যা ঘটলো তার আকস্মিকতায় আমি বা দেবরাজবাবু, দু’জনেই হতবাক। যিনি নিজে প্রেতচর্চা করেন তার ওপর এই সাংঘাতিক আঘাত যে আসতে পারে সেটা আমরা ভাবতে পারিনি। চেয়ার ছেড়ে উঠে দেবরাজবাবু সঙ্গে সঙ্গে ভেতর থেকে বন্ধ দরজাতে ধাক্কা দিলেন। আমার আগেও দেবরাজবাবু ঈপ্সিতা চ্যাটার্জির বাড়িতে বেশ কয়েকবার এসেছেন তাই তিনি এখানকার নিয়ম কানুন সবই জানেন। আবার দরজা ধাক্কা দিয়ে দেবরাজ বাবু বেশ গলা তুলে চেঁচিয়ে বললেন—
—কে আছেন তাড়াতাড়ি ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে লিভিং রুমে আসুন। এখানে অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গিয়েছে।
এ কথা শোনার পরেই ভিতরে দরজা খুলে গেল সেখান থেকে দুটি কমবয়সি মেয়ে হাতে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে ঘরে ছুটে এল।
ততক্ষণে ঈপ্সিতা চ্যাটার্জি সম্বিত ফিরে পেয়েছেন। টেবিল থেকে নিজেই ওঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সেই দুটি মেয়ে ধরাধরি করে ওঁকে টেবিল থেকে তুলল।
এ বার চমকে ওঠার পালা আমাদের। টেবিলের কোনায় লেগে কপালের কাজটা খানিকটা থেঁতলে মত গেছে। কালশিটে আর অল্প রক্ত বিন্দু সেখানে। কিন্তু একটু আগে কপাল থেকে রক্তে ভরে যাওয়া তার যে মুখটা দেখেছিলাম সেটার চিহ্নমাত্র নেই। আমার নিজের সন্দেহ দূর করার জন্য একবার জিজ্ঞাসা নেত্রে দেবরাজবাবুর দিকে তাকালাম। উনি একইভাবে ঘাড় নেড়ে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন মাথায় কিছু ঢুকছে না।
—কে আছেন তাড়াতাড়ি ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে লিভিং রুমে আসুন। এখানে অ্যাক্সিডেন্ট হয়ে গিয়েছে।
এ কথা শোনার পরেই ভিতরে দরজা খুলে গেল সেখান থেকে দুটি কমবয়সি মেয়ে হাতে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে ঘরে ছুটে এল।
ততক্ষণে ঈপ্সিতা চ্যাটার্জি সম্বিত ফিরে পেয়েছেন। টেবিল থেকে নিজেই ওঠার চেষ্টা করছিলেন। কিন্তু সেই দুটি মেয়ে ধরাধরি করে ওঁকে টেবিল থেকে তুলল।
এ বার চমকে ওঠার পালা আমাদের। টেবিলের কোনায় লেগে কপালের কাজটা খানিকটা থেঁতলে মত গেছে। কালশিটে আর অল্প রক্ত বিন্দু সেখানে। কিন্তু একটু আগে কপাল থেকে রক্তে ভরে যাওয়া তার যে মুখটা দেখেছিলাম সেটার চিহ্নমাত্র নেই। আমার নিজের সন্দেহ দূর করার জন্য একবার জিজ্ঞাসা নেত্রে দেবরাজবাবুর দিকে তাকালাম। উনি একইভাবে ঘাড় নেড়ে আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করলেন মাথায় কিছু ঢুকছে না।
মেয়ে দুটি কপালের কাজটায় একটু অ্যান্টিসেপটিক কিছু দিয়ে দিল আর একটা ব্যান্ডেড গোছের কিছু লাগিয়ে দিল। ঈপ্সিতা চ্যাটার্জি তাদের চোখের ইশারায় ভেতরে যেতে বললেন। আমরা কিছুটা হতভম্ব দেখে তিনি নিজেই আমাদের বুঝিয়ে বললেন—
—না, এটাই ইলিউউশন বা হ্যালুসিনেশন ছিল না। তখন যেটা দেখেছিলেন সেটা ঠিকই দেখেছিলেন। আমার সারা মুখ রক্তাক্ত। আসলে আত্মা বা আত্মারা যখন কোন একটা কারণে অত্যন্ত বিচলিত থাকে তখন মিডিয়ামের মধ্যে অনেক সময় নিজেদের প্রকাশ করে ফেলে। আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছিল। আফিফার স্পিরিট চাইছিল মৃত্যুর ঠিক আগে তার যে ভয়ংকর অবস্থা হয়েছিল সেটা আপনারা স্বচক্ষে দেখুন।
আমি সেই মুহূর্তে কোন কথা বলার অবস্থায় ছিলাম না। দেবরাজবাবু বেশি একটু অবাক হয়ে বলে ফেললেন—
—তার মানে আমরা সরাসরি আফিফার আত্মাকে দেখতে পেলাম?
