মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


কোচবিহার রাজবাড়ি। ছবি: সংগৃহীত।

সময় চলে গড়িয়ে চলা পাথরের মতো। উপর থেকে নামেই ক্রমে। সময়ের টানও ঠিক এইরকম। কখনও পাহাড়ের চূড়ার দিকে, নয়তো নিম্নমুখী ঝর্না যেমন নদীর দিকে। প্রাগ জ্যোতিষপুরের সম্প্রসারিত রূপই তো হল কামরূপ। কোচবিহারের রাজা নিজে কিন্তু পর্বত পেরিয়ে আসা মঙ্গলীয়দের একজন নন। বহু বিতর্ক, ইতিহাস বলে তিনি ‘ভূমিপুত্র’। তাঁর সেনাবাহিনীর নেতা তিনিই। কৌলীন্যের ছাপ শরীরে নিয়ে তাঁদের নাম ছিল ‘আর্য ক্ষত্রিয়’।

গবেষকরা বলেন, আর্য ক্ষত্রিয় বলে কোনও নির্ভেজাল জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব তৎকালীন উত্তরপূর্বে সম্ভব ছিল না। তাঁদের মতে, তথাকথিত ক্ষত্রিয়রা মোঙ্গল কোচ অস্ট্রিক দ্রাবিড়ীয় ও অন্যান্যদের এক মিলন মিশ্রণ। ‘অগণন স্রোতের সঙ্গমে গড়ে ওঠা মানুষের দ্বীপপুঞ্জ যেন’ এ রাজনগর। গবেষক দীনেশচন্দ্র সেনের মত অনুযায়ী, কোচবিহার বহুকাল ধরে নরক-বংশীয় রাজাদের সাম্রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। বলা যায়, আদিযুগে প্রাগ জ্যোতিষপুরের ইতিহাস থেকে বর্তমান কোচ রাজ্যের ইতিবৃত্ত একসময় অভিন্ন ছিল। রংপুর থেকে তেজপুর পর্যন্ত এক বিরাট জনপদ এঁদের শাসনাধীন ছিল।

এ দেশে অনেকদিন অরাজকতা চলেছিল। পরে কোচবিহার রাজ্য নিজ বৈশিষ্ট স্থাপন করে সুপ্রসিদ্ধ অহম রাজাদের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নেমেছিলেন। খেন রাজাদের পতনের পর কোচ নেতারা নিজেদের ছোট ছোট রাজ্যে প্রাধান্য বিস্তার করে শাসন করছিলেন। এই খণ্ড রাজ্যের একজন দলপতির নাম ছিল হাজো। জীরা ও হীরা নামে এঁর দুই সুন্দরী কন্যা ছিল। এঁরা দু’ জনেই চিকনা পাহাড় নিবাসী মেচ বংশের হাড়িয়া মেচ নামে এক ব্যক্তির সঙ্গে পরিণীতা হন। জীরার দুই ছেলে মদন ও চন্দন। আর হীরা এবং রূপবতী, শিবে ভক্তিমতি। স্বয়ং শিবের সাক্ষাৎলাভ আর ‘বিশু’ নামে বহু প্রতিভার অধিকারী পুত্রলাভ করেন। শিবের বরপ্রাপ্ত বিশুর সন্তানেরা ‘শিব বংশ’ বলে কথিত আছে। বিশুর জন্মের সময়কাল নিয়েও বিতর্ক রয়েছে বলে মনে করছেন গবেষকরা।
আসলে জ্যোতিষপুর আর কামরূপ আলাদা নয়, কামরূপ পর্বে এটা প্রায় সাম্রাজ্যে পরিণত হয়। যার সীমায় আজকের অসম, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশও ছিল। আর কোচ রাজ্য যাঁরা গঠন ও শাসন করেছিলেন তাঁরা তথাকথিত অভিজাত বংশজাত নয়, কোচ-মেচ-কিরাত ইত্যাদি জনগোষ্ঠীর মিশেলে তৈরি এক উন্নততর জাতিসত্তা থেকে উঠে আসা মানুষ। এই রাজশক্তি ‘শিব-বংশী’ নামেই আত্মপ্রকাশ করে।

