মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ পা। দাঁড়িয়ে থাকা, হাঁটা-চলা করা, দৌড়ানো সব কিছুতেই সামাল দেয় পা। রোজ দিনে জীবনে, যাঁদের পায়ে বেশি চাপ পড়ে, তাঁদের পায়ের শিরায় এক বিশেষ ধরনের সমস্যা হাজির হয়। কারও কারও পায়ের শিরা ফুলে যায়। সেই সব শিরা গাঢ় নীলচে রঙের রেখা চামড়ার উপরে ফুটে ওঠে। একেই চিকিৎসাবিজ্ঞানের পরিভাষায় ভেরিকোজ ভেন রোগ বলা হয়।

ভেরিকোজ ভেন পেঁচানো, বর্ধিত শিরা। ত্বকের পৃষ্ঠের কাছাকাছি যে কোনও শিরা (উপরের) ভেরিকোজ হয়ে যেতে পারে। ভেরিকোজ ভেন সাধারণত পায়ের শিরাগুলিকে প্রভাবিত করে। কারণ দাঁড়ানো এবং হাঁটার সময় শরীরের নিচের শিরায় চাপ বাড়ায়। ভেরিকোজ ভেনগুলির কারও কারও ক্ষেত্রে ব্যথা এবং অস্বস্তির কারণ হতে পারে। কখনও কখনও ভেরিকোজ ভেন আরও গুরুতর সমস্যা তৈরি করতে পারে।

 

ঝুঁকির কারণ

বয়স

বার্ধক্যজনিত কারণে শিরার ভালভ পরিধান এবং ছিঁড়ে যায়, যা রক্ত প্রবাহ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে। অবশেষে এই পরিধানের কারণে ভালভগুলি কিছু রক্তকে শিরাগুলিতে ফিরে যেতে দেয়, যেখানে এটি সংগ্রহ করে।

 

সেক্স

মহিলাদের এটি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর জন্য মাসিকের আগে বা গর্ভাবস্থায় বা মেনোপজের সময় হরমোনের পরিবর্তন একটি কারণ হতে পারে। কারণ, মহিলা হরমোন শিরার দেওয়াল শিথিল করে দেয়। হরমোন চিকিত্সা, যেমন জন্মনিয়ন্ত্রণ বড়ি, ভেরিকোজ ভেনের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

 

গর্ভাবস্থা

গর্ভাবস্থায় শরীরে রক্তের পরিমাণ বেড়ে যায়। এই পরিবর্তন ক্রমবর্ধমান শিশুকে সাহায্য করে। তবে পায়ের শিরাগুলিকেও বড় করে দেয়।

 

পারিবারিক ইতিহাস

যদি পরিবারে অন্য সদস্যদের ভেরিকোজ ভেইন থাকে, তাহলে আপনারও হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজনের কারণে শিরায় চাপ পড়ে। দীর্ঘ সময় ধরে দাঁড়িয়ে থাকা বা বসে থাকা এর কারণ হতে পারে। ভেরিকোজ ভেনে ব্যথা নাও হতে পারে।
 

ভেরিকোজ ভেইনের লক্ষণ

ভেইন বা শিরা গাঢ় বেগুনি বা নীল রঙের হয়।
শিরাযেগুলো দেখতে পেঁচানো হয়। ফুলে যায়।
পায়ে ব্যথা হয়।
পা ভার ভার মনে হয়।
জ্বালা, কম্পন, পেশি ক্র্যাম্পিং এবং পায়ের নীচের অংশ ফুলে যেতে পারে।
দীর্ঘক্ষণ বসে বা দাঁড়িয়ে থাকার পর ব্যথা বেড়ে যায়।
এক বা একাধিক শিরার চারপাশে চুলকানি হতে পারে।
ভেরিকোজ ভেনের চারপাশে ত্বকের রঙের পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে।

আরও পড়ুন:

হোমিওপ্যাথি: গর্ভাবস্থায় গলা-বুক জ্বালা, বমি ভাব? এমন সময় কী করবেন, কী করবেন না

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৭: মদ না খেলে ফ্যাটি লিভার হয় না?

