মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪


পুরুষ গাড়োল।

সুন্দরবনের কথা উঠলেই সবার মন গর্বে ভরে ওঠে। পশুজগতের রাজা রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের একমাত্র স্বাভাবিক আবাস হল এই সুন্দরবন। অতুলনীয় জীববৈচিত্র্যের জন্য ইউনেসকো সুন্দরবনকে সংরক্ষিত প্রাণমন্ডলের শিরোপা দেওয়ায় আমাদের গর্বের সীমা নেই। অনন্য ভৌগোলিক গঠন ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্যও সুন্দরবন আমাদের কাছে গর্বের ধন। এ সবই আমাদের জানা। কিন্তু এত কিছুর মধ্যে যে আর একটি অনন্য গর্বের সম্পদ রয়েছে সুন্দরবনে তা বেশিরভাগ মানুষেরই কাছে অজানা। কারণ তা নিয়ে চর্চা হয় খুব কম। অথচ এই সম্পদ সুন্দরবন ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও মেলে না, যেমনটি প্রযোজ্য রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের ক্ষেত্রে। সেই প্রাণীসম্পদটি হল সুন্দরবনের এক বিশেষ প্রজাতির ভেড়া—গাড়োল।

বাংলায় ‘গাড়োল’ শব্দটি কিন্তু একেবারে অচেনা নয়। কাউকে হাঁদা বা বোকা (Stupid) বোঝাতে আমরা অনেকেই তার উদ্দেশ্যে ‘গাড়োল’ বলে থাকি। সুন্দরবনের বিশেষ প্রজাতির এই ভেড়া হাবেভাবে সত্যিই বোকা-হাবা। চেহারা দেখেও বোকা-বোকা লাগে। অনেকের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হতে পারে। কিন্তু এটা সত্যি যে দক্ষিণ ও উত্তর ২৪ পরগনার উপকূলীয় অঞ্চল অর্থাৎ সুন্দরবন এবং পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলীয় অঞ্চল ছাড়া এই বিশেষ প্রজাতির ভেড়া পৃথিবীর আর কোথাও পাওয়া যায় না। কত হাজার বছর আগে এই প্রজাতির ভেড়া সৃষ্টি হয়েছিল, কীভাবে হয়েছিল কিংবা সুন্দরবন অঞ্চল ছাড়া আর কোথাও উৎপত্তি হয়েছিল কিনা তা আজ গবেষণা সাপেক্ষ বিষয়।
সুন্দরবনের ভূমিপুত্র হিসেবে গাড়োল ভেড়ার সঙ্গে পরিচয় আমার আশৈশব। অতীতে গ্রামে অনেকের বাড়িতেই গাড়োল পোষা হত। এক সময় আমাদের বাড়িতেও পোষা হয়েছিল। যদিও বর্তমানে সুন্দরবনবাসীর আর্থসামাজিক পরিবর্তনের ফলে গাড়োল প্রতিপালকের সংখ্যা অনেক কমে গিয়েছে। আমন ধান কাটা হয়ে গেলে মাঠে গাড়োলের পাল চরত। আবার চাষের জমিতে যখন জল জমত কিংবা নীচু অনাবাদি জমি যখন জোয়ারের সময় বা অতিবৃষ্টিতে জলমগ্ন হয়ে যেত তখন সেই জলে নেমে পুরো পা ডুবিয়ে, এমনকি পেট ছোঁয়া জলে দাঁড়িয়ে ঘাস খেতে দেখা যেত। কখনও কখনও নোনা জলও দিব্যি খেয়ে নিতে দেখেছি। কিন্তু তখন জানতাম না যে এই গাড়োল আসলে সুন্দরবনের এক সম্পদ। কীভাবে ও কবে সুন্দরবনের গাড়োল ভেড়া নিয়ে কিছু গবেষকদের আগ্রহ সৃষ্টি হল, আর কেনই বা হল তা নিয়েই এবার বলব।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩২: ইতিহাস ও বিজ্ঞানের আলোয় গঙ্গাসাগর মেলা