কোচবিহারের ইতিহাস নিয়ে কৈলাসচন্দ্র সিংহ লিখেছেন, ‘কোচবিহার প্রাচীন কামরূপের একটি অংশ মাত্র’। চারটি পীঠস্থানের মধ্যে ‘কোচবিহার রত্নপীঠ’ নামে খ্যাত এই স্থান। তাঁর কথায়, কোচ রজ্যের প্রাচীন ইতিহাস কামরূপের ইতিহাসের সঙ্গে এক সুতোয় গাঁথা।

কামতা রাজবংশের উত্থান, হুসেন শাহের আগ্রাসন, কামরূপে নীলধ্বজ থেকে নীলাম্বরের সময় যুদ্ধে হুসেন শাহের পরাজয়, সন্ধি এবং পালকি চড়ে প্রাসাদ আক্রমণ, পরে ইতিহাসের এক মাহেন্দ্রকালে সর্দার হাজোর দৌহিত্র বিশু বা শিবসিংহের অভিষেক কার্যত কোচ রাজ্যের প্রতিষ্ঠা।

কোচ বংশের শেষ মহারাজা বিরাজেন্দ্র নারায়ণ প্রয়াত হন ১৯৯২ সালের ১১ আগষ্ট। রাজত্ব করেন চন্দন (১৫১০-১৫২২), বিশ্ব সিংহ (১৫২২-১৫৫৪), লক্ষ্মী নারায়ণ (১৫৮৭-১৬২১), বীর নারায়ণ (১৬২১-১৬২৫), প্রাণ নারয়ণ (১৬২৫-১৬৬৫), মোদ নারায়ণ (১৬৬৫-১৬৮০) এবং বাসুদেব নারায়ণ (১৬৮০-১৬৮২)। রাজত্ব ক্রমে এই ধারায় প্রবাহিত হয়েছে।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪: সুন্দরবনের লবণ-বৃত্তান্ত

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৫: আরও একটু বেশি হলে ক্ষতি কী?

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪২: আশা-ভরসার ‘শঙ্কর নারায়ণ ব্যাঙ্ক’

শাশ্বতী রামায়ণী, পর্ব-৫১: মারীচমায়ায় কি দিগভ্রান্ত সীতা?

বাসুদেবের সন্ততি না থাকায় উজির মহীনারায়ণের জ্ঞাতি বংশধর মহেন্দ্র নারায়ণ সিংহাসনে বসেন। তাঁরই বংশধরেরা কোচ রাজবংশের পরবর্তী রাজ ক্ষমতা পান। ১৭৭০-৭২ সাল পর্যন্ত কোচবিহার রাজবংশ ইংরেজ আধিপত্যের বাইরে ছিল। বাংলায় কোম্পানির শাসন শুরু হলে ১৭৭৩ সালের ৫ এপ্রিল ওয়ারেন হেস্টিংসের সঙ্গে সাক্ষরিত চুক্তি অনুসারে কোচবিহার করদ রাজ্য হয়। পরে নরেন্দ্র নারায়ণ হন প্রথম করদ রাজা। ভুটিয়া রাজ্য বিরুদ্ধাচরণ করে বলেই ইংরেজ কোম্পানির সহায়তা প্রয়োজন হয়। রাজপরিবার কোম্পানির সঙ্গে সন্ধি করে।
কোম্পানির হস্তক্ষেপে ধৈর্যেন্দ্র নারায়ণের কারামুক্তি ঘটে। মুক্তির পর যে জায়গায় তিনি প্রথম ভাত খেয়েছিলেন, সেই স্থানটিই ‘রাজাভাত খাওয়া’। তিনি আবার সিংহাসনে বসেন ১৭৭৫-১৭৮৩ সাল পর্যন্ত। ১৭৮৩ সালে ধৈর্যেন্দ্রের মৃত্যুর পর নাবালক পুত্র হরেন্দ্র নারায়ণ সিংহাসনে বসলে শাসনকাজ চালাতে থাকেন রাজমাতা কামতেশ্বরী দেবী। হরেন্দ্র নারায়ণ ১৭৮৩-১৮৩৯ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ সময় ধরে রাজত্ব করেন। এরপর পুত্র শিবেন্দ্র নারায়ণ (১৮৩৯-১৮৪৭) সিংহাসনে বসেন। শিবেন্দ্র সুযোগ্য শাসক কিন্তু নিঃসন্তান ছিলেন। তাঁর মৃত্যুর পর দত্তকপুত্র নরেন্দ্র নারায়ণ (১৮৪৭-১৮৬৩) সিংহাসনে বসেন।

