ছবি প্রতীকী।
ভারতের বিভিন্ন প্রদেশের মানুষের দেশাচার ও লোকাচারের সঙ্গেও নিম গাছ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে। নারদপুরাণ অনুসারে নিমগাছের শাখা হোম যজ্ঞে ব্যবহার করা হয়। নিম কাঠ দিয়ে ভগবান গণেশের মূর্তি গড়া হয়, নিম গাছের পাতা দিয়ে পুজো করা হয়।
দক্ষিণ ভারতে নিমগাছকে পুজো করা হয়। অনেক জায়গাতেই মন্দিরের পাশে নিমগাছ রোপন করা হয়। এবং মা কালী নিমপাতা অঞ্জলি হিসেবে গ্রহণ করেন।
নতুন দিল্লির একটি মন্দিরে ‘নিম দেবী ভবানী’-কে দেখা যায়। এই দেবীর নাম মারিয়াম্মম যার একহাতে নিমপাতা তরবারি এবং অন্য হাতে বিষধর সাপ। ওই তরবারি দিয়ে তিনি সকল রোগ হরণ করেন।
বাংলার প্রত্যন্ত গ্রামগঞ্জের মানুষরা এখনও বিশ্বাস করেন যে, নিমগাছ হল মা শীতলার আবাসস্থল। কথিত, মা শীতলা বসন্ত রোগ আনেন এবং সারিয়ে তোলেন। তাই জলবসন্ত বা গুটিবসন্ত হলে মায়ের আশীর্বাদ হিসেবে নিম হলুদ দিয়ে স্নানের রীতি রয়েছে।
দক্ষিণের কাঞ্চিপুরম জেলার রেড্ডিপেত্তাই গ্রামে একটি নিমগাছের গোড়া এমন আকারে ফুলে রয়েছে দেখে মনে হবে এক গর্ভবতী নারীর তৃতীয় দশার পেটের মতো। সেখানকার মহিলারা প্রতি মঙ্গলবার ফুল, চুড়ি এবং রকমারি খাবার দিয়ে নিমগাছকে পুজো করেন। আবার তামিলনাড়ু এবং কর্নাটকে শ্রাদ্ধের সময় স্বাস্থ্য ঠিক রাখার জন্য নিমপাতার চাটনি খাওয়া হয়।
সিদ্ধিবিনায়ক গণেশের পূজায় কুড়ি রকমের উদ্ভিদের পাতা অর্পণ করা হয়। তার মধ্যে নিম পাতা অন্যতম। কথিত আছে, অসুরদের থেকে বিতাড়িত হয়ে একবার সূর্যদেব নিমগাছে আশ্রয় নেন এই কারণবশত: রবিবার নিমপাতা খাওয়া নিষিদ্ধ। নিম ভারতীয়দের সংস্কার ও সংস্কৃতিতে আ জন্মকাল ধরে জড়িত আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে।
যে নামে পরিচিত
নিমের বিজ্ঞানসম্মত নাম: আজাদিরচটা ইন্ডিকা। গোত্র: মেলিয়েসি। প্রাচীন সংস্কৃত নাম: ‘নিম্ব’। আর বাংলায় ‘নিম’ নামে পরিচিত।
গাছের প্রকৃতি
বৃক্ষ জাতীয় দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদ। কাণ্ড কাষ্ঠল ও শাখাপ্রশাখা যুক্ত। পাতা যৌগিক পত্র।
হাত বাড়ালেই বনৌষধি: হাঁপানির সমস্যা থেকে ক্যানসার সব রোগের দাওয়াই হলুদ
ষাট পেরিয়ে, পর্ব-২৫: মা-বাবার বয়স বাড়ছে, এই সময় পড়ে গেলে বড় বিপদ ঘটতে পারে, সুরক্ষার প্রয়োজনে মানতে হবে কিছু নিয়ম/১
ডায়েট ফটাফট: ওজন কমাতে ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ-ডিনারের মাঝে ‘হেলদি স্ন্যাকস’ খাচ্ছেন তো?
