ছবি: প্রতীকী।
রূপের প্রকাশ নয় তার লক্ষ্য ভালো করে পড়াশোনা করে নিজেকে সমাজের সামনে প্রতিষ্ঠা করার। খুব স্বাভাবিকভাবেই বনানী পরীক্ষার আগে সময় নষ্ট করতে রাজি হল না। বেঁকে বসল। তাছাড়া তার বুল্টিদা লোকটাকে একেবারেই পছন্দ না। শিবানীকে নিয়ে তার আদিখ্যেতা, তার চোখের নোংরা দৃষ্টি। তাকে আড়াল করে দিদির সঙ্গে বুল্টিদার চোখে চোখে ইশারায় বলা কথা, কোনওটাই তার পছন্দ নয়। একটি দুটি অনুষ্ঠানে শিবানী একাই গেল। এদিকে বাড়িতে স্রোতের মতো টাকা ঢুকছে। বাড়িতে স্পষ্টত দুটো ভাগ। বাবা মণিকান্ত সেন আর ছোট মেয়ে বনানী একদিকে। অন্যদিকে খ্যাতির চূড়ায় ওঠার স্বপ্ন দেখতে থাকা বড়মেয়ে শিবানী আর মা শুভ্রা।
এর মধ্যে আচমকা ঘটে গেল এক কেলেঙ্কারি। বুল্টিদার বউ কেয়া জাঁহাবাজ মহিলা। বুল্টিবাবুর স্বভাবচরিত্র নিয়ে তার সন্দেহ ছিল। সেইজন্যে বুল্টির ড্রাইভার রতনকে নাকি কেয়া টাকাপয়সা দিয়ে হাত করে রেখেছিল। রতন বুল্টির সাম্রাজ্যের পুঙ্খানুপুঙ্খ সচিত্র প্রতিবেদন বৌদিমণির কাছে প্রকাশ করত। রতনের কাছে খবর পেয়ে কেয়া একদিন সাতসকালে সরাসরি এসে শিবানীদের বাড়িতে চিৎকার চেঁচামেচি শুরু করল। পাড়া-প্রতিবেশী বেরিয়ে এসে কেচ্ছাকেলেঙ্কারির চূড়ান্ত। চাকুরিজীবী মধ্যবিত্ত মণিকান্ত বা তার পড়াশোনা করতে থাকা মেধাবী ছোটমেয়ে বনানীর মাথা লজ্জায় হেঁট হয়ে গেল। শিবানী বোধহীন নির্বিকার। প্রতিষ্ঠা পাওয়ার নেশায় মোহগ্রস্ত। সেও বেরিয়ে এসেছিল ঝগড়া করতে। শুভ্রা বুদ্ধিমান মা। কোনক্রমে বুদ্ধিহীন মেয়েকে সামলে ঘরে ঢোকালো। কেয়াকে হাতেপায়ে ধরে বুঝিয়ে সাজিয়ে তাকে বাড়ি ফেরত পাঠালো।
বুল্টি মুখ বুজে সব সহ্য করে সেদিন চলে গেল। কিন্তু বুল্টির মাথায় অন্য মতলব ঘোঁট পাকাচ্ছে। মাঝবয়েসি বুল্টি শিবানীর নেশায় পড়ে গিয়েছে। ক’দিন নাচের অনুষ্ঠানে ভাঁটা পড়ল। মণিকান্ত ও বনানীর অনুপস্থিতি বুঝে শুভ্রা ও শিবানীকে বুল্টি জানিয়ে এল, সে এবার শিবানীকে কলকাতায় নিয়ে যাবে। টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে বুল্টির জানাশোনা লোক রয়েছে। তবে সিনেমায় নামা সহজ নয়। অনেক কাঠখড় পোড়াতে হবে। অভিনয় শিখতে হবে। অডিশন দিতে হবে মানে ডিরেক্টর প্রডিউসারের সামনে নেচে গেয়ে পার্ট বলে দেখাতে হবে।