নরেন্দ্র নারায়ণের পাঁচটি বিবাহ। দ্বিতীয় রানি নিশিময়ীর গর্ভেই জন্মগ্রহণ করেন রাজা নৃপেন্দ্র নারায়ণ (১৮৬৩-১৯১১)। বাংলার ইতিহাসে নৃপেন্দ্রনারায়ণের নাম বিশেষভাবে স্মরণীয়। গভর্নর কর্তৃক নিযুক্ত একজন কমিশনার কর্নেল হটনের হাতে তাঁর দেখাশোনা ন্যস্ত হয়।

আধুনিকীকরণ তখন থেকেই শুরু। তাঁর পুত্র জিতেন্দ্র নারায়ণ (১৯১৩-১৯২২) এই সময় ইংরেজি ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি আগ্রহ বিস্তৃতি পায়। ইন্দিরা দেবী ও জিতেন্দ্র নারায়ণের জ্যেষ্ঠপুত্র জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ এরপর সিংহাসনে বসেন। জিতেন্দ্র নারায়ণ ইংল্যান্ডে দেহত্যাগ করেন। জগদ্দীপেন্দ্র নারায়ণ (১৯২২-১৯৭০) সিংহাসনে অধিষ্ঠিত ছিলেন। ১৯৪৩-৪৪ সালে বাংলার রনজি ক্রিকেট দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। নিঃসন্তান থাকায় তাঁর ছোটভাই ইন্দ্রজিতেন্দ্র নারায়ণের পুত্র বিরাজেন্দ্র নারায়ণ (১৯৭০-১৯৯২) কোচবিহারের শেষ রাজা ছিলেন। ১৯৯২ সালের ১১ আগষ্ট নিঃসন্তান অবস্থায় মৃত্যু হলে কোচবিহার রাজবংশের ইতিহাসের সমাপ্তি ঘটে।
আরও পড়ুন:

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৯: পঞ্চমের সুরে লতার গাওয়া ‘মেরে নয়না সাওন ভাদো’ গান শুনে শুনেই প্রস্তুতি শুরু করেন কিশোর

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৬৭: কবিকন্যার সঙ্গে নগেন্দ্রনাথের সম্পর্কের অবনতি ঘটলেও কবির সঙ্গে ঘটেনি

সোনার বাংলার চিঠি, পর্ব-১৪: পশ্চিমবঙ্গের তুলনায় বাংলাদেশের গ্রামীণ জনগণ সব দিক থেকেই অনেক এগিয়ে

কোচবিহারে ধুলো মেখে তোর্সা ধারে, পাথরে বা চরে কিংবা তীব্র বন্যার জলস্রোত ছুঁয়ে দেখা পরখ করার অভিজ্ঞতা তুলে নিয়েছি মনের ভিতর। ইতিহাস পড়েছি, শুনেছি। সবচেয়ে বড় কথা সে আবেগে একের পর এক মনের ভিতর চলচ্চিত্রায়ণ ঘটে গিয়েছে অদ্ভুত ভাবে। এত মিলন মিশ্রণ, এত বড় এক ধারাবাহিক রাজার ইতিহাস, তাঁদের বাসস্থান, রাজার ঘর, রাজ্যপাট, কে কোথায় ছিলেন— তার ইতিহাস আর মূল্যবান সব ঘটনাকে সঙ্গে নিয়ে! ১৮৮৭-র আগে যখন রাজবাড়ি তৈরিই হয়নি, তখনও ছিল হাতিশালে হাতি, ঘোড়া শালে ঘোড়া আর অরণ্যময় অঞ্চলে মৃগয়া গমন। আসলে অবিভক্ত বঙ্গের অনেকটা জুড়েই গতিবিধি রাজ্য জয় আর অভিযানের ইতিহাস জড়িয়ে আছে। আছে অসমের অনেকটাই একাকার হয়ে মিলেমিশে।

