ্জীতের মুখের সেই বিখ্যাত হওয়া সংলাপটা ফিসফিস করে বলল—“বৌ গেলে বৌ পাওয়া যায় রে পাগলা! মা গেলে মা পাওয়া যায় না।” ছবি গেলে আবার ছবি পাবে! শরীর গেলে শরীর ফিরে পাবে না। সুতরাং বম্বের নর্তকী রিপ্লেসমেন্ট খোঁজো। এই সেটেই শিডিউল ধরেই শুটিং হবে। পরের দিন হিরোর সঙ্গে শুটিং। সেদিনের ভেস্তে যাওয়া নর্তকীর কাজ হবে হিরোর সঙ্গে ড্যান্স সিকোয়েন্স শেষ হবার পর। কিন্তু প্রযোজক এক বায়না করে বসলেন। “বনধ মুঠঠি লাও!” বম্বে ফিলম ইন্ডাস্ট্রিতে এই শব্দবন্ধ খুব চালু।

হিরোইনদের ক্ষেত্রে ব্যবহার হয়। আনেক্সপ্লোর্ড বিউটি অ্যাণ্ড ট্যালেন্ট! বন্ধ হাতের মুঠিতে কী সম্পদ আছে ছবি রিলিজের আগে তার কথা ইন্ডাস্ট্রির কাকপক্ষী জানবে না। ছবির ডিরেক্টার ডান্স ডিরেক্টারকে নিয়ে টেনশনে মদের গেলাস নিয়ে পাঁচতারা হোটেলে গিয়ে বসলেন। পরের দিনের শুটিঙের ব্যবস্থা করার দ্বায়িত্ব দিয়ে, প্রযোজক গিয়েছেন নর্তকীর অপারেশনের ব্যবস্থা করতে। যেতে তো হবেই। বম্বে থেকে আসার পর নর্তকী-সুন্দরী তো সরাসরি এই প্রযোজকের আতিথেয়তা ও তত্ত্বাবধানেই ছিলেন।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-২১: বুল্টিরা ভাবে কমবয়েসী শিবানীরা আসল উদ্দেশ্যটা বুঝতেই পারছে না

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১: সুন্দরবনের শেকড়ের খোঁজে

এসব লিখতে লিখতে ভাবতে ভাবতে সুবর্ণ সেদিন বসুন্ধরা ভিলার ছাদে বেড়াচ্ছিল। বহুদিন পর। করোনার দু’ নম্বর ভ্যাক্সিন নেবার পর হালকা একটু গা হাত-পা ব্যথা জ্বর এসেছিল। ভ্যাক্সিন নিলে জ্বর আসা ভালো নাকি খারাপ সেটা এত বয়স হয়ে গেলেও বুঝে উঠতে পারেনি। ভ্যাক্সিন মানে তো বোধহয় বিষ। শরীরে ঢুকিয়ে দিয়ে শরীরের ভেতরকার প্রতিরোধক ব্যবস্থাকে একটু নাড়াচাড়া দেওয়া। মানে তারা সব অ্যালার্ট আছে কিনা দেখে নেওয়া। বোধহয় একটা মকড্রিল গোছের ব্যাপার। জ্বর হওয়া মানে প্রতিরোধক ব্যবস্থা লড়াই করছে।

বডি টেম্পারেচার বাড়িয়ে দিয়ে ভাইরাসকে মারার চেষ্টা করছে। আর জ্বর না হওয়া মানে, শরীরকে লড়াইতে নামতেই হয়নি? আগেই শত্রুকে নিউট্রিলাইজ করে ফেলেছে? একেই বোধহয় বলে অল্পবিদ্যা ভয়ংকরী। সুবর্ণর এক চেনা ডাক্তারবাবু বলেন, গুগল সার্চ করে আগে চারআনার ডাক্তার হওয়া যেত। এখন হোয়াটসঅ্যাপ আর ইউটিউব ইউনিভার্সিটির কল্যাণে বাকি বারো আনা পূর্ণ হয়েছে। এখন ঘরে ঘরে ডাক্তার।
আরও পড়ুন:

ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-৩: গায়ে আমার পুলক লাগে

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৮: চলতে চলতে ‘সাহেব বিবি ও গোলাম’

সন্ধ্যের মুখে অন্ধকারনামা কলকাতার আকাশে স্কাইস্ক্র্যাপার-এর সারা গায়ে টিপটিপ করে জ্বলছে আলোর বোতাম। সারাদিন কাজের পর শহুরে মানুষজন ঘরে ফিরছে। কোরোনার বিধিনিষেধ এখন শিথিল হয়ে গিয়েছে। হাওয়াতে একটা জলের ভেজা গন্ধ। কোথাও হয়তো এক পশলা বৃষ্টি হয়েছে। মুখে গায়ে শরীরে যেন জড়িয়ে গেল ছড়িয়ে গেল সে ভেজা হাওয়া। সুবর্ণ ভাবছিল, মানুষের সংগ্রামের কথা। শূন্য থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর জন্য বিনয়কান্তি দত্ত লড়াই করেছিলেন। তার সম্বল ছিল আত্মবিশ্বাস, সূর্যালোকের মতো একরাশ সততা, বড় হবার ভয়ংকর জেদ। আর সুবর্ণ এখন যার কথা লিখছে সেই শিবানী সেনও লড়াই করেছিল। তার সম্বল ছিল শঠতা টাকা আর খ্যাতির উদগ্র নেশা নীতিহীন প্রগলভতা।

