অলঙ্করণ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।
পক্স বা বসন্ত রোগের চলতি নাম হল মায়ের দয়া। কানা ছেলের এমন পদ্মলোচন নাম কে দিল জানি না। তবে সারা গায়ে গুটি, অস্বস্তিকর চুলকুনি, আর দিন দশেক গৃহবন্দি হয়ে থাকার মধ্যে আর যাই থাক, মায়ের স্নেহ বা দয়া বর্ষণের যে কোনও প্রমাণ নেই, এ ব্যাপারে সবাই নিশ্চয়ই আমার সঙ্গে একমত হবেন।
দুই ধরনের পক্সের সঙ্গে আমরা পরিচিত। স্মল পক্স বা গুটি বসন্ত এবং চিকেন পক্স বা জল বসন্ত। গুটি বসন্ত একসময় বহু মানুষের প্রাণ নিয়েছে। যারা বেঁচে গিয়েছেন, তাদের মুখে বিচ্ছিরি ক্ষতচিহ্ন রয়ে গিয়েছে। অনেকের দৃষ্টি শক্তি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রতিষেধক টিকার কল্যাণে গুটি বসন্ত আজ পৃথিবী ছাড়া। কাজেই আমাদের আলোচনা আজ জল বসন্তকে নিয়েই।
দুই ধরনের পক্সের সঙ্গে আমরা পরিচিত। স্মল পক্স বা গুটি বসন্ত এবং চিকেন পক্স বা জল বসন্ত। গুটি বসন্ত একসময় বহু মানুষের প্রাণ নিয়েছে। যারা বেঁচে গিয়েছেন, তাদের মুখে বিচ্ছিরি ক্ষতচিহ্ন রয়ে গিয়েছে। অনেকের দৃষ্টি শক্তি পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গিয়েছে। প্রতিষেধক টিকার কল্যাণে গুটি বসন্ত আজ পৃথিবী ছাড়া। কাজেই আমাদের আলোচনা আজ জল বসন্তকে নিয়েই।
জল বসন্তের নেপথ্যে রয়েছে এক ধরনের ভাইরাস, যা হারপিস জষ্টার ভাইরাসের সমগোত্রীয়। এ রোগ বড় ছোঁয়াচে। যার হয়েছে তার হাঁচি-কাশি থেকে এই ভাইরাস আর একজনকে আক্রমণ করে। দেহে গুটি বার হওয়ার দিন চারেক আগে থেকে বার হবার ৫-৬ দিন পর্যন্ত রোগ ছড়াবার সম্ভাবনা সব থেকে বেশি থাকে। গুটি শুকিয়ে যে খোসা হয়, তা থেকে রোগ ছড়ায় না, কিন্তু গুটি বসন্তর বেলায় খোসা থেকে রোগ ছড়াত। তাই খোসা আলাদা করে রেখে পুড়িয়ে ফেলতে বলা হত। জলবসন্তে সে ভয় নেই।
আরও পড়ুন:
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৪: আপনি কি খেয়ে উঠেই শুয়ে পড়বেন? জানেন কী হচ্ছে এর ফলে
স্বাদে-গন্ধে: মিষ্টি কিছু খেতে ইচ্ছে করছে? বাড়িতে ঝটপট বানিয়ে ফেলুন জিভে জল আনা ক্ষীর মাধুরী
সাধারণত ১০ বছরের কম বয়সি বাচ্চাদের এই রোগ হয়। রোগ শুরুর আগে বাচ্চাকে অসুস্থ দেখায়। জ্বর হয়, গা হাত পা ম্যাজম্যাজ করে, চোখ লাল হয়। এককথায় ইনফ্লুয়েঞ্জার সব রকম উপসর্গই দেখা দেয়। দু-একদিনের মধ্যেই র্যা শ বার হয়ে যায়। একবার বার হতে শুরু করলে, চার পাঁচ দিনের মধ্যেই সব বার হয়ে যায়। প্রথমে ছোট ফুসকুড়ির মতো ওঠে, যার চারপাশ লালাভ, মধ্যটা স্বচ্ছ, পরিষ্কার জলের মতো দেখা যায়। ধীরে ধীরে অস্বচ্ছ হয়ে গুটির আকার নেয়। গুটি বার হয় প্রধানত বুক, পিঠ ও মুখে। মাথার দিকে কম বার হয়। এক ঝাঁক উঠতে না উঠতেই আর এক ঝাঁক ওঠে। এ ভাবে দিন পাঁচেকের মধ্যে সব র্যা শ বার হয়ে যায়। র্যা শ ওঠার দিন থেকে ৫-৭ দিন পর খোসা ওঠা শুরু হয়।
আরও পড়ুন:
রহস্য রোমাঞ্চের আলাস্কা, পর্ব-৪: ভাবলাম এ যাত্রায় কোনও রকমে বাঁচা গেল, কিন্তু এতো সবে সন্ধ্যে! রাত তখনও অনেক বাকি…
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২২: স্বপ্নের সারথি পাঠিয়েছেন ‘বকুল’ ফুল
অন্যান্য ভাইরাস ঘটিত রোগের মতো চিকেন পক্সেরও সরাসরি কোনও চিকিৎসা নেই। তবে প্রতিষেধক অ্যান্টিভাইরাস দেওয়া হয়ে থাকে। ওষুধ দেওয়া হয় উপসর্গ অনুযায়ী। প্যারাসিটামল, অ্যান্টিবায়োটিক, কাফ সিরাপ, পেইন কিলার ইত্যাদি। রোগীর মাথা রোজ ভালো করে ধুয়ে দিতে হবে। গা স্পঞ্জ সাবধানে করানো যেতে পারে। তবে র্যা শ যাতে গলে না যায়, সে বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে। গলা ব্যথা হলে নুন জলে গার্গেল এবং চোখ লাল হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চোখের ড্রপ দিতে হবে।
আরও পড়ুন:
সুস্থ থাকুন, ভালো থাকুন, ডায়াবিটিস বাগে আনতে কোন প্রোটিন খেতেই হবে, আর কী কী এড়াতেই হবে?