শান্ত ধীর গলায় ঈপ্সিতা চ্যাটার্জি বললেন—
—আপনার বন্ধু আজ প্রথম এসেছেন। কিন্তু আপনি তো এর আগেও এসেছেন অন্য ক্লায়েন্ট নিয়ে। আপনি তো জানেন আমি ম্যাজিক দেখাই না।
ভীষণভাবে লজ্জিত দেবরাজবাবু্ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অনুনয়ের সুরে বললেন
—না না, ম্যাডাম আপনি এভাবে বলবেন না আমি ঠিক সেভাবে বলতে চাইনি।
—না, ঠিক আছে।
মুখে ঠিক আছে বললেও ঠিক যে নেই সেটা ওঁর সঙ্গে সঙ্গেই উঠে পড়ার ভঙ্গিতে বুঝতে পারলাম। দেবরাজবাবু অসহায়ের মত আমার দিকে তাকালেন। এরপর সসম্মানে বাড়ি ফিরে আসা ছাড়া আর করণীয় বোধহয় কিছু ছিল না।
সেদিন রাতে বোধহয় প্রথম মায়ের রান্না করা খাবার খেলাম না। আমার খুব প্রিয় ভেটকি মাছ দিয়ে মাছের ঝোল বানিয়েছিল মা। না বলছি শুনে বারবার আমায় বলেও ছিল।
—মুখ-হাত-পা ধুয়ে একটু পরেই নয় খেতে বসবি। খেতে শুরু করলে দেখবি ভালো লাগছে
—না, এটাই ইলিউউশন বা হ্যালুসিনেশন ছিল না। তখন যেটা দেখেছিলেন সেটা ঠিকই দেখেছিলেন। আমার সারা মুখ রক্তাক্ত। আসলে আত্মা বা আত্মারা যখন কোন একটা কারণে অত্যন্ত বিচলিত থাকে তখন মিডিয়ামের মধ্যে অনেক সময় নিজেদের প্রকাশ করে ফেলে। আমার ক্ষেত্রেও ঠিক তাই হয়েছিল। আফিফার স্পিরিট চাইছিল মৃত্যুর ঠিক আগে তার যে ভয়ংকর অবস্থা হয়েছিল সেটা আপনারা স্বচক্ষে দেখুন।
আমি সেই মুহূর্তে কোন কথা বলার অবস্থায় ছিলাম না। দেবরাজবাবু বেশি একটু অবাক হয়ে বলে ফেললেন—
—তার মানে আমরা সরাসরি আফিফার আত্মাকে দেখতে পেলাম?
