সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

ঘুমনোর সময় হঠাৎ করে নাক ডাকতে শুরু করেছেন? তবে যাঁর নাক ডাকার সমস্যা আছে, তিনি অবশ্য ব্যাপারটি তেমন একটা টের পান না। কিন্তু যাঁরা নাসিকা গর্জন শোনেন, তাঁরা কেউ হাসেন, আবার কেউ বা মজা করেন। বিরক্তও হন অনেকে।

কিন্তু আপনি যদি নাক ডাকাকে একটি সাধারণ ঘটনা মনে করেন তাহলে ভুল করছেন। নাক ডাকা কিন্তু ক্ষেত্র বিশেষে জটিল কোনও রোগেরও ইঙ্গিত বহন করতে পারে। কেউ যদি আগে থেকেই বিশেষ কোনও অসুস্থতায় ভোগেন, তাহলে তা কখনও কখনও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। কোনও কোনও ক্ষেত্রে নাসিকা গর্জনও হতে পারে বিপদঘণ্টি বা মৃত্যুর সংকেত। এমনটাই বলছেন চিকিৎসকেরা।
 

নাক ডাকা আসলে কী?

নাক ডাকা আসলে গলার পিছনে শ্বাসনালির কাছে টিস্যুগুলির ঝাঁকুনি এবং কম্পনের কারণে হয়। ঘুমের সময়, পেশিগুলি শিথিল হয়ে যায়, যা শ্বাসনালিকে সংকুচিত করে দেয়। তখন আমরা যখন শ্বাস নিই এবং ছাড়ি, চলমান বায়ু টিস্যুগুলিকে ঝাঁকুনি দেয়। আর হাওয়ায় পতাকার মতো শব্দ বের হয়। যাকে আমরা নাক ডাকা বলি।
আবার যাঁদের ঘাড়ের পেশি এবং টিস্যুর আকারে বড় হয় তাঁদের নাক ডাকার প্রবণতা বেশি থাকে। অন্যান্য ক্ষেত্রে, টিস্যু অতিরিক্ত শিথিল হওয়া বা শ্বাসনানালি সংকুচিত হওয়ার ফলেও কারও কারও নাক নাসিকা গর্জন হতে পারে। আরও যেসব বেশ কিছু কারণে নাক ডাকা প্রবণতা বাড়ে। যেমন:
স্থূলতা।
মদ্যপান।
সেডেটিভ ওষুধের ব্যবহার।
অনেকক্ষণ ধরে নাক বন্ধ থাকা।
টনসিল সমস্যা।
জিহ্বা বা নরম তালুতে কোনও সমস্যা দেখা দিলে।
নাকের বাঁকা সেপ্টাম বা নাকের পলিপের সমস্যা থাকলে।
চোয়াল ছোট হলে।

 

নাক ডাকা এবং স্লিপ অ্যাপনিয়ার মধ্যে পার্থক্য কী?

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া (ওএসএ) হল একটি শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যাধি। এক্ষেত্রে ঘুমের সময় শ্বাসনালী বন্ধ হয়ে যায় বা বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে বারবার শ্বাসকষ্ট হয়। নাক ডাকা ওএসএ-এর সবচেয়ে সাধারণ উপসর্গগুলির মধ্যে একটি। কিন্তু সাধারণ নাক ডাকার ক্ষেত্রে ওএসএ-এর ভূমিকা থাকে না। ওএসএ-এর সমস্যা থাকলে নাক ডাকলে জোরে শব্দ হয়। যেন একজন ব্যক্তির দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নাক ডাকছেন বা হাঁপাচ্ছেন। ওএসএ ঘুমের ব্যাঘাত ঘটায়। পাশাপাশি প্রায়ই শরীরে অক্সিজেন এবং কার্বন ডাই অক্সাইডের ভারসাম্য ব্যাহত করে।
 

নাক ডাকা কি বিপজ্জনক?

