অর্জুন স্বর্গে গিয়েছেন। আর এদিকে অর্জুনকে ছাড়া পাণ্ডবদের আরো পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। কাম্যকবনে সংযমে, আত্মসমালোচনায়, সাধুসঙ্গে অন্যরকমের যাপন চলছে তাঁদের। অর্জুনের অভাব তাঁরা প্রতি মুহূর্তেই অনুভব করেন। কিন্তু এও বোঝেন যে বৃহত্তর স্বার্থে সাময়িক দুঃখ কষ্টকে সহ্য করে নিয়ে পথ চলতে হবে তাঁদের। রাজধর্মপালনকালীন সে উত্তেজনা আজ অনেকটাই প্রশমিত। তবে পাশার আসরের স্মৃতি আজও তাড়া করে তাঁদের, তীব্র যন্ত্রণা কুরে কুরে খায়। সেদিন বৃহদশ্বমুনি এসেছেন পাণ্ডবদের সাথে সাক্ষাৎ করতে। যুধিষ্ঠির কথায় কথায় মনোকষ্টের কথা মুনির কাছে প্রকাশ করে ফেলেন। সখেদে কাতর স্বরে বলে ওঠেন, ‘হে ঋষিপ্রবর! আমার মতো এমন অল্পভাগ্যশালী রাজা কি আদৌ আছেন?’ ‘ন মত্তো দুঃখিততরঃ পুমানস্তীতি মে মতিঃ’। ভূয়োদর্শী মুনি বলে ওঠেন, রাজন্ ! আপনার চাইতেও দুঃখী রাজা ছিলেন। আজ আপনাকে সেই কাহিনী শোনাব।’
মুনি বলে চলেন — নিষধদেশে বীরসেন নামে এক রাজা ছিলেন। তাঁর পুত্র ছিলেন নল। বহুগুণের আধার নল একাধারে যেমন শাস্ত্রে নিষ্ণাত ছিলেন, তেমনি বীরও ছিলেন। কেবলমাত্র একটি ব্যসনে তাঁর আসক্তি ছিলেন। সেটি হল পাশাখেলা। রাজা বীরসেনের পর তাঁর পুত্র বসেন সিংহাসনে।
এদিকে বিদর্ভদেশে ভীম নামের এক মহাপরাক্রমশালী রাজা ছিলেন। সন্তানহীন রাজার পত্নী ঋষির আশীর্বাদে চার সন্তানের জন্ম দেন। তিনটি পুত্র আর একটি কন্যা। পুত্রেরা ছিলে সর্বগুণের আধার ও বীর। আর অপূর্বসুন্দরী কন্যাটি ছিলেন রত্নবিশেষ। নিষধরাজা নলের কন্দর্পকান্তি রূপও সর্বজনবিদিত ছিল। নল আর দময়ন্তীর বিবাহ হলে তাঁরা রাজযোটক হতে পারেন, একথা যেন লোকের মুখে মুখে ফিরতে লাগল। এমন কথা শুনতে শুনতে আর একে অপরের প্রশংসা শুনতে শুনতে দেখা না হতেই একে অপরের প্রতি আসক্ত হলেন মনে মনে।
একদিন নলরাজা দময়ন্তীর কথা চিন্তা করতে করতে রাজবাড়ি সংলগ্ন একটি প্রমোদ উদ্যানে একাই বসেছিলেন। সেই স্থানে কয়েকটি আশ্চর্যদর্শন হাঁসও ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছিল। রাজা একটি হাঁসকে ধরলে হাঁসটি নলরাজাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে, হে রাজন্ ! আপনি আমায় ছেড়ে দিন। আমি আপনার প্রিয়কাজ করব। আপনার মানসপ্রেয়সী দময়ন্তীর কাছে আমি আপনার কথা বলব, যাতে তিনি অপর কোনো পুরুষের প্রতি আকাঙ্ক্ষা না করেন।’ নলের কাছ ছাড়া পেয়ে সেই হাঁস তার সঙ্গীদের নিয়ে দময়ন্তীর কাছে গেল। এমন অদ্ভুত হাঁসেদের দেখতে পেয়ে দময়ন্তী আশ্চর্য হলেন আর ধরতে গেলেন হাঁসটিকে। হাঁসটি মানুষের গলায় বলে উঠল নলের কথা, দময়ন্তীর প্রতি তাঁর অনুরাগের কথা। দময়ন্তী সেই থেকে নলের কথা চিন্তা করে করে আর প্রকৃতিস্থ হলেন না।