বিনয়কান্তি জীবনে কাউকে ঠকাননি শিবানী নিজের স্বার্থে অন্যকে ক্রমাগত ব্যবহার করেছে। নিজের মা নিজের বাবা বোন বুল্টিদা দূরসম্পর্কের বিধবা পিসিমা তালিকায় এমন আরও অনেকে রয়েছেন যাদের কথা কাহিনির স্রোতে ক্রমশ প্রকাশ পাবে। বিনয়কান্তি বা শিবানীর মধ্যে তুলনা হয় না। আসলে অতীতের মানুষদের ইতিহাস শুনে জেনে পড়ে তাকে উপন্যাসের পাতায় বিশ্বাসযোগ্য রক্তমাংসের চরিত্র করে গড়ে তুলতে লেখক হিসেবে চরিত্র বা চরিত্রদের মনের মধ্যে ক্রমাগত ভাঙতে গড়তে হয়। সচেতনভাবে বা অচেতনভাবে তাদের সঙ্গে নিয়ে বেঁচে থাকতে হয়।

নিজের চেতনায় তাদের বাঁচিয়ে রাখতে হয়। নিছক অখণ্ড অবসরের অলস সময় কাটানোর জন্যে কোরোনা-কালের বিরক্তিকর বন্দিজীবনে বৈচিত্র্য আনতেই “বসুন্ধরা ভিলা”র কথা লিখতে শুরু করেছিল ষাট পেরোনো সুবর্ণকান্তি দত্ত। কাদের কথা লিখবে কীভাবে লিখবে আগেভাগে কোনও ভাবনাই ছিল না। লিখতে লিখতেই লেখাটা গড়ে উঠেছে। বসুন্ধরা এবং…আপনগতিতে বয়ে গেছে আপনার গতিপথে। এক চরিত্র অন্য চরিত্রকে নিয়ে এসেছে। নানান সময় ছুঁয়ে কাহিনি এগিয়ে চলেছে।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৪: মাথায় চোট মানেই কি ইন্টারনাল হেমারেজ?

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৫০: আমার সোনার হরিণ চাই—সীতার চাওয়া কি সত্যি হবে?

একটা সময় গোপন গর্ভপাতের বেআইনি ব্যবসা কলকাতায় রমরম করে চলত। অতিরিক্ত অর্থের নেশায় অনেক ডাক্তারের মত অর্কপ্রভ দাশগুপ্তও নিজেকে ভাসিয়ে দিয়েছিলেন। আজকের মত তখন ব্যক্তিগত রোজগার বা নানা জায়গায় জমিবাড়িতে ব্যবসায় অতিরিক্ত রোজগার ব্যবহার করা আটকাতে এত রকমের আইন কানুন ছিল না। ফলে অর্কের মতো সফল ডাক্তারেরা দুহাতে রোজগার করত। সেই রোজগারটা চুরি করে লোক ঠকিয়ে না হলেও সৎভাবে রোজগার করা টাকা নয়। কোনক্রমে সরকারি হাসপাতালে মুখটুকু দেখিয়ে অর্কপ্রভ দাশগুপ্তের মতো নামকরা সার্জেনরা সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অপারেশন করতেন। এক নার্সিংহোম থেকে অন্য নার্সিংহোমে ছুটে যেত তাদের গাড়ি। দক্ষতা যতই থাক মানুষ তো।ফলে ভুল হত। মনিকা সরকার নামে অর্কর এক রোগীর জরায়ুতে সিস্ট অপারেশন করতে গিয়ে তুলোর টুকরো থেকে গিয়েছিল।—চলবে

ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

 

বসুন্ধরা এবং… ২য় খণ্ড/পর্ব-২৩

সানন্দা, গন্ডগোলটা আন্দাজ করতে পারল। শহরতলীর ডাক্তারবাবু বুদ্ধিমান। ব্যথাটা যে অপারেশন থেকেই আন্দাজটা সঠিক করেছেন। তখন আজকের মত শহরতলির অলিতেগলিতে ইউএসজি চালু হয়নি। কলকাতার নামী ক্লিনিক বা হাসপাতালেই এ ব্যবস্থা ছিল। সেই ডাক্তার বাবুর সন্দেহ মনিকাকে দেখে ব্যথার ধরন আন্দাজ করেই তাকে হাসপাতালে ভর্তি পরামর্শ দিল।

* বসুন্ধরা এবং… দ্বিতীয় খণ্ড (Basundhara Ebong-Novel Part-2) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content