ছবি প্রতীকী। সংগৃহীত।
।। অমিতাভ ও মনীষা সেন ।।
তবে পরে চে গুয়েভারার সম্বন্ধে পড়তে গিয়ে আমি যেগুলো জেনেছিলাম অমিতাভদা বা মনীষাদি সঙ্গতকারণেই বাবুদাদাকে বলেননি। তাঁরা বলেননি যে গলায় বুকে শরীরের নানা জায়গায় গুলিবিদ্ধ মৃত চে গুয়েভারার হাতদুটো কব্জি থেকে কেটে ফর্ম্যাল্ডিহাইডে ডুবিয়ে রাখা হয়েছিল। তার আঙ্গুলের ছাপ মিলিয়ে মৃতকে চে গুয়েভারা হিসেবে শনাক্ত করার জন্যে। ১৯৬৯-৭০-এ কলকাতা ও বাংলার নানান প্রান্তে শিক্ষিত ছাত্রযুবরা যে অতিবামপন্থায় উত্তাল হয়ে উঠেছিল মাও সে তুং (বা পরিবর্তিত উচ্চারণে মাও দে জং)-এর সঙ্গে সঙ্গে চে গুয়েভারার প্রভাব তাঁদের মধ্যে যথেষ্ট ছিল। শ্রেণিহীন সমাজব্যবস্থার স্বপ্নকে বাস্তবরূপ দেওয়ার জন্যে গ্রাম দিয়ে শহর ঘেরার কথা বলা হয়েছিল। সমাজের মানুষকে প্রলেতারিয়েত বা সর্বহারা আর বুর্জোয়া বা শ্রেণিশত্রু হিসেবে ভাগ করে দেওয়া হয়েছিল। বলা হয়েছিল বুর্জোয়াদের খতম করেই নতুন শ্রেণিহীন সমাজ গড়তে হবে। সত্তর দশক মুক্তির দশকে পরিণত করার আহ্বান, শহরের দেওয়াল ভরা খবরের কাগজে সাঁটা লাল অক্ষরে পোস্টার “বন্দুকের নলই ক্ষমতার উৎস , পুঁজিবাদ বুর্জোয়া-গণতন্ত্র নিপাত যাক, সংসদীয় গণতন্ত্র শুয়োরের খোঁয়াড়, চীনের চেয়ারম্যান আমাদের চেয়ারম্যান”। পুরো কলকাতা শহর অচেনা হয়ে যাচ্ছিল। রাত বাড়লে গুলি-বোমার শব্দ শোনা যেত। দরজায় অচেনা লোক এলে সন্দেহ হতো। রাতে লোকে পারতপক্ষে বাইরে যাচ্ছে না। সিনেমা হলের নাইট শো মোটামুটি বন্ধ। বিশেষ বিশেষ এলাকায় সন্ধ্যে হলেই ট্যাক্সি যেতে চাইত না। ৬৯-এর কলকাতার রাজনৈতিক পরিস্থিতি বদলে গেল। বামপন্থী আন্দোলনে বিভাজন এল। সে সময়টা বাড়ির মধ্যে অনেক বিষয় নিয়ে বড়রা কথা বলতে গিয়ে আমাদের দেখলে চুপ করে যেতেন। প্রসঙ্গান্তরে চলে যেতেন। তখন বুঝতাম না। পরে বুঝেছি। ক্রমাগত পুলিশিটহল, রাজনৈতিক খুন, ধরপাকড়ে ছন্দ হারিয়ে ফেলেছিল চেনা কলকাতা। বাবুদাদা যে চে গুয়েভারার গল্প করত তাঁর জীবনীও তখন সন্দেহের চোখে দেখা হতো। আমাদের বসুন্ধরা ভিলাতে সিকিউরিটি বাড়ানো হল। মাঝে মাঝে পুলিশের উচ্চপদস্থ হোমরা চোমরারা আসতেন। এই সময়েই বসুন্ধরা ভিলার পাঁচিলের ওপর বেশ খানিকটা উঁচু লোহার বাঁকানো পোলে কাঁটাতার দিয়ে ঘিরে দেওয়া হল।
তবে এসব আট ন’ বছরের কোন ছেলের পক্ষে জানা সম্ভব নয়, তখনকার দেখা ঘটনা শোনা-কথা আর পরবর্তী কালের তথ্যানুসন্ধান থেকে এই উপলব্ধি। সামাজিক প্রতিপত্তির জন্যেই বসুন্ধরা ভিলাতে তখন এই রাজনৈতিক অস্থিরতায় কোনও সরাসরি প্রভাব পড়েনি।
