মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪


স্কেচ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

সেই বিখ্যাত শ্যামা সঙ্গীতটির কথা মনে আছে তো! দোষ কারও নয়তো মা, আমি স্বখাত সলিলে ডুবে মরি শ্যামা…। আমাদের অবস্থাটা এখন ঠিক সেই রকমই। শ্যামা পুজোর বাকি মাত্র তিন দিন। এরমধ্যে সবাই নিশ্চয়ই জেনে গিয়েছেন যে সরকারের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ এবার শব্দবাজির উর্ধসীমা ৮৫ ডেসিবেল থেকে বাড়িয়ে ১২৫ ডেসিবেল করেছেন। এবং এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ কিংবা পরিবেশবিদদের কোনও রকম মতামত নেওয়া হয়নি। কাজেই ধরেই নেওয়া যায়, এবার বাজি পটকা দেদার ফাটবে, লুকিয়ে চুরিয়ে নয় প্রকাশ্যেই। চূড়ান্ত পরিবেশ দূষণ হবে, বাজির আগুনে ঝলসাবেন অনেকেই এবং অনেকেরই কানে তালা ধরবে।
কানে তালা। খুবই মামুলি একটি সমস্যা। হতে পারে নানা কারণেই। পুজোর সিজনের কথাই বলি। ধরুন আপনি সপরিবারে ঠাকুর দেখতে বেরিয়েছেন। হঠাৎ কানের সামনে বুড়িমার চকোলেট বোম ফাটলো এবং সেই শব্দব্রহ্ম একেবারে ব্রহ্মাস্ত্র হয়ে আপনার কানের পর্দায় গোত্তা মারলো! কানে ধরে গেল তালা। কান-মাথা বোঁ বোঁ করে উঠলো। আবার কেউ কেউ অজ্ঞানও হয়ে যেতে পারেন। ঠাকুর দেখা মাথায় উঠলো। ব্যাক টু হোম। কী করা যায়! পুজোর বাজারে ডাক্তার পাবেন কোথায়! কারও সুবুদ্ধি শুনে হয়তো একটু গরম তেল, জল কিংবা বাড়িতে পড়ে থাকা পুরনো ড্রপ কানে দিয়ে দিলেন।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৪: পানমশলা খেলে ক্যানসার হয়?

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-১৩: উইলসন-এ-কথা

খবরদার এগুলো করতে যাবেন না। কানে হাতই দেবেন না। একটু পরিষ্কার তুলো কানে গুঁজে রাখুন। কোনও নাকের ড্রপ ঘরে থাকলে দু ফোঁটা করে দু’নাকে দিয়ে দিন। ব্যথা হলে অ্যান্টাসিড দিয়ে পেইনকিলার খান। শব্দ থেকে যতটা পারেন দূরে থাকুন। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হাসপাতালের এমার্জেন্সি বা ইএনটি বিশেষজ্ঞ ডাক্তারবাবুর চেম্বারে যোগাযোগ করুন। বাজির শব্দে কানে তিন ধরনের ক্ষতি হতে পারে।
কানে সাময়িক তালা ধরতে পারে ও ব্যথা হতে পারে।
কানের পর্দা সরাসরি ফেটে যেতে পারে।
কানে সাময়িক বধিরতা দেখা দিতে পারে, অন্ত:কর্ণের স্নায়ুতে চোট লাগার জন্য। ঠিক সময় চিকিৎসা শুরু না করলে এই বধিরতা স্থায়ী হয়ে যেতে পারে।
শব্দের তীব্রতা অর্থাৎ শব্দ কতটা জোরে হচ্ছে তা মাপা হয় ডেসিবেল একক দিয়ে। ৮৫ ডেসিবেল পর্যন্ত শব্দ আমরা সহ্য করতে পারি। এর বেশি হলে নানা ক্ষতি হয়। যার মধ্যে রয়েছে ধীরে ধীরে শ্রবণ ক্ষমতা কমে যাওয়া, হার্টের গতি ও রক্তচাপ বৃদ্ধি পাওয়া, নানা মানসিক বিকলন ইত্যাদি। ১৪০ ডেসিবেলের শব্দ আমাদের শরীরে ব্যথার সৃষ্টি করে। ১৬০ ডেসিবেলের বেশি শব্দ কানের পর্দা ফাটিয়ে নেয়। বাজি থেকে এই সব ধরনের ক্ষতিই হতে পারে।
আরও পড়ুন:

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২১: একদা কী করিয়া মিলন হল দোঁহে/ কী ছিল বিধাতার মনে

পরিযায়ী মন, পর্ব-১৩: টাকির ভাসানের ব্যথা

বাজি ফেটে কানে তালা ধরলে, আর কোনও জোরালো শব্দ যেন কানে না আসে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। পুকুরে ডুব দিয়ে স্নান করা চলবে না, ডাক্তার দেখাতে হবে।কান খোঁচাখুঁচি করা চলবে না, কোনও ড্রপ দেওয়া চলবে না। কিছুদিন শব্দহীন নিরিবিলি পরিবেশে কাটাতে পারলে ভালো হয়। তবে সবার আগে দরকার বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।

Skip to content