শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ বা এইচএফএমডি। একটি অত্যন্ত সংক্রামক একটি অসুখ। এন্টেরোভাইরাস বংশের ভাইরাস থেকে এর জন্ম। এর জন্য কক্সস্যাকিভাইরাস এ১৬ সবচেয়ে বেশি দায়ি। সহজ ভাবে বললে এটি এক ধরনের ভাইরাল অসুখ। শিশুদেরই হয়। ওদের যে কোনও সময়েই হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ হতে পারে। যদিও সাধারণত দুই থেকে আট বছর বয়সী শিশুদের মধ্যেই এই রোগ বেশি দেখা যায়। মুশকিল হল, একে এড়ানোর উপায় নেই। নেই ভ্যাকসিনও। রোগটি ছোঁয়াচে। কোনও শিশুর এই সংক্রমণ হলে, তার সংস্পর্শে আসা অন্য শিশুরও এই সংক্রমণ হতে পারে। মূলত মুখ, হাঁটুর উপরে, পায়ের পাতা, হাতের তালুতে ফোস্কার মতো র্যা শ বেরোয়। অনেকে সময় ফোস্কার মতো র্যা শ ফেটে গেলে ইনফেকশন হয়ে যায়। সেই সঙ্গে জ্বরও আসতে পারে। শরীরকে বেশ দুর্বল করে দেয়। র্যা শ বেরোনোর কারণে শিশুদের মুখে, গলায় বেশ ব্যথা থাকে। ফলে খাবার খেতেও ওদের কষ্ট হয়। তবে কোনও জটিলতা না থাকলে এবং সঠিক পরিচর্যায় এই সাত থেকে দশদিনের মধ্যেই এই অসুখ সেরে যায়। তবে হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ-এ শিশু ভুগলে অন্তত দু’ সপ্তাহ স্কুলে না পাঠানোই ভালো।
 

কীভাবে ছড়ায়?

এই ভাইরাস সহজেই এক শিশুর থেকে অন্য অন্য শিশুর মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে। আপনার শিশু কোনও একজন আক্রান্তের সংস্পর্শে এলে এইচএফএমডি আক্রান্ত হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা থাকে। আক্রান্ত শিশুর ফোস্কা, মল, লালারস, শ্বাস প্রশ্বাসের ফোঁটা যা কাশি বা হাঁচির পরে বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে, তার থেকে সাবধানে থাকতে হবে।

 

এই রোগের উপসর্গ কী?

সাধারণত সংক্রমণের ৩ থেকে ৬ দিন পরে লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে শুরু করে। এই সময়কালকে ইনকিউবেশন পিরিয়ড বলা হয়। এই ধরনের শারীরিক সমস্যায়:
জ্বর।
খিদে কমে যাওয়া।
গলা ব্যথা।
মুখে ব্যথা বা যন্ত্রণা।
অস্বস্তি।
খাবার গিলতে কষ্ট।
ফোস্কার মতো র্যা শ বেরতে পারে।
মুখ ও জিভের মধ্যে বেদনাদায়ক লাল ফোস্কা বেরতে পারে।
হাতের তালুতে বা পায়ের পাতায় লাল ফুসকুড়ি ইত্যাদি।
হাতের কনুই, হাঁটু ইত্যাদি জায়গায় ফুসকুড়ি হয়ে থাকে। সাধারণত জ্বর এবং গলা ব্যথা হল এইচএফএমডি-এর প্রথম লক্ষণ। ফোস্কা এবং ফুসকুড়ি পরে দেখা যায়। সাধারণত জ্বর শুরু হয় এক বা দু’দিন দিন পর থেকে। ফুসকুড়ি সাধারণত চ্যাপ্টা লাল দাগের মতো দেখতে হয়।
 

প্রতিরোধের উপায়

স্বাস্থ্যবিধি কঠোর ভাবে মেনে চলতে হবে। নিয়মিত হাত ধোয়ার অভ্যেস কোর্টে হবে। শিশুদের শেখাতে হবে কীভাবে জল এবং সাবান ব্যবহার করে হাত পরিষ্কার রাখা যায়। বাথরুম ব্যবহার করার পরে, খাওয়ার আগে এবং বাইরে বেরলে হাত ধোয়া গুরুত্বপূর্ণ। শিশুদের হাত বা মুখের কাছে কোনও কিছু রাখা যাবে না যেগুলি থেকে সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়তে পারে। নিয়মিতভাবে বাড়িকে জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

আরও পড়ুন:

ত্বকের পরিচর্যায়: টানটান ত্বক চাই? বয়স ধরে রাখতে মেনে চলুন ত্বক বিশেষজ্ঞের এই পরামর্শগুলি

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-২১: রথীন্দ্রনাথ ও প্রতিমা: রবীন্দ্রনাথে নিবেদিত‌‌ দু’টি প্রাণ

ছোটদের যত্নে: শিশুকে কোন ওষুধ কখন খাওয়াবেন? ওষুধ খাওয়ার সঠিক নিয়ম কী? জানুন শিশু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ

বিচিত্রের বৈচিত্র্য: হে চিরনূতন…

 

খাদ্যতালিকায় রাখুন

হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজে ভুগলে শিশুর খাবার গিলতে কষ্ট হয়। এই সময় যেহেতু একেবারে তরল বা কঠিন দু’ ধরনের খাবারই খেতে কষ্ট হয়, সেহেতু ওদের ‘সেমি সলিড’ জাতীয় খাবার দেওয়া ভালো। এক্ষেত্রে জেলি কাস্টার্ড বা পায়েস জাতীয় খাবার দিতে পারেন। এছাড়াও মরসুমি ফল খাওয়াতে হবে। অনেক সময় দুর্বলতা কাটাতে ওদের মাল্টিভিটামিনও দেওয়া হয়। শিশুকে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল খাওয়াতে হবে। সেই সঙ্গে প্রয়োজন বিশ্রাম।

 

হোমিওপ্যাথিতে এইচএফএমডি-র চিকিৎসা

হোমিওপ্যাথি ওষুধ লক্ষণ সাদৃশ্যের উপর নির্ভর করে রোগীর উপর প্রয়োগ করা হয়। হোমিওপ্যাথিতে একই ওষুধ এক এক জন রোগীর এক এক রকম ভাবে কাজ করতে পারে। কিছু ওষুধ আছে, যেগুলি হ্যান্ড, ফুট অ্যান্ড মাউথ ডিজিজ-এ খুবই কার্যকরী। সেগুলির মধ্যে কয়েকটি হল—
রাসটকস
সোরাইনাম
বেলেডোনা
ফেরাম ফসফরিকাম
এপিস মেলিফিকা
নেট্রাম মিউরিটিকাম ইত্যাদি।

তবে হোমিওপ্যাথি ওষুধের কত পটেন্সি, কতটা পরিমাণে খেতে হবে তার জন্য একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া দরকার। কারণ, এই সব ওষুধ নিজের মতো করে খেলে ফল তো পাওয়াই যাবে না, উল্টে বিপদও বাড়তে পারে। ওষুধের নাম উল্লেখ করার কারণ, এইচএফএমডি-র সমস্যায় কী ধনের ওষুধ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসায় রয়েছে পাঠকদের তার একটা ধারণা দেওয়া। সব ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া যাবে না। তাই একজন অভিজ্ঞ হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকই সঠিক পরামর্শ নেওয়া দরকার।

যোগাযোগ: ৭০০৫৩৫৮৯১৬


Skip to content