মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

আমার কাছে প্রায়শই বিভিন্ন বয়সের পুরুষেরা আসেন তাঁদের একাধিক রকমের যৌন সমস্যা নিয়ে। সেই সব সমস্যার মধ্যে কয়েকটি উল্লেখযোগ্য হল—হস্তমৈথুন, শীঘ্রপতন, যৌন শিথিলতা এবং সম্ভোগে অপারদর্শিতা। তবে আজ আমি আলোচনা করব মূলত হস্তমৈথুন নিয়ে। এ বিষয়ে পুরুষদের মূল প্রশ্ন, ‘আমি ছাত্রাবস্থায় বহুবার হস্তমৈথুন করেছি। এর ফলে আমার পরবর্তী যৌন জীবনে কোনও সমস্যা হবে না তো?’ কারও বক্তব্য, ‘বিবাহজীবন সুখের হবে তো?’ আবার অনেক বিবাহিত পুরুষও হস্তমৈথুনের অভ্যাস ত্যাগ না করতে পারায় অনুশোচনা বা অপরাধ বোধে ভোগেন—এমন উদাহরণ আছে অনেক। কারও কারও আবার অতিরিক্ত এসব করতে গিয়ে এক ধরনের মানসিক সমস্যা দেখা দিচ্ছে! কোনটা ঠিক কোনটা ভুল? এর বিজ্ঞানগত দিকটি কী? দিনে, সপ্তাহে বা মাসে কতবার পর্যন্ত স্বাভাবিক? এই অভ্যাস ত্যাগ করতে না পারলে ভবিষ্যতে এসবের জন্য কোনও শারীরিক বা মানসিক সমস্যা দেখা দিতে পারে কি না? এরকম হাজারো প্রশ্ন পুরুষদের মনে ভিড় করে। এঁদের মধ্যে কেউ সাহস করে বা সংকোচ এড়িয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন, কেউ আবার কে কী ভাববে এসব ভেবে লজ্জায় ডাক্তারবাবুর চেম্বারে যাওয়ার কথা ভাবতেই পারেন না।

এ বিষয়ে আমার পর্যবেক্ষণ: এটি পুরুষদের একটি অত্যন্ত স্বাভাবিক যৌন প্রক্রিয়া। বহু ছেলেই অল্প বয়সে ছাত্রাবস্থায় এসব করে থাকে। কেউ ব্যাপারটিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে, আবার কারও এটি অভ্যাসে পরিণত হয়। অনেকেই তাঁর জীবনে কোনও না কোনও সময় হস্তমৈথুন করেছেন। সুতরাং স্বাভাবিক কোনও কাজ কখনওই শরীরের পক্ষে ক্ষতিকারক হতে পারে না। মনে রাখতে হবে, বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের মধ্যে হরমোনের বিভিন্নরকম পরিবর্তনের মাধ্যমে যে ‘সেক্সুয়াল ডেভেলপমেন্ট’ হয় তারই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হল হস্তমৈথুন। এই প্রক্রিয়ায় একজন পুরুষ তার যৌনতৃপ্তি উপভোগ করে। সুতরাং বিষয়টিকে নিয়ে অযথা উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনও দরকার নেই।

কতবার স্বাভাবিক

এখন প্রশ্ন আসতে পারে, দিনে বা সপ্তাহে বা মাসে কতবার এটি করা স্বাভাবিক? এক্ষেত্রে আমার পরামর্শ, এর কোনও নির্দিষ্ট নিয়ম নেই। শরীরের মলমূত্র ত্যাগের মতো এটিও একটি স্বাভাবিক যৌন প্রক্রিয়া মাত্র। তাই কেউ যদি সপ্তাহে তিন-চারবার কিংবা প্রতিদিন একবার করে করেন তার মধ্যে অস্বাভাবিকতার কিছু নেই। অহেতুক বিষয়টিকে নিয়ে দুশ্চিন্তা না করাই বুদ্ধিমানের কাজ৷

সমস্যা হচ্ছে কি না, বুঝবেন কী করে?

