সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


স্কেচ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

ময়দার লুচি। খেয়েছেন নিশ্চয়ই। আটার লুচিও খেয়ে থাকতে পারেন। কোনটা ভালো? নিঃসন্দেহে ময়দার লুচি। তাছাড়া বেকারি শিল্পে অর্থাৎ কেক-পেস্ট্রিত, নুডলস, রোল, শিঙাড়া— সব জায়গাতেই আটার কোনও কদর নেই, কদর আছে শুধু ময়দার। এ সব দেখে বা জেনে মনে হতেই পারে, ময়দার কোনও বিকল্প নেই, আটা থেকে ঢের গুণ বেশি পুষ্টিকর ময়দা। কিন্তু সত্যিই কি তাই!

আমরা সবাই জানি আটা পাওয়া যায় গম থেকে আর আটা থেকে আমরা পাই রুটি, যাকে বলে আটার রুটি। এছাড়া ময়দা, বাজরা জোয়ার,যব থেকেও রুটি তৈরি হয়। তবে চলতি কথাই রুটি বলতে আমার আটার রুটিকেই বুঝি।
গমে থাকে চারটি স্তর। একদম ওপরের বা বাইরের স্তরের নাম পেরিকার্প বা ব্রান। মাত্র এক ভাগ জুড়ে থাকা এই স্তরে প্রধানত থাকে সেলুলোজ এবং সামান্য কিছু খনিজ পদার্থ। সেলুলোজ সহজে হজম হয় না। এরপর থাকে প্রোটিন দিয়ে তৈরি খুব পাতলা এলিউরন স্তর। তৃতীয় স্তরটির নাম হল এন্ডোস্পার্ম, যা থাকে ৮৫ শতাংশ জুড়ে। এতে প্রধানত থাকে স্টার্চ জাতীয় কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন। একদম ভেতরের স্তরটির নাম জার্ম বা এমব্রায়ো, যাতে থাকে প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন ই,ও থায়ামিন।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩১: বিড়াল ঘাঁটলেই কি ডিপথেরিয়া হতে পারে?

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-৯: তা বলে কি প্রেম দেব না!

আটা এবং ময়দা দুটোই মেলে গমকে পেশাই করে। দুটোতেই বারো শতাংশ জুড়ে থাকে গ্লুটেন নামে এক ধরনের প্রোটিন, যা হজম করা একটু মুশকিল। যে জন্য পেটের অসুখে রুটি খেতে বারণ করা হয়। তাছাড়া অ্যামাইনো অ্যাসিড লাইসিন গ্লুটেনে কম থাকে, দেহ গঠনের জন্য যা অতি প্রয়োজনীয়। যে জন্য রুটির সঙ্গে ডাল বা দুধ খেতে বলা হয় এই ঘাটতি পূরণের জন্য। বেশি পরিমাণ জল দিয়ে আটা মেখে অল্পক্ষণ রেখে দেবার পর রুটি করলে প্রচুর ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স পাওয়া যায়। ভালো করে মাখার পর একটু লেচি তুলে ফ্রিজে রেখে দিয়ে পরের দিন যখন নতুন করে আটা মাখা হবে,তার সাথে মিশিয়ে নিলেও এই সুবিধা মিলবে।
আরও পড়ুন:

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-৮: সুন্দরবনের নিশ্চিহ্ন প্রাণী

মন্দিরময় উত্তরবঙ্গ, পর্ব-১: ভিতরকুঠি টেরাকোটা শিবমন্দির এক অনন্যসাধারণ কোচ স্থাপত্যশৈলীর উদাহরণ

আটা ও ময়দা যদিও দুটোই গম থেকে পাওয়া যায়, কিন্তু বেশ পার্থক্য আছে দুটোর মধ্যে। ময়দা আটার থেকে দেখতে পরিষ্কার, মিহি এবং সাদা। কিন্তু এতে ভিটামিন বি কমপ্লেক্স, প্রোটিন, আয়রন, ক্যালশিয়াম— আটার চেয়ে কম পরিমাণে থাকে। যে জন্য শুধুমাত্র ময়দা খেলে সায়টিকা-সহ নানা ধরনের স্নায়ু রোগ, অ্যানিমিয়া, বেরিবেরি, মাড়ি থেকে রক্তপাত ইত্যাদি দেখা দিতে পারে।
আরও পড়ুন:

অমর শিল্পী তুমি, পর্ব-১: একটু শুরুর কথা হলে ক্ষতি কী…

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৭০: অন্য বাইশে শ্রাবণ

তবে ফাইটিক অ্যাসিড এবং রাফেজ অর্থাৎ ফাইবার বা আঁশ কম থাকায় ময়দা সহজপাচ্য। কিন্তু দীর্ঘদিন খেলে কোষ্টকাঠিন্যের সম্ভাবনা থাকে। অন্যদিকে আটা কিন্তু ময়দার চেয়ে বেশি পুষ্টিকর। পেটের অসুখ না থাকলে ভুষি-সহ আটার রুটি অর্থাৎ মোটা রুটির লা জবাব! পুষ্টি মিলবে, কোষ্ঠ পরিষ্কার থাকবে। ফাইবার, আঁশ বা ছিবড়ে যুক্ত খাদ্যে থাকে পেকটিন, সেলুলোজ, লিগনিন জাতীয় এমন কয়েকটি উপাদান—যারা নিজেরা সরাসরি হজম হয় না, অথচ দেহের নানা দূষিত এবং ব্রজ্য পদার্থের সঙ্গে যুক্ত হয়ে মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে। নিজেদের আয়তনের আট গুণ জলীয় পদার্থ শোষণ করতে পারে এরা। তাই মলের পরিমাণ বাড়ে, কোষ্টকাঠিন্য হয় না।
আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-৫: রাজবাড়ি এবং অভিনব বিবাহপর্ব

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-৬: গার্হস্থ্য জীবনের প্রারম্ভে ভৈরবী ব্রাহ্মণীর আগমন

নিয়মিত আঁশযুক্ত খাবার অর্থাৎ মোটা চালের ভাত, অল্প ভূষিযুক্ত আটা, খোসা-সহ ফল এবং শাকসবজি খেলে অর্শ, ভগন্দর হার্নিয়া, অন্ত্রনালী এবং পাকস্থলীর ক্যানসার শত হস্ত দূরে থাকবে। নিয়মিত ফাস্টফুড যারা খান অর্থাৎ ময়দা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন খাবার খান, তারা এদিকে একটু খেয়াল রাখবেন।

শেষ কথা হল, ময়দা দিয়ে তৈরি খাবার মাঝেমধ্যে আপনি খেতেই পারেন, কিন্তু নিয়মিত নয়। নিয়মিত খাবেন আটার রুটি।
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।

আপনার রায়

ইসরোর চন্দ্রযান-৩ কি তৃতীয় বারের এই অভিযানে সাফল্যের স্বাদ পাবে?

Skip to content