শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

কোলেস্টেরল এবং ট্রাইগ্লিসারাইড— অনেকেই এই দু’টি বিষয়কে গুলিয়ে ফেলেন। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে এই দুয়ের মধ্যে মিলও রয়েছে বটে। আবার অমিলও অনেক আছে। হৃদ্‌যন্ত্রের অসুস্থতা শনাক্ত করতে হলে চিকিৎসক রক্তপরীক্ষা করতে দেন। সেই সব পরীক্ষার মধ্যে দিয়েই তিনি দেখে নেন ট্রাইগ্লিসারাইড আর কোলেস্টেরলের মাত্রা বিপদসীমার মধ্যে আছে কি না।

 

ট্রাইগ্লিসারাইড কি?

ট্রাইগ্লিসারাইড হল এক ধরনের চর্বি (লিপিড) যা আমদের রক্তে থাকে। যখন আমরা খাবার খাই, তখন ওই খাবার হজমের পর শরীরে শক্তি বা ক্যালোরি তৈরি করে আর অতিরিক্ত ক্যালোরি যা দেহের প্রয়োজনে লাগে না তা ট্রাইগ্লিসারাইডে পরিবর্তিত হয়ে দেহের বিভিন্ন স্থানে জমা হয়। ট্রাইগ্লিসারাইড আমাদের চর্বির কোষকে সংরক্ষণ করে। পরে শরীরের প্রয়োজনের সময় বিশেষ কিছু হরমোন শক্তির জন্য ট্রাইগ্লিসারাইডকে ভেঙে ক্যালোরি তৈরি করে। আমরা যদি নিয়মিতভাবে দেহের প্রয়োজনের চেয়ে বেশি ক্যালোরি গ্রহণ করি, বিশেষ করে উচ্চ-কার্বোহাইড্রেট খাবার থেকে, তাহলে উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড (হাইপারট্রিগ্লিসারাইডেমিয়া) হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

 

ট্রাইগ্লিসারাইডের স্বাভাবিক মাত্রা কত?

সাধারণ রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা জানা যায়।
● স্বাভাবিক: রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা স্বাভাবিক মাত্রা ১৫০ এমজি/ডিএল-এর কম থাকতে হবে।
● স্বাভাবিকের মধ্যে: ১৫০ থেকে ১৯৯ এমজি/ডিএল
● স্বাভাবিকের বেশি: ২০০ থেকে ৪৯৯ এমজি/ডিএল
● খুব বেশি: ৫০০ এমজি/ডিএল বা তার বেশি ।
সাধারণত ট্রাইগ্লিসারাইড পরীক্ষা কোলেস্টেরল পরীক্ষার একটি অংশ, যাকে লিপিড প্রোফাইল বলা হয়। সঠিক ট্রাইগ্লিসারাইড পরিমাপের জন্য রক্ত নেওয়ার আগে আপনাকে খালিপেটে থাকতে হবে।

আরও পড়ুন:

হোমিওপ্যাথি: পায়ের শিরা নীল হয়ে ফুলে যাচ্ছে? হোমিওপ্যাথিতে ভেরিকোজ ভেনের চিকিৎসা সম্ভব

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৬: মজল আঁখি মজেছে মন, ইমোজি তোদের ডাকল যখন

 

কেন উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড গুরুত্বপূর্ণ?

উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড ধমনীকে শক্ত করতে বা ধমনীর দেওয়ালকে চর্বির আস্তরণ সৃষ্টি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় (আরটেরিওস্ক্লেরোসিস), যা স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। অত্যন্ত উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডগুলি অগ্ন্যাশয়ের তীব্র প্রদাহ (অগ্ন্যাশয়ের প্রদাহ) সৃষ্টি করতে পারে।
শরীরের রক্তবহনকারী নালীর দেওয়ালে ট্রাইগ্লিসারাইড জমতে থাকে। এর ফলে ওই নালিগুলি সরু হতে হতে রক্ত চলাচলও বন্ধ হয়ে যেতে পারে। হৃদ্‌রোগ বা ব্রেন স্ট্রোকের মূলে থাকতে পারে রক্তবাহিকায় জমে থাকা অতিরিক্ত ট্রাইগ্লিসারাইড। কিডনির সমস্যাও হতে পারে এর ফলে। এ ছাড়া, পাকস্থলীর পাশে এই ট্রাইগ্লিসারাইড জমে ক্ষতি করতে পারে।
কোলেস্টেরলের মাত্রা উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইডেরও লক্ষণ হতে পারে।
টাইপ-২ ডায়াবেটিস বা প্রিডায়াবেটিস।
মেটাবলিক সিনড্রোম এমন একটি অবস্থা যখন উচ্চ রক্তচাপ, স্থূলতা এবং উচ্চ রক্তে শর্করা একসঙ্গে তৈরি হয়। সেই সঙ্গে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।
থাইরয়েড হরমোনের নিম্ন স্তরের সমস্যা দেখা দেওয়া (হাইপোথাইরয়েডিজম)।
কিছু বিরল জেনেটিক অবস্থা, যেগুলি প্রভাবিত করে কীভাবে আপনার শরীর চর্বিকে শক্তিতে রূপান্তর করবে।
কখনও কখনও উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড নির্দিষ্ট ওষুধ গ্রহণের একটি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া জন্য হতে পারে।

আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৫: সুন্দরবন নামরহস্য

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৩: আত্মারামে কুটো বাঁধা আছে

 

ট্রাইগ্লিসারাইড কমানোর সেরা উপায় কী?