কিন্তু আচমকা একটা ঘটনায় বসুন্ধরা ভিলার সকলে চমকে উঠল। বাবুদাদা কদিন ট্যুইশনে যাচ্ছে না। সরাসরি স্কুল করে বাড়ি চলে আসছে। অমিতাভদা মনীষাদি দুজনেই নাকি জলপাইগুড়ি গিয়েছেন। হতে পারে ওদের আসল বাড়ি সেখানে। আমি বা বাবুদাদা কেউই সেটা তখন জানতাম না। কিন্তু অনেকটা সময় অমিতাভদাদের কাছে না পেয়ে বাবুদাদা ভীষণ খিটখিটে হয়ে উঠছিল। তার খেতে ভাল লাগছে না স্কুল যেতে ভাল লাগছে না। খেলতেও ভালো লাগছে না। অমিতাভদারা তো বাড়ির লোক নয় যে চিঠি দেবেন। স্কুলের যারা অমিতাভদার কাছে পড়ত তাদের কাছে বাবুদাদা একদিন শুনে এল অমিতাভদারা নাকি আর ফিরবেন না। স্কুলের চাকরি ছেড়ে দেবেন। সেই শুনে ক্লাস নাইনে ওঠা ছেলের কী কান্নাকাটি। তাকে থামানো যায় না। মা আমাদের ঘরে এনে তাকে বোঝালো ‘সেজমামুর অনেকজায়গায় চেনাশোনা আছে অমিতাভদার খবর সেজমামু ঠিক পাবে’। তার পরদিন স্কুল থেকে ফিরে বাবুদাদা খুব খুশি। অমিতাভদা ফিরে এসেছেন। কাল থেকে আবার ট্যুইশন শুরু। সে দিন অনেক রাত পর্যন্ত জেগে স্কুলের পড়া-হোমটাস্ক সব করে ফেলল বাবুদাদা। পরদিন থেকে অমিতাভদার ট্যুইশন মানে বাবুদাদার কাছে একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
কিন্তু আচমকা একটা ঘটনায় বসুন্ধরা ভিলার সকলে চমকে উঠল। বাবুদাদা কদিন ট্যুইশনে যাচ্ছে না। সরাসরি স্কুল করে বাড়ি চলে আসছে। অমিতাভদা মনীষাদি দুজনেই নাকি জলপাইগুড়ি গিয়েছেন। হতে পারে ওদের আসল বাড়ি সেখানে। আমি বা বাবুদাদা কেউই সেটা তখন জানতাম না। কিন্তু অনেকটা সময় অমিতাভদাদের কাছে না পেয়ে বাবুদাদা ভীষণ খিটখিটে হয়ে উঠছিল। তার খেতে ভাল লাগছে না স্কুল যেতে ভাল লাগছে না। খেলতেও ভালো লাগছে না। অমিতাভদারা তো বাড়ির লোক নয় যে চিঠি দেবেন। স্কুলের যারা অমিতাভদার কাছে পড়ত তাদের কাছে বাবুদাদা একদিন শুনে এল অমিতাভদারা নাকি আর ফিরবেন না। স্কুলের চাকরি ছেড়ে দেবেন। সেই শুনে ক্লাস নাইনে ওঠা ছেলের কী কান্নাকাটি। তাকে থামানো যায় না। মা আমাদের ঘরে এনে তাকে বোঝালো ‘সেজমামুর অনেকজায়গায় চেনাশোনা আছে অমিতাভদার খবর সেজমামু ঠিক পাবে’। তার পরদিন স্কুল থেকে ফিরে বাবুদাদা খুব খুশি। অমিতাভদা ফিরে এসেছেন। কাল থেকে আবার ট্যুইশন শুরু। সে দিন অনেক রাত পর্যন্ত জেগে স্কুলের পড়া-হোমটাস্ক সব করে ফেলল বাবুদাদা। পরদিন থেকে অমিতাভদার ট্যুইশন মানে বাবুদাদার কাছে একটা ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
আরও পড়ুন:
বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-১০: অমিতাভদাকে মাস্টারমশাই হিসেবে নয়, আশ্রয় হিসেবে বেছে নিয়েছিল বাবুদাদা
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৮: ‘বাইরে বেরুলেই বিপদ!’