মুনি বলে চলেন — নিষধদেশে বীরসেন নামে এক রাজা ছিলেন। তাঁর পুত্র ছিলেন নল। বহুগুণের আধার নল একাধারে যেমন শাস্ত্রে নিষ্ণাত ছিলেন, তেমনি বীরও ছিলেন। কেবলমাত্র একটি ব্যসনে তাঁর আসক্তি ছিলেন। সেটি হল পাশাখেলা। রাজা বীরসেনের পর তাঁর পুত্র বসেন সিংহাসনে।
এদিকে বিদর্ভদেশে ভীম নামের এক মহাপরাক্রমশালী রাজা ছিলেন। সন্তানহীন রাজার পত্নী ঋষির আশীর্বাদে চার সন্তানের জন্ম দেন। তিনটি পুত্র আর একটি কন্যা। পুত্রেরা ছিলে সর্বগুণের আধার ও বীর। আর অপূর্বসুন্দরী কন্যাটি ছিলেন রত্নবিশেষ। নিষধরাজা নলের কন্দর্পকান্তি রূপও সর্বজনবিদিত ছিল। নল আর দময়ন্তীর বিবাহ হলে তাঁরা রাজযোটক হতে পারেন, একথা যেন লোকের মুখে মুখে ফিরতে লাগল। এমন কথা শুনতে শুনতে আর একে অপরের প্রশংসা শুনতে শুনতে দেখা না হতেই একে অপরের প্রতি আসক্ত হলেন মনে মনে।
একদিন নলরাজা দময়ন্তীর কথা চিন্তা করতে করতে রাজবাড়ি সংলগ্ন একটি প্রমোদ উদ্যানে একাই বসেছিলেন। সেই স্থানে কয়েকটি আশ্চর্যদর্শন হাঁসও ইতস্তত ঘুরে বেড়াচ্ছিল। রাজা একটি হাঁসকে ধরলে হাঁসটি নলরাজাকে উদ্দেশ্য করে বলে ওঠে, হে রাজন্ ! আপনি আমায় ছেড়ে দিন। আমি আপনার প্রিয়কাজ করব। আপনার মানসপ্রেয়সী দময়ন্তীর কাছে আমি আপনার কথা বলব, যাতে তিনি অপর কোনো পুরুষের প্রতি আকাঙ্ক্ষা না করেন।’ নলের কাছ ছাড়া পেয়ে সেই হাঁস তার সঙ্গীদের নিয়ে দময়ন্তীর কাছে গেল। এমন অদ্ভুত হাঁসেদের দেখতে পেয়ে দময়ন্তী আশ্চর্য হলেন আর ধরতে গেলেন হাঁসটিকে। হাঁসটি মানুষের গলায় বলে উঠল নলের কথা, দময়ন্তীর প্রতি তাঁর অনুরাগের কথা। দময়ন্তী সেই থেকে নলের কথা চিন্তা করে করে আর প্রকৃতিস্থ হলেন না।
এরপর কোনও একদিন ভীমরাজা কন্যার ভাবান্তর লক্ষ্য করে মন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনা করে রাজকন্যার বিবাহ দেওয়ার বাসনায় স্বয়ংবর সভার আয়োজন করলেন। দময়ন্তীর রূপের কথা রাজারা তো বটেই, এমনকি দেবতারাও জানতেন। দময়ন্তীর স্বয়ংবরসভায় নানা দেশ থেকে রাজারাজড়ারা এসে উপস্থিত হলে। আর এদিকে দেবরাজ ইন্দ্রও অন্যান্য দেবতাদের সাথে নিয়ে চললেন স্বয়ংবরসভার উদ্দেশ্যে। মনে মনে ভাবলেন নল দময়ন্তীর কথা যেমন লোকমুখে ফেরে, তেমন সত্যই তাঁরা রাজযোটক হতে পারেন কিনা, সে পরীক্ষাও নেওয়া যাবে। পথে দেখা হল নলের সাথে। দময়ন্তীর স্বয়ংবরসভার কথা শুনে উদ্ভ্রান্তের মতো তিনিও চলেছেন বিদর্ভের পথে। দেবতারা তাঁর পথ আটকালেন। বললেন, ‘নলরাজা, আমরা সকলেই দময়ন্তীর পাণিপ্রার্থী। আজ তোমার দেবকার্য করবার দিন। তুমি দময়ন্তীকে গিয়ে বলবে যে তিনি যেন আমাদের মধ্য থেকে কোনও একজনকে পতিত্বে বরণ করেন।’ নল কতকটা আর্তনাদের সুরেই বলে ওঠেন, ‘হে দেবগণ, আমিও তো তাঁকে মনে মনে প্রার্থনা করে স্বয়ংবরসভার পথে চলেছি। আপনাদের জন্য এমন কাজ কীভাবে আমাদের দ্বারা সম্ভব?’