শান্ত ধীর গলায় ঈপ্সিতা চ্যাটার্জি বললেন—
—আপনার বন্ধু আজ প্রথম এসেছেন। কিন্তু আপনি তো এর আগেও এসেছেন অন্য ক্লায়েন্ট নিয়ে। আপনি তো জানেন আমি ম্যাজিক দেখাই না।
ভীষণভাবে লজ্জিত দেবরাজবাবু্ প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই অনুনয়ের সুরে বললেন
—না না, ম্যাডাম আপনি এভাবে বলবেন না আমি ঠিক সেভাবে বলতে চাইনি।
—না, ঠিক আছে।
মুখে ঠিক আছে বললেও ঠিক যে নেই সেটা ওঁর সঙ্গে সঙ্গেই উঠে পড়ার ভঙ্গিতে বুঝতে পারলাম। দেবরাজবাবু অসহায়ের মত আমার দিকে তাকালেন। এরপর সসম্মানে বাড়ি ফিরে আসা ছাড়া আর করণীয় বোধহয় কিছু ছিল না।
সেদিন রাতে বোধহয় প্রথম মায়ের রান্না করা খাবার খেলাম না। আমার খুব প্রিয় ভেটকি মাছ দিয়ে মাছের ঝোল বানিয়েছিল মা। না বলছি শুনে বারবার আমায় বলেও ছিল।
—মুখ-হাত-পা ধুয়ে একটু পরেই নয় খেতে বসবি। খেতে শুরু করলে দেখবি ভালো লাগছে
আরও পড়ুন:
গা ছমছমে ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-২২: ঈপ্সিতা চ্যাটার্জির কপাল থেকে সারা মুখ রক্তাক্ত
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১৭: অ্যাঁ, বলো কী নন্দলাল…!
আমি তখনও না বলছি দেখে মা আর জোর করল না। বাড়ির সকলে জানে এমনকি দেবরাজবাবুও জানেন আমি খুব পেটুক মানুষ। বাদ বিচার কম। পৃথিবীর যেকোনও সুখাদ্য পরম তৃপ্তিতে গ্রহণ করি। সেই আমি বাড়ির খাবার খাচ্ছি না এটা উপলব্ধি করে মা বুঝলেন সত্যিই খাবার ইচ্ছা নেই। খেতে কেন পারছি না সেটা মাকে কি করে বোঝাবো? গভীর গোপন সে অধ্যায় অতীতের অন্ধকারে চাপা পড়ে গেছে। আজ খানিক আগে সেই অতীতের ভয়ংকর নৃশংস পরিণতি উপলব্ধি করে এসেছি। একবার মনে হল বুনিকে একটা ফোন করি। কিন্তু রাত হয়ে গিয়েছে। এখন ফোন করে এইসব বীভৎস বর্ণনা দেবার কোন অর্থ নেই। বোধহয় এ সব বলার দরকারও নেই। আফিফা মনেপ্রাণে চেয়েছে আমাকে এসব জানাতে। আমি জেনে গেছি। আফিফার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে।
একেবারে শুরুতে কলম নিয়ে লিখতাম। সাদা কাগজে অনুচ্ছেদের সংখ্যা বসিয়ে গড়গড় করে। আমি স্কুলের মতো রুলটানা কাগজে লিখতাম। রুল ছাড়া সাদা পাতায় আমার দেখা লাইনগুলো দাঁড়িপাল্লার পাসান ঠিক না হওয়ার মতো উঁচু নিচু হয়ে যেত। সে সময় কালি লাগতো কাগজ লাগতো পরে ডট পেন এল তার রিফিল লাগতো। এখন ওসবের পাট চুকেবুকে গিয়েছে।