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪: অপবাদ এবং রামচন্দ্রের সুশাসনের রামরাজত্ব
ছোটরা বিছানায় মটকা মেরে শুয়ে থাকলে অনেক গভীর আলোচনার সাক্ষী হয়ে থাকে। মা-বাবার আলোচনায় সেদিন জানা গেল এটা বাবুদাদার একটা মানসিক সমস্যা। সাইকোলজিকাল প্রবলেম। ছোটবেলায় বাবার মৃত্যু তারপর আর কখনও চেতলার বাড়িতে না ফিরে যাওয়া। এসব মিলিয়ে বাবুদাদার ভেতরে একটা অভাববোধ তৈরি করেছিল। এর সঙ্গে যোগ হল কালিম্পং-এ পড়তে থাকা ছোটভাইয়ের দারুন রেজাল্ট। এত কিছু না পাওয়ার মধ্যে একমাত্র পাওয়া অমিতাভ সেন আর তার স্ত্রী মনীষা সেন। তাঁদের চোখে বাবুদাদা হিরো। তাঁরা বলেন বাবুদাদা ভালো অঙ্ক পারে। কেমিস্ট্রিতে ভালো। ভালো ডিবেট করে। তাঁরা বাবুদাদাকে বেড়াতে নিয়ে যান। মোদ্দাকথা ভীষণ নজর করেন। গুরুত্ব দেন। তাই এই দুজনের ওপরে বাবুদাদা ভীষণভাবে নির্ভর করে। হঠাৎ করে তাঁদের না থাকাটা তাঁদের অভাবটা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছিল না। কিন্তু সে বোধহয় স্বপ্নেও ভাবেনি যে আরও কঠিন একটা সত্যি তার জন্যে অপেক্ষা করছে।
একেবারে শুরুতে বাবুদাদা যখন ক্লাস সেভেনে তখন বাড়ির গাড়ি যেত টিউশন থেকে ওর বাড়ি ফেরার সময়। তখন ওই রাস্তায় এত ভিড় ছিল না। সেলিমপুর বাই লেনের মুখে মেনরোডের ওপর গলির পাশে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতো। বাবুদাদাকে অমিতাভদা বা মনীষাদি এসে বাড়ির গাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে যেতেন। ক্লাস এইটে ওঠার পর ড্রাইভারের হাত দিয়ে অমিতাভদা একটা চিঠি পাঠালেন। সেই চিঠিতে সম্বোধনটা একটু অদ্ভুত।
একেবারে শুরুতে বাবুদাদা যখন ক্লাস সেভেনে তখন বাড়ির গাড়ি যেত টিউশন থেকে ওর বাড়ি ফেরার সময়। তখন ওই রাস্তায় এত ভিড় ছিল না। সেলিমপুর বাই লেনের মুখে মেনরোডের ওপর গলির পাশে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতো। বাবুদাদাকে অমিতাভদা বা মনীষাদি এসে বাড়ির গাড়ি পর্যন্ত ছেড়ে দিয়ে যেতেন। ক্লাস এইটে ওঠার পর ড্রাইভারের হাত দিয়ে অমিতাভদা একটা চিঠি পাঠালেন। সেই চিঠিতে সম্বোধনটা একটু অদ্ভুত।
আরও পড়ুন:
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৪৯: মিশ্র মাছচাষ পদ্ধতিতে শুধু ফলন বাড়েনি, মাছের বৈচিত্রের সমাহারও নজর কেড়েছে
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৩: বাইগা বস্তি হয়ে ভোরামদেব মন্দির
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৩: সারাদিন যত পারেন জল খান! এতে শরীরের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে না তো? কী করে বুঝবেন?
