সোমবার ২৫ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

পঞ্চাশ দোরগোড়ায় এসে সবচেয়ে বেশি যে বিষয়টি মহিলাদের ভাবায়, তা হল ঋতুবন্ধ। কেউ বেশি খিটখিটে হয়ে যান, কারও বা হঠাৎ ওজন বেড়ে যায়। অনেকের হাড়ের ক্ষয় জনিত সমস্যাও দেখা দেয়। এসব কিন্তু ঋতুবন্ধের প্রাথমিক উপসর্গ। সাধারণত ঋতুবন্ধের ক্ষেত্রে বছরখানেক আগে থেকেই অনিয়মিত ঋতুস্রাব, ঋতুস্রাব বন্ধ থাকা এরকম সমস্যাগুলি শুরু হয়। এই পর্যায়ে মহিলাদের শরীরে হরমোনের পরিবর্তন হয়। আচমকাই এইসব পরিবর্তন হলে অসুবিধে তো হবেই! কিন্তু একটা নির্দিষ্ট বয়সের পর তো এই পরিবর্তন অবশ্যম্ভাবী। তাই এক্ষেত্রে ভালো থাকার অন্যতম উপায় হল সুস্থ ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাত্রা। এতে অল্প হলেও সমস্যা কমবে।
মহিলারা ডিম্বাণু নিয়ে জন্মান, যা তাঁদের ডিম্বাশয়ে জমা থাকে। এই ডিম্বাশয় ইস্ট্রোজেন এবং প্রোজেস্টেরন হরমোন তৈরি করে, যা তাদের পিরিয়ড (ঋতুস্রাব) এবং ডিম নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণ করে। মেনোপজ হচ্ছে যখন ডিম্বাশয় আর প্রতি মাসে ডিম তৈরি করে না এবং মাসিক বন্ধ হয়ে যায়। মেনোপজ মহিলাদের বার্ধক্যের একটি নিয়মিত অংশ, যা ৪৫-৫০ বছর বয়সের মধ্যে দেখা যায়।
 

প্রি-মেনোপজাল লক্ষণগুলি কি?

মেনোপজের প্রাথমিক উপসর্গগুলো মেনোপজের কাছাকাছি থাকা বেশিরভাগ মহিলারা ভাসোমোটর লক্ষণ নামে পরিচিত। সবচেয়ে সাধারণ হল গরম ঝলকানি, হঠাৎ উষ্ণতার অনুভূতি যা শরীরের উপরের অংশে ছড়িয়ে পড়ে, প্রায়শই মুখ বা ত্বক লাল হয়ে যায় এবং ঘাম হয়। এই ফ্ল্যাশগুলি বেশিরভাগ মহিলাদের মধ্যে অল্প মাত্রায় থাকে। তবে অনেকের মধ্যে গুরুতর হতে পারে।
 

এছাড়াও কারও কারও এই সব উপসর্গ দেখা দিতে পারে

মিস হওয়া পিরিয়ড
যোনি শুষ্কতা
স্তনে ব্যথা অনুভব
ঘন ঘন প্রস্রাব
ঘুমতে সমস্যা
মানসিক পরিবর্তন
লিবিডো, বা সেক্স ড্রাইভ হ্রাস
শুষ্ক ত্বক ইত্যাদি।

 

মেনোপজের সময় ঠিক কী ঘটে?

এর তিনটি পর্যায় রয়েছে।
 

প্রি-মেনোপজ

এই পর্যায়টি সাধারণত মেনোপজের কয়েক বছর আগে শুরু হয়, যখন ডিম্বাশয় ধীরে ধীরে কম ইস্ট্রোজেন তৈরি করে। ফলে অনিয়মিত ঋতুস্রাব হয়। প্রি-মেনোপজ মেনোপজ পর্যন্ত স্থায়ী হয়, যেখানে অনেক মহিলার মেনোপজের লক্ষণ থাকে।
 

মেনোপজ

এই পর্যায়ের ইস্ট্রোজেনের মাত্রা দ্রুত হ্রাস পায়। ডিম্বাশয় ডিম ত্যাগ করা বন্ধ করে দেয়। এই ভাবে যখন ঋতুস্রাব এক বছর বন্ধ থাকে, তখন একে মেনোপজ বলে। ডিম্বাশয় ডিম তৈরি করা বন্ধ করে দেয়। পাশাপাশি বেশিরভাগ ইস্ট্রোজেন তৈরি করা বন্ধ হয়ে যায় এবং এফএসএইচ এর মাত্রা বেড়ে যায়।
 

পোস্ট মেনোপজ

মেনোপজের পরের পর্যায় হল পোস্ট মেনোপজ। মেনোপজ ভিএমএস যেমন হট ফ্ল্যাশগুলি কয়েক বছর চলতে চলতে ধীরে ধীরে ঠিক হয়। তবে অনেকের ক্ষেত্রে এই লক্ষণগুলি দীর্ঘদিন থাকতে পারে। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ইস্ট্রোজেনের মাত্রা কমায় স্বাস্থ্য সংক্রান্ত সমস্যা বাড়ে।

 

হোমিওপ্যাথিতে এর চিকিৎসা আছে?

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা পদ্ধতি মেনোপজের লক্ষণ কমাতে এবং প্রায় স্বাভাবিক জীবনযাত্রা নির্বাহ করতে খুবই কার্যকরী। হোমিওপ্যাথি ওষুধ লক্ষণ সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে রোগীর উপর প্রয়োগ করা হয়। তাই এক একটি ওষুধ এক এক জন রোগীর উপর ভালো কাজ করে। তবে কিছু ওষুধ মেনোপজের লক্ষণ কমাতে খুব কার্যকর।
ল্যাকেসিস
অ্যামাইল নাইট্রোসাম
গলোনাইন
সিপিয়া
সালফার
ক্যালি ফস ইত্যাদি।
 

কী কী মেনে চলা উচিত?

বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি মেনে ওজন নিয়েন্ত্রণে রাখতে হবে। কারণ মহিলাদের প্রায়ই এই সময় ওজন বৃদ্ধি পায়, যা মেনোপজের লক্ষণকে বাড়িয়ে দেয়।
তুলনামূলক ভাবে শরীরের পক্ষে অনুকূল পরিবেশে থাকতে হবে।
ভাসোমোটর উপসর্গের ট্রিগার এড়ানো, যেমন: মানুষিক চাপ, গরম, আর্দ্র পরিবেশ এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে।
নিয়মিত শরীরচর্চা, যোগা, এবং পর্যাপ্ত বিশ্রাম নিতে হবে।
সুষম ও সহজ পাচ্য খাবার খেতে হবে।
পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খেতে হবে।
অ্যালকোহল এবং অন্যান্য নেশা বর্জন করতে হবে।

যোগাযোগ: ৭০০৫৩৫৮৯১৬


Skip to content