স্কেচ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।
এখনও জমিয়ে শীত পড়ল না, কিন্তু দই খাওয়ার উপর বিধি নিষেধ ইতিমধ্যেই আরোপিত হয়েছে অনেক পরিবারেই। শীতকালে দই কিংবা কলা—আঁতকে ওঠেন অনেকেই। ওগুলো খেলে তো ঠান্ডা লাগবে, হাঁচি-কাশি বাড়বে। কিন্তু সত্যিই কি তাই!
দুধ থেকে যে দই তৈরি হয়, এটা আমরা সবাই জানি। অল্প গরম দুধে কিছুটা দই দিয়ে রেখে দেওয়া হয়। এই ‘কিছুটা দই’কে বলে সাজা, বীজ বা সিডিং। অনেকে বলেন দম্বল। এতে থাকে দেহের পক্ষে অতি প্রয়োজনীয় জীবাণু ল্যাকটোব্যাসিলাস অ্যাসিডোফিলাস, যার কাজ দুধের চিনি বা ল্যাকটোজকে ল্যাকটিক অ্যাসিডে পরিণত করা। আমাদের অন্ত্রনালীতেও থাকে এই ল্যাকটোব্যাসিলাস। দইয়ের ল্যাকটোব্যাসিলাসের সঙ্গে মিলেমিশে এরা—
● অন্ত্রনালীতে ক্ষতিকর জীবাণু বৃদ্ধি বন্ধ করে।
● কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে।
● খাদ্যের পচন রোধ করে।*মাছ মাংসের জটিল প্রোটিন ভেঙে তাকে সরল করে, ফলে সহজেই সেটা হজম করা যায়।
● অন্ত্রনালীতে বি গ্রুপের ভিটামিন তৈরি করে।
শ্বেতসার জাতীয় খাদ্য পরিপাকে দইয়ের ল্যাকটোব্যাসিলাসের কোনও বিকল্প নেই। আর সেই জন্যই যে কোনও অনুষ্ঠানে ভুরিভোজের পর শেষ পাতে দই রাখা হয়। দইয়ের গুণপনার তো শেষ নেই। যেজন্য জাতীয় পুষ্টি সংস্থা শিশুদের রোজ দু’শো গ্রাম এবং পূর্ণবয়স্কদের রোজ চারশ গ্রাম দই খাবার সুপারিশ করেছেন। যদিও আমরা বাঙালিরা খুব একটা দই খেতে ভালোবাসি না, খেলেও মিষ্টি লাল দইই আমাদের পছন্দ, কিন্তু দক্ষিণ ভারতীয়দের খাবারের পাতে প্রতিদিন টক দই থাকে। দক্ষিণ ভারত প্রচন্ড গরমের দেশ, ভাজাভুজি এবং নারকেল তেলের রান্নার খুব চল, কিন্তু শেষ পাতে দই থাকায় সবকিছু সহজেই হজম হয়ে যায়।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪৬: বুকে ব্যথা মানেই কি গ্যাসের ব্যথা? হার্ট অ্যাটাকের উপসর্গ না কি গ্যাসের ব্যথা, বুঝবেন কী ভাবে?
আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-২১: শ্রীমার ঠাকুরের প্রতি যত্ন
দই আমাদের শরীরের উত্তাপ নিয়ন্ত্রণ করে, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, দইয়ের ক্যালশিয়াম ও ফসফরাস শিশুদের মস্তিষ্কে এবং হাড়ের গঠনে সাহায্য করে। ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায় দই। মুখের ভেতরের স্বাস্থ্য বা ওরাল হাইজিন ঠিক রাখে। নিয়মিত যারা প্রতিদিন অন্তত এক-দেড়শ গ্রাম টক দই বা সাদা দই খান, তাদের কখনও মুখের ভিতর কোনও ঘা হয় না। এছাড়া পেটের নানা গন্ডগোলে, কিডনির গন্ডগোলে, রক্তাল্পতায়, এমনকি ক্যানসার প্রতিরোধে দইয়ের ভূমিকা রয়েছে। তবে দইয়ের যে এত গুণপনার কথা বলছি,সেটা কেবল মাত্র টক দই বা সাদা দইয়ের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য, বাজারি লাল মিষ্টি দইয়ে নয়।
শীতকালে কিংবা রাতের দিকে অনেকেই দই খান না, পাছে ঠান্ডা লাগে। শুধু দই কেন, অনেকে কলাও খান না। এই ভয় নিতান্তই অমূলক। ফ্রিজ ঠান্ডা দই খেলে নিশ্চয়ই ঠান্ডা লাগতে পারে। সেজন্য দইকে ভিলেন বানিয়ে লাভ কি! যে কোনও ঠান্ডা জিনিস খেলেই তো হঠাৎ করে তাপমাত্রার পরিবর্তনের জন্য ঠান্ডা লাগতে পারে। এজন্য দই বা কলা দায়ী নয়, দায়ী তার ঠান্ডাটা অর্থাৎ কম তাপমাত্রা। ফ্রিজ থেকে বার করে অন্তত এক ঘন্টা বাইরে রেখে খেলে ভয়ের কিছু নেই। তবে যাদের দইয়ে অ্যালার্জি আছে, অর্থাৎ দই খেলে কাশি হয়, গলা খুসখুস করে, বা দেহে অন্য কোনও অস্বস্তি হয়–একমাত্র তারাই দই খাবেন না।
আরও পড়ুন:
চলো যাই ঘুরে আসি, অন্নপূর্ণা বেস ক্যাম্পের পথে, পর্ব-১: টি-হাউসের সামনের পাহাড়ের শৃঙ্গ-রা যেন রঙের উৎসবে মেতে উঠেছে
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২২: ওরে মোর শিশু ভোলানাথ!
অনেকে ভাবেন, দই ছেলে অ্যাসিড হয়, মাংস খাবার পর দই খেলে বদ হজম হয়। সবগুলোই ভুল ধারণা। উল্টে দই খেলে অ্যাসিড কমে, মাংসের মতো গুরুপাক প্রোটিন হজম করতে সুবিধা হয়। তবে দেখতে হবে দইটা যেন ভেজাল না হয়। এজন্য ঘরেপাতা টক দইই আদর্শ খাদ্য হওয়া উচিত। উপায় না থাকলে বাজার থেকে টক দই বা সাদা দই কিনে নেবেন, লাল মিষ্টি দই নয়। তবে মাসে একদিন নিশ্চয়ই লাল মিষ্টি দই খেতে পারেন। শেষ কথা হল, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা—টক দই আপনার একমাত্র ভরসা।
যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮
যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।