রবিবার ৬ অক্টোবর, ২০২৪


ছবি সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

১৪ ফেব্রুয়ারি, প্রেমের দিন, বসন্তের আগমনবার্তা উদযাপনের দিন, সমগ্র বিশ্ব এই দিনটিতে মেতে ওঠে প্রেমের জয়জয়কারে। কিন্তু গত তিন বছর ধরে কেবলমাত্র প্রেমের দিন হিসাবেই নয়, ভারতবর্ষের ইতিহাসে এই দিনটি এক ভয়াবহ স্মরণীয় ঘটনার প্রতীকস্বরূপ উজ্জ্বল হয়ে রয়েছে। সেদিনও প্রেমের সমারোহে মেতে উঠেছিল সারা পৃথিবী, কিন্তু আচমকাই বিকেল ৪.৩০ নাগাদ টেলিভিশনের পর্দায় ছড়িয়ে পড়া একটি খবরে স্তব্ধ হয়ে গেল ভারতবর্ষ। সম্ভবত দুপুর তিনটে পনেরো নাগাদ জম্মু থেকে শ্রীনগর, জাতীয় সড়ক ৪৪-এর ওপর দিয়ে যাচ্ছিল ৭৮টি গাড়ির একটি কনভয়, যাতে উপস্থিত ছিলেন ২৫০০ জনেরও বেশি সেন্ট্রাল রিজার্ভ পুলিশ ফোর্স (সিআরপিএফ) কর্মী। সহসাই অপর দিক থেকে বিস্ফোরক বহনকারী একটি গাড়ি একাধিক সিআরপিএফ এজেন্ট বহনকারী একটি গাড়িতে ধাক্কা দেয়, যার ফলে ঘটে সেই ভয়াবহ বিস্ফোরণ এবং ঘটনাস্থলেই নিহত হন ৪০ জন সিআরপিএফ জওয়ান। আহত হন আরও কয়েকজন। হামলার কয়েকদিন পরেই পাকিস্তানের সন্ত্রাসবাদী সংগঠন জইশ-ই-মোহাম্মদ হামলার দায় স্বীকার করে এবং আততায়ী আদিল আহমেদ দার নামে ২২ বছর বয়সি ব্যক্তির একটি ভিডিও পোস্ট করে।
এই নৃশংস ঘটনার কয়েকদিন পরে, ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনী পাকিস্তানের বালাকোটে একটি সন্ত্রাসবিরোধী হামলা চালায়। এদিন ভারতীয় বিমানবাহিনীর বেশ কয়েকটি জেট জইশের সন্ত্রাসবাদী শিবিরে বোমাবর্ষণ করে যার ফলে প্রায় ৫০০ জন সন্ত্রাসবাদী নিহত হয়। এই ঘটনার প্রতিহিংসাস্বরূপ পাকিস্তান বিমান বাহিনী জম্মু ও কাশ্মীরে ভারতীয় সামরিক বাহিনীর ওপর হামলা চালিয়ে প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করেছিল কিন্তু সেই প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়ে যায় আইএএফ-এর তৎপরতায়। সংঘর্ষ চলাকালীন, ভারতের উইং কমান্ডার অভিনন্দন বর্ধমানকে পাকিস্তানি বাহিনী গুলি করে হত্যা করার চেষ্টা করে এবং বন্দি করে। যদিও পরে উইং কমান্ডার অভিনন্দনকে পাকিস্তান মুক্তি দেয় এবং ভারতীয় সরকারের পক্ষ থেকে তাকে বীরচক্র সম্মাননা প্রদান করা হয়।
২০১৯ সালে ১৪ ফেব্রুয়ারি ঘটে যাওয়া পুলওয়ামা হামলার এই নৃশংস বর্বরতার ভয়াবহ স্মৃতির এই দিনটি ভারতবাসী ‘কালা দিবস’ হিসাবে চিহ্নিত করবে চিরকাল। পুলওয়ামা হামলার তিন বছর হয়ে গেল, আজও আমরা এই দিনটিতে নত মস্তকে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি সেই বীরযোদ্ধাদের প্রতি। বীর শহিদদের স্মৃতি সৃষ্টির শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত সমগ্র ভারতবাসীকে শোকস্তব্ধ করে রাখবে। ভ্যালেন্টাইনস ডে উদযাপনের দিনে আমরা যেন ভারতমাতার বীর যোদ্ধাদের আত্মত্যাগের কথা ভুলে না যাই, শ্রদ্ধার সঙ্গে তাঁদের স্মরণ করি।

Skip to content