রুদ্রাক্ষ। ছবি: সংগৃহীত।
একদিন বসন্তের আগমনে যখন তুষারাবৃত পর্বত অপরূপ শোভায় সেজে উঠলো, তখন পতিব্রতা পার্বতীর নারী সত্তায় এক অনুভূতি উত্তাল হয়ে উঠল। এরূপ পরিস্থিতিতে তিনি নিজেকে স্থির রাখতে না পেরে ধ্যানমগ্ন স্বামী দেবাদিদেবকে জানালেন, “আমি প্রকৃতির মতোই সেজে উঠতে চাই। স্বামী আপনি আমাকে অলংকার প্রদান করুন।” বাহ্যিক সৌন্দর্যে উদাসীন ভোলানাথ ধ্যান ভঙ্গ করে চক্ষু উন্মীলিত করেন। স্ত্রীর অভিমানী মন উপলব্ধি করে ভোলামহেশ্বরের চোখ অশ্রু সজল হয়ে পড়ে। সেই অশ্রু বিন্দু থেকেই জন্ম হয় রুদ্রাক্ষের। দেবাদিদেবের নির্দেশ মতো সেই রুদ্রাক্ষের বীজ দিয়ে তৈরি মালা, আমলেট, কানের ইত্যাদি অলংকারে সুসজ্জিত হন দেবী। পুরাণ অনুযায়ী, রুদ্রাক্ষ ভগবান শিবের অশ্রু বিন্দু থেকে উৎপন্ন, তাই শিবের আরেক নাম রুদ্র।
মতান্তরে শ্রীমৎ ভাগবত পুরাণে রুদ্রাক্ষকে কেন্দ্র করে একটি গল্পকথার উল্লেখ পাওয়া যায়। মায়া নামে এক দৈববলে শক্তিশালী অসুর মুনিঋষিদের ওপর খুবই অত্যাচার করতেন। সেই অসুর তিনটি ধাতু দিয়ে দুর্ভেদ্য তিনটি পুরি তৈরি করেন। একটি হয় সোনা দিয়ে, আরেকটি রুপোর এবং অন্যটি লোহা দিয়ে তৈরি করেন। এই তিনটি শহরকে একত্রে বলা হত, ত্রিপুর এবং মায়াসুর ত্রিপুরাসুর নামে ত্রাস সৃষ্টি করতে ত্রিলোক জুড়ে। দেবতারা এই অসুরের হাত থেকে পরিত্রাণ পেতে মহাদেবের শরণাপন্ন হন। মহাদেবের সঙ্গে ত্রিপুরাসুরের ঘোর যুদ্ধ হয়। এই যুদ্ধের রথের সারথী হলেন স্বয়ং ব্রহ্মা এবং বিষ্ণু নিজে হলেন ধনুর্বান। মহাদেবের রথের চাকা হল সূর্য ও চন্দ্র। সেই যুদ্ধে ভগবান শিব রুদ্র মূর্তি ধারণ করে ত্রিপুরাসুরকে পরাজিত করে মুনিঋষি এবং দেবতাগণকে অত্যাচারের হাত থেকে মুক্ত করলেন।
এই রুদ্রাক্ষ একমুখী, ত্রিমুখী, চতুর্মুখী, পঞ্চমুখী থেকে শুরু করে বহুমুখী হতে পারে। বিভিন্ন রুদ্রাক্ষকে বিভিন্ন দেব-দেবীর প্রতীক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। যেমন দ্বিমুখী রুদ্রাক্ষ-হর পার্বতী একত্রে, ত্রিমুখী -অগ্নি দেবতা, চতুর্মুখী-ব্রহ্মা দেব, পঞ্চমুখী-মহাকালেশ্বর শিব, ষষ্ঠ মুখী-দেবসেনাপতি কার্তিক, সপ্তমুখী-দেবী মহালক্ষী, অষ্টমুখী-সিদ্ধিবিনায়ক গণেশ, নবমুখী-দুর্গা, দশমুখী-বিষ্ণু, একাদশমুখী-শ্রী হনুমান, দ্বাদশমুখী-আদিত্য, ত্রয়োদশমুখী-কামদেব, চতুর্দশমুখী- শিব ও বজরংবলী একত্রে, পঞ্চদশমুখী-পশুপতিনাথ, ষোড়শমুখী-রুদ্রাক্ষ, সপ্তদশমুখী-বিশ্বকর্মা, অষ্টাদশ মুখী-মা বসু মাতা।
প্রতিটি রুদ্রাক্ষ মানব জীবনের ভিন্ন ভিন্ন কাজকে সম্পন্ন করে। মন্ত্র উচ্চারণের মাধ্যমে যদি দিনে শতবার রুদ্রাক্ষের মালা জপ করা যায় তবে তা জীবনে সুখ-শান্তি নিয়ে আসে। তবে সাধারণ সাংসারিক মানুষের ক্ষেত্রে রাশি ও লগ্ন ফল এবং নাক্ষত্রিক যোগ বিচার বিবেচনা করেই রুদ্রাক্ষ ধারণ করতে হয়।
রুদ্রাক্ষকে আবার পুরাণ মতে গোত্র অনুসারেও ভাগ করা হয়ে থাকে। যেমন শিব গোত্র, শিখা গোত্র, জ্যোতি গোত্র, সাবিত্রী গোত্র ইত্যাদি। শিব গোত্রের রুদ্রাক্ষ গুলির নাম হল-প্রজাপতয়, মহিপাল, কপোট, গ্রন্থিক। শিখা গোত্রের মধ্যে থাকে-কুটিল, বেতাল, পদ্মমহানস। জ্যোতি গত্রের অন্তর্ভুক্ত রুদ্রাক্ষের নাম হল-ধৃতরাষ্ট্র, গোপাল, বক। সাবিত্রী গোত্রের রুদ্রাক্ষ গুলি হল কুটিকা, গুটিকা, দণ্ডিন, শরৎ।
হাত বাড়ালেই বনৌষধি: টেম্পেল ট্রি চাঁপার এই গুণগুলি সম্পর্কে জানতেন?
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৪: কোন সকালে মুক্তির অপেক্ষায় ‘ত্রিযামা’
এক নজরে
কী কী উপাদানে ভরপুর?
অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৩: অভিনয় নয়, কিশোর মনে-প্রাণে একজন গায়ক হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিলেন
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭১: ইংরেজের চোখে রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ‘দাগী আসামী’
চিকিৎসাশাস্ত্রে ব্যবহার
মানসিক অবসাদ দূরীকরণে
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে
জীবাণু ধ্বংস করতে
যক্ষ্মা নিয়ন্ত্রণে
মৃগী রোগ প্রতিরোধে
ক্রিমিনাশক হিসেবে
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৬৮: উন্নতমানের প্রোটিনের উৎস বলেই মাছ এত জনপ্রিয়
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৭: গৃহিণী সারদার প্রথম দক্ষিণেশ্বর আগমন
আধ্যাত্মিক ধ্যানধারণায়
আধ্যাত্মিক ধ্যানধারণায় নানান মুখি রুদ্রাক্ষ শরীর ও মনের জন্য খুবই উপকারী। যেমন—
এ সব কারণেই হয়তো প্রাচীন বৈদিক যুগ থেকে ভারত সহ চিন, জাপান ও অন্যান্য এশিয়া মহাদেশের দেশগুলিতে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের মানুষজন রুদ্রাক্ষ ধারণ করে আসছে।