নাক ডাকা বিপজ্জনক কিনা তা নির্ভর করে এর ধরন, তীব্রতা এবং কতক্ষণ বা কত বার হচ্ছে তার উপর। হালকা, কদাচিৎ নাক ডাকা স্বাভাবিক ব্যাপার। এর জন্য চিকিৎসার প্রয়োজন নেই। কিন্তু যদি কেউ সপ্তাহে গড়ে তিন রাতের বেশি নাক ডাকেন, তাহলে সতর্ক হতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে রাতে ঘুমের ব্যাঘাত হচ্ছে কিনা। স্লিপ অ্যাপনিয়ার লক্ষণ থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন:

অর্শে কষ্ট পাচ্ছেন? রেহাই পেতে জেনে নিন কী করবেন, কী করবেন না

রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-১: পৃথিবী খ্যাত ডালটন হাইওয়ে এই শহরকে ছুঁয়েছে আর্কটিক বৃত্ত তথা উত্তরমেরুর সঙ্গে

 

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন?

প্রতি সপ্তাহে তিন বা তার বেশি নাক ডাকা।
খুব জোরে বা বিরক্তিকর নাক ডাকা।
হাঁপাতে হাঁপাতে, দম বন্ধ করা নাক ডাকা।
স্থূলতা বা সাম্প্রতিক ওজন বৃদ্ধি।
দিনের বেলা তন্দ্রাভাব।
মনোযোগের অভাব বা মানসিক অস্থিরতা।
মাথাব্যথা।
উচ্চ রক্তচাপ।
রাতের বেলা দাঁত পিষে যাওয়া (ব্রুকসিজম)।
ঘন ঘন রাতেরবেলা প্রস্রাব (নকটুরিয়া)।
এই ধরনের শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-১৯: দেখতে দেখতে ‘সদানন্দের মেলা’

খাই খাই: রাতে নিরামিষ পদে স্বাদ বদল চাই? বানিয়ে ফেলুন তেল পটল

 

পরিবর্তন আনতে হবে জীবনযাত্রায়

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা নাক ডাকা এবং স্লিপ অ্যাপনিয়ার অন্যতম কারণ।
মদ্যপান এবং সেডেটিভ জাতীয় ব্যবহার করা যাবে না।
প্রয়োজন হলে স্লিপিং পজিসন পরিবর্তন করা দরকার।
বিছানায় যে দিকে মাথা রাখেন সে-দিকটা একটু উঁচু রাখলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।
নাক সব সময় পরিষ্কার রাখার চেষ্টা করতে হবে।
অ্যান্টি-নোরিং মাউথপিস: একটি মাউথপিস যা আপনার জিহ্বা বা চোয়ালকে ঠিক অবস্থানে ধরে রাখতে সাহায্য করে। এতে ঘুমানোর সময় শ্বাসনালীকে ব্লক হয়ে যায় না। তবে এটি ব্যবহারের আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

আরও পড়ুন:

অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-২: অনন্তের সন্ধান আর সেই দরজার তালা ও চাবি তো তাঁর কাছেই রাখা আছে

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩৭: মাছ বাজারের বর্জ্যই এখন মূল্যবান সামগ্রী প্রস্তুতের অন্যতম সেরা উপাদান হতে চলেছে

 

নাসিকা গর্জনে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথি ওষধ নাক ডাকা নিরাময়ে খুবই কার্যকর। হোমিওপ্যাথি ওষধ লক্ষণ সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে রোগীর উপর প্রয়োগ করা হয়। তাই এক একটি ওষধ এক এক জন রোগীর উপর ভালো কাজ করে। তবে কিছু ওষধ এই রোগে খুব কার্যকর, যা রোগের লক্ষণ কমাতে ও দ্রুত রোগমুক্ত হতে সাহায্য করে। যেমন:
ওপিয়াম
কস্টিকাম
নাকস মসচাটা
অরাম মেটালিকাম
নেট্রাম মিউরিটিকাম ইত্যাদি।

তবে হোমিওপ্যাথি ওষধের কত পটেন্সি, কী পরিমাণে খেতে হবে তার জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে রোগী প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করলে নাক ডাকা থেকে মুক্তি সম্ভব।

যোগাযোগ: ৭০০৫৩৫৮৯১৬

* হোমিওপ্যাথি (Homeopathy – Health Tips): ডাঃ দেবজ্যোতি সাহা (Debajyoti Saha), বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক।

Skip to content