আফিফা, মানে যে অবয়বকে আমি আফিফার অস্তিত্ব বলে ভাবছি, তাকে উদ্দেশ্য করে জিজ্ঞেস করলাম।
—আমরা মানে।
—আমরা মানে আমরা। আমরা যারা চলে গিয়েছি, আমরা যারা অবয়বহীন দেহহীন অস্তিত্ব।
কিশোরী বয়স থেকেই আফিফা বেশ গুছিয়ে বাংলা বলতো।
আজকাল হিন্দি ইংরিজি স্প্রে করা অগোছালো বাঙলা শুনলে কানে ব্যাথা করে। মেজাজ বশে থাকে না। এটা অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে বললে মাফ করে দেওয়া যায়। দামড়া দাদা বৌদি বা কাকু কাকিমা যখন এ ভাবে কথা বলে—“কেন কী” বা “উনি তোমার পিসা হচ্ছেন” বা “কান খুলে শুনে রাখ’। গাঙ্গুতেলি থেকে রাজা ভোজ বা বাজার যাওয়া হাতির পিছনে হাজার কুকুরের চিৎকার করে এসব হিন্দি প্রবাদ এই বাংলায় এখন বহুল প্রচলিত। গানের সুরুটা হয়ে গিয়েছে মুখড়া তরকারি বদলাচ্ছে ভাজিতে। ঠিকঠাক এখন বরাবর। দুর্দান্ত এখন ধামাকা। মুখের মতো জবাব এখন ঠোস জবাব। এর সঙ্গে রয়েছে মুড়ি খেয়ে কড়াইশুঁটি দেওয়ার মতো অজস্র টুকরো টাকরা ইংরেজি শব্দ। ইউ নো! আই মিন! ইউ সি’র অনর্গল ব্যবহার। এই দুর্দশার মধ্যে যে সমৃদ্ধ পেলব বাংলা শুনলে মনের মেঘটা চট করে কেটে যায় আফিফা ঠিক সেরকম বাংলা বলতো।
—বুঝলাম। কিন্তু এত বছর তো আমার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। এতদিন পর তুমি চলে যাবার পর আমি কী করতে পারি?
—আমার কথাগুলো পুরোটা শোনার পর নিজেকে আবার এই প্রশ্নটা করো। তখন ঠিক উত্তর পেয়ে যাবে।
আমি রাজি হলাম। আমি বুঝেছি এটা আমার কোন মানসিক রোগ নয়। আমি কাউকেই হ্যালুসিনেট করছি না। বিদেহি যাঁরা আমার সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারছেন আমি তাদের কথা শুনতে পারছি বা বুঝতে পারছি। একেবারে অচেনা অজানা কারও সঙ্গে এ ভাবে কথা চালানো যায় না। মনের কোণে একটা ভয় জমা থাকেই। কিন্তু আফিফার ব্যাপারটা একেবারেই অন্যরকম।
অনুপম রায়ের গানেই আছে অভ্যেস আসলে মনের মধ্যে বদলটা মেনে নেওয়া। প্রথম প্রথম এমন একটা অতীন্দ্রিয় ব্যাপার স্যাপার আমাকে ভাবাতো। এখন ক্রমশ আমি এতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। এখন কোনও অস্বস্তি নেই, ভয় নেই। আমি অবশ্য চিরকালই বদলটা খুব সহজে মেনে নেই। ছোটবেলায় শুনে কিশোরকুমার, রাহুল দেব বর্মণ, শৈলেন্দ্র সিংহের ববি এখনও শুনতে ভালো লাগে। হেমন্ত, মান্না, শ্যামল, সন্ধ্যা, আরতি, লতা, আশা সেও ভালো লাগে। আবার অরিজিৎ সিং, শ্রেয়া ঘোষাল মাঝে মাঝে সুনিধি চৌহান, অনুপম, রূপম এদেরও বেশ লাগে। সময়টা আঁকড়ে থাকতে ভালো লাগে না।
