ছবি: প্রতীকী। সংগৃহীত।
ত্রেতাযুগের রামায়ণও কুল গাছের অস্তিত্ব জানান দেয়। বর্বর রাক্ষস রাবণ যখন সীতাকে হরণ করে লঙ্কার উদ্দেশ্যে যান তখন শ্রীরামচন্দ্র ও লক্ষণ, সীতাদেবীকে বনের মধ্যে খুঁজতে খুঁজতে কুল গাছকে জিজ্ঞাসা করেন দেবীর কথা। কুল গাছ তখন জানান দেয় যে মাতা সীতাকে রাক্ষস রাবণ হরণ করেছেন এবং লঙ্কার উদ্দেশ্যে নিয়ে গিয়েছেন। বাধা দেওয়া সত্ত্বেও দেবীসীতাকে আটকাতে পারেনি এবং দেবীর নানান অলংকার তাঁর শাখা-প্রশাখায় আটকে যায়।
কুল গাছের এই বদান্যতা রামচন্দ্রকে মুগ্ধ করেন এবং তিনি আশীর্বাদ স্বরূপ বলেন যে, কুল গাছ চার যুগেই বর্তমান থাকবে। এমনকি মরুভূমি অঞ্চলেও। আবার শ্রীরামচন্দ্রকে ঘিরে অস্পৃশ্য সাভারির গল্পকথাতেও কুলের অস্তিত্ব আমরা পেয়ে থাকি। দুই ভাই যখন বনের মধ্যে সীতাকে খুঁজতে খুঁজতে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত হয়ে পড়েন তখন তাঁদের সাক্ষাৎ হয় অস্পৃশ্য সাভাবির সঙ্গে। সন্নিকটে থাকা একটি কুল গাছ থেকে কুল তুললেন এবং প্রতিটি ফলকে খানিকটা খেয়ে ফলের পক্কতা ঠিকঠাক বিচার করার পরেই শ্রীরামচন্দ্রকে খাওয়ার জন্য দিচ্ছিলেন।
ভগবান নারায়ণ সেই অস্পৃশ্যর এঁটো কুল নিজের ক্ষুধা নিভৃতির জন্য গ্রহণ করলেন। দরিদ্র অস্পৃশ্য ওই ভক্তের, ভগবানের প্রতি আন্তরিক ভালোবাসা অতি বিরল একটি উদাহরণ। বিতাড়িত সাভারি, শ্রীরামচন্দ্রের আশীর্বাদে আবার মালিনী রূপ পেয়ে তাঁর স্বামী গৃহে ফিরে যান। এই কুল ফল অর্থাৎ বদরিফল আজও বিভিন্ন পুজো অর্চনায় অর্ঘ্য হিসাবে নিবেদন করা হয়।
অরুন্ধতী জানালেন যে, তাঁর কাছে সেই মুহূর্তে কোনও খাবারই আর নেই। তিনি বন থেকে সংগ্রহ করা কুল ওঁকে খেতে দিতে পারেন। মহাদেবের নির্দেশ মতো অরুন্ধতী দেবী তখন কুল ফল রান্না শুরু করলেন এবং রান্না চাপিয়ে তিনি ভিক্ষুক ঋষির কাছে বসে তাঁর পবিত্র বাণী শুনতে লাগলেন। মহাদেবের মুখনিঃসৃত বাণী শোনা মাত্রই ১২ বছরের অনাহার, ক্লান্তি, দুঃখ সব যেন মুহূর্তে ভুলে গেলেন এবং তাঁর মনে হল যেন দ্বাদশ বছরে কিছুই ঘটেনি। খানিক পরেই ঋষিরা ফিরে এলেন। দেবাদিদেব তখন নিজের ছদ্মবেশ পরিত্যাগ করে ত্রিনয়নী মহেশ্বরের রূপ ধারণ করে দেবী অরুন্ধতীকে বরপ্রদান করলেন।
পৌরাণিক কাহিনিতে বর্ণিত আছে যে, অপ্সরা ঘৃতাচির রূপে মুগ্ধ হয়ে ঋষি ভরদ্বাজের বীর্য স্খলন হয়। সেই বীর্য থেকে জন্ম হয় অপরূপা সুন্দরী শ্রুরবতীর। কালের নিয়মে শ্রুরবতী যৌবনবতী হয়ে ওঠেন। একদা ঋষি ভরদ্বাজ ভ্রমণে গেলে সুরবতী দেবরাজ ইন্দ্রকে নিজের পতিরূপে বরণ করতে চাইলেন। তখন ইন্দ্র দেব ঋষি বৈশিষ্ঠের রূপ ধারণ করে এসে বললেন যে, তিনি যদি তাঁর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করতে