এখন যে সব তালুক বা গ্রাম কোচবিহার বা এই রাজনগরের নগরের ছোঁয়া থেকে দূরে, বাস রাস্তা বা অন্যান্য যানবাহনে সহজে যাতায়াত করা যায়, সে সময়ের ছবি কল্পনায় অনুভব করলে দেখব অরণ্য আর অরণ্য-নদী সংকুল বন্য জীবজন্তুর ভিড়। একস্থান থেকে অন্যত্র রাজ-যাত্রা অব্যাহত। কখনও জিতে ফেরা, নয়তো বন্দিত্ব। কখনও গড়, কখনও পাট, কখনও নিদর্শন হিসেবে নানা দেউল, মন্দির, কোর্ট বা বিগ্রহ নির্মাণের ইতিহাস। কতবার বদলে গিয়েছে রাজধানী রাজার বসতস্থান, মন্দিরের অবস্থান, পুরাকীর্তি। ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয় যেমন বন্যা ও ভূমিকম্পে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে সে সব, অথবা ধ্বংস হয়েও কিছু নিদর্শন নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

চোখের উপর জলছবির মতো স্পষ্ট হয়ে ওঠে মহারাজ নরনারায়ণের (১৫৫৪-১৬৮৮) সময়কাল। মহিষী ভানুমতীর নৌবহরে নিজেই তীর-ধনুক নিয়ে যুদ্ধের বিস্তার কথা সে তো জানা। অনেক সময়ই রাজার পাশে বসে রাজ কাজে অংশ নেওয়ার পরিচয়ের কথা ইতিহাস হয়ে আছে। তাঁর দূরদর্শিতা, প্রজাহিতের পরিকল্পনা কিংবা শিক্ষানুরাগের কথা যেমন ইতিহাস ঘাটলে জানা যায়, তেমনি ছেলেদের ঠিকমতো শিক্ষিত করে তুলতে ‘প্রয়োগ রত্নমালা’ ব্যাকরণ রচনা করার কথাও জানা যায়। রচনাকাল ১৫৬৮ সাল। গন্ধর্ব নারায়ণ লিখিত বংশাবলীতে উল্লেখ আছে—
নৃপতির প্রিয়তমা ভানু পাটেশ্বরী
ভট্টাচার্য আগে কথা কহিলা সাদরি
পাণিনির বর্ণক্রম গ্রন্থনে লিখিবা
মহেশের কৃত কলাপের ক্রম দিবা…
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৭: মদ না খেলে ফ্যাটি লিভার হয় না?

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-২২: কেস কালাদেও: ফাইল নম্বর ১

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২৭: সমস্যা যখন ‘সম্মতি’ নেওয়া বা দেওয়ার

আসলে এই যে রাজ্যের সূচনা পর্ব শুধু নয়, রাজমহিষীদের উদ্যম, আন্তরিকতার শিক্ষা প্রসারে আর সাহিত্য রচনায় প্রশংসনীয় ও উল্লেখনীয় বিস্তার পরবর্তীকালে বিস্তৃতি পেয়েছে অন্যান্যদের মধ্যেও। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে এসেও ১৮৫৮ সালে মহারাজ শিবেন্দ্রনারায়ণের পত্নী বৃন্দেশ্বরী দেবীর আত্মজীবনীমূলক ইতিহাস ‘বেহারোদন্ত’ রচনা গ্রন্থ পাওয়া গিয়েছে। মাত্র নয়-দশ বছর বয়সে রাজবংশ সন্নিধানে এসে তাঁর মহিলা ঐতিহাসিক নামের ধারা তুলে ধরেছেন। অনেক পরে সুনীতি দেবীর নাম সকলেরই জানা। নারী শিক্ষার শুধু অগ্রগতি নয়, প্রতিষ্ঠিত লেখিকা ও প্রথম ভারতীয় মহিলা জীবনী গ্রন্থকারও তিনি। লেখেন ইংরেজিতে, ‘দ্য অটোবায়োগ্রাফি অফ অ্যান ইন্ডিয়ান প্রিন্সেস’ (১৯২১)।