শ্রদ্ধেয় / শ্রদ্ধেয়া
আমি অমিতাভ। অমিতাভ সেন। সৌরভ মানে বাবুকে পড়াই। আমি ঠিক কাকে লিখব সেটা বুঝতে পারেনি তাই বিশেষ কোন নামে এই চিঠি পাঠাইনি। আপনারা ওর অভিভাবক সেই জন্যে ওকে নিয়ে সব সিদ্ধান্তটা আপনারাই নেবেন। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে আমার একটা অনুরোধ আছে। বাবু ক্লাস এইটে উঠে গেছে। মানে ও কিশোর। সকালে ও স্কুল বাসে আসে। বিকেলে টিউশনের জন্য স্কুল বাস পায়না। এতদিন বাড়ির গাড়িতে যেত। আমার অনুরোধ এখন থেকে আপনারা আর গাড়ি পাঠাবেন না। আমি বা মনীষা নিজে এসে বাসস্টপ থেকে বাড়ির বাসে তুলে দেব। বালিগঞ্জ ফাঁড়িতে নেমে ও হেঁটে বাড়ি পৌঁছে যাবে। আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না। জীবনযুদ্ধটা ওকে নিজেকে করতে দিন।
হয়তো এটা আমার অনধিকারচর্চা। তবু আমি বাবুকে স্নেহ করি তাই কথাগুলো লিখলাম বাকি সিদ্ধান্ত আপনাদের।
নমস্কার সহ
অমিতাভ সেন
আমি অমিতাভ। অমিতাভ সেন। সৌরভ মানে বাবুকে পড়াই। আমি ঠিক কাকে লিখব সেটা বুঝতে পারেনি তাই বিশেষ কোন নামে এই চিঠি পাঠাইনি। আপনারা ওর অভিভাবক সেই জন্যে ওকে নিয়ে সব সিদ্ধান্তটা আপনারাই নেবেন। কিন্তু শিক্ষক হিসেবে আমার একটা অনুরোধ আছে। বাবু ক্লাস এইটে উঠে গেছে। মানে ও কিশোর। সকালে ও স্কুল বাসে আসে। বিকেলে টিউশনের জন্য স্কুল বাস পায়না। এতদিন বাড়ির গাড়িতে যেত। আমার অনুরোধ এখন থেকে আপনারা আর গাড়ি পাঠাবেন না। আমি বা মনীষা নিজে এসে বাসস্টপ থেকে বাড়ির বাসে তুলে দেব। বালিগঞ্জ ফাঁড়িতে নেমে ও হেঁটে বাড়ি পৌঁছে যাবে। আপনারা দুশ্চিন্তা করবেন না। জীবনযুদ্ধটা ওকে নিজেকে করতে দিন।
হয়তো এটা আমার অনধিকারচর্চা। তবু আমি বাবুকে স্নেহ করি তাই কথাগুলো লিখলাম বাকি সিদ্ধান্ত আপনাদের।
নমস্কার সহ
অমিতাভ সেন
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৯: সুরের আকাশে ঘটালে তুমি স্বপ্নের ‘শাপমোচন’
স্বাদে-গন্ধে: সামনেই জন্মদিন? বিশেষ দিনের ভূরিভোজে বানিয়ে ফেলুন কাশ্মীরি পদ মটন রোগান জোস!
দশভুজা: সেই ষোলো মিনিটের দূরত্ব কোনওদিন পূরণ হয়নি
আসল ঘটনাটা আমি অনেক পরে বড় হয়ে জানতে পেরেছিলাম। সেটা এরকম।
অমিতাভ-মনীষা কলকাতার বাইরে গিয়েছিলেন। বাড়ি চাবি দিয়ে বন্ধ ছিল। কিন্তু সমস্যা হল। চরমপন্থী সশস্ত্র আন্দোলন রোখার জন্যে পুলিশ প্রশাসন তখন সারা শহরে তাদের অনেক গুপ্তচর নিয়োগ করেছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ পুলিশ একই পদ্ধতি অনুসরণ করতো। সে যুগে তাদের টিকটিকি বলা হতো। এ যুগে তারাই খোচোর। ‘চর’ শব্দের আধুনিক অনুপ্রাস? না কি খোঁজ আনে যে চোর- খোচোর! কর্মধারয় সমাস? অবশ্য অভিধানে ‘খেচর’ হল আকাশগামী, নভোচর। পাখির মতোই উড়ে উড়ে নজর করে। দূর থেকে লক্ষ্য করে ধরতে গেলেই ফুড়ুৎ। তবে পুলিশ কোনও কারণে ‘মামু’ সেটা বলা শক্ত।
