মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

ছোট ছোট দেখতে আঁচিল বা ওয়ার্ট শরীরের যে কোনও জায়গায়ই হতে পারে। হিউম্যান প্যাপিলোমাভাইরাস (এইচপিভি) সংক্রমণের জন্যই সাধারণত আঁচিল হয়। এই ধরণের আঁচিল স্পর্শের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে। একাধিক সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের এক-তৃতীয়াংশের আঁচিল হয়। আবার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মাত্র ৩-৫ শতাংশের আঁচিলের সমস্যা দেখা যায়। মূলত যাঁদের রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা তুলনায় দুর্বল তাঁদের মধ্যেই এইচপিভি স্ট্রেন সংক্রমণের বেশি ঝুঁকি থাকে।
 

ঠিক কী কারণে হয়?

এইচপিভি কেরাটিনের অত্যধিক এবং দ্রুত বৃদ্ধি হওয়ায় ত্বকের উপরের স্তরে কোনও কোনও জায়গায় প্রোটিন জমা হয়। এ ভাবেই আঁচিল তৈরি হয়। বিভিন্ন এইচপিভি স্ট্রেন বিভিন্ন ধরনের আঁচিল সৃষ্টি করে। এই স্ট্রেনগুলি কারও সংস্পর্শের এলে বা এইচপিভি-এর সংস্পর্শে আসা কোনও জিনিসের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ভাইরাস শরীরের এক অংশ থেকে অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে। যেমন— আঁচড়ে বা কামড় দেওয়া, আঙুল চোষা, আঙ্গুলের নখ কামড়ানো, নখের চারপাশে আঁচিল থাকলে, মুখ, দেহ বা পা শেভ করা, ভিজে বা ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক, কেটে যাওয়া বা স্ক্রেচিং এর ঝুঁকি বাড়ায়।
আঁচিলের সংক্রমণের ঝুঁকি প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে কম, শিশুদের মধ্যে বেশি। আগেই বলেছি কম রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন ব্যক্তিদের এইচপিভি স্ট্রেন সংক্রমণ হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে, ফলে আঁচিল হয়।

 

সাধারণত কী কী ধরনের আঁচিল দেখা যায়

 

সাধারণ আঁচিল

সাধারণ আঁচিলের একটি দৃঢ়, উত্থিত এবং রুক্ষ পৃষ্ঠ থাকে। অনেকটা ফুলকপির মতো দেখা যায়। এগুলি যে কোনও জায়গায় হতে পারে। তবে আঙ্গুলে, নখের কাছে এবং কেটে যাওয়া-ছড়ে যাওয়া ত্বকের কাছাকাছি জায়গায় বেশি দেখা যায়।
 

প্ল্যান্টার ওয়ার্টস

প্ল্যান্টার ওয়ার্টস বা ভেরুকাস পায়ের তলায়, হিল এবং পায়ের আঙ্গুলে দেখা যায়। এগুলি সাধারণত ত্বকে বৃদ্ধি পেয়ে হয়। কারণ, ব্যক্তির ওজন পায়ের তলায় ঠেলে দেয়। এদের শক্ত, সাদা টিস্যু দ্বারা বেষ্টিত একটি ছোট কেন্দ্রীয় কালো বিন্দু থাকে। প্ল্যান্টার ওয়ার্টগুলি প্রায়শই পরিষ্কার করা কঠিন।
 

প্লেন ওয়ার্টস

প্লেন ওয়ার্টগুলি গোলাকার, সমতল এবং মসৃণ হয়। এগুলি হলুদ, বাদামী বা ব্যক্তির ত্বকের রঙ হতে পারে। ফ্ল্যাট ওয়ার্ট নামেও পরিচিত। এরা বড় সংখ্যায় বৃদ্ধি পেতে পারে। কখনও কখনও একবারে ২০-১০০টি পর্যন্ত হতে পারে।
 

