রবিবার ১০ নভেম্বর, ২০২৪


বিদেশে উত্তমকুমার এবং চেম্বুর আরকে স্টুডিয়োতে অমিতাভ বচ্চন। ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

।।কেকে।।

উত্তমকুমার বা অমিতাভ বচ্চন সুপারস্টার। বিবাহ-বহির্ভূত নানান সম্পর্কের মুখরোচক গসিপ ঘিরে রয়েছে তাঁদের। কেরিয়ারের আকাশচুম্বী খ্যাতির সঙ্গে সঙ্গে কারণে অকারণে বদনামে জড়িয়ে পড়েন এইসব মহানায়কেরা। আর এইসব সম্পর্ক যেহেতু দুজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের সম্মতিতে হয় তাই সেসব একান্ত ব্যক্তিগত প্রসঙ্গ। কিন্তু সমাজ সংসারে প্রভাব বাড়লে নানা প্রলোভনে দিকভ্রষ্ট হয়ে পড়ে মানুষ। যাঁদের কথা বলা হল তাঁরা কিন্তু চারিত্রিক কেলেঙ্কারির ছাড়া আর কোনও কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েননি। চিত্রজগতের সম্ভাবনাময় অনেক নায়ক-নায়িকার জীবন কিন্তু নানান কেলেঙ্কারিতে শেষ হয়ে গিয়েছে। ক্রমাগত লড়াই করতে করতে চূড়ান্ত সাফল্য পেয়েছেন। ইন্দ্রিয়ের পরিমিত ভারসাম্য বজায় রাখতে হয়তো ব্যর্থ হয়েছেন। অনেকে বলেন, দাম্পত্যজীবনের অশান্তিই দূর্ভাগ্যজনক পরিণতির কারণ। তবে বিবাহোত্তর শান্তির খোঁজই দাম্পত্য-অশান্তির উৎস নাকি দাম্পত্য-অশান্তির কারণেই তাঁরা শান্তির সন্ধানে কিনা সেটা গবেষণার বিষয়। তবে তাঁরা এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি নিজেদের মতো করে সামলে নিতে জানতেন বা জানেন। ছোটকা সামলাতে পারেননি।

আমার ছোটকা, ‘কেকে’-তো বিয়েই করেননি। তাঁর ঝঞ্ঝাটটা বিবাহ-বহির্ভূত কিছু নয়। তবে বিবাহ উপযুক্ত কিছু ছিল না। আগেই বলেছি আমার মা সুরঙ্গমা তাঁর স্নিগ্ধ ব্যক্তিত্বের জন্যেই সকলের খুব কাছের ছিলেন। তাঁকে ন’কাকা তরুণকান্তি মনের সমস্ত জ্বালা যন্ত্রণা খুব অপমান উজাড় করে দিতে পারতেন। সুদূর আয়ারল্যান্ড থেকে কীরা কাকিমা মায়ের সঙ্গে কথা বলে শান্তি পেতেন। আমার ঠাম্মি স্বর্ণময়ীর গভীর আস্থার জায়গা আমার মা। বড় ঠাম্মি নিজে তাঁদের বাড়িতে গিয়ে মায়ের সঙ্গে কথা বলে এসেছিলেন। সিনেমার অভিনেত্রীকে বাড়ির বউ করার ব্যাপারে দাদু বিনয়কান্তির মনের দ্বিধা কাটানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ফুলকাকা ডাক্তার বিমলকান্তি কীরা কাকিমাকে বিয়ে করার ব্যাপারে প্রথম মাকেই সব জানিয়েছিলেন। চিনু দাদা সুপ্রিয়া বৌদিকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চায় সেটাও মাকেই প্রথম বলেছিল। কালিম্পং-এর স্কুল থেকে বহিষ্কার করার পর প্রণয়কে কলকাতার স্কুলে ভর্তি করানোর সমস্ত উদ্যোগ মা নিয়েছিল। আর সে ব্যাপারে আমার বাবা সাহিত্যিক অমলকান্তি যে তার বিপুল সামাজিক প্রভাব কাজে লাগাতে রাজি হয়েছিল সেটা একমাত্র মায়ের কারণে। এমনকি কিছুদিন আগেও প্রণয়ের বিয়ের সময়ে মূল উদ্যোগী ছিলেন আমার মা। আমার ন’কাকিমা সুজাতা দত্তের এসব সাবেকি পারিবারিক ব্যাপারে কোনও উৎসাহ ছিল না। সে আর এক অধ্যায়।
আরও পড়ুন:

দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-১৬: উত্তম-সুচিত্রাকে সহজে দেখা যেত না, তাই তাঁদের প্রেম দেখতে হল-এ ভিড় করতেন উৎসাহীরা

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১৪: ভয়ংকর গর্ভ

ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-২: কপালে জমেছে ঘাম, শুকিয়ে গিয়েছে জিভ, পেছন থেকে ভেসে আসছে গা ছমছমে শব্দ

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬২: প্রথম রবীন্দ্রজীবনী

ছোটকা এসে মাকে সব জানিয়েছিল। তার সমস্যা তার দূর্বলতা সব। আর আমি এসব আমার মার কাছেই শুনেছি তবে অনেক অনেক বছর পর। আমার ছেলে ঋজু তখন কলেজে পড়ছে। তখন তো জানতাম না জীবনের কোনও একটা সময় কোভিড দৈত্যের ভয়ে জানলা দরজা বন্ধ করে নাক মুখ চাপা দিয়ে অনির্দিষ্ট অজ্ঞাতবাস পালন করতে হবে। সেই অজ্ঞাতবাসের একঘেয়েমি থেকে উদ্ধার পেতে লাইব্রেরি ঘরে বসে ল্যাপটপ পেতে বসুন্ধরা ভিলার ইতিহাস লিখতে বসব আমি। সবই ভবিতব্য। সবকিছু পূর্ব-নির্ধারিত এবং নির্দিষ্ট হয়ে আছে। এক একজনের কাছে আচম্বিতে এক একটা সময় এসে পড়ে আর জীবন, ভাগ্য তাকে নির্ধারিত পথে আগিয়ে দেয়।

কথা প্রসঙ্গে মাকে বলেছিলাম—

—ছোটকার একটা সংসার গড়ে দিতে পারলে না।
মা নিজের ঘরে সেই গোলাপ কলস খাটে বসে গল্পের বই থেকে চোখ তুলে বলেছিল—

—বিয়ে দেওয়া যায় না সু! বিয়েটা হয়। ঈশ্বর নির্ধারিত একটা ঘটনা। আগে থেকেই হয়ে থাকে। তোমার বাবার লেখায় পড়েছো না? দাদু তার আর্থিক অবস্থার জন্য কিছুতেই তোমার ঠাম্মিকে বিয়ে করতে চাননি। কিন্তু বিয়েটা হয়েছে। রেলের কামরায় সেই কাকতালীয় দেখাটা না হলে এ বিয়েটা হতো না বা এদের দুজনের বিয়েই অন্য কারও সঙ্গে হতে পারত। তাতো হয়নি। এরকম সনাতনী পরিবারে কলকাতার অত প্রভাবশালী একজন ব্যবসায়ী ফিল্মে অভিনয় করা একটি মেয়ের সঙ্গে তার সাহিত্যিক ছেলের বিয়ে নাই দিতে পারতেন! তা তো হয়নি? ঠিকমানুষের সঙ্গে জুড়ি বেঁধে দেন ঈশ্বর!
আরও পড়ুন:

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫৫: প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নবপ্রজন্ম-মীনমিত্রের পরামর্শে গ্রামগঞ্জেও মাছচাষ বিকল্প আয়ের দিশা দেখাতে পারে