 

চিন্তার কারণ

আলসার

বেদনাদায়ক আলসার ভেরিকোজ ভেনের কাছাকাছি ত্বকে, বিশেষ করে গোড়ালির কাছে তৈরি হতে পারে। ত্বকে বিবর্ণ দাগ সাধারণত আলসার গঠনের আগে শুরু হয়। আপনি যদি মনে করেন, আপনার পায়ে আলসার হয়েছে অবিলম্বে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
 

রক্ত জমাট

কখনও কখনও পায়ের গভীরে শিরাগুলি বড় হয়ে যায়। এর কারণে পায়ে ব্যথা হতে পারে, কখনও কখনও ফুলে যেতে পারে। ক্রমাগত পায়ে ব্যথা হলে বা ফুলে যাওয়ার জন্য ডাক্তারের পরামর্শ নিন। কারণ এটি রক্ত জমাট বাঁধার লক্ষণও হতে পারে।
 

রক্তপাত

মাঝে মাঝে ত্বকের কাছাকাছি শিরা ফেটে যায়। যদিও এটি সাধারণত শুধু ছোটখাট রক্তপাত ঘটায়। তবুও এর জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন।
 

প্রতিরোধের জন্য কী করণীয়?

হাই-হিল এবং টাইট হোসিয়ারি এড়িয়ে চলতে হবে।
নিয়মিত বসা বা দাঁড়ানো অবস্থান পরিবর্তন করতে হবে।
হাই ফাইবার ও কম লবণযুক্ত খাবার খেতে হবে।
নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।
বসা বা শুয়ে থাকার সময় পা উঁচু জায়গায় রাখুন।
ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৮: মনে পড়ে পঞ্চমের কণ্ঠে শোলে ছবির সেই বিখ্যাত ‘মেহবুবা মেহবুবা…’ গানটি?

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৩: সুন্দরবনে মানুষের আদি বসতি

 

নিজের যত্ন

প্রশিক্ষকের সাহায্যে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।
বসা বা শুয়ে থাকার সময় পা উঁচু করে রাখতে হবে।
কম্প্রেশন স্টকিংস পরলে ভেরিকোজ ভেনের ব্যথা কমাতে পারে। স্টকিংস পা চেপে ধরে। শিরা এবং পায়ের পেশিগুলিকে রক্ত চলাচলে সহায়তা করে।
 

পরীক্ষা-নিরীক্ষা

ভেরিকোজ ভেন নির্ণয় করতে হলে একজন চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। এই সমস্যায় সাধারণত পায়ের ‘ভেইন ডপলার আল্ট্রাসাউন্ড’ নামে একটি পরীক্ষা করা হয়। একটি ডপলার আল্ট্রাসাউন্ড একটি নন-ইনভেসিভ পরীক্ষা, যা ভেনের ভালভের মাধ্যমে রক্ত প্রবাহ দেখতে শব্দ তরঙ্গ ব্যবহার করা হয়। এটি পায়ের রক্তজমাট বাঁধা সনাক্ত করতে সাহায্য করতে পারে।

আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৪: আমারে তুমি অশেষ করেছ

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১: জয়রামবাটির আদরের ছোট্ট সারু

 

চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথি ভেরিকোজ ভেন সমস্যায় খুবই কার্যকর। হোমিওপ্যাথি ওষধ লক্ষণ সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে রোগীর উপর প্রয়োগ করা হয়। তাই এক একটি ওষধ এক এক জন রোগীর উপর ভালো কাজ করে। তবে কিছু ওষধ এই সমস্যায় খুব কার্যকর, যা রোগের লক্ষণ কমাতে ও দ্রুত রোগ মুক্ত হতে সাহায্য করে। যেমন:
হেমামিলিস
ভাইপেরা বেরা
অ্যাসিড ফ্লুরিকাম
লাইকোপোডিউয়াম ওষুধ খুবই উপকারী।

তবে হোমিওপ্যাথি ওষুধের কত পটেন্সি, কী পরিমাণে খেতে হবে তার জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করলে এই ভেরিকোজ ভেনের সমস্যা থেকে মুক্তি সম্ভব।

যোগাযোগ: ৭০০৫৬৪৩২৩১

* হোমিওপ্যাথি (Homeopathy–Health Tips): ডাঃ দেবজ্যোতি সাহা (Debajyoti Saha), বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, মেডিকেল আফিসার, রিজিওন্যাল ইন্সিটিউট অফ ফারমাসিতুকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আগরতলা।

আপনার রায়

রাজ্যে পঞ্চায়েত ভোটে দফা বৃদ্ধি করা জরুরি?

Skip to content