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-৫০: পূষণের কথা

গবেষকদের অনুমান, মধ্য ও দক্ষিণ এশিয়ার এক বন্য ভেড়ার জাত উরিয়াল (Urial) থেকে গাড়োল ভেড়া সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু কতদিন আগে তা নিয়ে এখনও কোনও ধারণা করা যায়নি। কয়েক হাজার বছর আগে সুন্দরবন অঞ্চলে যখন প্রথম মানুষ (নিগ্রয়েড গোষ্ঠী) পদার্পণ করেছিল মনে হয় তখনই তাদের সাথে উরিয়াল জাতের ভেড়ার কোনও গৃহপালিত ব্রিড এই অঞ্চলে এসেছিল। তারপর কয়েক হাজার বছরে সুন্দরবন অঞ্চলে বারে বারে ভৌগোলিক ও প্রাকৃতিক সৃষ্টি ও লয় চলেছে। বিভিন্ন বংশোদ্ভূত মানবগোষ্ঠী এই অঞ্চলে বসতি তৈরি করেছে। আর লবনাক্ত সুন্দরবন অঞ্চলে জীবনধারণের উপযোগী বৈশিষ্ট্য অর্জন করে গাড়োল ভেড়া তাদের পোষ্য হয়ে প্রতিপালিত হয়েছে।

গাড়োল জাতের ভেড়া যে সুন্দরবন অঞ্চল ছাড়া পৃথিবীর আর কোথাও নেই তা আগেই বলেছি। এই ভেড়ার এমন দুটি বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা পৃথিবীর অন্য কোনও জাতের ভেড়ার ক্ষেত্রে দেখা যায় না।

প্রথমত: এরা জলে নেমে খাবার সংগ্রহ করতে পটু। বন্যা বা জোয়ারের জলে প্লাবিত জমিতে কিংবা নদীর চরে কাদা মাটিতে নেমে নোনা এলাকার ঘাস খেতে এদের প্রায়শই দেখা যায়।
দ্বিতীয়ত: স্ত্রী গাড়োল এক একবারে দুই থেকে চারটি বাচ্চার জন্ম দিতে পারে। এই দুটি গুণ ছাড়াও অন্য আরও কয়েকটি আকর্ষণীয় গুণ রয়েছে। যেমন, এদের মাংস খুব কম চর্বি সম্পন্ন হওয়ায় স্বাস্থ্যসম্মত। আবার এরা স্বাভাবিকভাবেই পায়ের পাতার পচন (Foot Rot), মুখ ও পায়ের পাতার রোগ (Foot and Mouth Disease), জননাঙ্গ সংক্রান্ত রোগ ইত্যাদি প্রতিরোধে সক্ষম। আর উষ্ণ ও আর্দ্র আবহাওয়ায় দারুণভাবে অভিযোজিত।

স্ত্রী গাড়োল।

গাড়োল ভেড়া সবচেয়ে বেশি প্রতিপালিত হয় দক্ষিণ ২৪ পরগনার জয়নগর ১ ও ২ নং, মথুরাপুর ১ ও ২ নং, কুলতলি, মন্দিরবাজার, পাথরপ্রতিমা, কাকদ্বীপ এবং নামখানা ব্লকে। তবে সংলগ্ন জেলাগুলির উপকূলীয় অঞ্চল, এমনকি বাংলাদেশের সুন্দরবন অঞ্চলেও অল্পবিস্তর গাড়োল প্রতিপালিত হয়। ভেড়ার জাতের মধ্যে গাড়োল আকারে খুব ছোটো। তবে গাঁট্টা-গোট্টা, চৌকো আকারের দেহ। মাথাটা ছোটো। বেশিরভাগ গাড়োলের কান মাঝারি আকারের (৪-৮ সেমি লম্বা)। তমে এর চেয়ে ছোট-বড় আকারের কানবিশিষ্ট গাড়োলও দেখা যায়। স্থানীয় ভাষায় কানকাটাকে ‘ম্যাড়া’ বলে। তাই ছোট কানের জন্যই মনে হয় স্থানীয় মানুষ এদের ‘ম্যাড়া’-ও বলে। আর আছে ছোট্ট সরু একটা লেজ। মুখের রঙ হয় হালকা হলুদ বা কালো। ঘাড় লম্বা, তবে স্ত্রী গাড়োলের চেয়ে পুরুষের ঘাড় বেশি মোটা। কালো ক্ষুরওয়ালা পাগুলোর গড়ন রোগাটে।
আরও পড়ুন:

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩০: গিরীশচন্দ্রের মা সারদা

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৬০: নতুন পথে রাজলক্ষ্মী ও শ্রীকান্ত

পুরুষ গাড়োলের পশ্চাৎমুখী দুটি শিং গজালেও স্ত্রী গাড়োলের শিং হয় না। এদের লোম বেশ ছোট, শক্ত ও অমসৃণ। এমন লোম দিয়ে পোশাক তৈরি করা যায় না। তবে কার্পেট তৈরি করতে বা তোষকে এই লোম ব্যবহার করা যায়। লোমের রঙ হলদেটে-সাদা বা ধূসর বা খয়েরি বা কালো রঙের হয়। আবার দুই রঙের গাড়োলের মধ্যে প্রজনন হলে মিশ্র রঙের শাবকও জন্মায়। তবে ৯০ শতাংশ গাড়োলের রঙই হালকা খয়েরি। এদের গড় ওজন ১৪ কেজির সামান্য বেশি হলেও স্ত্রী গাড়োলের ওজন পুরুষের তুলনায় কম হয়। স্ত্রী গাড়োল আট মাস অন্তর গর্ভবতী হয়। গর্ভধারণের মেয়াদ প্রায় ১৫০ দিন। তারপর সচরাচর একটি বা দুটি শাবক জন্মায়। দুটি শাবক জন্মানোর হার তুলনামূলকভাবে বেশি। তবে তিন বা চারটি শাবকও জন্মাতে পারে। প্রসবের নির্দিষ্ট সময় না থাকলেও ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি এবং আগস্ট-সেপ্টেম্বর মাসে এরা অধিকাংশ বাচ্চা প্রসব করে। এরা ৭-৮ বছর বাঁচে।

সুন্দরবনের এই আশ্চর্য জাতের ভেড়ার কথা সুন্দরবনের বাইরের মানুষের গোচরে আসে ১৯৮৮-৮৯ সালে অস্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত একটি পত্রিকার নিবন্ধ থেকে। ওই পত্রিকার লেখা থেকে জানা যায় যে ১৭৯২ সালে অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন নাবিক তৎকালীন বঙ্গপ্রদেশের সমুদ্রতীরে চারণরত কিছু বেঁটেখাটো ভেড়া দেখতে পেয়ে ভারি আশ্চর্য হন। তাঁরা তীরে নেমে তাঁদের কথানুযায়ী কয়েকটি ‘বামন ভেড়া’ (Dwarf Sheep) ধরে জাহাজে তুলে নেন ও স্বদেশে নিয়ে যান। তারপর রেভারেন্ড স্যামুয়েল মার্সডেনের ফার্মে বারোটি ভেড়া দিয়ে দেন। পরে অস্ট্রেলিয়ান নাবিকেরা আরও অনেক ভেড়া সুন্দরবন এলাকা থেকে ধরে নিয়ে যান। সেগুলোর মধ্যে থেকে প্রায় একশোটি ভেড়া পুণরায় মার্সডেনের ফার্মে জোগান দেন। ওই ফার্মেই সুন্দরবনের ওই ‘বামন ভেড়া’-দের প্রজনন ঘটিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে তাদের সংখ্যাবৃদ্ধি করা হয়।