বাবা আর ছোট মেয়ের অজান্তে শুভ্রা আর শিবানী গেল স্টুডিওতে ছবি তোলাতে। সেখানে মেয়ের নানা ঢঙে নানান সাজে ছবি তোলানো হল। নাচের অনুষ্ঠান যখন পুরোদমে চলছে তখন হিন্দি সিনেমার নাচ কপি করার জন্যে অনুষ্ঠানের টাকা জমিয়ে শিবানী একটা ভিসিডি কিনেছিল। তাদের রঙিন টিভি ছিল না। সাদাকালো টিভিতে ভিডিও ক্যাসেট চালিয়ে হিন্দিছবির নায়িকাদের রং ঢং নাচের ঠমক চমক রপ্ত করত শিবানী।
দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-১৯: কমলকান্তি সঙ্গিনী খুঁজে পেয়েছিলেন
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১৭: দু’ মাস আগের এক সন্ধ্যা
বিনোদন জগতে সৃষ্টিশীল ভালোলোকেদের সঙ্গে সঙ্গেই ঠগ জোচ্চোর জালিয়াত লোকেদের ভিড়ে বোঝাই। রুপালি জগতের হাতছানিতে হাজারে হাজারে ছেলেমেয়ে প্রতিদিন নিজেদের নায়কনায়িকা করার স্বপ্ন দেখছে। তাদের মধ্যে ভাগ্য এবং প্রতিভার জোরে মাত্র এক বা দুজনের স্বপ্নসফল হচ্ছে। বাকিদের অনেকেই অর্থ মান-সম্ভ্রম খুইয়ে ব্যর্থতার জ্বালা বুকে নিয়ে ফিরে যাচ্ছে। কেউ কেউ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। কারও চেষ্টা জনতার ভিড়ে উঁকিঝুঁকিমারা মুখ হিসেবে চিরকালের মতো থমকে যাচ্ছে। তবুও চিত্রজগতের মোহের আলোয় শত শত পতঙ্গ এসে ঝাঁপ দিচ্ছে।
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১: আমি ‘কেবলই’ স্বপন…
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৭: ঝুঁকি না নিলে জীবনে বড় কিছুই অর্জন করা যায় না
অজানার সন্ধানে: পাচার হয়েছিল টন টন সোনা ও দামি ধাতু! ৮৫ বছরের সেই ভূতুড়ে রেলস্টেশন এখন অভিজাত হোটেল
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২২: স্টেরয়েড বড় ভয়ঙ্কর ওষুধ?
ছবি সৌজন্য: সত্রাগ্নি
— তুমি কি বলদ বুল্টিদা ?
বুল্টির মতো হ্যাংলা পুরুষমানুষ প্রিয় মহিলাদের অনুযোগের সুরে বলা খারাপ কথাও উপভোগ করে। হ্যা-হ্যা করে জিভ বের করে হাসতে হাসতে বুল্টির প্রশ্ন।
— একথা বলচিস কেন?
— ফাংশন তুমি আনছো? ঠিক কিনা?
— আগে বল।
— আমি পারফম করছি।
— তো ?
— হিসেব মতো তোমার একটা পারসেন্ট থাকবে। মানে থাকা উচিত।
— ওসব ছাড়। মন দিয়ে ফাংশন কর। আর আমি পকেট দিয়ে কিছ্যু দি না। খরচাপাতি নিই তো।
— খরচাপাতি নয় বুল্টিবাবু, আমি ইনকামের কথা বলছি।
১৭ বছরের শিবানী মাঝেমধ্যে ৪২ বছরের বুল্টিকে গলায় এক চামচ আবেগ মিশিয়ে ‘বুল্টিবাবু’ বলে ডাকে। হিন্দি বাংলা সিনেমার ভিডিও ক্যাসেট দেখতে দেখতে নায়িকাদের দুষ্টু আবেগ রপ্ত করছে শিবানী।—চলবে
বসুন্ধরা এবং… ২য় খণ্ড/পর্ব-২১
গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম
‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com