রবিবার ৬ অক্টোবর, ২০২৪


স্কেচ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

খুবই সাধারণ একটি সমস্যা। রোজ রোজ মাছ খাবেন অথচ গলায় কাঁটা আটকাবে না, তা কি হয়! বিশেষ করে অফিস টাইমের তাড়াহুড়োতে। তবে উপায়! আমি উপায় বাতলাবার আগেই আপনারা তো মনে মনে অনেক উপায় বাতলে ফেলেছেন। এ আর এমন কি সমস্যা! শুকনো ভাত, চিঁড়ে, মুড়ি চিবোলেই তো হয়, তা না হলে গলায় আঙুল দিয়ে খোঁচাখুঁচি!
 

গলায় কোথায় বেশি কাঁটা আটকায়?

গলায় কাঁটা সব থেকে বেশি আটকায় টনসিলে, বিশেষ করে শিশুদের। কারণ তাদের টনসিলগুলো আকার-আয়তনে বেশ বড় থাকে। এছাড়া জিভের পিছন দিকে, শ্বাসনালীর মুখে, তালুতে, ফ্যারিংসে, মাড়িতে কাঁটা আটকাতে পারে। ছোট মাছের কাঁটা বেশি আটকায় টনসিলে। বড় কাঁটা অনেক সময় খাদ্যনালীতে গিয়েও আটকাতে পারে। যেখানেই কাঁটা আটকাক, অস্বস্তি শুরু হয় সঙ্গে সঙ্গেই। জায়গাটা খচখচ করে। বারে বারে ঢোক গিলতে ইচ্ছে করে, আঙুল দিয়ে খোঁচাতে ইচ্ছে করে। ফলে ব্যথা গলার অনেকটা অংশ জুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। খাবার সময় অযথা তাড়াহুড়ো করবেন না, অন্যমনস্ক থাকবেন না। বাচ্চাদের ছোট মাছ খেতে দিলে ভালো করে বেছে দেবেন।

আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৩: কানে ব্যথা? তেল দেবেন কি?

কলকাতার পথ-হেঁশেল: উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়া: প্রাণের আশ-প্যান্থেরাস

প্রথম আলো, পর্ব-২: পৃথিবীর কোথায় প্রথম হাসপাতাল গড়ে উঠেছিল?

প্রথম আলো, পর্ব-৩: পৃথিবীর প্রথম কবি কে, জানেন?

 

কাঁটা ফুটলে কী করবেন?

প্রথম অবস্থায় কাঁটা গলার সামনের দিকেই থাকে। অল্প গেঁথে থাকতে পারে, নাও পারে। কয়েক ঢোক জল খেয়ে দেখুন, গেঁথে না থাকলে জলের সঙ্গে নেমে যাবে। যদি হাঁ করলে কাঁটাটা দেখা যায়, কেবলমাত্র তখনই সন্না বা শোন জাতীয় জিনিস ঘরে থাকলে, সেটা দিয়ে তুলে ফেলার চেষ্টা করুন। না পারলে ছেড়ে দেবেন, অযথা খোঁচাখুঁচি করবেন না। যদি পারেন কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করবেন, মাঝে মাঝে একটু করে জল ঢোক দিলে খাবেন। ব্যথা হলে খাবেন প্যারাসিটামল ট্যাবলেট, বাচ্চাদের দেবেন সিরাপ।

অনেক সময় এমনি এমনিই কাঁটা নেমে যায়। না নামলে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাবেন বা হাসপাতালের ইএনটি বিভাগে যাবেন। তিনি কাঁটা যদি সত্যিই থাকে, তার অবস্থান নির্ণয় করে ফরসেপ দিয়ে তা সহজেই বার করে দেবেন। না লাগবে ব্যথা, না হবে রক্তপাত। কাঁটা খুঁজে না পেলে অনেক সময় এক্সরে করার প্রয়োজন হতে পারে। কাঁটা শ্বাসনালী বা খাদ্যনালীতে ঢুকে গেলে, যদিও সে সম্ভাবনা খুবই কম, অজ্ঞান করে যন্ত্রের সাহায্যে বার করার প্রয়োজন হতে পারে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাটা গেঁথে না থেকে গলার খাঁজে পড়ে থাকে, ঢোক গিলতে গিলতে নিজেই নেমে যায় খাদ্যনালী হয়ে পাকস্থলীতে।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৫: কোন আলো লাগলো ‘পুত্রবধূ’-র চোখে