—আমরা মানে।
—আমরা মানে আমরা। আমরা যারা চলে গিয়েছি, আমরা যারা অবয়বহীন দেহহীন অস্তিত্ব।
কিশোরী বয়স থেকেই আফিফা বেশ গুছিয়ে বাংলা বলতো।
আজকাল হিন্দি ইংরিজি স্প্রে করা অগোছালো বাঙলা শুনলে কানে ব্যাথা করে। মেজাজ বশে থাকে না। এটা অল্পবয়সি ছেলেমেয়ে বললে মাফ করে দেওয়া যায়। দামড়া দাদা বৌদি বা কাকু কাকিমা যখন এ ভাবে কথা বলে—“কেন কী” বা “উনি তোমার পিসা হচ্ছেন” বা “কান খুলে শুনে রাখ’। গাঙ্গুতেলি থেকে রাজা ভোজ বা বাজার যাওয়া হাতির পিছনে হাজার কুকুরের চিৎকার করে এসব হিন্দি প্রবাদ এই বাংলায় এখন বহুল প্রচলিত। গানের সুরুটা হয়ে গিয়েছে মুখড়া তরকারি বদলাচ্ছে ভাজিতে। ঠিকঠাক এখন বরাবর। দুর্দান্ত এখন ধামাকা। মুখের মতো জবাব এখন ঠোস জবাব। এর সঙ্গে রয়েছে মুড়ি খেয়ে কড়াইশুঁটি দেওয়ার মতো অজস্র টুকরো টাকরা ইংরেজি শব্দ। ইউ নো! আই মিন! ইউ সি’র অনর্গল ব্যবহার। এই দুর্দশার মধ্যে যে সমৃদ্ধ পেলব বাংলা শুনলে মনের মেঘটা চট করে কেটে যায় আফিফা ঠিক সেরকম বাংলা বলতো।
—বুঝলাম। কিন্তু এত বছর তো আমার সঙ্গে কোনও যোগাযোগ নেই। এতদিন পর তুমি চলে যাবার পর আমি কী করতে পারি?
—আমার কথাগুলো পুরোটা শোনার পর নিজেকে আবার এই প্রশ্নটা করো। তখন ঠিক উত্তর পেয়ে যাবে।
আমি রাজি হলাম। আমি বুঝেছি এটা আমার কোন মানসিক রোগ নয়। আমি কাউকেই হ্যালুসিনেট করছি না। বিদেহি যাঁরা আমার সঙ্গে কমিউনিকেট করতে পারছেন আমি তাদের কথা শুনতে পারছি বা বুঝতে পারছি। একেবারে অচেনা অজানা কারও সঙ্গে এ ভাবে কথা চালানো যায় না। মনের কোণে একটা ভয় জমা থাকেই। কিন্তু আফিফার ব্যাপারটা একেবারেই অন্যরকম।
অনুপম রায়ের গানেই আছে অভ্যেস আসলে মনের মধ্যে বদলটা মেনে নেওয়া। প্রথম প্রথম এমন একটা অতীন্দ্রিয় ব্যাপার স্যাপার আমাকে ভাবাতো। এখন ক্রমশ আমি এতে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছি। এখন কোনও অস্বস্তি নেই, ভয় নেই। আমি অবশ্য চিরকালই বদলটা খুব সহজে মেনে নেই। ছোটবেলায় শুনে কিশোরকুমার, রাহুল দেব বর্মণ, শৈলেন্দ্র সিংহের ববি এখনও শুনতে ভালো লাগে। হেমন্ত, মান্না, শ্যামল, সন্ধ্যা, আরতি, লতা, আশা সেও ভালো লাগে। আবার অরিজিৎ সিং, শ্রেয়া ঘোষাল মাঝে মাঝে সুনিধি চৌহান, অনুপম, রূপম এদেরও বেশ লাগে। সময়টা আঁকড়ে থাকতে ভালো লাগে না।
এরপর থেকে আফিফা প্রায়ই আসত আমার কাছে। সকালে বা দুপুরে যখন লিখতে বসতাম। একদম একা। আমি বুঝতে পারতাম। আফিফা এসেছে টেবিলের ঠিক পাশেই দাঁড়িয়ে আছে। শব্দহীন, বর্ণহীন, গন্ধহীন উপস্থিতি। মানুষের বেলায় যে ভাবে কারও দাঁড়িয়ে থাকা মনকে স্পর্শ করে—ঠিক যেন তার উলটো।
