সন্তানসহ সুন্দরবনের বাঘিনী। ছবি: সংগৃহীত।
সারা গায়ে চাকা চাকা দাগ।
যথাকালে ভোজনের
কম হলে ওজনের
হত তার ঘোরতর রাগ।”
রবি ঠাকুরের ছড়ার মাধ্যমে সুন্দরবনের বাঘের সঙ্গে বাঙালির পরিচয় সেই ছোটবেলা থাকে। সুন্দরবন আর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার বা বাংলার বাঘ সারা বিশ্বের কাছে হয়ে গিয়েছে সমার্থক, অবিচ্ছেদ্য। আমাদের দেশের জাতীয় পশু বলেই শুধু নয়, বাংলার বাঘ তার আকারে, বর্ণময় রূপে, শক্তিতে, বুদ্ধিমত্তায় এবং স্বভাবে পশুরাজ্যের সুপার হিরো কিংবা হিরোইন। তাই তো সাহস আর শক্তিতে তুখোড় ব্যক্তিকে গর্ব করে আমরা বলি “বাঘের বাচ্চা”! তাই তো অসমসাহসী স্বাধীনতা সংগ্রামী যতীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় সবার কাছে “বাঘাযতীন” নামেই পরিচিত। তাই তো প্রখর ব্যক্তিত্ব, পান্ডিত্য আর কর্মোদ্যোগী স্যার আশুতোষ মুখোপাধ্যায়কে বাঙালি উপাধি দিয়েছিল “বাংলার বাঘ”। আবার ভয়ংকর সুন্দর সুন্দরবনের বাঘকে আমরা আত্মীয় হিসেবেও আপন করে নিয়েছি “মামা” সম্বোধনের মধ্যে দিয়ে। আসলে সুন্দরবন আর রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার এখন সমার্থক। শুধু ভারত, নেপাল, ভুটান, বাংলাদেশ ও চিনের সামান্য অংশে বাংলার বাঘের অস্তিত্ব থাকলেও নোনা জলের নদী-নালা-খাঁড়ি আর ম্যানগ্রোভ অরণ্যে ঘেরা সুন্দরবনের বাঘ অন্য সবার থেকে স্বভাবে অনন্য। দেশের গর্ব, বাঙলার গর্ব তথা বাঙালির গর্ব রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার অর্থাৎ সুন্দরবনের বাঘের কিছু কথা এখন জেনে নেওয়া যাক।
সুন্দরবনের বাঘের নাম কে দিল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার? সুন্দরবনের রাজা ভয়ংকর এই প্রাণীটিকে শিকার করা মোটেই সহজ কাজ নয়। আর তাই ব্রিটিশ রাজপরিবারের কেউকেটা ব্যক্তিরা নিজেদের গরিমা প্রকাশ করতে সুন্দরবনের বাঘ-শিকারকেই অগ্রাধিকার দিতেন। যিনি বেশি বাঘ শিকার করতে পারবেন তাঁর মর্যাদা তত বেশি। তাই সুন্দরবনের বাঘের সঙ্গে ব্রিটিশ রয়্যাল ফ্যামিলির এক বিপ্রতীপ সম্পর্ক তৈরি হয়। এভাবেই সুন্দরবনের বাঘ বা বেঙ্গল টাইগার আজ ব্রিটিশ রাজপরিবারের দেওয়া ইংরেজি নাম ‘রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার’ বহন করে চলেছে।
পৃথিবীর সমস্ত বাঘের বিজ্ঞানসম্মত নাম একটাই। তবে তাদের উপপ্রজাতি আলাদা। ১৭৫৮ সালে বিখ্যাত ট্যাক্সোনমিস্ট ক্যারোলাস লিনিয়াস বাঘের বিজ্ঞানসম্মত নামকরণ করেন ফেলিস টাইগ্রিস (Felis tigris)। ১৯২৯ সালে ব্রিটিশ প্রাণীবিজ্ঞানী রেগিনাল্ড পোকক এই নাম পরিবর্তন করে রাখেন প্যানথেরা টাইগ্রিস (Panthera tigris)। প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে পৃথিবীর নানা স্থানে যেসব জাতের বাঘ দেখা যায় তাদের মধ্যে পার্থক্য খুবই কম। বিজ্ঞানীরা জীবিত বাঘেদের দুটি উপপ্রজাতি চিহ্নিত করেছেন। একটির বিস্তার এশিয়ার মূল ভূখণ্ডে, যাদের উপপ্রজাতি হল টাইগ্রিস (Panthera tigris tigris) এবং অপরটির বিস্তার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় জাভা, সুমাত্রা ও বোর্নিও দ্বীপে, যাদের উপপ্রজাতি হল সোনডাইকা (Panthera tigris sondaica)। এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের বাঘের আবার দুটি গোষ্ঠী। একটি হল সাইবেরিয়ান ও ক্যাস্পিয়ান বাঘের গোষ্ঠী এবং অপরটি হল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার অর্থাৎ সুন্দরবনের বাঘ।
