বুধবার ১৩ নভেম্বর, ২০২৪


এদিকে নলরাজা নিজের এমন বিকৃত দশা দেখে হতবাক হয়ে গেলেন। কর্কোটক নাগ রাজার এই মনের অবস্থা বুঝতে পারলেন। তিনি বলে উঠলেন, রাজা আপনার মঙ্গলের জন্যই এমন বিকৃত দশা করলাম। যার চক্রান্তে আপনার এমন দুর্দশা সে অতি কষ্টে আপনার দেহে বাস করবে। যতক্ষণ না সে আপনাকে ত্যাগ করবে, এমন গুরুতর কষ্ট ভোগ করবে সে।’ কর্কোটক নাগ বলেন, যদিও রাজা নিরপরাধ, তথাপি তাঁর মঙ্গলের জন্য এমন বিকৃতদেহে বাস করাটাই তাঁর পক্ষে শ্রেয়। নাগরাজ নলরাজাকে বলেন, ‘হে রাজন, আপনি আজ থেকে সারথি বাহুক নামে পরিচিত হবেন। এই পরিচয়ে অযোধ্যানগরীতে ঋতুপর্ণরাজার কাছে গমন করুন। তিনি অক্ষবিদ্যা জানেন। আপনি তাঁর কাছ থেকে অক্ষবিদ্যা শিক্ষা করবেন পরিবর্তে তাঁকে অশ্ববিদ্যা দান করবেন। এই ভাবে ধীরে ঋতুপর্ণরাজার সাথে আপনার সখ্যতা তৈরি হবে। আমি নিজেও ধীরে পাশাখেলায় দক্ষতা অর্জন করবেন। তারপর খুব শীঘ্রই আপনি নিজের স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গেও মিলিত হবেন।’ কর্কোটক নাগ রাজাকে এক আশ্চর্য বস্ত্র দিলেন। আর বললেন, যখনি আপনি নিজেকে আগের রূপে দেখতে চাইবেন, এই পোশাক পরিধান করবেন।’
কর্কোটকনাগ চলে গেলে বিকৃতদেহধারী নলরাজা ঋতুপর্ণরাজার রাজদরবারে গিয়ে নিজেকে অশ্ববিদ্যাবিশারদ বলে পরিচয় দিলেন। বললেন, প্রয়োজনে রাজা রাজকার্য পরিচালনার জন্যও তাঁর ওপর ভরসা করতে পারেন। রান্নাবান্না থেকে শুরু অন্যান্য শিল্পকাজেও বিশেষ দক্ষতা আছে বলে জানালেন। ঋতুপর্ণরাজা এ কথা শুনে অত্যন্ত খুশি হলেন। এমন একজন সঙ্গীকে না চায়! রাজার আগের সারথি বার্ষ্ণেয় ও বাহুলের সঙ্গে সঙ্গে বাহুকরূপী নলও রাজার পরিবারের একজন হয়ে গেলেন। রাজার একটা ঠাঁই হল বটে। কিন্তু দময়ন্তীর জন্য তীব্র দুশ্চিন্তা আর দুঃখ তাঁকে তাড়া করে বেড়াত। প্রতিদিন সন্ধ্যায় তিনি দময়ন্তীকে মনে করে একটি শ্লোক পাঠ করতেন –
ক্ব নু সা ক্ষুত্পিাপাসার্তা শ্রান্তা শেতে তপস্বিনী।
স্মরন্তী তস্য মন্দস্য কং বা সাঽদ্যোপতিষ্ঠতি।।
আরও পড়ুন:

পুজোয় শেষ মুহূর্তের কেনাকাটার জন্য কলকাতায় চালু হল বিশেষ বাস পরিষেবা, কোন কোন রুটে চলবে?

গাউন, গ্লিটজ, গ্ল্যামার…রকমারি কাট, রঙের বাহার, কিন্তু আপনার জন্য কেমন গাউন ‘পারফেক্ট’ বুঝবেন কী করে?

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ১৫: হৃদয়ে হৃদয় মিলল মিথিলা অযোধ্যার

খিদে তেষ্টায় কাতর সেই শ্রান্ত রমণী আজ কোথায় শয়ন করছে? সেই অল্পবুদ্ধিকে স্মরণ করে সে কার ঘরে আশ্রয় নিয়েছে?
তাঁর এই প্রতিদিনের বিলাপ শুনতে শুনতে একদিন জীবল জিজ্ঞাসা করে, কে সেই রমণী যার জন্য এমন শোক কর? নলরাজা তখন জীবলকে উদ্দেশ্য করে বলেন, এক পুরুষ ও এক নারীর অতি গভীর প্রণয় ছিল। পুরুষ ছিল অল্পবুদ্ধিসম্পন্ন। কোনও প্রয়োজনে সে সেই নারীকে ছেড়ে চলে এসেছে। স্ত্রীকে ছেড়ে এসে সেই পুরুষ অত্যন্ত দুঃখে কাতর আর তীব্র শোকে পুড়তে পুড়তে সে অনবরত ঘুরে চলেছে আর প্রতিদিন সেই নারীর দুঃখ মনে করে এমন শ্লোক পাঠ করে চলেছে।
শুধু জীবল জানলেন এক দুঃখিনী নারী আর পুরুষের কথা। আর নলরাজা সবার অজ্ঞাতে ঋতুপর্ণরাজার গৃহে বাস করতে লাগলেন।
আরও পড়ুন:

শিশুকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছেন? কোন কোন বিষয়ে সতর্কতা প্রয়োজন? কী কী ওষুধ সঙ্গে রাখবেন? রইল পরামর্শ

আরও ১৫ হাজার স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড দেবে নবান্ন, নভেম্বরের মধ্যে মোট ৫০ হাজারের লক্ষ্যমাত্রা নিল রাজ্য

আজকের আলোচনা মাধ্যমিক ইংরেজি পরীক্ষার খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় নিয়ে — PHRASAL VERB

এদিকে দময়ন্তীর পিতা ভীমরাজা নল আর দময়ন্তীর খোঁজে দিকে দিকে লোক পাঠালেন। তাদের মধ্যে সুদেব নামে এক ব্রাহ্মণ এ রাজ্য সে রাজ্য খুঁজতে খুঁজতে চেদিরাজ্যে এসে পৌঁছলেন। রাজবাড়িতে তখন যজ্ঞের প্রস্তুতি চলছে। রাজকন্যা সুনন্দার সঙ্গে শোকেদুঃখে শীর্ণকায় দময়ন্তীও সেই যজ্ঞসভায় উপস্থিত ছিলেন। সেই অবস্থায় দময়ন্তীকে চেনা দুষ্কর ছিল। দময়ন্তীর ভ্রূযুগলের মধ্যিখানে একটি জড়ুল ছিল। যদিন দময়ন্তীর শরীরের বর্ণ নানা ঘাত প্রতিঘাতে মলিন হয়েছিল, কিন্তু সুদেবের চোখ দময়ন্তীকে চিনতে ভুল করল না। আর অগ্রপশ্চাত্‍ বিবেচনা না করে সুদেব সরাসরি দময়ন্তীকে সম্বোধন করে বললেন, ‘হে নলমহিষী, আমার মতো শত শত ব্রাহ্মণ আপনার খোঁজে দিগ্বিদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আপনার পরিবারের সকলে কুশলে রয়েছেন কিন্তু কেবল আপনারই জন্য যেন তাঁরা প্রাণহীন হয়ে আছেন।’ দময়ন্তী সুদেবকে চিনতে পেরে অত্যন্ত কাতর হয়ে কাঁদতে লাগলেন। দময়ন্তীর ক্রন্দন রাজকুমারী সুনন্দাকেও দুঃখিত করে তুলল।

কিন্তু তিনি কিছুই বুঝতে না পেরে মায়ের কাছে গিয়ে সব খুলে বললেন। চেদিরাজমহিষী সুদেবকে ডেকে পাঠালেন। জানতে চাইলেন সৈরিন্ধ্রীর পরিচয়। ধীরে ধীরে সুদেব বলে চললেন নলরাজা আর দময়ন্তীর কথা। সেসব কথা শুনে যেমন আশ্চর্য হলেন রাজকন্যা সুনন্দা, তেমনি হলেন রাজমহিষী। সুনন্দা ধীরে দময়ন্তীর জড়ুলটির ওপরের মল পরিষ্কার করলে সুদেবের কথাই সত্যি বলে প্রমাণিত হল। সেই দেখে রাজকন্যা আর রানি নীরবে কেঁদে উঠলেন। ধীরে রাজমহিষী নিজেকে সংবরণ করে বলে ওঠেন, ‘তুমি আমার বোনের মেয়ে। এই জড়ুল দেখে তোমায় চিনতে পেরেছি আমিও।’ বহুকাল পর দময়ন্তীর আত্মীয়সংযোগ হল। খুশির ঝলক দেখা দিল তাঁর চোখেমুখে। প্রিয়মিলনের আশা জেগে উঠল নৈরাশ্যে ভরা মনে। মাসির উদ্যোগে দময়ন্তী পিতৃগৃহে ফিরে গেলেন। পিতা মাতা পুত্র কন্যা বন্ধুদের সঙ্গে মিলিত হলেন। একমাত্র নলরাজারই কোনও সন্ধান দিতে পারল না কেউ। সকল সুখের মাঝেও এই এক প্রবল দুঃখ তাঁকে অস্থির করে তুলল।

Skip to content