ডায়েট ফটাফট: সানস্ক্রিন মাখবেন তো বটেই, এবার খেয়েও দেখুন—সিঙ্গল ইনভেস্টমেন্টে ডবল প্রফিট!
অনেক বাড়িতেই কারও চিকেন পক্স হলে মাছ, মাংস, ডিম খাওয়া বন্ধ করে সবাই নিরামিষ আহার শুরু করেন। নিমপাতা, উচ্ছে ইত্যাদি তেতো খাবার বেশি করে খাওয়া শুরু হয়। এসব অভ্যাসের কোনও বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। মাছ, মাংস, ডিম পুষ্টিকর খাবার। খাদ্য তালিকায় এদের অবশ্যই রাখতে হবে। অনেকে ঠান্ডা খাবার এই সময় বেশি পছন্দ করেন, পাছে শরীর গরম না হয়ে যায়! গরম খাবার খেলে শরীর গরম হয়, এ ধারণাও সম্পূর্ণ ভুল।
এ সময় সহজপাচ্য, সুসেদ্ধ খাবার খেতে হবে। প্রোটিন তো খেতেই হবে শরীরের ক্ষয় পূরণের জন্য। র্যা শ তাড়াতাড়ি বার হওয়ার জন্য অনেকে মেথির জল ভিজিয়ে খান। এটাও সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। র্যা শ নিজের মেজাজমর্জিতেই বেরোবে। এটা সেটা খাইয়ে তাকে তাড়াতাড়ি বার করা যায় না। খোসা পড়ে গেলে চামড়ায় যে দাগ হয়, তা কয়েক মাস বাদে এমনিতেই মিলিয়ে যায়। জায়গাটা খুঁটবেন না, চুলকোবেন না, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কিছু লাগাবেন না।
এ সময় সহজপাচ্য, সুসেদ্ধ খাবার খেতে হবে। প্রোটিন তো খেতেই হবে শরীরের ক্ষয় পূরণের জন্য। র্যা শ তাড়াতাড়ি বার হওয়ার জন্য অনেকে মেথির জল ভিজিয়ে খান। এটাও সম্পূর্ণ অবৈজ্ঞানিক। র্যা শ নিজের মেজাজমর্জিতেই বেরোবে। এটা সেটা খাইয়ে তাকে তাড়াতাড়ি বার করা যায় না। খোসা পড়ে গেলে চামড়ায় যে দাগ হয়, তা কয়েক মাস বাদে এমনিতেই মিলিয়ে যায়। জায়গাটা খুঁটবেন না, চুলকোবেন না, ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কিছু লাগাবেন না।
আরও পড়ুন:
গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫০: লুকোনো বই পড়ার জন্য রবীন্দ্রনাথ বাক্সের চাবি চুরি করেছিলেন
অনন্ত এক পথ পরিক্রমা, পর্ব-৫: ভক্তের আন্তরিকতা ও প্রার্থনা, ভগবানকে রেশম সুতোয় বেঁধে রাখে
মা শীতলার দয়ায় নাকি বসন্ত হয়! তাই এর নাম মায়ের দয়া। প্রচলিত লোককথা বলে, মা শীতলার বাহন গাধার নাকি বসন্ত হয় না, তাই বসন্তের প্রতিষেধক হিসেবে প্রাচীন বৈদ্যরা কারও বাড়িতে বসন্ত হলে, সে বাড়ির সকলকে এক চামচ করে গাধার দুধ পানের বিধান দিতেন। কিংবা গাধার দুধে চাল ভিজিয়ে খাবার পরামর্শ দিতেন। বসন্তের ক্ষতস্থানেও গাধার দুধ দিয়ে ধুয়ে দেবার জন্য বলা হতো। এই লোক কথা যদি বিশ্বাসযোগ্য হয়। তবে বসন্তকে মায়ের দয়া না বলে গাধার দয়া বলাই বোধয় ভালো। অবশ্য এতে যদি কারও আত্মসম্মানে আঘাত না লাগে।
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।