পৃথিবীর সমস্ত বাঘের বিজ্ঞানসম্মত নাম একটাই। তবে তাদের উপপ্রজাতি আলাদা। ১৭৫৮ সালে বিখ্যাত ট্যাক্সোনমিস্ট ক্যারোলাস লিনিয়াস বাঘের বিজ্ঞানসম্মত নামকরণ করেন ফেলিস টাইগ্রিস (Felis tigris)। ১৯২৯ সালে ব্রিটিশ প্রাণীবিজ্ঞানী রেগিনাল্ড পোকক এই নাম পরিবর্তন করে রাখেন প্যানথেরা টাইগ্রিস (Panthera tigris)। প্রকৃতপক্ষে বর্তমানে পৃথিবীর নানা স্থানে যেসব জাতের বাঘ দেখা যায় তাদের মধ্যে পার্থক্য খুবই কম। বিজ্ঞানীরা জীবিত বাঘেদের দুটি উপপ্রজাতি চিহ্নিত করেছেন। একটির বিস্তার এশিয়ার মূল ভূখণ্ডে, যাদের উপপ্রজাতি হল টাইগ্রিস (Panthera tigris tigris) এবং অপরটির বিস্তার দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় জাভা, সুমাত্রা ও বোর্নিও দ্বীপে, যাদের উপপ্রজাতি হল সোনডাইকা (Panthera tigris sondaica)। এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের বাঘের আবার দুটি গোষ্ঠী। একটি হল সাইবেরিয়ান ও ক্যাস্পিয়ান বাঘের গোষ্ঠী এবং অপরটি হল রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার অর্থাৎ সুন্দরবনের বাঘ।
সুন্দরবনের বাঘ নদীতে সাঁতারেও ওস্তাদ। ছবি: সংগৃহীত।
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের লোমের প্রধান রং হলুদ বা কমলা। এর ওপরে উজ্জ্বল কালো বা হালকা কালো ডোরা দাগ থাকে। এদের লোম অন্যান্য উপপ্রজাতির তুলনায় তুলনামূলকভাবে ছোটো এবং কালো দাগের সংখ্যা কম। জঙ্গলের মধ্যে আলো-আঁধারি পরিবেশের সঙ্গে এদের গায়ের রং দারুণ মিশে যায়। ফলে শিকার বুঝতে পারে না যে তাকে ধরার জন্য শিকারী কাছেই ওত পেতে আছে। রঙের এমন অদ্ভুত বিন্যাসের জন্য শিকারের চোখে বাঘের পুরো চেহারাটাও ফুটে ওঠে না। প্রসঙ্গত, রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের প্রধান শিকার হরিণের চোখে বাঘের উজ্জ্বল কমলা বা হলুদ রং ধরা পড়ে না। সে বাঘের রং দেখে সবুজ যা জঙ্গলের সবুজ রঙের সঙ্গে খুব মিশে যায়। ফলে শিকার ধরা ও আত্মরক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার তার গায়ের রঙের জন্য সুবিধা পায়। এখানে আরও একটা কথা বলে রাখা ভালো, প্রত্যেকটি মানুষের আঙুলের ছাপ যেমন আলাদা হয় তেমনই প্রত্যেকটি বাঘের গায়ের ডোরা দাগের বিন্যাস আলাদা হয়। সাধারণত প্রতিটি বাঘের গায়ে ২১ থেকে ২৯টি ডোরা দাগ থাকে। এদের পেট ও পায়ের পেছন দিকের রং সাদা। কমলা বা হলুদ রঙের লেজের উপরে কালো বলয়াকার দাগ থাকে। লোম কামিয়ে দেখা গেছে, বাঘের চামড়ার উপরেও অনুরূপ কালো দাগ থাকে, দেখলে মনে হবে চামড়ার উপর কালো ট্যাটু করা!