পুলিশের এইসব টিকটিকি বা খোচোর পাড়ায় পাড়ায় শহরের অলিতেগলিতে মানুষজনকে নজর করতো। তারা জানত সেলিমপুর বাই লেনে এক স্বামী-স্ত্রী মাস্টারমশাই আছেন। সন্ধেবেলা টিউশনি করেন, দরজা বাইরে জুতো-চটির পাহাড় বর্ষাকালে বালতিতে বা টিনের কাটা ক্যানেস্তারায় ভিজে চুপসে থাকা ছাতার ভিড়। ছুটির দিনে কখনও-সখনও ছাত্রদের নিয়ে চিড়িয়াখানা কি বিড়লা প্লানেটরিয়াম-এ যান। সেই শিক্ষক-দম্পতি কয়েকদিন নেই। বাড়ির দরজা বন্ধ। আলো নেভানো। এর মাঝে পুলিশের কাছে খবর এসেছে। কলকাতায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ নকশাল নেতার আনাগোনা চলছে। কোনও কিছু সন্দেহজনক দেখলেই তা যেন থানার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে জানানো হয়।
যাই হোক, এরকম একটা সময়ে সেলিমপুর বাইলেনের এক টিকটিকি হঠাৎ মাঝরাতে অমিতাভ আর মনীষা সেনের তালা বন্ধ বাড়ির বন্ধ জানলার ফাঁক দিয়ে অল্প আলো দেখতে পেল। সে তার এক সঙ্গীকে নিয়ে একতলার জানলায় ভালো করে নজর করতে গেল।—চলবে
অমিতাভ-মনীষা কলকাতার বাইরে গিয়েছিলেন। বাড়ি চাবি দিয়ে বন্ধ ছিল। কিন্তু সমস্যা হল। চরমপন্থী সশস্ত্র আন্দোলন রোখার জন্যে পুলিশ প্রশাসন তখন সারা শহরে তাদের অনেক গুপ্তচর নিয়োগ করেছিল। স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় ব্রিটিশ পুলিশ একই পদ্ধতি অনুসরণ করতো। সে যুগে তাদের টিকটিকি বলা হতো। এ যুগে তারাই খোচোর। ‘চর’ শব্দের আধুনিক অনুপ্রাস? না কি খোঁজ আনে যে চোর- খোচোর! কর্মধারয় সমাস? অবশ্য অভিধানে ‘খেচর’ হল আকাশগামী, নভোচর। পাখির মতোই উড়ে উড়ে নজর করে। দূর থেকে লক্ষ্য করে ধরতে গেলেই ফুড়ুৎ। তবে পুলিশ কোনও কারণে ‘মামু’ সেটা বলা শক্ত।
পুলিশের এইসব টিকটিকি বা খোচোর পাড়ায় পাড়ায় শহরের অলিতেগলিতে মানুষজনকে নজর করতো। তারা জানত সেলিমপুর বাই লেনে এক স্বামী-স্ত্রী মাস্টারমশাই আছেন। সন্ধেবেলা টিউশনি করেন, দরজা বাইরে জুতো-চটির পাহাড় বর্ষাকালে বালতিতে বা টিনের কাটা ক্যানেস্তারায় ভিজে চুপসে থাকা ছাতার ভিড়। ছুটির দিনে কখনও-সখনও ছাত্রদের নিয়ে চিড়িয়াখানা কি বিড়লা প্লানেটরিয়াম-এ যান। সেই শিক্ষক-দম্পতি কয়েকদিন নেই। বাড়ির দরজা বন্ধ। আলো নেভানো। এর মাঝে পুলিশের কাছে খবর এসেছে। কলকাতায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ নকশাল নেতার আনাগোনা চলছে। কোনও কিছু সন্দেহজনক দেখলেই তা যেন থানার বিশেষ দায়িত্বপ্রাপ্ত অফিসারকে জানানো হয়।
যাই হোক, এরকম একটা সময়ে সেলিমপুর বাইলেনের এক টিকটিকি হঠাৎ মাঝরাতে অমিতাভ আর মনীষা সেনের তালা বন্ধ বাড়ির বন্ধ জানলার ফাঁক দিয়ে অল্প আলো দেখতে পেল। সে তার এক সঙ্গীকে নিয়ে একতলার জানলায় ভালো করে নজর করতে গেল।—চলবে
ছবি প্রতীকী। সৌজন্যে; সত্রাগ্নি।
বসুন্ধরা এবং… ২য় খণ্ড/পর্ব-১২
* বসুন্ধরা এবং… দ্বিতীয় খণ্ড (Basundhara Ebong-Novel Part-2) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।
গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম
‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷ ইমেল: samayupdatesin.writeus@gmail.com