একেবারে শুরুতে কলম নিয়ে লিখতাম। সাদা কাগজে অনুচ্ছেদের সংখ্যা বসিয়ে গড়গড় করে। আমি স্কুলের মতো রুলটানা কাগজে লিখতাম। রুল ছাড়া সাদা পাতায় আমার দেখা লাইনগুলো দাঁড়িপাল্লার পাসান ঠিক না হওয়ার মতো উঁচু নিচু হয়ে যেত। সে সময় কালি লাগতো কাগজ লাগতো পরে ডট পেন এল তার রিফিল লাগতো। এখন ওসবের পাট চুকেবুকে গিয়েছে।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১৪: সারদা মায়ের বিশ্বাসে জাগ্রতা হল দেবী সিংহবাহিনী
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১৩: সাগর দীঘির ধারে হিরণ্যগর্ভ শিবমন্দির ও মধুপুর ধাম
এখন ল্যাপটপে লিখি। কাটছাঁট করার বড্ড সুবিধে! যেটা বদলাতে চাই সেটাকে রেখেই লেখা মেরামতি করা যায়। তারপর পাশাপাশি দেখে বুঝে ফেলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া। এ যেন শাড়ির দোকানে উনিশখানা শাড়ি নামিয়ে বেছেবুছে একটা শাড়ি কেনা।
সিদ্ধান্ত না নিতে পারলেও কোন ক্ষতি নেই। পুরনো অংশটার নাম বদলে সে লেখা রেখে দেওয়া যায়। যদি শেষমেষ কিছু কাজে লাগে।
তবে কাগজ কলমের ব্যবহার এখনও হয়। মাথায় ঘুরতে থাকা চিন্তার সুতোগুলোকে ধরে রাখার জন্য। এই যেটা ভাবলাম সেটা যদি লিখে না রাখি তাহলে সেটা তো অন্য ভাবনার পলির আস্তরণের তলায় চাপা পড়ে যাবে। আর কখনো খুঁজেই পাবো না। এই টুকরো কাগজ গুলোই আমার মেমোরি স্লিপ।
কাগজ থেকে কম্পিউটারে আসার ফলে লেখা হারিয়ে ফেলার বদভ্যেসটা একটু ভদ্রস্থ হয়েছে। তাই আমার লেখার জায়গায় ল্যাপটপের পাশেই ছোট-বড় রাঙা ফুল মেজো, নানা মাপের কাগজ ক্লিপে আটকানো থাকে। তাতে টুকরো টাকরা অনেক কিছু লেখা। সেসব পড়ে যে আমি সবসময় বুঝতে পারি তা নয় কিন্তু পারলে আমিই পারবো। তবে কারেকশন বেড়েছে। কম্পিউটার অবাধ্য। নিজস্ব বুদ্ধি বিবেচনায় অনেক আলতু ফালতু কথা লেখে। কলম অনেক বাধ্য।
মা শুয়ে পড়েছিল। এতক্ষণ পরে যেন অস্থির মনটা একটু একটু করে স্থির হচ্ছে ফলে শারীরিক খিদেটা জানান দিচ্ছে। অন্ধকার হাতড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে চেনা পথে রান্নাঘর পর্যন্ত গেলাম হাত বাড়িয়ে ডালমুটের কৌটোটা ধরে ফেললাম। নির্ভূল লক্ষ্য। অন্ধকারই কৌটো খুলে হাতের মুঠোতে জীবনের রসদ উঠে এল। মা বলে—
—বাটিতে নিয়ে খা!