ফিলিফর্ম ওয়ার্টস

ফিলিফর্ম ওয়ার্টস দেখতে লম্বা এবং পাতলা হয়। মুখ, ঘাড় এবং চোখের পাতায় দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
 

মোজাইক ওয়ার্টস

মোজাইক ওয়ার্টস একক ক্লাস্টারে একাধিক প্লান্টার ওয়ার্ট। এগুলি সাধারণত পায়ের আঙ্গুলের নীচে এবং পায়ের বলের উপর দেখা যায়। পায়ের যেকোনও অংশে ছড়িয়ে যেতে পারে।
 

যৌনাঙ্গে আঁচিল

এইচপিভির কিছু স্ট্রেন যৌনাঙ্গে, ভিতরে বা চারপাশে আঁচিল সৃষ্টি করতে পারে। যদিও যৌনাঙ্গের আঁচিলগুলি ক্ষতিকারক নয়। তবে উল্লেখযোগ্যভাবে একজন ব্যক্তির জীবনযাত্রার মানকে প্রভাবিত করতে পারে। মিলনের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

আরও পড়ুন:

শিশু হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ-এ ভুগছে? কষ্টকর হলেও ভয়ের কিছু নেই, হোমিওপ্যাথিতে রয়েছে সমাধান

নাট্যকথা: রোদ্দুর ও অমলকান্তি/৬

হাত পা ঘাড়ে কালো দাগ? পূজোর আগে ঝকঝকে ত্বকের জন্য রইল ঘরোয়া টোটকা

ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-৪: তারপর সেই আঁকাবাঁকা পথে হারিয়ে গেলাম গ্রিন-বে অভিমুখে, সন্ধে পর্যন্ত কোত্থাও যাইনি

 

প্রতিরোধের উপায়

আঁচিল মুক্তিতে কিছু নিয়ম মেনে চলে, যেমন—
আঁচিল হয়েছে এমন কারও সংস্পর্শে না আসা।
অন্যের তোয়ালে, ওয়াশক্লথ বা অন্যান্য ব্যক্তিগত জিনিসপত্র ব্যবহার না করা।
একে অপরের জুতা বা মোজা না ব্যবহার করা।
ওয়ার্টস খোঁচাবেন না।
আঁচিল আছে এমন জায়গায় ব্রাশ, চিরুনি, শেভ বা চুল ক্লিপ করবেন না।
নখ কাটার সময়, আক্রান্ত নখ এবং সুস্থ নখের উপর একই কাটার ব্যবহার করবেন না।

 


হোমিওপ্যাথিতে আঁচিলের চিকিৎসা

আঁচিলের সমস্যায় হোমিওপ্যাথি ওষধ খুবই কার্যকর। সম্ভবত হোমিওপ্যাথিই বর্তমানে ওয়ার্ট চিকিৎসায় মানুষের প্রথম পছন্দ। হোমিওপ্যাথিতে ওষধ লক্ষণ-সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে রোগীর উপর প্রয়োগ করা হয়। তাই এক একটি ওষধ এক এক জন রোগীর উপর ভালো কাজ করে। তবে কিছু ওষধ এই রোগে খুব কার্যকর, যা রোগের লক্ষণ কমাতে ও দ্রুত রোগ মুক্ত হতে সাহায্য করে। যেমন —
থুজা— এই ওষধ বাহ্যিক প্রয়োগেও ওয়ার্ট নিরাময়ে কার্যকর। এছাড়াও
কস্টিকাম
নাইট্রিক অ্যাসিড
এনাগেলিস
নেট্রাম মিউরিটিকাম
ডালকামারা ইত্যাদি আঁচিলের সমস্যায় খুব ভালো কাজ করে।

তবে হোমিওপ্যাথি ওষধের পটেন্সি কত, কী পরিমাণে খেতে হবে তার জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখবেন, যে কোনও শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হোমিওপ্যাথি খাওয়া যাবে না।

যোগাযোগ: ৭০০৫৩৫৮৯১৬


Skip to content