সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


জমজমাট বইমেলা।

আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার এটি ৪৫তম বর্ষ। ২৮শে ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে এই মেলা। যতবছর ধরে এই কলকাতা বইমেলায় যাচ্ছি, খেয়াল করে দেখেছি বইমেলার জন্য কলকাতার বইপ্রেমী মানুষজন সারাবছর অপেক্ষা করে থাকেন। কলেজ স্ট্রিট চত্বরে সকলের সব সময়ে হয়তো যাওয়া হয়ে ওঠে না, কিন্তু বইমেলার জন্য, পছন্দের বইয়ের জন্য অল্প হলেও অর্থ বরাদ্দ থাকে। চেনা অচেনা অল্পচেনা প্রকাশকদের বইয়ের থেকে নিজের পছন্দের বইটি তুলে নিতে ভোলেন না তাঁরা। আর তারপর কেনাকাটার শেষে আহারাদি সেরে নিজের নিজের গন্তব্যে ফেরা। হাতে অবশ্যই থাকে বইয়ের ঝুলি। ছোট বড় সকলের মুখে লেগে থাকে তৃপ্তির হাসি। কলকাতা ময়দানে যে মেলার যাত্রা শুরু সে আমলে ভাবতেই পারা যেতো না অন্যত্র বইমেলা হবে আর সেটাতেও আমরা অভ্যস্ত হব ধীরে। তখনকার সে বইমেলাতেও ছিল নানাবিধ আকর্ষণ। প্রতি বছরের থিম হত যে দেশের স্টলটি সেটি ভিড়ে ঠাসা থাকত, এবারও তার কোনও ব্যতিক্রম নেই।

এখনকার মেলাপ্রাঙ্গণ সল্টলেক সেন্ট্রাল পার্ক সবদিক দিয়ে সেই কলকাতা ময়দানের কথাই মনে করায়। যাতায়াতও সুবিধাজনক আবার বেশ অনেকটা এলাকা জুড়েও বটে। বরাবরের মতো দে’জ, আনন্দ পাবলিশার্স কিংবা শিশু সাহিত্য সংসদ অথবা পত্রভারতীর মতো স্টলগুলোতে উপচে পড়ছে ভিড়। নতুন কি বই প্রকাশ পেলো, হাতে নিয়ে দেখছে ছোট বড় সবাই। বিদ্বজ্জনদের ভিড় রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টলগুলিতেও। অনেক সময়েই স্বল্পমূল্যে পুরোনো বইয়ের সন্ধান মেলে এ স্টলগুলোতে। অনুষ্টুপের স্টলে দেখলাম বেশ ভিড়। বিভিন্ন উচ্চমানের প্রবন্ধের বই পাওয়া যাচ্ছে সেখানে। স্বল্পপরিচিত বা সদ্য লেখক হিসেবে যারা পরিচিতি পাচ্ছেন অথবা অনেক বিখ্যাত লেখকের লেখার যাত্রা শুরু হয় লিটল ম্যাগাজিন এর হাত ধরে। লিটল ম্যাগ প্যাভিলিয়ন তাই অনেকের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। এক ছাতার তলার এই স্টলগুলোতেও রয়েছে বেশ ভিড়। উৎসাহী পাঠক ভিড় করেছেন যদি অমূল্য রতন কিছু মেলে! বই বা ম্যাগাজিন কিনছেন, পরিচিত হচ্ছেন নতুন লেখকদের সঙ্গে।

অন্যান্য ছোট ছোট স্টলেও ভিড় করছেন উৎসাহীরা। যেমন নেচার মেটস নেচার ক্লাবের স্টলে গিয়ে দেখা গেল তাঁদেরকে, যারা পাখি আর প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা করেন। বের করেছেন বেশ কিছু বই বাংলা এবং ইংরেজিতে, তাতে যেমন রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার পাখির ছবিসহ বিবরণ, রয়েছে প্রজাপতির বিবরণ, পাওয়া যাচ্ছে ম্যানগ্রোভ জাতীয় গাছগাছালির ছবি অথবা ছোট বিবরণ সহ বুকলেট সামান্য মূল্যের বিনিময়ে। আন্তরিকতার সঙ্গে তারা প্রকৃতিচেনায় সাহায্য করছেন, হাতে তুলে দিচ্ছেন উপযুক্ত বই। বই কিনলে বিনামূল্যে দিচ্ছেন গাছের বীজ যে গাছ হলে তাতে প্রজাপতির আনাগোনা হবে। রয়েছে ভ্রমণ বা ফটোগ্রাফির বেশ কিছু স্টল, যেখানে বই, ম্যাগাজিন বা ছবি পাওয়া যাচ্ছে। ভ্রমণ পিপাসুদের জন্য এসব স্টল আদর্শ।

এবারের মেলাপ্রাঙ্গণে রয়েছে আরও অনেক রকমের আকর্ষণ। পশ্চিমবঙ্গ শিশু সুরক্ষা আয়োগের স্টলে ছোটদের জন্য বসে আঁকো প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে। কোথাও হচ্ছে বাউল গান। সন্ধ্যের মুখে মেলা ঘুরে ক্লান্ত হলে গ্যালারিতে বসে চা বা কফির কাপে চুমুক দিতে দিতে জিরিয়ে নিতে নিতে গান শুনলে মনটাই অন্যরকম হয়ে যেতে বাধ্য। পড়ন্ত সূর্যের মায়াময় আলোয় একঝলক চারপাশটা দেখতে দেখতে মনে হচ্ছিল, গ্রাম মফস্বল শহর উজিয়ে আসা লাখো মানুষ শুধু একত্রিত হয়েছে বই দেখতে, গন্ধ নিতে, কিনতে, প্রিয় লেখকদের কাছে পেতে। ভারি ভালো লাগছিল!

Skip to content