লবনাক্ত জলাভূমিতে খাদ্যগ্রহণরত গাড়োল।

‘বামন ভেড়া’ গাড়োলের একসাথে একাধিক বাচ্চার জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা অস্ট্রেলিয়ার বিজ্ঞানীদের বিস্মিত করে। জাভার ভেড়া ছাড়া পৃথিবীর আর কোনও ভেড়ার জাতের এই বৈশিষ্ট্য নেই। বিজ্ঞানীরা এই বৈশিষ্ট্যের জন্য দায়ী বিরল জিনটিকে শনাক্ত করতে সমর্থ হন। জিনটির নাম হল “বুরুলা জিন” (Booroola gene)। অস্ট্রেলিয়ার মেরিনো প্রজাতির ভেড়া হল বানিজ্যিকভাবে খুব উৎকৃষ্ট প্রজাতির ভেড়া। কিন্তু এই জাতের স্ত্রী ভেড়া একবারে একটিই বাচ্চা প্রসব করে। তাই বিজ্ঞানীরা মেরিনো প্রজাতির সাথে গাড়োল প্রজাতির সংকরায়ণে প্রবৃত্ত হন। তাঁদের প্রচেষ্ঠা সফল হয়। সৃষ্টি হয় মেরিনো ও গাড়োলের এক সংকর প্রজাতি যারা অল্প সময়ে অনেক বেশি বাচ্চার জন্ম দিতে পারে এবং পশমের গুণমানও অক্ষুন্ন থাকে। এর ফলে অস্ট্রেলিয়ায় পশম শিল্পে এক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

অস্ট্রেলিয়ার পত্রিকায় গাড়োল ও তার বুরুলা জিন সম্পর্কে লেখা প্রকাশিত হওয়ার পর নব্বইয়ের দশকের প্রথম দিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের প্রাণীসম্পদ বিকাশ দপ্তরের উদ্যোগে গাড়োল ভেড়ার গুণগত মান যাচাই করার নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়েছিল। প্রাথমিকভাবে সুন্দরবনের অন্তর্গত পাথরপ্রতিমা ও মথুরাপুর-২ নম্বর ব্লকের মোট ১৭টি মৌজার ৭০ টি গ্রাম / পাড়ায় ৪১১০ টি পরিবারে সমীক্ষা চালানো হয়েছিল। সমীক্ষায় দেখা যায় যে ওই অঞ্চলে গাড়োল ছাড়া অন্য কোনও জাতের ভেড়া পালন করা হয় না এবং পরিবার পিছু ৪.৪৪টি গাড়োল রয়েছে। সমীক্ষায় এ-ও দেখা যায় যে ওই সব পরিবারের জীবিকার অনেকটাই গাড়োল প্রতিপালনের উপর নির্ভরশীল। আবার দেখা গেছে হালদার পদবির পরিবারে গাড়োল বেশি প্রতিপালিত হয়। বিড়লা টেকনোলজি ইন্সটিটিউট ও এগ্রিকালচারাল ফাইনান্স কর্পোরেশন অফ ওয়েন্ট বেঙ্গল-এর উদ্যোগে এক সমীক্ষা থেকে জানা যায় ওই সময় গাড়োল ভেড়ার মোট সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ হাজার। যদিও সংখ্যাটি কখনওই নিশ্চিত বা সম্পূর্ণ বিশ্বাসযোগ্য নয় তবে একটা ধারণা পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব ৪৭: শীতকালে দই খেতে নেই?

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-৪৭: পলায়নপর পঞ্চপাণ্ডব-ভীমসেনের গতিময়তায় কোন মহাভারতীয় দিগদর্শন?