আরও পড়ুন:
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩৭: সুন্দরবনের নদীবাঁধের ভবিতব্য
পর্দার আড়ালে, পর্ব-৪৯: শ্রদ্ধাঞ্জলি— প্রযোজক-গায়িকা অসীমা মুখোপাধ্যায়, অভিনেত্রী অঞ্জনা ভৌমিক ও গীতিকার মিল্টু ঘোষ
একটা পূর্ণবয়স্ক পুরুষ সুন্দরবনের বাঘ ছয়-সাত ফুট লম্বা হয়। স্ত্রী বাঘ লম্বা হয় তুলনায় একটু কম—সাড়ে পাঁচ থেকে সাড়ে ছয় ফুট। উল্লেখ্য, ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের বাঘের তুলনায় সুন্দরবনের বাঘের আকার কিছুটা ছোট আর লেজও তুলনায় সরু। লেজের দৈর্ঘ্য ৩৩-৪৩ ইঞ্চি। মাটি থেকে এদের উচ্চতা হয় তিন-সাড়ে তিন ফুট। পূর্ণবয়স্ক পুরুষ ও স্ত্রী বাঘের ওজন হয় যথাক্রমে ২০০-২৬০ কেজি ও ১১০-১৮০ কেজি। এদের ছেদক দাঁত প্রচণ্ড শক্তিশালী হওয়ায় বাঘের কামড় থেকে নিজেকে মুক্ত করা শিকারের পক্ষে কার্যত অসম্ভব। বিড়াল জাতীয় প্রাণীদের মধ্যে সুন্দরবনের বাঘের ছেদক দাঁত সবচেয়ে লম্বা ৩-৩.৯ ইঞ্চি।
রাজকীয় ভঙ্গীতে বিশ্রামরত রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার। ছবি: সংগৃহীত।
কেন মূল ভূখন্ডের বাঘের তুলনায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের আকার ছোটো তা নিয়ে হয়েছে নানা গবেষণা। তবে জীবের বিবর্তনের নিয়ম মেনেই হয়েছে এই পরিবর্তন। শিকারের আকারের সাথে শিকারীর আকার হয় সমানুপাতিক সম্পর্কযুক্ত। মূল ভূখণ্ডে বাঘ যেসব প্রাণী শিকার করে তার তুলনায় রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের প্রধান শিকার চিতল হরিণ ও শূকরের আকার অনেক ছোটো। তাছাড়া শিকারের লভ্যতাও সুন্দরবনের জঙ্গলে অনেক কম। তাই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের অন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম এখানে অনেক বেশি। চেহারা বড় হলে সঙ্গে বাড়ে খাদ্যের চাহিদা। আর বাদাবনের মধ্যে ও নরম কাদার উপর দিয়ে দৌড়ে শিকার করা খুব কঠিন কাজ। চেহারা ছোটো হলে খাবারের চাহিদাও হবে কম, শিকার ধরার ক্ষেত্রেও হবে সুবিধা। তাই বিবর্তনের পথ ধরে সুন্দরবনের বাঘের আকার হয়ে গিয়েছে ছোট।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৩: এক্সপায়ারি ডেটের ওষুধ খাবেন?
দশভুজা, সরস্বতীর লীলাকমল, পর্ব-১৩: ইন্দিরা দেবী—ঠাকুরবাড়ির আলো!
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের সবচেয়ে পছন্দের শিকার হল ক্ষুরযুক্ত স্তন্যপায়ী প্রাণী (Ungulates), যেমন বিভিন্ন জাতের হরিণ, বুনো মহিষ, গোরু, ছাগল ইত্যাদি। সুন্দরবনের বাঘ বুনো শূকর, শেয়াল বা কুমিরও শিকার করে। এরা সাধারণত পিছন বা পাশের দিক থেকে শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে গলা কামড়ে ধরে। তারপর ঝটকা দিয়ে ঘাড় মটকে দেয়। এরপর মৃত শিকারকে প্রায় কয়েকশো মিটার পর্যন্ত টেনে কোনও নিরিবিলি ঝোপের মধ্যে নিয়ে যায়। আর সেখানেই সেরে নেয় ভোজনপর্ব। তবে প্রতিটি শিকারের প্রচেষ্টা সফল হয় না। দেখা গেছে গড়ে কুড়িটি প্রচেষ্টার মধ্যে একটি প্রচেষ্টা সফল হয়। শিকারের উপর বাঘের কামড়ের বল (Biting force) প্রায় ১০০০ পাউন্ড! একটা সুন্দরবনের বাঘ এক একবারে ১৮-৪০ কেজি মাংস খেতে সক্ষম। সাধারণত একবার পেট ভরে ভোজন করলে পুরো সপ্তাহ চলে যায়, এমনকি তিন সপ্তাহও দিব্যি না খেয়ে কাটিয়ে দিতে পারে। তবে রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার স্বাভাবিক খাবার না পেলে লালমুখো বানর, উদবিড়াল, পাখি, গোসাপ, কচ্ছপ, মাছ, ইঁদুর, কাঁকড়া, ব্যাঙ, শামুক এমনকি ফড়িংও খায়!
সুন্দরবনের বাঘ। ছবি: সংগৃহীত।
রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের গর্জন কিন্তু অন্যান্য বাঘের তুলনায় কিছুটা চাপা। তাও গর্জন প্রায় দু’মাইল দূর থেকে শোনা যায়। তবে এরা কেবল অন্য বাঘের সঙ্গে বার্তা বিনিময় করতেই হুঙ্কার দেয়। এদের দৃষ্টিশক্তি মানুষের চেয়ে ছ’গুণ বেশি, আর শ্রবণশক্তি পাঁচ গুণ বেশি। মানুষ যেখানে সর্বোচ্চ ২০ কিলো হার্জ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে সক্ষম সেখানে সুন্দরবনের বাঘ ১০০-২০০ কিলো হার্জ কম্পাঙ্কের শব্দ শুনতে পায়। ফলে রাতের অন্ধকারে যেমন শিকার করতে এরা পটু তেমনই অনেক দূরে থেকে শিকারের সন্ধান পেয়ে যায়। এদের কঙ্কাল খুব নমনীয় এবং পিছনের পা খুব লম্বা হওয়ায় একবারে ১০-১২ ফুট লাফ দিতে সক্ষম।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৮১: কবির ‘গানের ভাণ্ডারী’ দিনেন্দ্রনাথ বৈষয়িক-কারণে শান্তিনিকেতন ত্যাগ করেছিলেন
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩৫: মা সারদার ভ্রাতৃবিয়োগ
পুরুষ সুন্দরবনের বাঘ প্রজনন ক্ষমতা অর্জন করে ৪-৫ বছর বয়সে, আর স্ত্রী বাঘ ৩-৪ বছর বয়সে। এদের নির্দিষ্ট কোনও প্রজনন ঋতু না থাকলেও বেশিরভাগ শাবক জন্ম নেয় ডিসেম্বর থেকে এপ্রিল মাসের মধ্যে। বাঘিনীর গর্ভাবস্থা ১০৪-১০৬ দিন স্থায়ী হয়। আর একটা বাঘিনী একবারে ১ থেকে ৪টি শাবকের জন্ম দেয়। সাধারণত ঘাসের বা গুল্মের ঘন ঝোপের মধ্যে মা বাঘ তার বাচ্চাদের জন্ম দেয় ও প্রতিপালন করে। জন্মের সময় বিড়াল গোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ব্যাঘ্র শাবকদের চোখ ও কান পরিণত হয় না। জন্মের ২-৩ সপ্তাহের মধ্যে এদের দুধে দাঁত ওঠে, আর ৯-১০ সপ্তাহের মধ্যে ওঠে স্থায়ী দাঁত। ৩-৬ মাস বয়স পর্যন্ত এরা মায়ের দুধ খেলেও ২-৩ মাস পর থেকেই একটু একটু করে মাংস খেতে শুরু করে। ৫-৬ মাস বয়স হলে মায়ের সাথে এরা শিকার করা শিখতে বের হয়। ২-৩ বছর বয়স হলে এরা মায়ের সঙ্গ ত্যাগ করে আলাদা হয়ে যায়। পুরুষ বাঘ সাধারণত স্ত্রী বাঘের থেকে বেশি দূরে চলে গিয়ে নিজের এলাকা চিহ্নিত করে নেয়। বাচ্চারা সঙ্গ ত্যাগ করার পর মা বাঘ পুণরায় প্রজননের জন্য প্রস্তুত হয়।
বাদাবনের রাজা। ছবি: সংগৃহীত।
সুন্দরবনের বাঘের গড় আয়ু ১৫ বছর। বয়স হলে বা আহত ও অসুস্থ হলে ওদের শিকার ধরার ক্ষমতা কমে যায়। তখন এরা সহজ শিকার হিসেবে মানুষ বা গবাদি পশুকে বেছে নেয়। ফলে রাতের আঁধারে লোকালয়ে আসে গবাদি পশু শিকার করতে বা জঙ্গলে কাঠ কাটতে বা মধু, মাছ, কাঁকড়া ইত্যাদি সংগ্রহ করতে যাওয়া মানুষকে শিকার করার চেষ্টা করে। সুন্দরবনের বাঘ সাঁতারে খুব দক্ষ হয়। এরা সাধারণত ভাঁটার সময় যখন নদীতে জল কম থাকে তখন স্রোত ঠেলে নদী পেরিয়ে লোকালয়ে যায়।
