![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/05/health.jpg)
অলঙ্করণ: গৌতম চট্টোপাধ্যায়
ক্যানসার। চার অক্ষরের একটি ভয়ংকর শব্দ। শুনলেই সারা শরীর জুড়ে আতঙ্কর চোরা স্রোত বয়ে যায়। কারণ এর সঙ্গে যে মৃত্যু সমার্থক হয়ে গিয়েছে! আমরা ধরেই নেই, কেউ ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়া মানেই তার ভবলীলা সাঙ্গ। এবার তাকে কষ্ট পেতে পেতে মৃত্যুর দিকে এগোতে হবে। কিন্তু আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল প্রমাণ করেছে। আপনার চারপাশেই তাকিয়ে দেখুন না, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব কিংবা সেলিব্রেটিদের মধ্যে! ক্যানসার নিয়ে বহু মানুষ দিব্যি বেঁচে আছেন। কিংবা ক্যানসরকে সম্পূর্ণ জয় করে সুস্থ জীবন যাপন করছেন। আসলে এই রোগটির সম্বন্ধে আমাদের সঠিক কোনও বিজ্ঞানসম্মত ধারণা গড়ে না ওঠার জন্যই আমরা এত আতঙ্কে ভুগি।
প্রথমে জেনে নিই কাকে বলে ক্যানসার। আমরা সবাই জানি, আমাদের এই দেহ অসংখ্য কোষ দিয়ে তৈরি। ক্যানসার হল, এই দেহকোষের অস্বাভাবিক, অনিয়ন্ত্রিত এবং ক্ষতিকর বৃদ্ধি। আমাদের দেহকোষ একটি ছন্দে বাড়ে, একটা সময় পর এই বৃদ্ধি বন্ধ হয়ে যায়, কোষের ক্ষয় হতে শুরু করে। এই বৃদ্ধির মধ্যে একটা শৃঙ্খলা আছে। কিন্তু কোনও কোষ ক্যানসারে আক্রান্ত হলে খুব দ্রুত বাড়তে থাকে। তার ফলে দেখা যায় দেহের কোনও জায়গায় একটা বিরাট ঘা। কিংবা ফোলা অংশ অর্থাৎ টিউমার। কোথাও বা রক্তপাত ইত্যাদি। এবং এই বৃদ্ধির কোনও নিয়ন্ত্রণ থাকে না। একইসঙ্গে এই বৃদ্ধি ক্ষতিকরও বটে। একটা উদাহরণ দিয়ে বোঝাই। খেয়াল করে দেখবেন কারও হয়তো গলার সামনে একটা ফোলা অংশ রয়েছে, হতে পারে থাইরয়েডের ফোলা এবং সেটা দীর্ঘদিন ধরে একই রকম রয়েছে। কারও দেখবেন, পিঠে ছোট ছোট টিউমার রয়েছে (নিউরোফাইব্রোমা), যেগুলো কিন্তু দীর্ঘদিন একই রকম রয়েছে, কোনও ক্ষতিও করছে না। কিন্তু যদি এই ফোলাটা ক্যানসারের ফোলা হত, অর্থাৎ ক্যানসার টিউমার হত, তাহলে কিন্তু ভয়ঙ্কর ভাবে বেড়ে গিয়ে আশেপাশের অংশেরও ক্ষতি করত।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/05/Health-Sleep.jpg)
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-২০: শোওয়ার বালিশ বিছানা কেমন হবে? শক্ত না নরম?
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/05/pisach-1.jpg)
রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১৫: আর্য কোথায়?
আসলে ক্যানসার হল বহুরূপী অর্থাৎ একটি বা দুটি উপসর্গ নয়, নানা ধরনের উপসর্গ নিয়ে আপনার শরীরে হাজির হতে পারে। আরেকটা অসুবিধা হল, এই উপসর্গগুলো সাধারণ রোগেও থাকতে পারে। ফলে বোঝা খুব মুশকিল যে এগুলো ক্যানসার জনিত উপসর্গ, নাকি ক্যানসার ছাড়া অন্য রোগের উপসর্গ। এজন্য বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কয়েকটি উপসর্গের কথা বলেছে, যে উপসর্গগুলো যদি দু’সপ্তাহের বেশি শরীরে থাকে, তাহলে অবশ্যই কোনও শিক্ষিত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
● পুরনো ঘা যা সারতে চায় না।
● পুরনো কাশি বা ভাঙা গলার স্বর।
● বদ হজম বা গিলতে কষ্ট হওয়া।
● তিলের বা আঁচিলের হঠাৎ পরিবর্তন।
● স্তন বা দেহের অন্য কোথাও গুটলি বা দলা।
● মলমূত্র ত্যাগের অভ্যাসের হঠাৎ পরিবর্তন।
● অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ বা স্রাব।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/05/Panchatantra-1.jpg)
পঞ্চতন্ত্র: রাজনীতি-কূটনীতি, পর্ব-৬: টাকা-পয়সা খরচ করে পরিদর্শনের লোক রাখলেও, নিজে পর্যবেক্ষণ না করলে সবকিছুই বিনষ্ট হয়
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/05/Kishore-RD-Burman.jpg)
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১২: হঠাৎ স্নানঘর থেকে পঞ্চমের চিৎকার ‘মিল গয়া মিল গয়া’, সৃষ্টি হল সেই জনপ্রিয় গান ‘মুসাফির হুঁ ইয়ারো’
