বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনের একটা অন্যতম সমস্যা হল অনিদ্রা। বিশ্বের প্রায় অধিকাংশ মানুষ কোনও না কোনওভাবে অনিদ্রার শিকার। জানেন কি, অনিদ্রা কিন্তু এমন একপ্রকার বিশেষ রোগ যা একাধিক কারণের ফলে ঘটতে পারে। প্রথম পর্যায়ে আমরা যদি অনিদ্রার কারণগুলি ঠিকমতো বোঝার চেষ্টা না করি তাহলে এর সমাধানের রাস্তা খুঁজে পাওয়া কিন্তু সহজে সম্ভবপর হবে না। তাই আমাদের আজকের আলোচনায় আমরা অনিদ্রার কারণগুলি একটু বুঝে নেওয়ার চেষ্টা করব।
প্রথমত: স্ট্রেস, এটি বর্তমান জীবনে এমন একটি বিষয় যার হাত থেকে কোনও মানুষেরই নিস্তার নেই। কাজের চাপে হোক বা ব্যক্তিগত জীবনের সমস্যা, সবক্ষেত্রেই মানুষ এখন স্ট্রেসের শিকার। জানেন কি, এই স্ট্রেস কিন্তু আপনার ঘুমের অন্তরায় হয়ে উঠতে পারে খুব অনায়াসেই।
দ্বিতীয়ত: এই কারণটির জন্য আমরা নিজেরাই অনেকাংশে দায়ী। আমাদের নিজেদের অবহেলার কারণেই আমাদের স্লিপ সাইকেল পুরোপুরি বদলে গিয়েছে ইদানীংকালে। আমাদের ছেলেবেলাতেও আমরা দেখেছি, মা বাবারা রাত দশটা বাজা মানেই আমাদের ঘুমোতে পাঠিয়ে দিতেন, আর এখন তো মানুষ সারারাত কাজ করে ভোর পাঁচটাতেও ঘুমোতে যান। পাশাপাশি রয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ার প্রতি আসক্তি। রাত পর্যন্ত মোবাইল ঘাঁটার ফলে মোবাইলের যে যান্ত্রিক রশ্মিটি চোখে এবং শরীরে প্রবেশ করে তা ঘুমের জন্য তো বটেই আমাদের শারীরিক সুস্থতার জন্যেও হানিকারক। আমাদের মস্তিষ্ক মধ্যস্থ পিটুইটারি গ্রন্থি ও হাইপোথ্যালামাস আমাদের স্লিপ সাইকেলটিকে নিয়ন্ত্রণ করে একটি নির্দিষ্ট শারীরবৃত্তীয় ছন্দকে বজায় রাখার মাধ্যমে। আমরা সেই ছন্দটিকে নিজেদের অনিয়মিত জীবনাচরণের ফলে নষ্ট করে ফেলছি, যার ফলে আমাদের অনিদ্রার শিকার হতে হচ্ছে।
তৃতীয়ত: নির্দিষ্ট কিছু রোগ যেমন অ্যাংক্সাইটি, ক্রনিক ডিপ্রেশনের মতো রোগগুলিও কিন্তু অনিদ্রার জন্য দায়ী হতে পারে। আমাদের মস্তিষ্কের কিছু নিউরোট্রান্সমিটারের ভারসাম্যহীনতার কারণে অ্যাংক্সাইটির জন্ম নেয় মানুষের মধ্যে। এছাড়াও যদি কোনও মানুষ আর্থ্রাইটিসের মতো কোনও ক্রনিক যন্ত্রণার শিকার হন তাহলেও অনিদ্রার সমস্যা দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি ডিলিউশানাল সমস্যা স্কিৎজোফ্রেনিয়া, হ্যালুসিনেশনের মতো কোনও মেজর সাইকোসিসের শিকার হলেও কিন্তু মানুষ অনিদ্রার সমস্যায় ভোগেন।
সাধারণভাবে উপরিউক্ত বিষয়গুলিই অনিদ্রার মূল কারণ হিসাবে পরিগণিত হয়, যার কিছুটা আপনার নিজের হাতেও রয়েছে। নিজের অভ্যাসের বদল ঘটান, অনিয়মিত জীবনযাপনকে বিদায় জানান, অনিদ্রাও দেখবেন ধীরে ধীরে আপনার জীবন থেকে বিদায় নিয়েছে। আর তারপরেও সমস্যার সমাধান না হলে বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন, তাঁর পরামর্শ মেনে চলুন, সুস্থ ও প্রাণবন্ত জীবনের অধিকারী হোন।