শুক্রবার ৫ জুলাই, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।

ব্যাপক হারে কমছেছে পুরুষের যৌন ক্ষমতা। শুধু শুক্রাণু উৎপাদনে ঘাটতিই নয়, একই সঙ্গে যৌন সম্পর্কের সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে উত্তেজিত না হতে পারার সমস্যা বা ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’ (ইডি)-এর পরিমাণও বাড়ছে।

যৌন সম্পর্কের সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে উত্তেজিত না হতে পারার এই সমস্যা আপনার আত্মবিশ্বাসকে কিন্তু ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই এর জেরে সম্পর্কের মধ্যে সমস্যা তৈরি হয়। এ জন্যই উত্তেজিত হতে বা ধরে রাখতে উপযুক্ত চিকিৎসা প্রয়োজন।
মনের দ্বিধা সরিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই চিকিত্সকের পরামর্শে এর সমাধান হয়ে যায়। তবে কখনও কখনও ওষুধেরও প্রয়োজন হতে পারে।
 

পুরুষত্বহীনতার উপসর্গ

উত্তেজিত না হতে পারা।
উত্তেজনা ধরে না রাখতে না পারা।
যৌন ইচ্ছা কমে যাওয়া।
 

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

উত্থান নিয়ে উদ্বেগ থাকলে বা অন্য কোনও যৌন সমস্যার সম্মুখীন হলে।
অকাল বা বিলম্বিত বীর্যপাত।
ডায়াবেটিস, হৃদরোগ ছাড়াও অন্যান্য শারীরিক সমস্যায় ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
অন্যান্য লক্ষণ থাকলে।
 

সমস্যার সম্ভাব্য কারণ

পুরুষদের যৌন উত্তেজনার প্রক্রিয়াটি জটিল। পুরো বিষয়টি মস্তিষ্ক, হরমোন, আবেগ, স্নায়ু, পেশি এবং রক্তনালীর সঙ্গে যুক্ত। এগুলির যে কোনও একটিতে সমস্যা হলে ইরেক্টাইল ডিসফাংশন দেখা দিতে পারে। একইভাবে মানসিক স্বাস্থ্যও ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের কারণ হতে পারে। কখনও কখনও শারীরিক এবং মানসিক সমস্যা সম্মিলিত ভাবে ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। উদাহরণস্বরূপ, খেয়াল করে দেখবেন ছোটখাট শারীরিক অসুস্থতাও আপনার যৌন ক্ষমতাকে কমিয়ে দেয়।

 

শারীরিক কারণ

শারীরিক নানা কারণেও ইরেক্টাইল ডিসফাংশন-এর সমস্যা হতে পারে। যেমন:
হৃদরোগ
জমাট রক্তনালী
অ্যাথেরোসক্লেরোসিসের
উচ্চ কলেস্টেরল
উচ্চ রক্তচাপ
ডায়াবেটিস
স্থূলতা
পার্কিনসন্স
মাল্টিপল স্ক্লেরোসিস ইত্যাদির সমস্যা থাকলে।
 

এছাড়াও যে সব কারণে সমস্যা হয়

 

মেটাবলিক সিনড্রোম

রক্তচাপ বৃদ্ধি, ইনসুলিনের উচ্চ মাত্রা, কোমরের চারপাশে শরীরের চর্বি জমে যাওয়া, কম টেস্টোস্টেরন এবং অনিয়ন্ত্রিত কোলেস্টেরলও এর কারণ হতে পারে।
 

পেইরোনি রোগ

অনেক সময় লিঙ্গের ভিতরে স্কার টিস্যুর সৃষ্টির জন্য লিঙ্গ অতিরিক্ত বেঁকে যায়। এর ফলেও সমস্যার দেখা দিতে পারে।
 

সার্জারি বা আঘাত

পেলভিক এলাকা সার্জারি বা আঘাত থেকেও এমন সমস্যা হতে পারে। আবার স্নায়ু বা মেরুদণ্ডের সমস্যা থেকেও ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের সমস্যা দেখা দিতে পারে।
 

বয়স

বয় গুরুত্বপূর্ণ। আমার বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে কিন্তু উত্তেজনার হার কম হতে থাকে।

আরও পড়ুন:

রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইডের মাত্রা বেড়েছে? বিপদের ঝুঁকি এড়াতে কী করবেন? হোমিওপ্যাথিতে রয়েছে সমাধান

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-২: কাজের আশায়, তারকা অশোককুমারের গাড়িতে নয়, লোকাল ট্রেনে-বাসে ঘুরে বেড়াতেন কিশোর

 

মানসিক কারণ

যৌন উত্তেজনার অনুভূতির পুরো বিষয়টি মস্তিষ্ক নিয়ন্ত্রণ করে। তাই মানসিক সমস্যাও ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের অন্যতম কারণ হতে পারে। সেগুলি কী কী, যেমন:
হতাশা।
উদ্বেগ।
মানসিক চাপ।
সঙ্গীর সমস্যা।
সম্পর্কের সমস্যা।
 

