শুক্রবার ৫ জুলাই, ২০২৪


বাংলা নববর্ষ কড়া নাড়ছে গৃহবাসীর দোরে। চৈত্র শেষের সাবেক কেনাকাটায় সাজো সাজো রব। এই সবকিছুর পাশাপাশিই শহর কলকাতার বুকে গত ২৩ মার্চ থেকে আগামী ৯ এপ্রিল হয়ে চলেছে এক অনবদ্য প্রদর্শনী, যার মূল সুরটি এই বাঙালি সংস্কৃতির। রয়েছে বিভিন্ন মাপের পোড়ামাটির সরা এবং বোর্ডের ওপরে শান্তিনিকেতনের ঘরানার আলপনা আর কাগজের মণ্ড দিয়ে তৈরি অপরূপ সব চিত্রিত ভাস্কর্য। দক্ষিণ কলকাতার গ্যালারি ‘চারুবাসনা’য় শান্তিনিকেতনের দুই প্রাক্তনী সৌরভ ঘোষ এবং তৃণা চট্টোপাধ্যায়ের হাত তথা মনের জাদুতে সত্যিই জমে গিয়েছে প্রাক নববর্ষের অপরাহ্ন থেকে সন্ধ্যা।
শিল্পী যোগেন চৌধুরীর দ্বারা উন্মোচিত এই প্রদর্শনীতে প্রতিদিন আসছেনও বহু শিল্পমোদী মানুষজন। কিন্তু এখনও প্রদর্শনী ভবনের অনতিদূরের অনেকেই হয়তো বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল নন। কলকাতার বাইরে যাঁরা থাকেন, এই রাজ্যে বা দেশের বিভিন্ন দূরবর্তী অঞ্চলে, তাঁরাও প্রদর্শনীটি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন ভেবেই এই প্রতিবেদনটির অবতারণা।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৯: সুরের আকাশে ঘটালে তুমি স্বপ্নের ‘শাপমোচন’

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১২: বাইগা রিসর্ট ও বস্তি

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৬: কবির ভালোবাসার পশুপাখি

 

শিল্পী সৌরভ ঘোষ

শিল্পাচার্য নন্দলাল বসু, বিনোদবিহারী মুখোপাধ্যায়, রামকিঙ্কর বেইজের ছাত্র এবং বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের কলাভবনের প্রাক্তন অধ্যাপক ননীগোপাল ঘোষ বিশ্বভারতীর নানা উৎসবকে আলপনায় সাজিয়ে তোলার পাশাপাশি একসময় বিশ্বভারতীর দেশিকোত্তম সম্মানের মানপত্র নিজের হাতের লেখায় এবং রেখায় সাজিয়ে তুলতেন। প্রাথমিক পর্বের একটা সময় বাবার দেখানো পথে আলপনা শিল্পকে হাতিয়ার করে পথচলা শুরু করলেও পরে দ্বিমাত্রিক এই শিল্পকে নিজস্ব ধারায় এক স্বতন্ত্র পথ দেখিয়েছেন তাঁর পুত্র শিল্পী সৌরভ ঘোষ। বাড়ির মেঝে থেকে এই শিল্প ক্রমেই নিজস্ব জায়গা করে নিয়েছে ঘরের দেওয়ালে, সরায় বা ক্যানভাসে।

বর্তমানে রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের রবীন্দ্র জন্মশতবার্ষিকী উদযাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ নানা অনুষ্ঠানে আলপনা দেওয়ার ডাক পান সৌরভ। পাশাপাশি তাঁর তৈরি সরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে স্মারক হিসেবেও তুলে দেওয়া হচ্ছে অনুষ্ঠানের সম্মাননীয়দের হাতে। এ ভাবেই ভ্যাটিকানের প্রতিনিধিদের হাতে পৌঁছে গিয়েছে তাঁর সরা। বর্তমান প্রদর্শনীতে সুলভমূল্যে তাঁর আঁকা সরাচিত্র এবং বোর্ড সংগ্রহ করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৪: পঞ্চমকে সিনেমা হলে বসিয়েই বেরিয়ে যান রীতা

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৩: সারাদিন যত পারেন জল খান! এতে শরীরের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে না তো? কী করে বুঝবেন?

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৩: যৌন নিগ্রহের রোজনামচা এবং আমাদের প্রতিক্রিয়া

 

শিল্পী তৃণা চট্টোপাধ্যায়

বিশ্বভারতী কলাভবনের প্রাক্তনী এবং নৈনিতাল শেরউড কলেজের একসময়ের শিল্প-অধ্যাপিকা, গত তিন দশকের ওপর শিল্পচর্চায় মগ্নপ্রাণ তৃণা চট্টোপাধ্যায়ের কাগজের মণ্ড দিয়ে তৈরি অভূতপূর্ব সৃষ্টিসম্ভার প্রদর্শিত হয়েছে এখানে। গাঢ় রঙের বৈচিত্র্যে একেকটি চিত্ররূপ যেন কবিতার মতো, অকথিত গল্পের মতো বাঙ্ময়। সংগ্রহ করাই কেবল নয়, সযত্নে আগলে রাখার মতো তাঁর সৃষ্টি।

সোমবার এবং ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিন বিকেল ৩ টে থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত প্রদর্শনী খোলা থাকবে। আগামী ৯ এপ্রিলের মধ্যে যেকোনও দিন যোগেন চৌধুরী সেন্টার ফর আর্টস-এ পৌঁছে গেলে বাঙালি নান্দনিক সংস্কৃতির এক অনন্য রূপরেখা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে।
আগ্রহীদের জন্য ঠিকানা রইল।
 

ঠিকানা

চারুবাসনা, ৩৮৮বি, ১ প্রিন্স আনোয়ার শাহ রোড, যাদবপুর, কলকাতা- ৭০০০৪৫

* সংহিতা চক্রবর্তী, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের শিক্ষিকা, বেথুন কলেজিয়েট স্কুল।

Skip to content