এদিকে দেবতারা তাঁর কাছ থেকে আগেই প্রতিশ্রুতি আদায় করে নিয়েছেন। তাই নল দুঃখিত মনে দেবকার্য করবার জন্য দেবপ্রভাবে সকলের অগোচরে বিদর্ভরাজের অন্তঃপুরে দমযন্তীর কাছে পৌঁছালেন। সেই সাক্ষাৎ হল তাঁদের। উভয়ে উভয়কে দেখে মুগ্ধ হলেন। নলরাজা আজ দেবতাদের দূত হয়ে এসেছেন। দময়ন্তীকে দেখে তাঁর যে মনোগত বিকার হল প্রকাশ করলেন না তিনি। যথার্থ দূতের মতই দেবতাদের কথা বললেন দময়ন্তীর কাছে। দময়ন্তী মৃদু হেসে অবিচল কণ্ঠে বলে উঠলেন, ‘হে রাজন্ ! দেবতা নয়, আমি আপনার প্রতি অনুরক্ত। আর এর অন্যথা হওয়া সম্ভব নয়।’ স্বয়ংবরসভায় দময়ন্তী আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলেন, নলের মত অবিকল একপ্রকার রূপবিশিষ্ট পাঁচজন উপস্থিত হয়েছেন। তিনি বিহ্বল হলেন। অবশেষে দেবতাদের শরণ নিলেন। দেবতাদের পরীক্ষার পালা শেষ। তাঁরাও বুঝতে পেরেছেন, নল দময়ন্তী উভয়ে উভয়ের প্রতি সমান অনুরক্ত আর একে অপরের পরিপূরক। তাঁদের অনুগ্রহে দময়ন্তী নলকে চিনতে পারলেন। সকলের উপস্থিতিতে দময়ন্তী নলকে পতিত্বে বরণ করলেন।
এদিকে নল দময়ন্তীর বিবাহের পর তাঁদের আশীর্বাদ করে দেবতারা যখন ফিরে আসছিলেন পথে দেখলেন কলি আর দ্বাপর ব্যস্তসমস্ত হয়ে চলেছেন। দেবতাদের প্রশ্নের উত্তরে কলি বলে ওঠে, ‘দময়ন্তীর স্বয়ংবরসভায় চলেছি।’ নল আর দময়ন্তীর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে শুনে কলি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হল। সে বলে উঠল, ‘দেবতারা বর্তমান থাকতে নলরাজাকে দময়ন্তী কীভাবে একজন মানুষকে পতিরূপে বরণ করে?’ দেবতাদের নিষেধ অগ্রাহ্য করে কলি দ্বাপরের সঙ্গে আলোচনায় বসে, কীভাবে নল আর দময়ন্তীর জীবন ছারখার করা যায়। রাজার সর্বনাশ করবার জন্য দ্যুতপ্রিয় রাজাকে পাশাতেই নষ্ট করবার পরিকল্পনা করে তারা। পুণ্যশ্লোক নলরাজার এক সামান্য ছিদ্রপথে কলি নলরাজাকে আশ্রয় করে। কলির পরামর্শমত দ্বাপর পাশায় প্রবেশ করে। আর এদিকে কলির নির্দেশ অগ্রাহ্য করতে না পেরে কতকটা দৈবপীড়িত হয়েই পুষ্কররাজা নলরাজাকে পাশাখেলায় আমন্ত্রণ জানান।নলের অজান্তেই তাঁর জীবনে ঘোর অন্ধকার ঘনিয়ে আসে।
এদিকে নল দময়ন্তীর বিবাহের পর তাঁদের আশীর্বাদ করে দেবতারা যখন ফিরে আসছিলেন পথে দেখলেন কলি আর দ্বাপর ব্যস্তসমস্ত হয়ে চলেছেন। দেবতাদের প্রশ্নের উত্তরে কলি বলে ওঠে, ‘দময়ন্তীর স্বয়ংবরসভায় চলেছি।’ নল আর দময়ন্তীর বিবাহ সম্পন্ন হয়েছে শুনে কলি অত্যন্ত ক্রুদ্ধ হল। সে বলে উঠল, ‘দেবতারা বর্তমান থাকতে নলরাজাকে দময়ন্তী কীভাবে একজন মানুষকে পতিরূপে বরণ করে?’ দেবতাদের নিষেধ অগ্রাহ্য করে কলি দ্বাপরের সঙ্গে আলোচনায় বসে, কীভাবে নল আর দময়ন্তীর জীবন ছারখার করা যায়। রাজার সর্বনাশ করবার জন্য দ্যুতপ্রিয় রাজাকে পাশাতেই নষ্ট করবার পরিকল্পনা করে তারা। পুণ্যশ্লোক নলরাজার এক সামান্য ছিদ্রপথে কলি নলরাজাকে আশ্রয় করে। কলির পরামর্শমত দ্বাপর পাশায় প্রবেশ করে। আর এদিকে কলির নির্দেশ অগ্রাহ্য করতে না পেরে কতকটা দৈবপীড়িত হয়েই পুষ্কররাজা নলরাজাকে পাশাখেলায় আমন্ত্রণ জানান।নলের অজান্তেই তাঁর জীবনে ঘোর অন্ধকার ঘনিয়ে আসে।