আমি এখনও জানি না আদৌ এমন কিছু ঘটছে নাকি পুরোটাই আমার মনের ভুল বা হ্যালুসিনেশন। যেটা আমার ডাক্তারনী মনে করেন। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস করেছি। পরেরটা সময় হয়ে গেছে কিন্তু যাব কিনা এখনও ঠিক করিনি। এ সমস্ত ঘটনাগুলো এতটাই স্পষ্ট এতটাই বাস্তব বলে আমার মনে হচ্ছে যে সেটাকে আমার অধম মস্তিষ্ক বা সাবকনসাস মাইন্ডের ভাবনাচিন্তা বলে ভাবতে পারছি না। আমার কৈশোর বা যুবকবেলায় ধর্মীয় বেড়াজালটা টপকাতে পারিনি। সেটা আমার দুর্বলতা। হয়তো আফিফারও দুর্বলতা হবে। কিন্তু সেই সময় আফিফা তার পরিবারকে অস্বীকার করে বেরিয়ে এলে আমি কি তাকে আশ্রয় দিতে পারতাম? আজ এখন এটা খুব একটা বড় সমস্যা নয়। সংখ্যায় কম হলেও এ ধরনের অসবর্ণ বিয়ে হচ্ছে। বুনির বারণ শুনে তাই আমরা দু’ জনে দু’দিকে সরে গিয়েছিলাম।
আমি যাকে ভালোবাসতাম, সে বা বলা ভালো তার অস্তিত্ব এখন আমার আশেপাশে। যেন এক নতুন করে পাওয়া। আবার হারিয়ে ফেলার ভয় নেই। এ ভাবেই তো আমরা থেকে যেতে পারি।
—না, পারি না।
আমি এখনও জানি না আদৌ এমন কিছু ঘটছে নাকি পুরোটাই আমার মনের ভুল বা হ্যালুসিনেশন। যেটা আমার ডাক্তারনী মনে করেন। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর আমি অ্যাপয়েন্টমেন্ট মিস করেছি। পরেরটা সময় হয়ে গেছে কিন্তু যাব কিনা এখনও ঠিক করিনি। এ সমস্ত ঘটনাগুলো এতটাই স্পষ্ট এতটাই বাস্তব বলে আমার মনে হচ্ছে যে সেটাকে আমার অধম মস্তিষ্ক বা সাবকনসাস মাইন্ডের ভাবনাচিন্তা বলে ভাবতে পারছি না। আমার কৈশোর বা যুবকবেলায় ধর্মীয় বেড়াজালটা টপকাতে পারিনি। সেটা আমার দুর্বলতা। হয়তো আফিফারও দুর্বলতা হবে। কিন্তু সেই সময় আফিফা তার পরিবারকে অস্বীকার করে বেরিয়ে এলে আমি কি তাকে আশ্রয় দিতে পারতাম? আজ এখন এটা খুব একটা বড় সমস্যা নয়। সংখ্যায় কম হলেও এ ধরনের অসবর্ণ বিয়ে হচ্ছে। বুনির বারণ শুনে তাই আমরা দু’ জনে দু’দিকে সরে গিয়েছিলাম।
আমি যাকে ভালোবাসতাম, সে বা বলা ভালো তার অস্তিত্ব এখন আমার আশেপাশে। যেন এক নতুন করে পাওয়া। আবার হারিয়ে ফেলার ভয় নেই। এ ভাবেই তো আমরা থেকে যেতে পারি।
—না, পারি না।
আরও পড়ুন:
গা ছমছমে ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-১৫: পুলিশ কিন্তু অন্য কিছু সন্দেহ করছে!
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৩: কানে ব্যথা? তেল দেবেন কি?