 

শরীরচর্চা

নিয়মিত ব্যায়াম করুন। দিনে কমপক্ষে ৩০ মিনিটের শারীরিক কার্যকলাপের মধ্যে থাকুন। নিয়মিত ব্যায়াম ট্রাইগ্লিসারাইড কমাতে পারে। আবার ভালো কোলেস্টেরলও বাড়াতে পারে। দৈনন্দিন কাজের মধ্যে আরও বেশি শারীরিক ক্রিয়াকলাপের চেষ্টা করতে হবে। যেমন: কর্মক্ষেত্রে সিঁড়ি বেয়ে উঠুন বা বিরতির সময় হাঁটাহাঁটি করুন।
 

চিনি ও কার্বোহাইড্রেট

চিনি এবং পরিশোধিত কার্বোহাইড্রেট যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলুন। সাধারণ কার্বোহাইড্রেট, যেমন চিনি এবং সাদা ময়দা বা ফ্রুকটোজ দিয়ে তৈরি খাবার ট্রাইগ্লিসারাইড বাড়াতে পারে।
 

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতেই হবে। আপনার যদি অল্প বিস্তর হাইপারট্রাইগ্লিসারাইডেমিয়া থাকে তবে ক্যালোরি গ্রহণের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন। অতিরিক্ত ক্যালোরি ট্রাইগ্লিসারাইডে রূপান্তরিত হয় এবং চর্বি হিসাবে সংরক্ষণ হয়। ক্যালোরি কমা নেওয়া মানে ট্রাইগ্লিসারাইডও কমবে।
 

স্বাস্থ্যকর চর্বি জাতীয় খাবার

গাছপালা থেকে তৈরি অলিভ এবং ক্যানোলা তেলের মতো স্বাস্থ্যকর চর্বি পাতে রাখুন। স্যাচুরেটেড ফ্যাটযুক্ত রেড মিটের পরিবর্তে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ মাছ খেলে ভালো। যেমন ম্যাকেরেল বা সালমন। ট্রান্স ফ্যাট বা হাইড্রোজেনেটেড তেল বা চর্বিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। সামুদ্রিক মাছ, মাছের তেল ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।
 

মদ্যপান বর্জন করা ভালো

অ্যালকোহলে ক্যালোরি এবং চিনি বেশি থাকে। মদ্যপান ট্রাইগ্লিসারাইডের উপর শক্তিশালী প্রভাব ফেলে। টাই হাইপারট্রাইগ্লিসারাইডেমিয়া থাকলে মদ্যপান এড়িয়ে চলুন। ধূমপানের অভ্যাস ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ। তাই সুস্থ থাকতে ধূমপান কম করুন। কফি অতিরিক্ত পরিমাণে খাওয়ার ফলেও ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বাড়তে পারে। বরং গ্রিন টি ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে।

আরও পড়ুন:

রিভিউ: ‘সির্ফ এক বান্দা কাফি হ্যায়’—মনোজ বাজপেয়ী একাই একশো

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২০: পঞ্চমের সুর আর কিশোর-আশার অনবদ্য উপস্থাপনা, ‘এক ম্যায় অউর এক তু’ গানটি আজও সুপারহিট

 

হোমিওপ্যাথিতে চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথি ঔষধ হাইপারট্রাইগলাইসেমিয়া নিরাময়ে খুবই কার্যকর। হোমিওপ্যাথি ঔষধ লক্ষণ সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে রোগীর উপর প্রয়োগ করা হয়। তাই এক একটি ঔষধ এক এক জন রোগীর উপর ভাল কাজ করে। তবে কিছু ঔষধ এই রোগে খুব কার্যকর যা রোগের লক্ষণ কমাতে ও দ্রুত রোগ মুক্ত হতে সাহায্য করে। যেমন:
গুইটেরিয়া গুমেরি
পালসাটিলা
ক্রেটেগাস অক্সিকানথা
কোলেস্টেরিনাম
ক্যালকেরিয়া কার্ব
থুজা ওষুধ খুবই উপকারী।।

তবে হোমিওপ্যাথি ওষুধের কত পটেন্সি, কী পরিমাণে খেতে হবে তার জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করলে এই হাইপারট্রাইগলাইসেমিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

যোগাযোগ: ৭০০৫৬৪৩২৩১

* হোমিওপ্যাথি (Homeopathy–Health Tips): ডাঃ দেবজ্যোতি সাহা (Debajyoti Saha), বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, মেডিকেল আফিসার, রিজিওন্যাল ইন্সিটিউট অফ ফারমাসিতুকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আগরতলা।

Skip to content