কতবার এই যৌন প্রক্রিয়া করলে শারীরিক সমস্যা হতে পারে তা নিয়ে বেশিরভাগ অল্পবয়সি তরুণ বা যুবকদের মধ্যে একটা চাপা উদ্বেগ কাজ করে। এ বিষয়ে আমার পরিষ্কার বক্তব্য: অতিরিক্ত মলমূত্র ত্যাগ করা বা অত্যধিক পরিমাণ খাবার খাওয়া যেমন শরীরের পক্ষে ভালো নয়, ঠিক তেমনি প্রতিদিন একাধিকবার হস্তমৈথুন করাও স্বাস্থ্যকর নয়।
অনেক সময় কেউ হয়তো সচেতনভাবে এটি করতে চাইছেন না, কিন্তু তার মনের মধ্যে এমন কিছু যৌন চিন্তা-ভাবনা কাজ করছে যার জন্য তিনি হস্তমৈথুন করতে বাধ্য হচ্ছেন। কারও ক্ষেত্রে এরকম অভিজ্ঞতা হলে বুঝতে হবে সত্যিই এটা একটা সমস্যা তৈরি হচ্ছে। কারণ, ওই আসক্তির ফলে তাঁর ব্যক্তিগত জীবন, সামাজিক, পড়াশোনা, অর্থনৈতিক, কর্মক্ষেত্র, সম্পর্ক-সহ একাধিক ক্ষেত্রে একটা বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি করছে। ক্রমশ বিষয়টি আর স্বাভাবিক পর্যায়ে না থেকে একটা বিপজ্জনক দিকে এগিয়ে চলেছে। এমনকী তা শরীরের পক্ষেও ক্ষতিকারক হয়ে উঠছে। চিকিৎসার পরিভাষায় একে বলা হয় ‘কম্পালসিভ মাস্টারবেশন’। এমনও দেখা গিয়েছে, হতাশা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্যও অনেকে হস্তমৈথুনে আসক্ত হয়ে পড়েন। এমন পরিস্থিতি দেখা দিলে সময় না নষ্ট করে দ্রুত একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

কোনও যৌন সমস্যা হতে পারে কি?

কেউ বলতে পারেন, হস্তমৈথুনের ফলে কি ভবিষ্যতে শরীরে কোনও যৌন সমস্যা হতে পারে? এর উত্তর হল—আগেই বলেছি, যেহেতু এটি একটি স্বাভাবিক যৌন প্রক্রিয়া, ফলে এর থেকে সাধারণত তেমন কোনও শারীরিক সমস্যা দেখা যায় না। তবে সমস্যা যে একেবারেই হয় না, তা নয়। এক্ষেত্রে যেটা দেখা যায়, সেটা হল—এই যৌন প্রক্রিয়া কারও কারও মধ্যে একটা অপরাধবোধ কাজ করে। অর্থাৎ কারও মনে হতে পারে এই যৌন অভ্যাসে তাঁর কোনও ক্ষতি হচ্ছে না তো? এই চিন্তা যদি বারবার মাথায় আসে তবে সত্যি সত্যিই একটা মানসিক সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে ধরা হয়। শুধু তাই নয়, নিজে সতর্ক না হলে বা বিষয়টিকে নিয়ন্ত্রণে না রাখতে পারলে ভবিষ্যতে এই যৌন অভ্যাস থেকে নানা ধরনের মানসিক সমস্যাও দেখা দিতে পারে।

তাই এ বিষয়ে আমার জরুরি পরামর্শ: হস্তমৈথুন একটি স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় যৌন প্রক্রিয়া। স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে এর মধ্যে কোনও অস্বাভাবিকতা খোঁজার তেমন দরকারই নেই। অযথা উদ্বিগ্নতা বা অনুশোচনায় ভুগবেন না। শুধু মাথায় রাখবেন, সুরক্ষিত ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনই শারীরিক ও মানসিকভাবে ভালো থাকার মূল মন্ত্র।

যোগাযোগ: ৯৪৩৩২৯১৮৭৭


Skip to content