কারণ দুটো। এক মাটিতে পড়ে নষ্ট হবে না। আর দু’নম্বর এই সমস্ত হানিকারক মুখরোচক খাদ্যাদির একটা পরিমাপ থাকবে। মা জেগে থাকলে শুনতে হত এখন কোনও চাপ নেই।
সিদ্ধান্ত না নিতে পারলেও কোন ক্ষতি নেই। পুরনো অংশটার নাম বদলে সে লেখা রেখে দেওয়া যায়। যদি শেষমেষ কিছু কাজে লাগে।
তবে কাগজ কলমের ব্যবহার এখনও হয়। মাথায় ঘুরতে থাকা চিন্তার সুতোগুলোকে ধরে রাখার জন্য। এই যেটা ভাবলাম সেটা যদি লিখে না রাখি তাহলে সেটা তো অন্য ভাবনার পলির আস্তরণের তলায় চাপা পড়ে যাবে। আর কখনো খুঁজেই পাবো না। এই টুকরো কাগজ গুলোই আমার মেমোরি স্লিপ।
কাগজ থেকে কম্পিউটারে আসার ফলে লেখা হারিয়ে ফেলার বদভ্যেসটা একটু ভদ্রস্থ হয়েছে। তাই আমার লেখার জায়গায় ল্যাপটপের পাশেই ছোট-বড় রাঙা ফুল মেজো, নানা মাপের কাগজ ক্লিপে আটকানো থাকে। তাতে টুকরো টাকরা অনেক কিছু লেখা। সেসব পড়ে যে আমি সবসময় বুঝতে পারি তা নয় কিন্তু পারলে আমিই পারবো। তবে কারেকশন বেড়েছে। কম্পিউটার অবাধ্য। নিজস্ব বুদ্ধি বিবেচনায় অনেক আলতু ফালতু কথা লেখে। কলম অনেক বাধ্য।
মা শুয়ে পড়েছিল। এতক্ষণ পরে যেন অস্থির মনটা একটু একটু করে স্থির হচ্ছে ফলে শারীরিক খিদেটা জানান দিচ্ছে। অন্ধকার হাতড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে চেনা পথে রান্নাঘর পর্যন্ত গেলাম হাত বাড়িয়ে ডালমুটের কৌটোটা ধরে ফেললাম। নির্ভূল লক্ষ্য। অন্ধকারই কৌটো খুলে হাতের মুঠোতে জীবনের রসদ উঠে এল। মা বলে—
—বাটিতে নিয়ে খা!
কারণ দুটো। এক মাটিতে পড়ে নষ্ট হবে না। আর দু’নম্বর এই সমস্ত হানিকারক মুখরোচক খাদ্যাদির একটা পরিমাপ থাকবে। মা জেগে থাকলে শুনতে হত এখন কোনও চাপ নেই।
আরও পড়ুন:
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৯: অনেক যতনে ‘বড়দিদি’-র পর্ব রাখিনু সেথা
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৬: সুন্দরবনের লৌকিক দেবতা পঞ্চানন্দ বা বাবাঠাকুর
ওভারের এক বল শেষ করে পরের বল করার জন্য বোলার যেমন তার বোলিং মার্কে ফিরে যায় আমিও তেমন আমার লেখার জায়গায় ফিরে যাচ্ছি হাতে ডালমুটের কৌটো। টেবিলে বসতেই আমি চমকে উঠলাম।
আজ সন্ধ্যে থেকে ল্যাপটপ খুলিনি। বন্ধ ল্যাপটপের ওপরে। এমন এক ক্লিপ লাগানো টুকরো সাদা কাগজের প্রথমটাতে লাল কালিতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা
“আফিফার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে?”
এটা কি আমি লিখেছি? আমার অজান্তেই লিখেছি? কিন্তু মনের মধ্যে যখন ভাবছিলাম তখন তো এটা আমার একটা স্টেটমেন্ট ছিল। আফিফা আমাকে জানাতে চেয়েছিল। আমাকে জানানো হয়ে গিয়েছে। ব্যাস, প্রয়োজন মিটে গিয়েছে। আমার মনে আছে সেখানে কোনো প্রশ্ন ছিল না। অথচ লেখার সময় আমি এই প্রশ্নচিহ্নটা দিলাম কেন? সচরাচর হাতের কাছে যে কলম পাই আমি তাতেই লিখি এবং আর সকলের মতই টেবিলে রাখা অনেক কলমের ভিড়ে মাত্র এক-দেড় খানা চলে। মানে কাজে দেয়। বাকিরা কাম চোর। সমাজে গিজগিজ করা মানুষের ভিড়ে যেমনটি হয় তেমন। আমি লাল কলমে লিখেছি কিন্তু কলমটা পাশে নেই বন্ধ করে আবার কলমদানিতে তুলে রাখা হয়েছে। আমি কি এতটা গোছানো? ক্লিপে লাগানো যে কাগজটা নিয়ে আমার এত ভাবনা চিন্তা গবেষণা তার ঠিক পাশে আর একটা ছোট কাগজের বাঞ্চ। সেখানে এতক্ষণ আমার নজর যায়নি। এবার গেল এবং আমি আরও চমকে উঠলাম।
সেখানে লেখা আছে—“না! প্রতিশোধ নিতে হবে!”