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৯: উন্নয়নের কাণ্ডারী নির্ণয়ে পিতৃতান্ত্রিক পক্ষপাতিত্ব

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৪: স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের ‘রাত-ভোর’

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৯: কুরদার ইকো রিসর্ট—অনাবিস্কৃত এক মুক্তা

মায়েরা মন পড়তে পারেন। তারও পর আমার মা মনস্তত্ব বুঝতেন নিশ্চিত। ভালো অভিনেতা-অভিনেত্রীদের মনস্তত্ব বুঝতে হয়। এছাড়াও তিনি যে একজন সাহিত্যিকের ঘরণী। আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বললেন—

— তোমার প্রশ্নগুলো আমি পড়তে পারছি সু। তোমার মনে হচ্ছে ফুলকাকা বা কীরা কাকিমা বা ন’কাকা-ন’কাকিমার ক্ষেত্রে এমন হল কেন?

—দেখ মা ওঁদের জেনারেশন নয়। আমাদের জেনারেশনেও।

—আমি জনি সু। সে দুটো ক্ষেত্রেই আমি বোধহয় আমার দায় এড়াতে পারি না।

—সানন্দা তো অমিতাভকে নিজে পছন্দ করেই বিয়ে করেছিল মা।

—কিন্তু মেয়েটা তো আমায় জিজ্ঞেস করেছিল সু। মা হিসেবে আমি না বলতে পারতাম। আর বাবলি-প্রণয়ের বিয়েটা তো।

—বিয়েটা যদি ঈশ্বর নির্ধারিত হয়ে থাকে। আগে থেকেই ঠিক হয়ে থাকে সেখানে তোমার কী করার ছিল। কিন্তু আমার প্রশ্ন ঈশ্বর কেন এমন অঘটন ঘটান?

—কেন এমন হয়? ঈশ্বরের মনে কী আছে? সেটা জগদীশ্বরই জানেন। আসলে কি জানো সু, দুটো অপরিচিত মানুষ বা কিছুদিনের পরিচিত মানুষ দাম্পত্যের পরই পরস্পরকে বুঝতে পারে। দুটো ভিন্ন পরিবেশ-পরিস্থিতিতে বড় হওয়া দুটো আলাদা আলাদা ব্যক্তিত্ব, অমিল থাকাটাই তো স্বাভাবিক। নিজেদের অমিলগুলো পছন্দ-অপছন্দগুলো যৌথভাবে মোটামুটি মিলিয়ে নিতে নিতেই জীবনটা এগিয়ে চলতে থাকে। দায়-দায়িত্বের খাতে চলতে চলতে নিজেরা নিজেদের অজান্তেই একে অপরের পরিপূরক হয়ে ওঠে। ভুল বোঝাবুঝি থাকেই সেটা মিটমাট করতে পারলে শান্তি, না পারলে অশান্তি। সমাজে সৎ-অসৎ মানুষ মিশে থাকে সু। সৎ মানুষ কষ্ট পায়। ঠকে যায়। বঞ্চিত হয়। দূর্ভাগ্যের ধাক্কায় লুটিয়ে পড়ে আবার ধুলো ঝেড়ে উঠে দাঁড়ায়। অসৎরা বেনিয়ম করে অযোগ্যতা সত্বেও বেশি ভোগ করে। কিন্তু একটা হিসেব দেওয়ার থাকে। সেটা দেবার সময় তাদের ভয়ঙ্কর পরিণতি হয়। আর চোখের সামনে এই পরিণামের প্রমাণ দিতেই ঈশ্বর সমাজে সৎ-অসৎ মিশিয়ে রাখেন। সুখ-শান্তি গড়ে নিতে হয়। তাই ঈশ্বর দাম্পত্য-সুখ খুঁজে পেতেই বোধহয় কিছু কিছু অসম দাম্পত্যের অঘটন ঘটান। অসুখ থেকেই যাতে মানুষ সুখে ফিরতে শেখে।
আরও পড়ুন:

নাট্যকার গিরিশচন্দ্রের সন্ধানে, পর্ব-৩৬: গিরিশচন্দ্রের ‘বিষাদ’ নাটকটি প্রথম অভিনীত হয় এমারেল্ড থিয়েটারে

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৯: পাকা আম খাবেন, নাকি কাঁচা আম?

