অলঙ্করণ: গৌতম চক্রবর্তী।
মূল আলোচনায় যাবার আগে একটু চুল কাহিনি বর্ণনা করে নেই। চুল আমাদের দেহত্বকেরই অংশ বিশেষ শুধু নয়, চুল হল দেহত্বকের মরা কোষ, জন্ম যার মাতৃগর্ভেই। ভ্রুণের বয়স যখন মাত্র তিন সপ্তাহ, তখনই তার ত্বকের উপরের স্তর এপিডার্মিসে কিছু কোষ একত্রিত হতে থাকে। এদের ধরনধারণ একই রকম। এই কোষগুলোই হল চুলের কুঁড়ি। এরা এরপর ত্বকের ভেতরের স্তর ডার্মিসে আশ্রয় নেয়। এখান থেকেই শুরু হয় চুল তৈরির কাজ। কাজেই মাতৃগর্ভে তিন থেকে চার সপ্তাহের মধ্যেই চুল উৎপাদন শুরু হয়ে যায়, ৩৬ থেকে ৪০ সপ্তাহের মধ্যে যা পূর্ণতা পায়, শুরু হয় স্বাভাবিক চুল তৈরি।
চুলের মূল বা রুট থাকে ত্বকের নিচের কেশ কুপ বা হেয়ার ফলিকলে। একে চুলের কুঁড়িও বলা হয়। চুলের কাণ্ড বা শ্যাফট থাকে বাইরে। এই অংশটিকেই আমরা খালি চোখে দেখি। চুলের বাইরের আবরণের নাম কিউটিকল, ভেতরে থাকে কর্টেক্স, তার ভিতর মেডুলা। মাথার চুলে অবশ্য মেডুলা থাকে না। কর্টেক্সে থাকে রঞ্জক পদার্থ মেলানিন, যার পরিমাণের উপর চুল কতটা কালো হবে তা নির্ভর করে। চুলের কুঁড়ির নিচে থাকে কিছু সজীব কোষ বা হেয়ার ম্যাট্রিক্স। এই ম্যাট্রিক্সকে আবার নিয়ন্ত্রণ করে বংশগতি এবং নানা ধরনের হরমোন।
সৌন্দর্য বৃদ্ধি ছাড়াও নানা কাজ করে আমাদের চুল। দেহের সঙ্গে বাইরের তাপমাত্রার তারতম্য নিয়ন্ত্রণ করে। রোদের তাপ ও নানা ক্ষতিকর বিকিরণ থেকে দেহকে রক্ষা করে। স্পর্শেন্দ্রিয়র কাজ করে। রোগ জীবাণুর আক্রমণ ঠেকায়। ধোঁয়া ধুলোর ক্ষতিকর প্রভাব থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা করে দেহের বিভিন্ন অংশের চুল। কাজেই চালচুলোহীনদের মত না-চুলোদের অবস্থা কেমন হয়, একবার নিজের টাকে হাত দিয়ে ভাবুন।
ব্যাপারটা কিন্তু সত্যি। রোজই আমাদের ৫০ থেকে ১০০টা চুল এমনি এমনিই পড়ে যায়। কারণ চুলের একটা নিজস্ব জীবনচক্র আছে। জন্মাবার পর থেকে বছর ৩-৪, তার বারবাড়ন্ত অবস্থা। একে বলে অ্যানাজেন পর্ব। এরপর সপ্তাহ তিনেক ধরে বুড়িয়ে যাওয়ার পর্ব, যাকে বলে ক্যাটাজেন পর্ব। শেষ পর্বে ৩-৪ মাস ধরে শুধুই বিশ্রাম, যার নাম টেলোজেন পর্ব। এই সময় পুরনো চুল নড়বড়ে হতে থাকে। নতুন চুল যা ধীরে ধীরে ম্যাট্রিক্সে বেড়ে উঠছিল, একদিন হঠাৎ মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে পুরনোটার ঘাড় মটকে দেয়। কাজেই চুল পড়ে সবারই। মাথার একলাখ চুলের মধ্যে ৫০-১০০ টা পড়ে গেলে কিইবা আসে যায়! এ যেন বিশাল এক সমুদ্র থেকে এক ঘটি জল তুলে ফেলা।
কিন্তু যদি প্রতিদিন একশো-দুশো ছাড়িয়ে গোছা গোছা চুল পড়তে থাকে, টনক নড়ে সবারই। শ্যাম্পু, হেয়ার টনিক, ভাইটালাইজার, টোটকা-টাটকি — চুল পড়া আটকাতে কিছুই মাথায় মাখতে বাকি রাখি না আমরা! কিন্তু এত করেও কি তাকে ধরে রাখা যায়! রোজ গড়ে ৫০-১০০টা করে চুল পড়লে, বছরে প্রায় ত্রিশ হাজার চুল আমাদের মাথা থেকে ঝরে যায়। চুল যেমন পড়ে, তেমনি প্রতিনিয়ত কুঁড়ি থেকে গজায়ও। এই পড়া আর গজাবার মধ্যে সাযুজ্য না থাকলেই যত গন্ডগোল।
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২৪: মাথায় চোট মানেই কি ইন্টারনাল হেমারেজ?
এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১: সুন্দরবনের শেকড়ের খোঁজে
দায়ী যখন হরমোন
বাচ্চা হওয়ার পর তিন-চার মাস মায়েদের খুব চুল পড়তে দেখা যায়। এর নেপথ্য থাকে একটি হরমোনের বাড়া-কমা। হরমোনটির নাম ইস্ট্রোজেন। এই হরমোনটি চুলের কুঁড়ি অর্থাৎ হেয়ার ফলিকলের কাজ কমিয়ে দেয় গর্ভাবস্থায়। ফলে অ্যানাজেন হয়ে ক্যাটাজেন পৌঁছতে দেরি হয়ে যায় চুলের। আবার টেলোজেন দশায় পৌঁছে গেছে যে চুল, তাকেও পড়তে বাধা দেয় ইস্ট্রোজেন। এক লাখ চুলের মধ্যে মাত্র ১৫ শতাংশ টেলোজেন কুঁড়ি পাওয়া যায় স্বাভাবিক অবস্থায়। গর্ভাবস্থার শেষে বেশি পরিমাণ ইস্ট্রোজেন হরমোন এটাকে টেনে নামে পাঁচ শতাংশে। এভাবেই পতন দশা বিলম্বিত হওয়ায় বা কমে যাওয়ায়, চুল পড়ে খুবই কম।
কিন্তু সন্তান জন্ম দেবার পর ইস্ট্রোজেন হরমোনের পরিমাণ রক্তে কমে যাওয়াতে পুরো ছকটাই যায় উল্টে। খুব চটপট অ্যানাজেন কুঁড়ি চলে যায় টেলোজেন দশায়। চুল পড়তে থাকে গোছা গোছা। তিন চার মাসের মধ্যেই এই পতন পর্ব শেষ হয়ে যায়। উঠতে থাকে নতুন চুল।
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৯: পথের প্রান্তে রয়ে গিয়েছে সে হাজার তারার ‘লক্ষহীরা’
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১৬: ‘ও হানসিনি, মেরি হানসিনি কাঁহা উড় চলি’—কিশোর-পঞ্চম ম্যাজিক চলছেই
অপুষ্টির জন্য
থাইরয়েডের অসুখ
অসুখ বিসুখ
বংশগত কারণ
হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-২: রথ দেখো কলা বেচো
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-২৪: সতী ও অসতী মাঝে পিতৃতন্ত্র
মানসিক দুশ্চিন্তা
ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
হঠাৎ করে
অ্যালোপেসিয়া এরিয়েটা
তাহলে বুঝলেন তো, চুল এমনি এমনিই পড়তে পারে, আবার নানা কারণেই পড়তে পারে। হীনমন্যতায় ভুগবেন না। টোটকা টাটকা না করে সঠিক সময় ডাক্তারের পরামর্শ নেবেন।