কেশব আশ্রম। ছবি: সংগৃহীত।
এছাড়া প্রার্থনা, সংকীর্তন-সহ সমাগতদের আপ্যায়নের ব্যবস্থা তো ছিলই। বেশ কয়েকবার এই উৎসবে ‘ব্রহ্মানন্দ ভোজ’ হয়। তখন বহু গরীব দুঃখী মানুষকে পাত পেড়ে ভাত ডাল তরকারি দই, মিষ্টি খাওয়ান হত। অনেককে আবার দই-চিঁড়ে প্রচুর পরিমানে খাওয়ান হত। নগর সংকীর্তন চলত। স্থায়ী ভাবে কোচবিহারে ব্রহ্ম মন্দির হওয়ার আগে সাগর দীঘির ধারে সেই সময়ের জেঙ্কিন্স স্কুল গৃহে রবিবার উপাসনা চলত।
এরকম শ্রেষ্ঠ কাজের মধ্যে দিয়েই সামাজিক, ধার্মিক ও অর্থনৈতিক উন্নতি হতে থাকে। কর্ম শিক্ষা এবং মেয়েদের সাবলম্বী করে তোলার কাজ চলতে থাকে। স্থানীয় ছেলে মেয়েদের নিয়ে বহু অভিনয়ের ব্যবস্থা করা হয়। কোচবিহারের ল্যান্সডাউন হলে নানা অনুষ্ঠানও হয়েছে এ সময় থেকেই। এখানে একটি ‘আনন্দবাজারের’ আয়োজন করা হয় মেয়েদের নিয়ে। সেখানে মেয়েদের হাতের তৈরি জিনিস মেয়েরাই কেনাবেচা করত।
কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৭: প্রকৃত শাসক মহারাজ, একটি রাজ্যের আলোয় উত্তরণ
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৮: নহবতে সহধর্মিণী সারদা
আনন্দমেলা
“১৩২৬ সালের ৬ই, ৭ই এবং ৮ই বৈশাখ (১৯১৯ সালের ১৯-এ, ২০-এ ও ২১-এ এপ্রিল) শনিবার, রবিবার ও সোমবারে কোচবিহার স্থান ল্যান্সডাউন হলে বাৎসরিক আনন্দবাজার হইবে। ৬ই ও ৮ই বৈশাখ শুধু মহিলাদের জন্য এবং ৭ই বৈশাখ সর্বসাধারণের জন্য হইবে। মধ্যাহ্নে ১২টা হইতে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত খোলা থাকিবে। পূর্ণবয়স্কদিগের প্রবেশমূল্য এক আনা (বর্তমান ৬ পয়সা) ও বালক-বালিকাদের দুই পয়সা (বর্তমান ৩ পয়সা)। কোচবিহারবাসী যে কোনও ব্যক্তি ইচ্ছা করিলে নিম্ন ঠিকানায় দ্রব্যাদি বিক্রয়ার্থে প্রেরণ করিতে পারিবেন। প্রতি দ্রব্যে মূল্য এবং প্রেরণকারীর নাম ও ঠিকানা স্পষ্ট অক্ষরে লিখিত থাকিবে নচেৎ বাকি দ্রব্য এবং বিক্রিত দ্রব্যের মূল্য ফেরৎ পাঠাইবার জন্য কেহ দায়ী হইবেন না। দ্রব্যাদি ২৭শে চৈত্রের (১০ই এপ্রিল) পর গৃহীত হইবে না।”
সুনীতি অ্যাকাডেমি। ছবি: সংগৃহীত।
সুনীতিদেবী রাজমাতা হিসেবে বেশ কিছু সময় কোচবিহার থেকে রাজ্য পরিচালনায় সাহায্য করেছিলেন। তিনি কোচবিহারে একাধিক প্রজা হিতকর কাজের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে জড়িত ছিলেন। শিক্ষা, সমাজনীতি, রাজনীতি, নারীশিক্ষা সর্বত্র রাজ পরিবার, রাজা, মহারানি সকলের অবদান যেমন, তেমনই সাহিত্যক্ষেত্রে এঁদের অবদান স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। সুনীতিদেবী নিজে বিদুষী ও সুলেখিকা ছিলেন। এ বিষয়ে বলতে গিয়ে আধুনিক (মহিলা) কবির দু’একটি পংক্তি উল্লেখ করতে ইচ্ছে হল…
