বিহারে গয়ার কাছে আজীবিকপন্থী সন্ন্যাসীদের গুহা।
প্রায় আটচল্লিশ বছর আগের এক স্মৃতি আমার বেশ স্পষ্ট মনে আছে। এপ্রিল মাসে আমার ভাইয়ের জন্মের বর্ষপূর্তিতে বাবা প্রতিবেশী, আত্মীয়স্বজন ও সহকর্মীদের দ্বিপ্রাহরিক পঙক্তি-ভোজনের ব্যবস্থা করেছেন। আমাদের বাড়িতে আমার জ্ঞান হওয়ার পর এটাই ছিল প্রথম কোনও ভোজ-অনুষ্ঠান। আমাদের বড় পুকুরে সেদিন ভোরবেলা থেকেই শুরু হয়ে গেল মাছ ধরার তুমুল আয়োজন। আশৈশব মাছ ধরা ও দেখার নেশা আমার। তাই আমিও ভোরবেলা হাজির পুকুর পাড়ে। আনা হয়েছে বড় বড় চার-পাঁচটা খ্যাপলা জাল। পুকুরে বেশ কয়েকটা বড় কাতলা ও রুই ছিল। সেগুলোকে ধরাই মূল লক্ষ্য। কিন্তু জলে নামার আগেই দেখি কয়েকজন মৎস্যশিকারী পুকুরপাড়ে একটুখানি জায়গা কোদাল দিয়ে চেঁছে সেখানে শক্ত কাদা দিয়ে তিন ধাপযুক্ত একটা বেদি বানাচ্ছে।
দেখলাম, বেদির উপরে রাখা হল দুটো কাদামাটির ঢেলা। মাটির ঢেলা দুটোর আকার ঠিক যেন ওল্টানো দুটো গ্লাস। পুকুর পাড়েই ছিল শর গাছের ঝোপ। সেখান থেকে চারটে শরকাঠি এনে বেদির চারদিকে পুঁতে দিয়ে লাল ঘুনসি দিয়ে চৌকো করে বেঁধে দেওয়া হল। তারপর বাগদি পাড়ার এক কাকু আমাদের বাড়ি থেকে পেতলের একটা রেকাবিতে করে কিছু ফুল, দুর্বা ঘাস, তুলসি পাতা, ধান এবং অন্য একটি রেকাবিতে করে কিছু আতপ চাল, কয়েকটা বাতাসা ও কয়েকটা পাকা কলা নিয়ে সেখানে হাজির। এনেছে সিঁদুর, প্রদীপ, ধূপ আর শাঁখও। উনিই দেখি পুরোহিত। গামছাটাকে মালকোচা দিয়ে পরে শুরু করল পুজো। গ্লাসের মতো মাটির তাল দুটোতে সিঁদুর লাগিয়ে তার উপরে ফুল ও তুলসিপাতা রাখল। কীসের যে পুজো হচ্ছে বুঝতে পারছিলাম না। পুজো শেষে বাজল শাঁখ ও কাঁসি। তারপর সবাই সেই বেদির সামনে হাঁটু মুড়ে প্রণাম করে নেমে পড়ল পুকুরে। বুঝলাম, ওই পুজো করার উদ্দেশ্য হল যাতে মাছগুলো সহজে ধরা পড়ে। কৌতুহলবশত ওই দেবতার নাম জিজ্ঞাসা করে জেনেছিলাম “মাকাল”।
আরও পড়ুন:
সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৩: সুন্দরবনের গ্রামরক্ষক দেবতা আটেশ্বর
ক্যাবলাদের ছোটবেলা, পর্ব-১৬: ‘কোনওদিন কিছুই ছিল না, কিছুই কিছুই নেই আমাদের আজ’