সুন্দরবন অঞ্চলের জনবসতির তুলনায় সংখ্যাটি অনেক কম। আর সুন্দরবনের বসতি এলাকায় গাড়োলের সংখ্যা যে দিন দিন কমছে তা চর্মচক্ষে দেখেও বোঝা যায়। ১৯৯৬ সালে দক্ষিণ ২৪ পরগনার নিমপীঠ কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্রে এবং নদীয়ার কল্যাণীর রাজ্য পশু খামারে গাড়োলের সাথে দেশের অন্য জাতের ভেড়ার সংকরায়ণ করে উন্নত জাতের সংকর ভেড়া তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হয়। উত্তর পশ্চিম ভারতের পাঠানবাদী ও সোনাদি জাতের ভেড়ার সাথে গাড়োলের সংকরায়ণ করে বেশি দুধ দিতে এবং একাধিক শাবক জন্ম দিতে সক্ষম সংকর ভেড়া তৈরি করার চেষ্টা চলছে। মালপুরা, ডেকানি ও বান্নুর জাতের ভেড়ার সাথেও গাড়োলের সংকরায়ণের মাধ্যমে উন্নত ব্রিড তৈরির চেষ্টা চলছে। তবে বর্তমানে গাড়োল নিয়ে আমাদের দেশে কিংবা রাজ্যে গবেষণা বা গাড়োল প্রজাতির উন্নতিতে কার্যকরী বৈজ্ঞানিক পদক্ষেপ কতটা গ্রহণ করা হচ্ছে এ নিয়ে সন্দেহের অবকাশ আছে।

তিনটি সন্তানসহ মা গাড়োল।

সুন্দরবন অঞ্চলের ৯৫ শতাংশ মানুষ কৃষিকাজের উপর নির্ভরশীল। এদের মধ্যে ৮৫ শতাংশ হল প্রান্তিক চাষি। আবার সুন্দরবনের বেশিরভাগ জমি একফসলী। মিষ্টি জলের অভাব চাষবাসের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায়। তাছাড়া প্রায় প্রতি বছর সাইক্লোন, বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের কারণে চাষের মারাত্মক ক্ষতি হয়। নোনা জল ঢুকে আবাদি জমির চাষযোগ্যতা নষ্ট হয়। আর তাই এই অঞ্চলের বহু মানুষ কৃষির সঙ্গে সঙ্গে মাছধরা এবং ছাগল ও গাড়োল ভেড়া পালনকে সহযোগী জীবিকা হিসেবে বেছে নিয়েছে। কিন্তু সুন্দরবন অঞ্চলের কৃষি ও মৎস্যচাষের উন্নতির জন্য সরকারি বা বেসরকারি যেসব উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায় ছাগল বা গাড়োল পালনের উন্নতির জন্য কোনও পদক্ষেপ নজরে পড়ে না। অথচ বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে গাড়োল পালনকে বিকল্প জীবিকা হিসেবে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষের কাছে জনপ্রিয় করে তোলার সুযোগ রয়েছে।

সুন্দরবনবাসী হিসেবে আমাদের দাবি, অস্ট্রেলিয়ার মতো গাড়োল ভেড়ার গুণাগুনকে কাজে লাগিয়ে সুন্দরবনের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটানো উচিত। সারা বিশ্বের নজর কেড়ে নিয়েছে আকারে ও বাহারে অতি সাধারণ যে ভেড়া তা একদিন নিশ্চয়ই রয়্যাল বেঙ্গল টাইগারের মতো সুন্দরবনের ‘গর্বের ধন’ হয়ে উঠবে। সেদিন নিশ্চয়ই কোনও বাঙালি বোকাসোকা কাউকে আর “গাড়োল” বলে উপহাস করবে না।—চলবে।

ছবি: লেখক ও সংগৃহীত।
* সৌম্যকান্তি জানা। সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। নিবাস কাকদ্বীপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পেশা শিক্ষকতা। নেশা লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য ‘দ্য সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ২০১৬ সালে ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ এবং শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক হিসেবে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ২০১৭ সালে ‘অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি সম্মান’ প্রদান করে সম্মানিত করেছে।

Skip to content