ভাবতে ভাবতে রাস্তা হাঁটতে হাঁটতে সুইমিংপুল থেকে বাড়ির দিকে এগোচ্ছি। সঙ্গীর মতো সঙ্গে সঙ্গে তো কেউ চলছে না, তাই আফিফার অস্তিত্ব খেয়াল ছিল না। আচমকা ওর কথা খেয়াল করতে গিয়ে অন্যমনস্ক হয়ে উল্টো দিক থেকে খালি রাস্তা পেয়ে খুব জোরে হর্ণ দিতে দিতে আসা একটা গাড়িতে প্রায় চাপা পড়ছিলাম। কী যেন আমায় নিমেষের মধ্যে গাড়ির রাস্তার থেকে সরিয়ে দিল। ভয়ে চোখ বুঝে ফেলেছিলাম। গাড়িটা প্রায় আমার ছুঁয়ে দিয়ে চলে গেল। গাড়ির গরম হাওয়া রাস্তার ধারের ধুলো আমার শরীরে, নাকে চোখে জ্বালা ধরানো পোড়া তেলের গন্ধ। আশপাশের দোকান থেকে জনা কয়েক ছুটে এসে আমায় ধরে ফেলল।
—জাস্ট বরাত জোরে বেঁচে গেলেন!
—শেষ মুহূর্তে সরলেন কী করে?
আমি উত্তর দেবার অবস্থায় ছিলাম না। তাই মাথা নেড়ে জানালাম ‘জানি না’। আমি আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছি আফিফা ঠিক এখন কোথায়। আমাকে ওইভাবে উদভ্রান্তের মতো দু’পাশে তাকাতে দেখে ভিড় করা লোকজন বলে উঠলো।
—শরীর খারাপ লাগছে?
—আপনাকে তো চিনি। কে ডি মুখার্জি রোডে থাকেন।
—চলুন আমরা গিয়ে দিয়ে আসছি।
—জাস্ট বরাত জোরে বেঁচে গেলেন!
—শেষ মুহূর্তে সরলেন কী করে?
আমি উত্তর দেবার অবস্থায় ছিলাম না। তাই মাথা নেড়ে জানালাম ‘জানি না’। আমি আশেপাশে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করেছি আফিফা ঠিক এখন কোথায়। আমাকে ওইভাবে উদভ্রান্তের মতো দু’পাশে তাকাতে দেখে ভিড় করা লোকজন বলে উঠলো।
—শরীর খারাপ লাগছে?
—আপনাকে তো চিনি। কে ডি মুখার্জি রোডে থাকেন।
—চলুন আমরা গিয়ে দিয়ে আসছি।
আরও পড়ুন:
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭: গৃহিণী সারদার প্রথম দক্ষিণেশ্বর আগমন
মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-২: ভারতের স্থাপত্যশৈলীতে ভিতরকুঠি টেরাকোটা শিব মন্দিরের অবদান অপরিসীম
আমি সবিনয় জানালাম। যেতে পারবো আমার অসুবিধা হবে না। এদিক-ওদিক দেখে আমি আবার বাড়ির রাস্তায় চলা শুরু করলাম আমাকে সাহায্য করতে আসা ভিড় আস্তে আস্তে খালি হয়ে গেল। ওদের থেকে দূরত্ব একটু বাড়াবার পর আমি আবার আশপাশটা দেখলাম। হঠাৎ মনে হল আফিফা কি আমাকে তার কাছে নিয়ে যেতে চাইছে?