“মাকাল” কথাটি সম্ভবত “মহাকাল” শব্দের ধ্বনিলোপের ফলে উৎপন্ন হয়েছে। মহাকাল মানে হল পৌরাণিক দেবতা শিব। তাই মনে হয়, সুন্দরবনের মৎস্যজীবী সম্প্রদায়ের মানুষের কাছে শিবের এক লৌকিক রূপ হল মাকাল ঠাকুর। নদী, সমুদ্র বা জলাশয়ে মাছ ধরতে যাওয়ার আগে সুন্দরবন অঞ্চলের মানুষ মাছের প্রত্যাশায় মাকাল ঠাকুরের পুজো করেন। পুজোর পদ্ধতি ও উপকরণ অতি সাধারণ। প্রধাণত বাতাসা বা চিনির সন্দেশ হল নৈবেদ্য। সঙ্গে কাঁঠালি কলা, আতপ চাল, বাচ্চাদের চকোলেট ইত্যাদি দেওয়া হয়। রেকাবির অভাবে কলাপাতাতেও নৈবেদ্য সাজিয়ে দেওয়া হয়। আর এই দেবতার কোনও মূর্তি নেই। মাটির দুটি স্তূপকে মাকাল ঠাকুরের প্রতীক হিসেবে পুজো করা হয়। এ হল আদিম সমাজের পুজোর রীতি। মানুষ যখন দেবতার মনুষ্য রূপ কল্পনা করতে শেখেনি, তখন এ ভাবেই পুজো করা হত। মাকাল ঠাকুর যদি শিবেরই এক রূপ হন তবে দ্বিতীয় স্তূপটি যে তাঁর অর্ধাঙ্গিনী গৌরী তা ভেবে নিতে অসুবিধা হয় না।
মাকাল ঠাকুর।
গ্রামাঞ্চলে ‘শিবের চাষ’ পালাগানে মৎস্যজীবীদের দেবদেবী হিসেবে শিব ও গৌরীকে দেখানো হয়। তাঁরা মাঠে জমা জলে মাছ ধরেন। সেই মাছ হাটে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। আবার অনেক জায়গায় মাকাল ঠাকুরের পুজোকে ‘মাকালচণ্ডীর’ পুজোও বলা হয়। চণ্ডী হলেন পৌরাণিক দেবী কালীর এক লৌকিক রূপ। কোথাও কোথাও মাকাল ঠাকুরের পুজোয় কলকে ও গাঁজা দেওয়ার প্রচলনও আছে। সুতরাং মাকাল ঠাকুরের পুজোয় দুটি স্তূপের একটি শিব ও অন্যটি গৌরীর লৌকিক রূপ হওয়াই স্বাভাবিক। তবে অনেকে কিন্তু বলেন যে এঁরা হলেন দু’ জনেই দেবতা। দুশো বছরের প্রাচীন “তারকেশ্বর শিবতত্ত্ব” গ্রন্থে মাকাল (মাখাল) দেবতার উল্লেখ দেখা যায়—
“ক্ষেত্রপাল মহাকাল প্রভৃতি দেবতা।
যাহার যেরূপ ভক্তি সেরূপ গঠিতা।।
কোথায় ওলাইণ্ডী মাখাল জলায়।
বৃক্ষতলে মহাপ্রভু স্থান দৃশ্যপ্রায়।।”
যাহার যেরূপ ভক্তি সেরূপ গঠিতা।।
কোথায় ওলাইণ্ডী মাখাল জলায়।
বৃক্ষতলে মহাপ্রভু স্থান দৃশ্যপ্রায়।।”
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৭: নাক বন্ধ হলেই নাকের ড্রপ? এতে শরীরে কোনও ক্ষতি হচ্ছে না তো?
