সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

দিনের শুরুটা খুশি মনেই হওয়া উচিত। যদিও এ দেশের বহু মানুষের কাছে সকালতা কার্যত বিভীষিকা। কেন? প্রাতঃকৃত্য সারার ভয় যে! এঁদের মধ্যে বেশিরভাগই অর্শের সমস্যায় ভুগছেন। অনেকের হয়তো জানা নেই, দেশে প্রতি বছর কমবেশি এক কোটি মানুষ অর্শের চিকিৎসা করান। তবে চিকিৎসার সুযোগ পান না কিংবা হাতুড়ের পরামর্শ নেন এমন রোগীর সংখ্যাও কিন্তু কম নয়। ভারতে প্রায় প্রতি পরিবারেই এক জন না এক জন অর্শের সমস্যায় ভোগেন।
 

অর্শ্বরোগ ঠিক কী?

হেমোরয়েড হল মলদ্বারের চারপাশে বা নীচের অংশে ফোলা, স্ফীত শিরা। হেমোরয়েড দুটি প্রকার হয়।
বাহ্যিক অর্শ্ব এবং অভ্যন্তরীণ অর্শ। বাহ্যিক অর্শ্ব মলদ্বারের চারপাশে ত্বকের নিচে তৈরি হয়। আর
অভ্যন্তরীণ অর্শ্ব মলদ্বারের আস্তরণে এবং নীচের মলদ্বারে গঠন করে।

 

অর্শ্বরোগের সম্ভাব্য কারণ?

মলদ্বারের চারপাশের শিরাগুলির উপর খুব বেশি চাপ পড়লে অর্শ্বরোগ হয়। একাধিক কারণে এরকম হতে পারে—
মলত্যাগের সময় স্ট্রেনিং।
দীর্ঘ সময় ধরে টয়লেটে বসে থাকা।
দীর্ঘস্থায়ী কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়রিয়ায় ভোগা।
খাদ্যতালকায় কম ফাইবারযুক্ত খাবার থাকা।
মলদ্বার এবং মলদ্বারে সহায়ক টিস্যু ক্রমশ দুর্বল হয়ে যাওয়া।
বার্ধক্য এবং গর্ভাবস্থায় এরকম হতে পারে।
দীর্ঘদিন ভারী বস্তু তোলার অভ্যাস থাকলে।

আরও পড়ুন:

হোমিওপ্যাথি: কনজাংটিভাইটিসের ভয়? মিথ ভুলে এই সব সতর্কতা মেনে চলুন

মহাভারতের আখ্যানমালা, পর্ব-৪৩: সমুদ্রশোষণ তো হল, এবার পূরণ করবে কে?

যোগা-প্রাণায়াম: প্রসাধনী নয়, স্রেফ যোগাভ্যাসে বাড়ান ত্বকের জেল্লা!

 

প্রাথমিক লক্ষণ কী কী

মলদ্বারে চুলকানি,
মলদ্বারে ব্যথা অনুভব করা।
মলত্যাগের সময় খুব বেশি চাপ দেওয়া।
মলদ্বার থেকে রক্তপাত।
মলের সঙ্গে রক্ত বেরোনো।
মলত্যাগের পরে অর্শ্ব প্রল্যাপস হয়ে মলদ্বারের বাইরে বেরিয়ে আসতে পারে।

আরও পড়ুন:

ছোটদের যত্নে: শিশুকে টনসিলের সমস্যা থেকে দূরে রাখতে চান? মেনে চলুন শিশু বিশেষজ্ঞের এই সব টিপস

দশভুজা: ‘ওগো তুমি যে আমার…’— আজও তাঁর জায়গা কেউ নিতে পারেনি/২

ইংলিশ টিংলিশ: ‘হাসি’ মানে শুধুই ‘Laugh’ বা ‘কান্না’ মানে শুধুই ‘Cry’ নয় — শিখে নাও আরও নতুন শব্দ!

 

কেমন হবে খাদ্যাভ্যাস

ফাইবারযুক্ত খাবার বেশি খেতে হবে।
তৈলাক্ত, মশলাদার খাবার এবং কোষ্ঠকাঠিন্য হতে পারে এমন খাবার খাওয়া যাবে না।
প্রয়োজন হলে স্টুল সফটনার বা ফাইবার সাপ্লিমেন্ট খাওয়া যেতে পারে।
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণ জলপান করতে হবে।
খই, ওটস খাওয়া যেতে পারে।
মধ্যাহ্ন ভোজনে রাখুন পালং শাক, নটে শাক- সহ মুরসুমি শাক।
কুমড়ো, পটল, লাউ-সহ মুরসুমি সব্জি খেতে হবে।
খোসা সমেত সব্জি খেলে উপকার পাওয়া যায়।
খোসা সমেত শসা খাওয়া যেতে পারে।
কলা, পেয়ারা, লেবু, আম, জাম-সহ বেশির ভাগ ফলেই ফাইবার থাকায় এগুলি প্রতিদিন খেলে ভালো হয়।
এড়াতে হবে ভাজাভুজি।
খাওয়া যাবে না কাবাবের মতো ঝলসানো মাংস।

আরও পড়ুন:

ফল কালারের রূপ-মাধুরী, পর্ব-৭: রঙের খেলা আর উইসকনসিনের আঁকাবাঁকা ফাঁকা রাস্তা—জীবনীশক্তিকে আরও উসকে দেয়

খাই খাই: রাতে নিরামিষ পদে স্বাদ বদল চাই? বানিয়ে ফেলুন তেল পটল

ভালো-বাসা: সংসারে শান্তি চাই? বেডরুম সাজানোর সময় অবশ্যই এই বিষয়গুলি মাথায় রাখুন

 

সঠিক জীবনযাত্রা

মলত্যাগের সময় খুব বেশি চাপ বা প্রেশার দেওয়া যাবে না।
টয়লেটে একটানা অনেকক্ষণ ধরে বসা যাবে না।
নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। কারণ, অর্শের সমস্যা বাড়িয়ে দেয় বাড়তি ওজন।
মদ্যপানও এড়ানো উচিত। কারণ মদ্যপানে সমস্যা বাড়ে।
ভারী জিনিসপত্র তোলা যাবে না।
সিটজ বাথ করা যেতে পারে। এক্ষেত্রে একটি বিশেষ ধরনের প্লাস্টিকের টব ব্যবহার করুন। এতে গরম জলে বসে সেঁক নিতে সুবিধা হবে।

আরও পড়ুন:

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি: পর্ব-৪১: ঠাকুরবাড়িতে এসে সাহেব খেতেন ভাজা চিঁড়ের সঙ্গে কড়াইশুঁটি

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব ২৫: বনবাসের সঙ্গী সীতা

বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৩২: দেশে প্রথম গবেষণা সংস্থার কারিগরি সহায়তায় বেড়ে ওঠা সেরা প্রাপ্তি ‘জয়ন্তী রুই’ মাছ

 

অর্শ্বরোগে হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথি ওষুধ অর্শ্বরোগ নিরাময়ে খুবই কার্যকর। রোগের লক্ষণ কমাতে এবং সম্পূর্ণ সুস্থ হতে হোমিওপ্যাথি খুবই কার্যকরী ভূমিকা নেয়। হোমিওপ্যাথি ওষুধ লক্ষণ সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে রোগীর উপর প্রয়োগ করা হয়। তাই এক একটি ওষুধ এক এক জন রোগীর উপর ভালো কাজ করে। তবে কিছু ওষুধ আছে এই রোগে খুব ভালো কাজ করে, সেই সঙ্গে রোগের লক্ষণ কমাতে ও দ্রুত রোগ নিরাময়ে হতে সাহায্য করে। সেরকম কয়েকটি হোমিওপ্যাথি ওষুধ হল—
নাইট্রিক অ্যাসিড
এসকুলাস পটেন্সি ও ক্রিম
নেট্রাম মিউরিটিকাম
থুজা
রাটানিয়া
হ্যামামালিস প্রভৃতি
‘সিথস বাথ’-এর জলে ইচিনেসিয়া মাদার ব্যবহার করলে ভালো কাজ দেয়।

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললে অর্শ্বরোগকে খুব সহজেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে হোমিওপ্যাথি ঔষধের পটেন্সি কত, কী পরিমাণে খেতে হবে তার জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখবেন, যে কোনও শারীরিক সমস্যায় চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া হোমিওপ্যাথি খাওয়া যাবে না।

যোগাযোগ: ৭০০৫৩৫৮৯১৬


Skip to content