রবিবার ৬ অক্টোবর, ২০২৪


অলঙ্করণ : সৌরভ চক্রবর্তী

শৈলেন একটা ছোটখাট চাকরি করে। ওর আসল মন নাটকে। শখের নাট্যদল আছে একটা। সেখানে রিহার্সাল, নাট্যপাঠ, নাট্যাভিনয় এসব নিয়েই পড়ে থাকে। না, পড়ে থাকে বললে ভুল হবে, পড়ে ছিল। করোনার দাপটে সব বন্ধ এখন। কতবার কতরকম করে লকডাউন হচ্ছে। শৈলেন এখন বেশিরভাগ সময় বাড়িতেই থাকে।
বাড়িতে থেকে একটাই কাজ করে, ভাইপো কুট্টুসের সঙ্গে সময় কাটায়। ওকে পড়ায়, গল্প বলে, ছবিটবি আঁকে দুজনে মিলে। কুট্টুস ওর বেশ কথা শোনে৷ ওকে বলেছিল, ‘কুট্টুস তুই একটা আপেল আঁকবি তো ড্রইংখাতায়৷ এমন সুন্দর করে আঁকবি যাতে দেখলেই খেতে ইচ্ছে করবে।’
আজ সকালে ঘরে ঢুকে শৈলেন দেখল কুট্টুস ওর ড্রইংখাতায় আপেলের ছবি রং করছে। দেখেই মন ভালো হয়ে গেল শৈলেনের। কিন্তু একটু ভালো করে তাকিয়েই লাফিয়ে উঠল, ‘এ কী করছিস কুট্টুস! তুই আপেল রং করার জন্য বউদির লিপস্টিক নিয়েছিস?’
‘তাতে কী হয়েছে কাকু?’ ভারিক্কি চালে ভাইপোর জবাব।
‘তাতে কী হয়েছে মানে? তোর মনে নেই, একবার ছবি রং করার জন্য লুকিয়ে কাকির লিপস্টিক নিয়েছিলিস, কী কাণ্ড হয়েছিল! কাকি রাগ করে সারাদিন খায়নি। কথাও বলেনি কারও সঙ্গে। লিপস্টিক যে কাকির প্রাণ তুই জানিস না?’
‘চাপ নিও না কাকু৷ কিছুই হবে না।’ উদাসীন স্বরে কুট্টুসের জবাব।
‘তোর এবার নির্ঘাত সাতদিনের ফাঁসি হবে। শুধু লালটাই না। তোর পাশে বউদির আরও দুটো লিপস্টিক রয়েছে দেখতে পাচ্ছি। একটা মেরুন, একটা গোলাপি।’
‘ওগুলো দিয়েও ড্রইং করব।’
‘তোর সাহস এত বেড়েছে?’
ঠিক এমন সময় কুট্টুসের কাকি ঘরে ঢুকল। মুখটা অন্ধকার কিন্তু রাগ নেই। তবে হাসিও নেই। শান্ত ভাব কিন্তু ভারাক্রান্ত। মনমরা বলাই ভালো। শৈলেন তো বুঝতেই পারছে না, কেসটা কী? এতক্ষণে তো বউদির রাগে ফেটে পড়ার কথা! কুট্টুস কোন ছার, শৈলেনেরই বুক ঢিপঢিপ করছে।
বউদি বলল, ‘চিন্তা কোরো না ভাই। কুট্টুসকে আমিই ওগুলো খেলার জন্য দিয়েছি৷ ড্রইং করলেও আপত্তি নেই।’
‘তুমি লিপস্টিকগুলো কুট্টুসকে দিয়েছ ড্রইং করার জন্য! আমি কি ঠিক শুনছি?’
‘ঠিকই শুনছ। গত চারমাস কি তারও বেশি একদিনও লিপস্টিক লাগানোর সুযোগ পাইনি। সব সময় মাস্ক পরে বেরোই। সামনের বছরটাও কোভিড-১৯-এর ভয়ে মাস্ক পরে ঘুরতে হবে৷ আমার লিপস্টিকগুলো ড্রেসিংটেবিলে পড়ে পড়ে কাঁদবে শুধু। হয়তো কয়েকটার এক্সপায়ারি ডেটও পার হয়ে যাবে। তাই ওগুলো কুট্টুসকে খেলতে দিয়ে দিলাম। এভাবেই আমার সাধের জিনিসের সৎকার হোক।’
* গল্প (Short Story) সৎকার (Satkar) : বিনতা রায়চৌধুরী (Binata Roy Chowdhury), সাহিত্যিক

গল্প ও উপন্যাস পাঠানোর নিয়ম

‘সময় আপডেটস’-এর এই বিভাগে যাঁরা গল্প ও উপন্যাস পাঠাতে চান তাঁরা ছোটদের ও বড়দের আলাদা আলাদা গল্প পাঠাতে পারেন৷ বুঝতে সুবিধার জন্য ইমেলের ‘সাবজেক্ট’-এ বিভাগের উল্লেখ করবেন৷ ছোটদের গল্পের জন্য ১০০০ শব্দ ও বড়দের গল্পের জন্য ১০০০-১৫০০ শব্দের মধ্যে পাঠাতে হবে ইউনিকোড ফরম্যাটে। সঙ্গে ঠিকানা ও যোগাযোগ নম্বর দিতে ভুলবেন না৷ গল্প বা উপন্যাস নির্বাচিত হলে যোগাযোগ করা হবে৷
ইমেল : samayupdatesin.writeus@gmail.com


Skip to content