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৭: তোমায় পড়েছে মনে আবারও…
সুন্দরবনের কোথাও কোথাও ‘আট-মাকাল’ নামে অন্য এক লৌকিক দেবতার পুজোর প্রচলন আছে। এখানে ‘আট’ বলতে কি মাকাল ঠাকুরের সহচর হিসেবে সুন্দরবনের গ্রামরক্ষক লৌকিক দেবতা আটেশ্বরেরও একসঙ্গে পুজো হয়? আবার অনেক জায়গায় আট-মাকাল পুজোয় বেদীর উপরে সাতটি মাটির স্তূপ রেখে পুজো করা হয়। সাতটির মধ্যে একটি বেশ বড়ো। বড়টি নাকি আটেশ্বর। তাহলে বাকি ছটি স্তূপের একটি যদি হন মাকাল ঠাকুর তবে বাকি পাঁচটি স্তূপ কোন দেবতা বা দেবীর প্রতীক? লোকসংস্কৃতির গবেষকরা এ বিষয়ে ভালো বলতে পারবেন।
মাকাল ঠাকুরের কোনও মন্দির বা থান হয় না। তবে অন্য কোনও লৌকিক দেবতার থানে সহচর হিসেবে তাঁর স্থান হতে পারে। বাংলার লৌকিক দেবদেবী বিষয়ে গবেষক গোপেন্দ্রকৃষ্ণ বসুর লেখা থেকে জানা যায়, “কলকাতার কাছেই—বেলেঘাটা খালের পূর্ব তীরে নওয়াবাদ-গোলাবাড়ির একটি থানে দক্ষিণরায়, পঞ্চানন্দ প্রভৃতি দেবতাদের সঙ্গে মাকাল দেবতারও প্রতীক আছে। স্থানীয় চাষি ও মৎস্যজীবীরা পূজা করে। সুন্দরবনের কাছে দু’ একটা পল্লীতে ঠিক এইরূপ থান আছে।” মাকাল দেবতার নাম দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে গ্রামের নামও আছে, যেমন দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট-২ ব্লকে ও হাওড়ায় মাকালপুর গ্রাম, হুগলি জেলায় মাকালতলা গ্রাম।
মাকাল ঠাকুরের কোনও মন্দির বা থান হয় না। তবে অন্য কোনও লৌকিক দেবতার থানে সহচর হিসেবে তাঁর স্থান হতে পারে। বাংলার লৌকিক দেবদেবী বিষয়ে গবেষক গোপেন্দ্রকৃষ্ণ বসুর লেখা থেকে জানা যায়, “কলকাতার কাছেই—বেলেঘাটা খালের পূর্ব তীরে নওয়াবাদ-গোলাবাড়ির একটি থানে দক্ষিণরায়, পঞ্চানন্দ প্রভৃতি দেবতাদের সঙ্গে মাকাল দেবতারও প্রতীক আছে। স্থানীয় চাষি ও মৎস্যজীবীরা পূজা করে। সুন্দরবনের কাছে দু’ একটা পল্লীতে ঠিক এইরূপ থান আছে।” মাকাল দেবতার নাম দিয়ে পশ্চিমবঙ্গে গ্রামের নামও আছে, যেমন দক্ষিণ ২৪ পরগনার মগরাহাট-২ ব্লকে ও হাওড়ায় মাকালপুর গ্রাম, হুগলি জেলায় মাকালতলা গ্রাম।
আরও পড়ুন:
কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-৫: ‘আপনজন’ Chronicles
পরিযায়ী মন, পর্ব-৬: বৈতরণীর পারে…
মাকাল ঠাকুরের পুজোয় কোনও পুরোহিত থাকে না। সাধারণ মানুষই পুজো করতে পারে। আর লৌকিক দেবতার আরাধনার রীতিমাফিক এই পুজোয় নেই কোনও মন্ত্র। যিনি পুজো করেন তিনি দুটি স্তূপের উপরে ফুল ও তুলসি পাতা বা বেলপাতা রেখে দেন। ভক্তদের বিশ্বাস হল, যদি আপনা থেকে ফুলটি মাটিতে পড়ে যায় তবে জালে প্রচুর মাছ ধরা পড়বে। সাধারণত সুন্দরবনের বাগদি, রাজবংশী, কাওরা ও পোদ-পৌন্ড্র সম্প্রদায়ের মানুষ মাকাল ঠাকুরের ভক্ত। তাঁদের ধারণা, মাকাল ঠাকুরকে তুষ্ট করতে না পারলে তিনি জলাশয়ের নীচে কাদামাটির তলায় মাছ লুকিয়ে রাখবেন। প্রসঙ্গত, মহারাষ্ট্রের লৌকিক দেবী ‘কানিয়াম্মা’-র সঙ্গে মাকাল ঠাকুরের মিল দেখা যায়। যদিও কানিয়াম্মা দেবী এবং মাকাল ঠাকুর দেবতা, কিন্তু মিল হল উভয়েই মৎস্যজীবীদের উপাস্য।