সুন্দরবনের বাঘ একেবারেই অসামাজিক প্রাণী। প্রজননের সময় সঙ্গী বা সঙ্গিনী ছাড়া বাকি সময় একা একাই থাকে। স্বভাবেও এরা অলস। দিনের বেশিরভাগ সময় শুয়েই কাটায়। তার যথেষ্ট কারণও আছে। এখানে শিকার ধরা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই অকারণে ঘোরাঘুরি করে শক্তিক্ষয় করলে তাড়াতাড়ি খিদে পেয়ে যাবে। বাধ্য হয়েই ওদের আলস্যে সময় গুজরান করতে হয়। তবে একবার আলস্য ভেঙে উঠলে প্রায় ২০০ বর্গ মাইল এলাকা চক্কর দিতে পারে। শিকারের প্রয়োজনে যদি গাছে চড়তে হয় তাও করে বাংলার বাঘ। সুন্দরবনের বাঘ তো জলে নেমেও শিকার করতে ওস্তাদ। বাদাবনে গোঁজের মত বেরিয়ে থাকা শ্বাসমূলের আঘাত এবং ঘন জঙ্গলের বাধা পেরিয়ে শিকারকে ধরা খুব ঝকমারি ব্যাপার। তাই এরা শিকারের পেছনে অনেকক্ষণ দৌড়ে শক্তিক্ষয় করে না, যেমনটা করে মূল ভূখন্ডের বাঘ, সিংহ বা চিতাবাঘ। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার তাই জোর দেয় তার বুদ্ধি আর কৌশলের উপর। সাধে কি আর সে সুন্দরবনের রাজা!—চলবে।
সুন্দরবনের বাঘ একেবারেই অসামাজিক প্রাণী। প্রজননের সময় সঙ্গী বা সঙ্গিনী ছাড়া বাকি সময় একা একাই থাকে। স্বভাবেও এরা অলস। দিনের বেশিরভাগ সময় শুয়েই কাটায়। তার যথেষ্ট কারণও আছে। এখানে শিকার ধরা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। তাই অকারণে ঘোরাঘুরি করে শক্তিক্ষয় করলে তাড়াতাড়ি খিদে পেয়ে যাবে। বাধ্য হয়েই ওদের আলস্যে সময় গুজরান করতে হয়। তবে একবার আলস্য ভেঙে উঠলে প্রায় ২০০ বর্গ মাইল এলাকা চক্কর দিতে পারে। শিকারের প্রয়োজনে যদি গাছে চড়তে হয় তাও করে বাংলার বাঘ। সুন্দরবনের বাঘ তো জলে নেমেও শিকার করতে ওস্তাদ। বাদাবনে গোঁজের মত বেরিয়ে থাকা শ্বাসমূলের আঘাত এবং ঘন জঙ্গলের বাধা পেরিয়ে শিকারকে ধরা খুব ঝকমারি ব্যাপার। তাই এরা শিকারের পেছনে অনেকক্ষণ দৌড়ে শক্তিক্ষয় করে না, যেমনটা করে মূল ভূখন্ডের বাঘ, সিংহ বা চিতাবাঘ। রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার তাই জোর দেয় তার বুদ্ধি আর কৌশলের উপর। সাধে কি আর সে সুন্দরবনের রাজা!—চলবে।
* সৌম্যকান্তি জানা। সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। নিবাস কাকদ্বীপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পেশা শিক্ষকতা। নেশা লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য ‘দ্য সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ২০১৬ সালে ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ এবং শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক হিসেবে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ২০১৭ সালে ‘অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি সম্মান’ প্রদান করে সম্মানিত করেছে।