গজেন্দ্র নারায়ণের স্ত্রী সাবিত্রী দেবীও গ্রন্থ রচনা করেছেন। ওই ধারাই অনুসৃত হয়েছে নৃপেন্দ্র নারায়ণের পুত্রবধূ নিরূপমাদেবীর ক্ষেত্রেও। তিনিও একজন সুলেখিকা এবং সমাজসেবক হিসেবে পরিচিতি পান। ভিক্টর নিত্যেন্দ্র নারায়ণের স্ত্রী তিনি। জীবনে প্রচুর আঘাত পেয়ে দৃঢ় সংকল্পে নিজের জীবন নিজেই বেছে নিয়েছিলেন পরে। বিবাহবহির্ভূত জীবনে এসে সমাজকল্যাণ ব্রতে নিজেকে নিয়োজিত করেছেন। শুধু এঁরাই নন, মহারানি ইন্দিরা দেবী, জিতেন্দ্র নারায়ণের স্ত্রী ও তাঁর কন্যা এবং জয়পুরের মহারানি গায়ত্রী দেবীর নাম তো সমাজকল্যাণ ও সংস্কারক হিসেবে বলতেই হয়।

ভানুমতীর সময়কাল বা তার আগে রাজপাট কেমন ছিল? কোথায় ছিল? এ সব প্রশ্ন ভাবিয়ে তোলে। বিভূতি ভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের আরণ্যকের সেই দোবরু পান্না, ভানুমতীর সেই অনার্য রাজপুত্র রাজকন্যার ছবি এবং কথা যেন ঘুরে ঘুরে এসে আঘাত করে যায়, যখনই পূর্ব ইতিহাসের দিকে তাকাই। সেই সব নিদর্শন এখনও ছুঁয়ে দেখতে চাই। অথবা কোন কোন নিদর্শন নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গিয়েছে সেকথা যখন জানতে পারি, তখনও স্বপ্নে চলে মন। সে কোনও এক রূপকথার ঘরবাড়ির দিকে। যেখানে ঘুমন্ত রাজার বাড়িকে যেন কোনও এক রাজপুত্র এসে সোনার কাঠি রূপোর কাঠির ছোঁয়ায় জাগিয়ে তুলবে আবার। এবার যেতে হবে সেই সব আনুষঙ্গিক রাজ কোঠা বা রাজধানী কোথায় ছিল! কিছু অনুমান আর খানিকটা প্রামাণ্য।—চলবে।

ঋণ স্বীকার:
কোচবিহারের ইতিহাস, প্রথম খণ্ড: খাঁ চৌধুরী আমানত উল্লা আহমদ
উত্তরপ্রসঙ্গ, সম্পাদনা দেবব্রত চাকী (কোচবিহার জেলা সংখ্যা)
কোচবিহার কথা ইতিহাস ও সংস্কৃতি
* মণিদীপা নন্দী বিশ্বাস। সাহিত্যিক ও কবি। কোচবিহার সুনীতি অ্যাকাডেমির প্রধান শিক্ষিকা। www.samayupdates.in -এ লিখছেন ‘কোচবিহারের রাজকাহিনি’। একাধিক উপন্যাকস, ছোটগল্প সংকলন, প্রবন্ধ সংগ্রহ ও কাব্যগ্রন্থ রয়েছে লেখিকার।

Skip to content