সম্রাট অশোকের সপ্তম স্তম্ভে খোদিত আজীবিকদের কথা।
মাকাল ঠাকুরকে অনেক জায়গায় ‘মাখাল’ নামেও ডাকা হয়। সাম্প্রতিক সময়ের এক গবেষণা এই মাকাল বা মাখাল ঠাকুরের উৎপত্তি নিয়ে নতুন করে ভাবনার রসদ জুগিয়েছে। ভারতের প্রাচীন ইতিহাসে যাঁরা আগ্রহী তাঁরা নিশ্চয়ই মাখখাল গোশাল ও তাঁর অনুগামী আজীবিক সম্প্রদায় সম্বন্ধে জানেন। মাখখাল গোশাল সম্ভবত জৈন ধর্মের ২৪তম তীর্থঙ্কর মহাবীরের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু কিছু দিন পর তাঁর সঙ্গে ধর্মমত সংক্রান্ত মতান্তর হওয়ায় মাখখাল গোশাল তাঁর নতুন দর্শন প্রচার করেন। ঐতিহাসিক এএল বাসামের লেখা ‘History and Doctrines of the Ajivikas’ গ্রন্থ থেকে আজীবিকপন্থীদের দর্শনের মূল কয়েকটি বক্তব্য উল্লেখ করা যাক।
● এক: অতিজাগতিক শক্তি ‘নিয়তি’-ই মানুষের ভাগ্য নিয়ন্ত্রণ করছে, শুধু তাই-ই নয় বিশ্ব-চরাচরেরর সব ঘটনাই এই ‘নিয়তি’-র অঙ্গুলিহেলনে চলছে এবং এই জগতে যা কিছু ঘটছে বা ঘটবে তা সবই মহাজাগতিক নিয়মে পূর্বনির্ধারিত।
● দুই: কোনও মানুষের ক্ষমতা নেই যে নিয়তিকে লঙ্ঘন করে এবং কোনও কর্ম এই নিয়তিকে পরিবর্তন করতে পারে না। আর তাই ধর্মীয় নীতি পালন বা পুজো-আচ্চা গুরুত্বহীন।
● তিন: বিশ্বের স্রষ্টা হিসেবে কোনও দেবতা যেমন নেই, তেমন স্বর্গ বলেও কিছু নেই।
● চার: আত্মা সাকার এবং পুণর্জন্মের মাধ্যমে তা স্থানাতরিত হতে হতে ক্রমশ উন্নত হয় এবং শেষে নির্বাণলাভ করে। অর্থাৎ মাখখাল গোশাল ঈশ্বর, স্বর্গ-নরক, পাপ-পুণ্য, কর্মফল ইত্যাদি ধারণায় ছিলেন অবিশ্বাসী। সর্বোপরি তিনি ছিলেন বস্তুবাদী একজন নাস্তিক মানুষ।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২৮: প্যায়ার করনে ওয়ালে প্যায়ার করতে হ্যায় শান সে— আশার কণ্ঠ ও আরডি-র সুর, অনবদ্য
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১১: মাতৃরূপে প্রথম পুজোগ্রহণ
আজীবিকপন্থীদের লেখা কোনও পুঁথি বা প্রামাণ্য কোনও নথি আবিষ্কৃত না হওয়ায় আজীবিকপন্থা সম্পর্কে যেটুকু জানা গেছে তা বিভিন্ন বৌদ্ধ ও জৈন সূত্র থেকে। আজীবিকদের এই ধর্ম কিন্তু খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতক পর্যন্ত অর্থাৎ মৌর্য যুগ পর্যন্ত ভারতবর্ষে প্রভাব বিস্তার করলেও এর পর থেকে দ্রুত হ্রাস পেতে থাকে। বৌদ্ধ ধর্মের অনুসারী সম্রাট অশোকের সাথে আজীবিকপন্থীদের দর্শনগত বিরোধ একসময় চরম আকার নেয়। তিনি আজীবিকপন্থীদের হত্যা ও বিতাড়নের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন। তাঁর আজীবিকপন্থী ভাই বীতশোককেও হত্যা করা