যে সব উপাদানে ভরপুর
১৩০টিরও বেশি জৈব যৌগ রয়েছে নিমে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল— অ্যাজাডির্যা কটিন, নিম্বিন, নিম্বিডিন, নিম্বিডল, সোডিয়াম নিম্বিনেট, জেডুনিন এবং কুয়েরসেটিন।
নিমপাতায় রয়েছে ৭.১ শতাংশ প্রোটিন, ২২.৯ শতাংশ কার্বোহাইড্রেট, ক্যালশিয়াম, ফসফরাস, ভিটামিন সি, ক্যারোটিন, গ্লুটামিক, সিসটিন, ডোডেক্যানোইক, এলকোস্যানিক অ্যাসিড ইত্যাদি।
নিম ফুলের মধ্যে পাওয়া যায়, ‘নিম্বোস্টেরল’ ফ্ল্যাভোনয়েড এবং বিভিন্ন ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড। যেমন ৮.২ শতাংশ স্টিয়ারিক অ্যাসিড, ১৩.৬% শতাংশ পমিটিক অ্যাসিড, ৬.৫ শতাংশ ওলিক অ্যাসিড এবং লিনোলেইক অ্যাসিড রয়েছে।
আবার নিমগাছের পরাগরেণুতে রয়েছে অ্যামাইনো অ্যাসিডগুলো গ্লুটামিক অ্যাসিড, টাইরোসিন আরাজনিন, মিথিওনিন, ফিনাইল অ্যালামিন, হিসটিডিন এবং আইসোলিউসিন।
নিমগাছের কাণ্ডের ছালে ট্যানিন ১২ থেকে ১৬ পার্সেন্ট রয়েছে। এছাড়া গ্লুকোজ, ফ্রুক্টোজ, অ্যারাবিনোজ থাকে।
নিমগাছের গুঁড়ির ছালে থাকে নিম্বিন, নিম্বিনিন, নিম্বিডিন, নিম্বোস্টেরল, মারগোসিন এবং ৬ শতাংশ ট্যানিন তেল যা, তেতো স্বাদের জন্য দায়ী।
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১: শচীন ও মীরা দেব বর্মনের ঘর আলো করে এল এক ‘দেব শিশু’
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৪: ঠাকুরবাড়িতে দোলে আসত নাচিয়ে, নাচের তালে তালে হত আবিরের আলপনা
বিধানে বেদ-আয়ুর্বেদ, আর্থারাইটিসের ব্যথায় দীর্ঘ দিন কষ্ট পাচ্ছেন? স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে ভরসা রাখুন আয়ুর্বেদে
চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহার
নিমগাছের প্রতিটি অংশে উপস্থিত যৌগগুলি থেকেই বোঝা যায় যে, এই গাছের উপস্থিতি ও ব্যবহার অপরিহার্য। মানুষের রোগপ্রতিরোধ ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য নিম পাতার জুড়ি মেলা ভার। সকলেই জানি যে, মার্চ মাসের মাঝামাঝি ঋতু পরিবর্তন হয়। শীতকালে যে ভাইরাস এবং ব্যাকটেরিয়া থাকে তারা গরমের সূচনাতে আবার সক্রিয় হয়ে ওঠে। এই সময় নিমপাতা রোগ প্রতিরোধে খুব কার্যকরী ভূমিকা নিতে পারে।
ক্ষতিকারক কষকে মেরে ফেলে
অ্যান্টিম্যালেরিয়া হিসেবে কাজ করে
কিডনিকে সুস্থ রাখে
ওষুধে ব্যবহার
নিমপাতা ফোটানো জল
অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট
নিমতেল
যক্ষ্মার জীবাণু নষ্ট করে
ছত্রাক নাশক
হৃদরোগ
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
কৃমি নাশ হয়
মুখে ঘা হলে
মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১: আর্ষ মহাকাব্যের স্রষ্টাদ্বয়ের কথা
ইংলিশ টিংলিশ : আপনিও ভুল ইংরেজি শুনে ভুল বলে ফেলছেন না তো?
দুই বাংলার উপন্যাস: বসুন্ধরা এবং, ২য় খণ্ড, পর্ব-৭: শ্যামসুন্দর হয়তো স্বর্গের কোনও অভিশপ্ত পুরুষ
না, তবে পাঠকদের একেবারেই ভোরে উঠে নিমের শরবত খাওয়ার কড়া উপদেশ করব না। প্রত্যেক মানুষের শরীরের গঠন ভিন্ন ভিন্ন। এতে অনেকেরই সুগার লেভেল কমে যাবে এবং আরও কিছু সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তবে ফাল্গুন মাস থেকে আষাঢ়ের রথযাত্রার আগে পর্যন্ত আমাদের খাদ্য তালিকায় সপ্তাহে তিন থেকে চারদিন নিমকে রাখা যেতে পারে। অথবা এ সময় প্রতিদিন সকালে যদি একটি কচি নিমপাতা চিবিয়ে খেয়ে জলপান করলে ভালো। তারপর ব্রেকফাস্ট করা যেতে পারে। কারণ আবারও বলছি, প্রকৃতির মাঝেই তো লুকিয়ে আছে ভালো থাকার রসদ।