আশা করছিলাম আমার ডান বা বামপাশ থেকে আফিফা ফিসফিস করে উত্তর দেবে।
—যা ভাবছো সেটা ঠিক নয়।
কিন্তু যেটা ভাবছিলাম সেটা ঘটল না। আমি বাড়ির কাছাকছি পৌঁছে যাবার পরেও আফিফার কোন অস্তিত্ব টের পেলাম না।
কেমন একটা অদ্ভুত অস্বস্তি হচ্ছিল। প্রথম দিন সুইমিং পুল থেকে ফেলবার সময় মোহিনীর ব্যাপারটা আমাকে আতঙ্কিত করেছিল। সেই ভয়ে সেই আতঙ্ক থেকে আমি মুক্তি চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ অন্যরকম লাগছে। চেনা মানুষকে মাঝপথে হারিয়ে ফেলার মত অনুভূতি। যত দিন যাচ্ছে তত আমার নিজের উপর সন্দেহ বাড়ছে। আমি এখনও জানি না আমি যা দেখছি বা শুনছি সেটা ঠিক না আমার ডাক্তার আমায় যেটা বলছেন সেটা ঠিক।
আশা করছিলাম আমার ডান বা বামপাশ থেকে আফিফা ফিসফিস করে উত্তর দেবে।
—যা ভাবছো সেটা ঠিক নয়।
কিন্তু যেটা ভাবছিলাম সেটা ঘটল না। আমি বাড়ির কাছাকছি পৌঁছে যাবার পরেও আফিফার কোন অস্তিত্ব টের পেলাম না।
কেমন একটা অদ্ভুত অস্বস্তি হচ্ছিল। প্রথম দিন সুইমিং পুল থেকে ফেলবার সময় মোহিনীর ব্যাপারটা আমাকে আতঙ্কিত করেছিল। সেই ভয়ে সেই আতঙ্ক থেকে আমি মুক্তি চেয়েছিলাম। কিন্তু আজ অন্যরকম লাগছে। চেনা মানুষকে মাঝপথে হারিয়ে ফেলার মত অনুভূতি। যত দিন যাচ্ছে তত আমার নিজের উপর সন্দেহ বাড়ছে। আমি এখনও জানি না আমি যা দেখছি বা শুনছি সেটা ঠিক না আমার ডাক্তার আমায় যেটা বলছেন সেটা ঠিক।
আরও পড়ুন:
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২৪: রিমঝিম ঘিরে শাওন…আবার লতা, কিশোর ও পঞ্চমের সেই জাদু
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭১: ইংরেজের চোখে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ‘দাগী আসামী’
ডাক্তারের কথায় মনে হলে, অনেকদিন ক্লিনিকে যাওয়া হয়নি। মানে সেইবার যখন যাওয়ার পর আমাকে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল। তারপর থেকে আর যাইনি। ফোনে কথা বলেছি, ওষুধগুলোর ব্যাপারে কথা হয়েছে। আসলে মনের চিকিৎসা তো ডাক্তাররা বোধহয় খুব একটা জোরাজুরি করেন না ।রুগির মনই যদি বিগড়ে যায়, তাহলে চিকিৎসাটা হবে কিসের?
আমি বাড়ি পৌঁছে গিয়েছি। বাইরের রাস্তার উপর পাঁচিলের সঙ্গে লাগানো হাফ-গেট টপকে সিঁড়ির সামনের গ্রিলের গেটের কাছে পৌঁছেছি। হঠাৎ দেখলাম চারজন অচেনা লোক কাউকে যেন ধরাধরি করে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে নিয়ে গেল ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে গেল আমি বুঝতেই পারলাম না। চারদিক যেন অসম্ভব ঠান্ডা, শব্দহীন একটানা যে ঝিঁঝির শব্দে দক্ষিণ শহরতলির এই অপেক্ষাকৃত নিশ্চুপ গলিতে সন্ধ্যে নামে সেটাও উধাও। আচমকা আমার শীত করছে। আমি কোনওক্রমে সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলাম।
—কিরে হাঁপাচ্চিস কেন?
মায়ের প্রশ্নে আশ্বস্ত হলাম।
—একদমে সিঁড়ি ভেঙে উঠলাম তো।
—একদম ওসব হাঁকাদমকা কাজ করবে না।
মায়ের তৈরি দুমদামের এমনসব প্রতিশব্দ শুনলে বাঙলা ভাষাবিদরা ভাবতেন “কিছুই হল না জানা”। মা বলে যাচ্ছে। মায়েরা বডি-শেমিং করবেন না। তাই মোটাসোটা জলহস্তির মতো না বলে বললেন
—তোমাদের ভারি চেহারা। কী দরকার তাড়াহুড়োর? ধীরে সুস্থে সইয়ে সইয়ে উঠবে
—কেন?