হয়। কলিঙ্গ যুদ্ধের শেষে অস্তিত্বের এই সঙ্কটের সময়ে নিজেদের রক্ষা করতে আজীবিকদের একদল চলে যায় দাক্ষিণাত্যে, আর একদল এসে পৌঁছোয় সুন্দরবনে। বৌদ্ধধর্ম প্রভাবিত নিম্ন গাঙ্গেয় অঞ্চলে তারা পরিচয় গোপন রাখতে গুরুর নামে নিজেদের গোষ্ঠীর নাম দেয় “মাখখাল” এবং জীবিকা হিসেবে মৎস্যশিকারকে বেছে নেয়। এরা ঈশ্বরে অবিশ্বাসী হলেও তাদের গুরু “মাখখাল”-কে দেবতার মর্যাদা দিত। আর এ ভাবেই ‘মাখখাল’ থেকে সুন্দরবনে আবির্ভূত হয়েছেন মৎস্যদেবতা ‘মাকাল’ ঠাকুর।
সুন্দরবনের মৎসজীবী।
একইভাবে দাক্ষিণাত্যে চলে যাওয়া আজীবিকপন্থীদের দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে লৌকিক মৎস্যদেবী কানিয়াম্মা। সাম্প্রতিক গবেষণায় এমন কথাই তুলে ধরা হয়েছে। যেহেতু বৌদ্ধ ও জৈন ধর্মের সাথে বিরোধিতা থেকে আজীবিকপন্থার জন্ম তাই ‘মাকাল’ ঠাকুর পুজোর সময় বৌদ্ধ স্তূপের অনুকরণে মাটির ছোটো স্তূপ তৈরি করা হয়। শুধু তাই-ই নয়, বৌদ্ধ স্তূপ যেমন তিন ধাপযুক্ত বেদীর উপরে প্রতিষ্ঠিত হয়, এখানেও মাকাল ঠাকুরের স্তূপ তিন ধাপযুক্ত মাটির বেদির উপরে প্রতিষ্ঠা করা হয়।
মাকাল ঠাকুরের পুজোর সময় মন্ত্রোচ্চারণ না করে বা কোনও ঈশ্বরের নাম না নিয়ে কেবল তিনবার “গুরু সত্য” উচ্চারণ করা হয়। এই গুরু মাখখাল গোশাল ছাড়া আর কে হতে পারেন? আর নিম্ন গাঙ্গেয় অঞ্চলে মাকালতলা, মাকালপুর, মাখালপুর ইত্যাদি স্থান যে একদা এই আজীবিকপন্থীদের বসতভূমি ছিল তা নিশ্চিত করে বলা যায়। তবে সত্যিই নিরীশ্বরবাদী মাখখাল গোশাল আজীবিকপন্থীদের হাতে সুন্দরবন এলাকায় লৌকিক দেবতা মাকাল ঠাকুরে রূপান্তরিত হয়েছেন কিনা তা আগামীদিনে আরও গবেষণা নিশ্চিত করবে।—চলবে।
মাকাল ঠাকুরের পুজোর সময় মন্ত্রোচ্চারণ না করে বা কোনও ঈশ্বরের নাম না নিয়ে কেবল তিনবার “গুরু সত্য” উচ্চারণ করা হয়। এই গুরু মাখখাল গোশাল ছাড়া আর কে হতে পারেন? আর নিম্ন গাঙ্গেয় অঞ্চলে মাকালতলা, মাকালপুর, মাখালপুর ইত্যাদি স্থান যে একদা এই আজীবিকপন্থীদের বসতভূমি ছিল তা নিশ্চিত করে বলা যায়। তবে সত্যিই নিরীশ্বরবাদী মাখখাল গোশাল আজীবিকপন্থীদের হাতে সুন্দরবন এলাকায় লৌকিক দেবতা মাকাল ঠাকুরে রূপান্তরিত হয়েছেন কিনা তা আগামীদিনে আরও গবেষণা নিশ্চিত করবে।—চলবে।
* সৌম্যকান্তি জানা। সুন্দরবনের ভূমিপুত্র। নিবাস কাকদ্বীপ, দক্ষিণ ২৪ পরগনা। পেশা শিক্ষকতা। নেশা লেখালেখি ও সংস্কৃতি চর্চা। জনবিজ্ঞান আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। বিজ্ঞান জনপ্রিয়করণের জন্য ‘দ্য সায়েন্স অ্যাসোসিয়েশন অফ বেঙ্গল ২০১৬ সালে ‘আচার্য জগদীশচন্দ্র বসু মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড’ এবং শ্রেষ্ঠ বিজ্ঞান লেখক হিসেবে বঙ্গীয় বিজ্ঞান পরিষদ ২০১৭ সালে ‘অমলেশচন্দ্র তালুকদার স্মৃতি সম্মান’ প্রদান করে সম্মানিত করেছে।