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-৩: অভিনয় নয়, কিশোর মনে-প্রাণে একজন গায়ক হিসেবেই আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিলেন

 

অহেতুক আতঙ্কিত হবেন না

গলায় কাঁটা ফুটলে অহেতুক আতঙ্কিত হয়ে চেঁচামেচি করবেন না। শুকনো ভাত চিঁড়ে কলা খেতেই পারেন। তবে জেনে রাখবেন, কাটা গেঁথে থাকলে এদের কোনও ক্ষমতা নেই তাকে টেনে তোলার। বরং একটু বাদে বাদে ঢোক গিলে গেলে জল খান। জলের ধাক্কায় কাঁটা নেমে যেতে পারে। গলায় আঙুল দিয়ে কক্ষনও বমি করার চেষ্টা করবেন না। যে জায়গাটা খচখচ করছে সেটা আঙুল দিয়ে খোঁচাখুঁচি করবেন না, আঙুল তো আর চিমটে বা ফরসেপ নয় যে গেঁথে থাকা কাঁটাকে টেনে তুলবে। এসবের ফলে শুধু শুধু গলা ব্যথা বেড়ে যাবে। প্রাকৃতিক নিয়মে কাঁটা নেমে যাবার পরেও দিন চার-পাঁচ গলা ব্যথা থাকে, ওষুধপত্রেরও প্রয়োজন হয়। রোগী অভিযোগ করতেই পারেন, ডাক্তারবাবু আপনি বলছেন কাঁটা নেই, অথচ গলা ব্যথাটা তো যাচ্ছেনা। তাকে বুঝিয়ে বলতে হবে যে এক্ষেত্রে গলাব্যথার কারণ কাঁটা নয়, কাঁটা বার করার অপচেষ্টা। বাচ্চাদের ক্ষেত্রে কোনও রকম চেষ্টা না করে প্রথমেই বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৭: প্রকৃত শাসক মহারাজ, একটি রাজ্যের আলোয় উত্তরণ

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১১: মশ্যা রে তুঁহু মম শ্যাম-সমান

 

ওষুধ খেলে গলার কাঁটা গলে যায়?

কাঁটা গলিয়ে দেবার ওষুধে অনেকের অগাধ বিশ্বাস। এসব বুজরুকি ছাড়া কিছু নয়। কাঁটা হল আমাদের হাড়ের সমগোত্রীয় জৈব যৌগ, ক্যালশিয়াম কার্বোনেট, ম্যাগনেশিয়াম ফসফেট ইত্যাদির সমাহার। যে ওষুধ কাঁটা গলাবে, সে তো তার আগেই মুখের ভিতরে জিভ-তালু সবকিছুই গলিয়ে দেবে, কারণ সেগুলো তো আরও নরম। ছোট কাঁটা গলায় যদি থেকেও যায়, কিছুদিন বাদে প্রাকৃতিক নিয়মে সাধারণত পচে বার হয়ে আসে। জীবন সংশয়ের কারন হয় না। এই সময়ে প্রতিদিন দিনে দু’বার করে নুন জলে গারগেল করবেন।

কাজেই গলায় কাঁটা ফুটলে অত চিন্তিত হওয়ার কিছু নেই। একটু ধৈর্য ধরুন। হয়তো কাঁটা এমনিই নেমে যাবে। না নামলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। আর একটা সুখের কথা হল, কাঁটা গলায় ফোটে খুব কম, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই গলার খাঁজে পড়ে থাকে, নিজে নিজে দু-একদিনের মধ্যে নেমেও যায়।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮

* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।

আপনার রায়

ইসরোর চন্দ্রযান-৩ কি তৃতীয় বারের এই অভিযানে সাফল্যের স্বাদ পাবে?

Skip to content