এটা আমার হাতের লেখা? ঠিক বুঝতে পারছি না কারণ আমি মনে আনমনে অনেক সময় অনেক ভাবে লিখি তো! কিন্তু আমার মন যে বলছে এই হাতের লেখা আমার ভীষণ চেনা। আরও অবাক হয়ে দেখলাম। সেই লেখাতেও লাল রং। তবে আমার অন্য লেখার ডট পেনের লাল রং নয়। আমার কাছে কোন লালকালির পেন নেই! আর এই লেখার অক্ষরগুলোতে লাল রংটা ক্রমশ শুকিয়ে খয়েরি হয়ে যাচ্ছে। তবে কি রক্ত!—চলবে।
আজ সন্ধ্যে থেকে ল্যাপটপ খুলিনি। বন্ধ ল্যাপটপের ওপরে। এমন এক ক্লিপ লাগানো টুকরো সাদা কাগজের প্রথমটাতে লাল কালিতে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা
“আফিফার প্রয়োজন ফুরিয়ে গিয়েছে?”
এটা কি আমি লিখেছি? আমার অজান্তেই লিখেছি? কিন্তু মনের মধ্যে যখন ভাবছিলাম তখন তো এটা আমার একটা স্টেটমেন্ট ছিল। আফিফা আমাকে জানাতে চেয়েছিল। আমাকে জানানো হয়ে গিয়েছে। ব্যাস, প্রয়োজন মিটে গিয়েছে। আমার মনে আছে সেখানে কোনো প্রশ্ন ছিল না। অথচ লেখার সময় আমি এই প্রশ্নচিহ্নটা দিলাম কেন? সচরাচর হাতের কাছে যে কলম পাই আমি তাতেই লিখি এবং আর সকলের মতই টেবিলে রাখা অনেক কলমের ভিড়ে মাত্র এক-দেড় খানা চলে। মানে কাজে দেয়। বাকিরা কাম চোর। সমাজে গিজগিজ করা মানুষের ভিড়ে যেমনটি হয় তেমন। আমি লাল কলমে লিখেছি কিন্তু কলমটা পাশে নেই বন্ধ করে আবার কলমদানিতে তুলে রাখা হয়েছে। আমি কি এতটা গোছানো? ক্লিপে লাগানো যে কাগজটা নিয়ে আমার এত ভাবনা চিন্তা গবেষণা তার ঠিক পাশে আর একটা ছোট কাগজের বাঞ্চ। সেখানে এতক্ষণ আমার নজর যায়নি। এবার গেল এবং আমি আরও চমকে উঠলাম।
সেখানে লেখা আছে—“না! প্রতিশোধ নিতে হবে!”
এটা আমার হাতের লেখা? ঠিক বুঝতে পারছি না কারণ আমি মনে আনমনে অনেক সময় অনেক ভাবে লিখি তো! কিন্তু আমার মন যে বলছে এই হাতের লেখা আমার ভীষণ চেনা। আরও অবাক হয়ে দেখলাম। সেই লেখাতেও লাল রং। তবে আমার অন্য লেখার ডট পেনের লাল রং নয়। আমার কাছে কোন লালকালির পেন নেই! আর এই লেখার অক্ষরগুলোতে লাল রংটা ক্রমশ শুকিয়ে খয়েরি হয়ে যাচ্ছে। তবে কি রক্ত!—চলবে।
* বসুন্ধরা এবং… দ্বিতীয় খণ্ড (Basundhara Ebong-Novel Part-2) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।