হেলদি ডায়েট: সুপারফুড চিয়া সিডের এই সব জরুরি পুষ্টিগুণের কথা জানতেন?

বিশ্বসেরাদের প্রথম গোল, পর্ব-৯: ফেরেন্তস পুসকাস: দুটি দেশের হয়েই বিশ্বকাপ খেলেছেন

আচ্ছা মা! আমায় একটা কথা বল। প্রণয় বাড়ির অন্য ছেলেপুলের মতো নয় কথা শোনেনা ছোটবেলা থেকে বেয়াড়া উদ্ধত। ওর হয়তো আপব্রিংগিংটা ঠিক মতো হয়নি। কিন্তু আমার বোন নন্দা। সে তো আমার সঙ্গেই তোমার বাবার সহবতে মানুষ হয়েছে। এত সফল একজন ডাক্তার। অর্কর সঙ্গে নিজে পছন্দ করে বিয়ে করল কিন্তু সে নিজের জীবনটা অর্কর সঙ্গে মানিয়ে গুছিয়ে নিতে পারল না কেন?

—আমার উত্তরটা হয়তো একটু অন্যরকম শোনাবে সু। কিন্তু বিশ্বাস করো আমি যুক্তি দেবার জন্য কথাগুলো বলছি না। আমি আমার নিজের বিশ্বাস থেকে উপলব্ধি থেকেই বলছি। সানন্দা বসুন্ধরা ভিলায় না জন্মালে হয়তো কম্প্রোমাইজ করতে পারত। আবার বসুন্ধরা ভিলার মতো একটা বাড়িতে নন্দার বিয়ে হলেও হয়তো এই পরিণতি হত না।

আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি দেখে মা বলে উঠল।

—আমি আরও একটু বুঝিয়ে তোমায় বলছি। আমি একথা বলছি না যে আমার মেয়ে সা একজন সফল গাইনি, স্বাবলম্বী। তাই সে তার স্বামী ডাক্তার অর্কপ্রভ দাশগুপ্তকে ডিভোর্স দিয়ে আলাদা বাড়ি নিয়ে থাকছে। নন্দার জেদ আত্মমর্যাদা তাকে বসুন্ধরা ভিলায় ফিরতে দেবে না। তোমার বাবা বা আমি তো দূরের কথা তোমার দাদু আমাদের শ্রদ্ধেয় শ্বশুরমশাই নিজে তাঁর নাতনিকে বলেছিলেন বসুন্ধরা ভিলায় ফিরে আসতে। দাদুর পায়ে হাত রেখে আমার সামনে নন্দা এমন একটা কথা বলল যা শুনে শ্রদ্ধেয় বিনয়কান্তি দত্তের মতো মানুষও কিছু বলতে পারেননি।

—নন্দা কি বলেছিল মা?—চলবে

ছবি: সত্রাগ্নি।

 

বসুন্ধরা এবং… ২য় খণ্ড/পর্ব-১৮

সানন্দা বলেছিল, ‘বসুন্ধরা ভিলায় ফিরে এলে আমি হেরে যাবো দাদু। তুমি কি চাও তোমার নাতনি বসুন্ধরা দত্তের প্রপৌত্রী জীবনযুদ্ধে হেরে যাক।’ প্রবাদপ্রতিম বিনয়কান্তি দত্ত নন্দার মাথায় হাত রেখে চোখ বুজিয়ে বসেছিলেন। আর কোনও আপত্তি করেননি।

* বসুন্ধরা এবং… দ্বিতীয় খণ্ড (Basundhara Ebong-Novel Part-2) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।
 

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content