চান তাহলে তাঁর দেওয়া বদ্রি ফলগুলি যতক্ষণ না সিদ্ধ অর্থাৎ নরম হচ্ছে তিনি যেন পক্ক করেন। কিন্তু সময় বয়ে যায়, জ্বালানিও একসময় শেষ হয়ে যায় কিন্তু কুল আর সিদ্ধ হয় না। তখন শ্রুরবতী নিজের দুই পা জ্বালানি হিসাবে দিয়ে কূল সিদ্ধ করতে থাকে অথচ কুল তখনও সিদ্ধ হয় না। অবশেষে সুরবতী এতটাই নিজ তপস্যায় একাগ্র ছিলেন যে নিজের সমগ্র অঙ্গ অগ্নিতে সমর্পণ করতে উদ্যত হন। অবশেষে দেবরাজ ইন্দ্র নিজে মহিমায় আত্মপ্রকাশ করে শ্রুরবতীকে বলেন যে তিনি তাঁর তপস্যায় মুগ্ধ হয়েছেন এবং তাঁর মনোবাঞ্ছা পূর্ণ করার কথা জানান।
হাত বাড়ালেই বনৌষধি, পর্ব-২৯: পুজো-পার্বনের সঙ্গী কুশ
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২৩: ঠাকুর সন্নিধানে সারদার কল্যাণব্রতে দীক্ষা
এক নজরে
গাছের পরিচিতি
কুল গাছের আদি উৎপত্তিস্থল চিন দেশ হলেও অনেকের মতে, কুলের অন্যান্য অনেক প্রজাতির প্রাচীন উৎপত্তিস্থল হল উত্তর ভারত।
গাছের বিস্তৃতি
গাছের প্রকৃতি
পরিযায়ী মন, পর্ব-১৭: জয়রামবাটির জগদ্ধাত্রীপুজো
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৫৪: সে যেন অন্য এক ‘পূনর্মিলন’
কী কী উপাদানে ভরপুর?
উপস্থিতের রাসায়নিক পদার্থ-ফুলের মধ্যে উপস্থিত থাকে ৭৩ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ৪ শতাংশ প্রোটিন এবং ৭ শতাংশ ফ্যাট। আয়রন, ম্যাগনেশিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, ফসফরাস, পটাশিয়াম, সোডিয়াম, জিঙ্ক ইত্যাদি খনিজ লবণ যথেষ্ট পরিমাণে থেকে থাকে। এছাড়াও নানান ধরনের ভিটামিন যেমন ভিটামিন এ, ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি উপস্থিত থাকে। এগুলি ছাড়াও অ্যালফিটোলিক অ্যাসিড, বাটুলিনিক অ্যাসিড, ম্যাকলিনিক অ্যসিড, কলুব্রিনিক অ্যাসিড।
এই দেশ এই মাটি, অসমের আলো-অন্ধকার, পর্ব-১: প্রকৃতি অসমকে সাজাতে কোনও কার্পণ্যই করেনি
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৯: বেশি ঘুম শরীরের পক্ষে ভালো?
চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহার
লিভার ক্যানসার প্রতিরোধে
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে
রক্ত আমাশা প্রতিরোধে
নিউরো প্রটেকটিভ হিসেবে
হৃদরোগ প্রতিরোধে
মাথার যন্ত্রণা উপশমে
অশ্ব ও মলদ্বারের সমস্যা নিরাময়ে
স্ত্রী রোগ উপশমে
আমাশয় প্রতিরোধে
মানসিক স্থৈর্য বাড়াতে
এ ভাবেই বৈদিক যুগ থেকে আজও আমাদের দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ কুলকে ভগবান নারায়নের প্রতিরূপ মনে করে যেমন পূজার নৈবিদ্যে ব্যবহার করে আসছে তেমনই চিকিৎসা বিজ্ঞানেও কুল গাছের বিভিন্ন অংশের ব্যবহার ক্রমেই বেড়ে চলেছে।