রোগ প্রতিরোধ

ইরেক্টাইল ডিসফাংশন প্রতিরোধের সর্বোত্তম উপায় হল স্বাস্থ্যকর জীবনধারা মেনে চলা। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা অন্যান্য দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা থাকলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ মতো চলতে হবে। বেশি রাত জাগা যাবে না। পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এক কথায় নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপন করতে হবে।
 

নিয়মিত চেকআপ

চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত চেকআপ এবং মেডিকেল স্ক্রিনিং বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
 

ধূমপান

জীবনধারার যে ক’টি কারণ পুরুষের ইরেক্টাইল ডিসফাংশনের জন্য দায়ী, এটির ভূমিকা তার মধ্যে সবচেয়ে বেশি। ধূমপান করলে দ্রুত কমতে থাকে শুক্রাণু উৎপাদন। আবার ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’ (ইডি)-এর সমস্যাও দ্রুত বাড়ে।
 

মানসিক চাপ

এখন নানা কারণে মানসিক চাপ বাড়ছে। এর সরাসরি প্রভাব পড়ে পুরুষের যৌনস্বাস্থ্যে। যে কারণে কমছে যৌনসম্পর্কে আগ্রহ। কমছে যৌনক্ষমতা।

আরও পড়ুন:

মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-১: ভিতরকুঠি টেরাকোটা শিবমন্দির এক অনন্যসাধারণ কোচ স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩২: আটার চেয়ে ময়দা ঢের গুণ ভালো?

 

ওষুধ

মানসিক চাপ বাড়ছে, আর সেই কারণেই অনেকে তার ওষুধ খাচ্ছেন। এই ধরনের ওষুধের নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকে। তার মধ্যে একটি হল যৌনতায় আগ্রহ কমে যাওয়া। এ ছাড়া আরও বহু ওষুধ একই কাজ করে। তাই নতুন কোনও ওষুধ খেতে শুরু করার আগে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে জেনে নেওয়া উচিত।
 

মদ্যপান

অন্য কারণগুলির মতো এই অভ্যাসটি সক্রিয় ভাবে পুরুষের যৌনস্বাস্থ্যে প্রভাব ফেলে না। সপ্তাহে ১ দিন বা ২ দিন অল্প মদ্যপান নিঃসন্দেহে বন্ধ্যাত্বের সমস্যা বাড়িয়ে দেয় না। কিন্তু রোজকার মদ্যপান সেটি করতেই পারে। তাই সেই বিষয়ে সাবধান।
 

শরীরচর্চা

রোজ দিন নিয়ম করে শরীরচর্চা করতে হবে। যোগা করুন বা জিম যান, নিত্যদিন ঘাম ঝরাতে হবে। নিজেকে তরতাজা রাখতে হবে।
 

খাওয়াদাওয়ার অভ্যাস

শুধু খাওয়াদাওয়া নয়, তার কারণে জমা মেদ। বেহিসেবি খাওয়াদাওয়া, অস্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার ফলে যাঁদের মেদের পরিমাণ বেশি, সেই পুরুষদের যৌন ক্ষমতার হারও কমছে। তেমনই বলছে নানা সমীক্ষা।

আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৫: রাজবাড়ি এবং অভিনব বিবাহপর্ব

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭০: অন্য বাইশে শ্রাবণ

 

হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা

যৌন সম্পর্কের সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে উত্তেজিত না হতে পারার সমস্যা বা ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’ (ইডি)-এর সমস্যায় হোমিওপ্যাথি চিকিৎসা খুবই কার্যকর।
হোমিওপ্যাথি ঔষধ লক্ষণ সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে রোগীর উপর প্রয়োগ করা হয়। তাই এক একটি ঔষধ এক এক জন রোগীর উপর ভাল কাজ করে। তবে কিছু ঔষধ এই রোগে খুব কার্যকর যা রোগের লক্ষণ কমাতে ও দ্রুত রোগ মুক্ত হতে সাহায্য করে। যেমন:
ডেমিয়ানা
ইয়োহিমবিনাম
ট্রিবুলাস
লাইকোপোডিউয়াম
সটেফিসেগ্রিয়া ইত্যাদি।

তবে হোমিওপ্যাথি ওষুধের কত পটেন্সি, কী পরিমাণে খেতে হবে তার জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। হোমিওপ্যাথি চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে রোগীর প্রয়োজনীয় সাবধানতা অবলম্বন করলে এই যৌন সম্পর্কের সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণে উত্তেজিত না হতে পারার সমস্যা বা ‘ইরেকটাইল ডিসফাংশন’ (ইডি)-এর সমস্যাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।

* হোমিওপ্যাথি (Homeopathy–Health Tips): ডাঃ দেবজ্যোতি সাহা (Debajyoti Saha), বিশিষ্ট হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক, মেডিকেল আফিসার, রিজিওন্যাল ইন্সিটিউট অফ ফারমাসিতুকেল সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি, আগরতলা।

আপনার রায়

ইসরোর চন্দ্রযান-৩ কি তৃতীয় বারের এই অভিযানে সাফল্যের স্বাদ পাবে?

Skip to content