কোন নদী নেই
কোন মানুষ নেই
নিজস্ব কিছু ছিল না কোনওদিন”
দু’ হাতের ভাঁজে ফুলে ওঠা চোখে
নদীকে ভেবেছি আমার-আমারই তো
সে ও কখনও ছিল না নিজস্ব
স্রোতের মুখ ঘুরে গেছে অজস্র
সবুজ উপত্যকার দিকে…(অমীমাংসিত)”
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৬: বহু জনমের মায়া, ধরিল যে কায়া, ওগো ‘শিল্পী’ সে তো শুধু তোমারই ছায়া
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-8: চলতি কা নাম কিশোর
ভট্টাচার্য আগে কথা কহিলা সাদরি।।
পাণিনির বর্ণক্রম গ্রন্থনে লিখিবা।
মহেশের কৃত কলাপের ক্রম দিবা।।”
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-২৬: অবশেষে চার হাত এক হল, পঞ্চম-আশা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে শুরু করলেন দ্বিতীয় ইনিংস
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১১: সুন্দরবনের ব্যাঘ্রদেবতা দক্ষিণ রায়
গ্রন্থটিতে নারীদের মানসিকতা, অলঙ্কার প্রিয়তা, অলঙ্কার ও রূপচর্চার দ্রব্য ও তার পদ্ধতি কেমন তার নিখুঁত বর্ণনাও আছে। এ বইটি বাংলা সাহিত্যচর্চায় আত্মজীবনী মূলক রচনায় একটি বিশেষ স্থান নিয়েছে। এদিক থেকে তাঁকে প্রথম মহিলা কবি ও আত্মজীবনীকার ও বলা যেতেই পারে।
শিবেন্দ্র নারায়ণের অন্য মহিষী কামেশ্বরী দেবীর নির্দেশে নরেন্দ্র নারায়ণের রাজত্ব কালে “মহারাজ বংশাবলী” নামে একটি ইতিহাস লেখা হয়। প্রথমে এটি পুঁথি আকারে থাকলেও পরে মুদ্রিত হয়। গদ্যে লেখা এ ইতি কথায় সে সময়ের বহু গুরুত্বপূর্ন তথ্য আছে।
এই ধারাবাহিকতায় এর পরই যাঁর নাম স্বর্ণাক্ষরে কোচবিহারের সাহিত্য ইতিহাসেই শুধু নয়, বাংলা সাহিত্যে স্থান করে নেওয়ার যোগ্য তিনি আমাদের মহারানি সুনীতিদেবী, যিনি সমস্ত আধুনিকতার পালে হাওয়া লাগিয়েছিলেন। তাঁর জন্মের দেড়শো বছর আমরা অতিক্রম করেছি ঠিকই, মানুষের হৃদয়ে আজো উজ্জ্বল সে নাম। দেশের প্রথম মহিলা হিসেবে ব্রিটিশ প্রদত্ত “ক্রাউন অফ ইন্ডিয়া” উপাধিতে ভূষিত তিনি।
রাজ-ভবন। ছবি: সংগৃহীত।
পরে ১৮৮২ সালে দিনহাটায় নারীশিক্ষা প্রসারে নৃপেন্দ্রনারায়ণের প্রথম পুত্র রাজকুমার রাজ রাজেন্দ্র নারায়ণের নামে রাজকুমার বালিকা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানে বিরাজকান্ত সিংহ ছিলেন প্রধান শিক্ষক ও তাঁর স্ত্রী হিরণবালা দেবী সহ-শিক্ষিকা ছিলেন। জেলায় তিনিই প্রথম মহিলা যিনি দীর্ঘদিন সরকারী চাকরী করেছেন। গজেন্দ্র নারায়ণের স্ত্রী সাবিত্রী দেবীর নাম পৃথক গুরুত্বপূর্ণ আলোচনার দাবি রাখে। পরের পরবে তাঁর উল্লেখ করব।
ঋণ স্বীকার: