স্কেচ: দেবাশীষ দেব।
কাকে বলে সাইনাস? সাইনাস হল আমাদের করোটি বা খুলির মধ্যে ছোট ছোট গহ্বর বা খুপরি। থাকে নাকের চারপাশে, যে জন্য এদের বলা হয় প্যারানাস্যাল সাইনাস। এরা যেন অনেকটা পাতলা হাড়ের তৈরি বেলুনের মতো। জন্মের সময় প্রায় থাকে না বললেই চলে, কিন্তু শিশু যত বড় হয় এরাও বাড়তে থাকে। যেন কেউ তাদের ফুঁ দিয়ে ফোলাচ্ছে। সাইনাস বাড়ে বলেই শৈশব থেকে কৈশোর অবস্থার মধ্যে বারে বারে পাল্টাতে থাকে মুখের চেহারা। সাইনাসের বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে গেলে ১২-১৪ বছরের মধ্যেই মুখ একটা স্থায়ী চেহারা পেয়ে যায়।
দু’ জন মানুষের সাইনাসের আকার-আয়তন কখনওই একরকম হয় না। যে জন্য ব্যক্তি বিশেষকে সনাক্তকরণ করার জন্য আঙুলের ছাপের মতো করোটির ছাপ বা স্কাল প্রিন্টও কিন্তু ব্যবহার করে থাকেন অনেক ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা।
চারজোড়া সাইনাস আছে আমাদের করোটিতে। চারটি স্তর বা লেভেলে থাকে এরা। একেবারে উপরের তলে আমাদের কপালের মধ্যে থাকে ফ্রন্টাল সাইনাস, দোতলায় এথময়ডাল সাইনাস। একতলায় সফেনয়ড সাইনাস, যা থাকে সফেনয়ড হাড়ের মধ্যে। আর বেসমেন্টে থাকে ম্যাক্সিলারি সাইনাস, যা থাকে গালের হাড়ের বা ম্যাক্সিলার মধ্যে।
অনেক কাজে লাগে এই সাইনাস
সাইনাসের ভেতরের নরম আবরণ মিউকাস মেমব্রেনে যেমন অসংখ্য গ্ল্যান্ড আছে, তেমনি আছে অসংখ্য সিলিয়া বা শুঙ্গ। এই শুঙ্গগুলো সব সময় সাইনাসের নিঃসরণ নারীর দিকে আন্দোলিত হয়। ফলে সাইনাসের সমস্ত তরল পদার্থ সেই দিকেই তাড়িত হয়ে নাকে চলে আসে এবং বার হয়ে যায়।
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৭: মদ না খেলে ফ্যাটি লিভার হয় না?
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২: মেয়েটি যেন গৃহলক্ষ্মী
সাইনাসে সংক্রমণ কীভাবে হয়?
এরা নানাভাবেই সাইনাসে ঢুকতে পারে। প্রথমত হয় ঠান্ডা লেগে অর্থাৎ হঠাৎ করে তাপমাত্রার পরিবর্তনে। শীতকালে সাইনাসের সমস্যা বাড়ে। আমরা জানি আমাদের নাক এয়ারকন্ডিশনিং চেম্বার হিসেবে কাজ করে। শীতকালে বাইরের ঠান্ডা বাতাসকে গরম করে শ্বাসপথের ভিতরে পাঠানোর জন্য নাকের বিভিন্ন রক্তনালীতে ধেয়ে আসে উষ্ণ রক্ত, ফুলে যায় নাকের মিউকাস মেমব্রেন, সাইনাসগুলোর সঙ্গে নাকের যেসব সংযোগনালি থাকে সেগুলো বন্ধ হয়ে যায়। সাইনাসে রোগ জীবাণু আটকে পড়ে দাপাদাপি শুরু করে।
এমনটা কিন্তু ঘটতে পারে অ্যালার্জিতেও। আবার নাকের পার্টিশনের হাড় বাঁকা থাকলেও এটা হতে পারে। হঠাৎ নাক ঝাড়লেও এমন বিপত্তি হয়। কারণ নাকে ঠান্ডা লেগেছে, নাক ভরে আছে জীবাণু ভরা সর্দিতে। জোরে নাক ঝাড়লে নাকের প্রকোষ্ঠে হঠাৎ করে উচ্চ চাপের সৃষ্টি হয় এবং কিছুটা সর্দি যেমন বাইরে বার হয়ে যায়, কিছুটা আবার নেগেটিভ প্রেসারে নালি বেয়ে সাইনাসগুলোতেও ঢুকে পড়ে। এ ভাবেই শুরু হয় সংক্রমণ। সব সাইনাসগুলো যখন একসঙ্গে সংক্রমিত হয় তখন তাকে বলে প্যানসাইনাসাইটিস।
লাইট সাউন্ড ক্যামেরা অ্যাকশন, পর্ব-৬: হিচককের সাইকো—ম্যারিয়নের স্নান ও নর্মা-র মৃতদেহ
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৯: পঞ্চমের সুরে লতার গাওয়া ‘মেরে নয়না সাওন ভাদো’ গান শুনে শুনেই প্রস্তুতি শুরু করেন কিশোর
সাইনাসেই মাথাব্যথা বুঝবো কী করে?
ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১: রাজবাড়ির ইতিকথা—ইতিহাসের অন্তরে ইতিহাস
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৪: সুন্দরবনের লবণ-বৃত্তান্ত
প্রশ্ন হল আপনি তাহলে করবেনটা কী?
অ্যালার্জির কারণে সাইনাস হলে তার চিকিৎসা পদ্ধতি এবং জটিল সংক্রমণে সাইনাস হলে, তার চিকিৎসা পদ্ধতি কিন্তু সম্পূর্ণ ভিন্ন। সাইনাসে পচা সর্দি থাকলে আজকাল ফাংশনাল এন্ডোসকপিক সাইনাস (FESS) সার্জারি করে রোগীকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তোলা যায়।
সঠিক চিকিৎসায় সাইনাস অবশ্যই সারে। টোটকা টাটকিতে সাময়িক উপশম মিলতে পারে। কিন্তু সম্পূর্ণ রোগমুক্তি ঘটে না। আর দীর্ঘদিন সাইনাস পুষে রাখলে তার থেকে মস্তিষ্কের অসুখ, চোখের সমস্যা, হাড়ের অসুখ, কানের অসুখ, শ্বাসপথের অসুখ—কি না হতে পারে!