সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


স্কেচ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়।

চল্লিশ বছর বয়স হল আমাদের জীবনের এক সন্ধিক্ষণ। যৌবন বিদায় নেয়, উঁকি দেয় প্রৌঢ়ত্ব। স্পর্ধায় মাথা তোলে নানা রোগ। খাওয়া-দাওয়ার ব্যাপারে সচেতন না হলেই বিপদ! আমিষ বা নিরামিষ, যে খাদ্যই হোক না কেন, তা যেন পুষ্টিকর এবং দেহের পক্ষে নিরাপদ হয়। এই বয়সে এলে নিরামিষ খেতেই হবে, এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয়নি! আসলে আমরা কি খাই, কেন খাই, বয়স অনুযায়ী এবং কর্মক্ষমতা অনুযায়ী প্রতিদিন আমাদের কত ক্যালরি খাদ্য গ্রহণ করা উচিত— এ সব ব্যাপারে কেউই চিন্তিত নই।
আমরা সারাদিন যা খাই তার মূল উপাদান—কার্বোহাইড্রেট, প্রোটিন, ফ্যাট, ভিটামিন, বিভিন্ন খনিজ লবণ ও জল। বয়স অনুযায়ী নির্দিষ্ট মাত্রায় এগুলো দেহের জন্য প্রয়োজন। একজন মধ্য বয়স্কর প্রতিদিন ৩০০ থেকে ৪০০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ৫০ থেকে ৬০ গ্রাম প্রোটিন, ৩০ থেকে ৪০ গ্রাম ফ্যাট প্রয়োজন। শক্তি প্রয়োজন কমপক্ষে ১৯০০ ক্যালোরি। মহিলাদের গর্ভাবস্থায় এবং সন্তান জন্ম দেবার পরে আরেকটু বেশি ক্যালরি দরকার। যারা খুব কায়িক পরিশ্রম করেন, তাদেরও শক্তির প্রয়োজন বেশি।
আরও পড়ুন:

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-৩৭: নাক বন্ধ হলেই নাকের ড্রপ? এতে শরীরে কোনও ক্ষতি হচ্ছে না তো?

কলকাতার পথ-হেঁশেল, পর্ব-৬: অ্যালেন, দেখলেন, খেলেন

প্রোটিন সমৃদ্ধ খাদ্যের কথা ভাবতেই আমাদের মনে পড়ে ডিম দুধ মাছ-মাংসের কথা। এটা প্রত্যেকই প্রাণীজ প্রোটিন। এগুলোতে প্রচুর পরিমাণে কোলেস্টেরল থাকে। চল্লিশের পর রক্তনালীতে জমে গিয়ে যা বিপত্তি ঘটাতে পারে। কাজেই খাদ্য তালিকায় এদের কমিয়ে উদ্ভিজ প্রোটিন রাখলে মন্দ কি! যেমন ডাল, গম, সয়াবিন। এদের মধ্যে প্রোটিনের পরিমাণ ডিম দুধ থেকে অনেক বেশি, অথচ ক্ষতিকর কোলেস্টেরল নেই। দমেও প্রাণিজ প্রোটিনের থেকে সস্তা, প্রচুর শক্তিও পাওয়া যায়।
আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৪৮: খেলার ছলে এসেছিনু যেথা ‘হারজিৎ’-র পর্ব রাখিনু সেথা

হুঁকোমুখোর চিত্রকলা, পর্ব-১৫: আর যাহা খায় লোকে স্বদেশে ও বিদেশে / খুঁজে পেতে আনি খেতে-নয় বড় সিধে সে!…

ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাদ্য ৪০-এর পর অবশ্যই কম খেতে হবে। প্রাণিজ চর্বি যেমন ঘি, মাখন, মাছের তেল সপ্তাহে একদিনের বেশি নয়। উদ্ভিজ চর্বি ও তেল অনেক নিরাপদ, কারণ এতে কোলেস্টেরল থাকে না। তেলের ব্যাপারেও সতর্ক থাকবেন। বেশি তেল, ভাজাভুজি, রিচ খাবার খাওয়া মানেই শরীরে বেশি করে ফ্যাটকে ঢোকানো। এর ফলে ডায়াবেটিস, প্রেসার, হার্ট ব্লক, রক্তনালীর অসুখ, সেরিব্রাল, গলব্লাডারের সমস্যা ইত্যাদি হতে পারে।

কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য আমরা সবথেকে বেশি খাই। প্রয়োজনীয় শক্তির ষাট-সত্তর ভাগ এর থেকেই আসে। চাল, গম, ডাল, আলু, শাকসব্জি, চিনি, গুড়—সবেতেই এর ছড়াছড়ি। চল্লিশের পর থেকে আলু জাতীয় খাদ্য, মিষ্টি মন্ডা কম খেতে হবে। শাকসব্জি তরি-তরকারি ফলমূল বেশি করে খাবেন।
আরও পড়ুন:

পরিযায়ী মন, পর্ব-৬: বৈতরণীর পারে…

এই দেশ এই মাটি, সুন্দরবনের বারোমাস্যা, পর্ব-১৪: সুন্দরবনের মৎস্যদেবতা মাকাল

ভিটামিন ও খনিজ পদার্থের জন্য অনেকে নামিদামি কোম্পানির টনিক বোতল বোতল খান। এই অভ্যাস ছাড়ুন। সবুজ শাকসব্জি খান। ডাল খান রোজ একবাটি করে। আপেল, আঙুর ছাড়াও অন্যান্য মরসুমি ফল খান। যেমন কলা, পেয়ারা, মুসম্বি। ভিটামিন-এ বেশি পাওয়া যায় আম, পেঁপে, কমলা ও কলাতে। ভিটামিন-সি আমলকি, পেয়ারা ও কমলাতে। ক্যালশিয়াম পাবেন দুধ, কলা, শাকসব্জি ও মাছে।
আরও পড়ুন:

ইতিহাস কথা কও, কোচবিহারের রাজকাহিনি, পর্ব-১১: দেব-দেউল কথা ও মদনমোহন মন্দির

আলোকের ঝর্ণাধারায়, পর্ব-১২: জয়রামবাটিতে প্রত্যাবর্তন

চল্লিশের ঘরে পা দেওয়া মানে কোলেস্টেরল থেকে সাবধান! কোলেস্টেরল বেশি থাকে ডিম, (প্রতিটিতে প্রায় ২৪০ মিলিগ্রাম) মেটে, মিষ্টি পাউরুটি, মাখন, চিংড়ি, মুরগির মাংসের লাল অংশ ও পাঁঠার মাংসে। থাকে না সব্জি, ভাত, রুটি ও উদ্ভিজ তেলে। এতসব জানার পরে নিজেই নিজের জন্য একটা খাদ্য তালিকা মনে মনে তৈরি করে নিন। নিরামিষ রোজ খেতেই হবে, এমন মাথার দিব্যি কেউ দেয়নি। তবে খেলে মন্দ কি! পয়সা বাঁচে, পুষ্টিও হয়। সপ্তাহে একদিন না হয় মাছ কিংবা মুরগির মাংস খেলেন।

তবে হ্যাঁ, বেশি মিষ্টি, নুন, তেল, ঘি, মাখন, মাছের ছাল, ডিম, পাকা মাছ, ভাজাভুজি, মাংস খাবেন না। আর একটা কথা, ৪০-এর পর খানাপিনার সঙ্গে একটু শরীরচর্চাও যে করতে হবে, তাহলে দীর্ঘদিন সুস্থ থাকায় কোনও অসুবিধা হবে না।

যোগাযোগ: ৯৮৩০২১৭৯২৮
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।

Skip to content