মায়ের এই শান্ত প্রেস্ক্রিপশনের কারণটা জানাতে হবে।
—আমাদের চারতলায় ওই যে নবীন মুখোপাধ্যায়। সুস্থ মানুষ বিকেলবেলা দিব্যি সিঁড়ি ভেঙে চারতলা উঠেছে। একটু আগে চায়ের কাপ নিয়ে বসেই হার্ট অ্যাটাক এই তো সুমন্ত ডাক্তার নিয়ে এল, তুমি একবার বরং যাও।
আমি কথাটা শুনে চমকে উঠলাম সঙ্গে সঙ্গে দরজায় বেল বাজল।
সুমন্ত শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে।
—ডাক্তারবাবুর সামনেই জামাইবাবু চলে গেলেন মাসীমা। কিছু করা গেল না।—চলবে।
আমি বাড়ি পৌঁছে গিয়েছি। বাইরের রাস্তার উপর পাঁচিলের সঙ্গে লাগানো হাফ-গেট টপকে সিঁড়ির সামনের গ্রিলের গেটের কাছে পৌঁছেছি। হঠাৎ দেখলাম চারজন অচেনা লোক কাউকে যেন ধরাধরি করে নিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে নিয়ে গেল ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে গেল আমি বুঝতেই পারলাম না। চারদিক যেন অসম্ভব ঠান্ডা, শব্দহীন একটানা যে ঝিঁঝির শব্দে দক্ষিণ শহরতলির এই অপেক্ষাকৃত নিশ্চুপ গলিতে সন্ধ্যে নামে সেটাও উধাও। আচমকা আমার শীত করছে। আমি কোনওক্রমে সিঁড়ি দিয়ে উঠে গেলাম।
—কিরে হাঁপাচ্চিস কেন?
মায়ের প্রশ্নে আশ্বস্ত হলাম।
—একদমে সিঁড়ি ভেঙে উঠলাম তো।
—একদম ওসব হাঁকাদমকা কাজ করবে না।
মায়ের তৈরি দুমদামের এমনসব প্রতিশব্দ শুনলে বাঙলা ভাষাবিদরা ভাবতেন “কিছুই হল না জানা”। মা বলে যাচ্ছে। মায়েরা বডি-শেমিং করবেন না। তাই মোটাসোটা জলহস্তির মতো না বলে বললেন
—তোমাদের ভারি চেহারা। কী দরকার তাড়াহুড়োর? ধীরে সুস্থে সইয়ে সইয়ে উঠবে
—কেন?
মায়ের এই শান্ত প্রেস্ক্রিপশনের কারণটা জানাতে হবে।
—আমাদের চারতলায় ওই যে নবীন মুখোপাধ্যায়। সুস্থ মানুষ বিকেলবেলা দিব্যি সিঁড়ি ভেঙে চারতলা উঠেছে। একটু আগে চায়ের কাপ নিয়ে বসেই হার্ট অ্যাটাক এই তো সুমন্ত ডাক্তার নিয়ে এল, তুমি একবার বরং যাও।
আমি কথাটা শুনে চমকে উঠলাম সঙ্গে সঙ্গে দরজায় বেল বাজল।
সুমন্ত শুকনো মুখে দাঁড়িয়ে।
—ডাক্তারবাবুর সামনেই জামাইবাবু চলে গেলেন মাসীমা। কিছু করা গেল না।—চলবে।
ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
* বসুন্ধরা এবং… দ্বিতীয় খণ্ড (Basundhara Ebong-Novel Part-2) : জিৎ সত্রাগ্নি (Jeet Satragni) বাংলা শিল্প-সংস্কৃতি জগতে এক পরিচিত নাম। দূরদর্শন সংবাদপাঠক, ভাষ্যকার, কাহিনিকার, টেলিভিশন ধারাবাহিক, টেলিছবি ও ফিচার ফিল্মের চিত্রনাট্যকার, নাট্যকার। উপন্যাস লেখার আগে জিৎ রেডিয়ো নাটক এবং মঞ্চনাটক লিখেছেন। প্রকাশিত হয়েছে ‘জিৎ সত্রাগ্নি’র নাট্য সংকলন’, উপন্যাস ‘পূর্বা আসছে’ ও ‘বসুন্ধরা এবং…(১ম খণ্ড)’।