এইসব উপসর্গ থাকলেই তার ক্যানসার হয়েছে এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। যেমন ধরা যাক কারও হঠাৎ গলা ভেঙে গেছে। অনেক কারণেই গলা ভাঙতে পারে। ঠান্ডা লাগলে বা বেশি চেঁচামেচি করলে। প্রচলিত চিকিৎসা হল গলাকে বিশ্রাম দেওয়া অর্থাৎ কথা না বলা এবং গরম জলের বাষ্প নাক মুখ দিয়ে টানা। বাড়াবাড়ি হলে অ্যান্টিবায়োটিক দেবার প্রয়োজন হতে পারে। যদি দিন দশেকের মধ্যে ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা করার পরেও গলাভাঙা না কমে, তাহলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। তিনি গলার ভিতরটা ক্যামেরা দিয়ে পরীক্ষা করবেন, প্রয়োজনে ফটো তুলবেন, যাকে বলা হয় ফাইবার অপটিক ল্যারিংগোসকপি(FOL)। সন্দেহজনক কিছু পেলে বায়োপসি করবেন। অর্থাৎ সন্দেহজনক স্থান থেকে কিছুটা অংশ সংগ্রহ করে মাইক্রোস্কোপের সাহায্যে পরীক্ষা করে দেখবেন, তাতে কি ধরনের কোষ আছে।
প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে ক্যানসার অবশ্যই সারে। কিন্তু অধিকাংশ ক্যানসার অনেক দেরিতে ধরা পড়ে। এর কারণ হল, সাধারণ মানুষের অসচেতনতা অর্থাৎ আমজনতা জানেনই না ক্যানসারের উপসর্গগুলো। এবং প্রথম পর্যায়ে ক্যানসার ধরতে পারেন, এমন প্রশিক্ষিত ডাক্তারের অভাব। এজন্য সব সময় ডাক্তারবাবুদেরও দোষ দেওয়া যায় না। কারণ আমাদের মেডিকেল পাঠ্যক্রমে সেই ভাবে ক্যানসার পড়ানো বা শেখানো হয় না। অথচ এই রাজ্য তথা এই দেশে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। বাড়ার অন্যতম কারণ হল নানা ধরনের দূষণ, বিশেষ করে পরিবেশ দূষণ ও খাদ্য দূষণ। অলস জীবন যাপন, অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়া, নানা ধরনের নেশার বাড়বাড়ন্ত জামাই আদরে দেখে আসছে ক্যানসারকে।
ক্যানসার প্রথম পর্যায়ে নির্ণয় না হওয়ার আরেকটা কারণ হল, রোগটা বহুরূপী। কখনও টিউমার, কখনওবা আলসার। আবার কখনও ঘুষখুসে জ্বর, ওজন কমে যাওয়া থেকে ধরা পড়তে পারে রক্তের ক্যানসার লিউকিমিয়া, যেখানে না আছে টিউমার, না আছে আলসার।
প্রথম পর্যায়ে ধরা পড়লে ক্যানসার অবশ্যই সারে। কিন্তু অধিকাংশ ক্যানসার অনেক দেরিতে ধরা পড়ে। এর কারণ হল, সাধারণ মানুষের অসচেতনতা অর্থাৎ আমজনতা জানেনই না ক্যানসারের উপসর্গগুলো। এবং প্রথম পর্যায়ে ক্যানসার ধরতে পারেন, এমন প্রশিক্ষিত ডাক্তারের অভাব। এজন্য সব সময় ডাক্তারবাবুদেরও দোষ দেওয়া যায় না। কারণ আমাদের মেডিকেল পাঠ্যক্রমে সেই ভাবে ক্যানসার পড়ানো বা শেখানো হয় না। অথচ এই রাজ্য তথা এই দেশে ক্যানসার আক্রান্তের সংখ্যা কিন্তু দিন দিন বাড়ছে। বাড়ার অন্যতম কারণ হল নানা ধরনের দূষণ, বিশেষ করে পরিবেশ দূষণ ও খাদ্য দূষণ। অলস জীবন যাপন, অতিরিক্ত জাঙ্ক ফুড খাওয়া, নানা ধরনের নেশার বাড়বাড়ন্ত জামাই আদরে দেখে আসছে ক্যানসারকে।
ক্যানসার প্রথম পর্যায়ে নির্ণয় না হওয়ার আরেকটা কারণ হল, রোগটা বহুরূপী। কখনও টিউমার, কখনওবা আলসার। আবার কখনও ঘুষখুসে জ্বর, ওজন কমে যাওয়া থেকে ধরা পড়তে পারে রক্তের ক্যানসার লিউকিমিয়া, যেখানে না আছে টিউমার, না আছে আলসার।
আরও পড়ুন:
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/01/offbeat-travel-2023.jpg)
চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-২০: রায়পুর থেকে রাজিম
![](https://samayupdates.in/wp-content/uploads/2023/04/Shahida-Parveen4.jpg)
দশভুজা: ‘পুরুষ মানুষের কাজে হাত দিলে এমনই হবে, মহিলাদের এসব সাজে না’
এখন এই রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতাল তো বটেই, এমনকি বহু সরকারি হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজেও আলাদা করে ক্যানসার বিভাগ খোলা হয়েছে। যত দ্রুত রোগটাকে ধরা যাবে এবং চিকিৎসা শুরু করা যাবে, ততই ভালো হওয়ারও সুযোগ বাড়বে। এ রোগের চিকিৎসা পদ্ধতি প্রধানত তিনটি।
● সার্জারি অর্থাৎ ক্যানসার আক্রান্ত অংশটিকে এবং আশেপাশের সন্দেহজনক স্থানগুলোকে শল্য চিকিৎসা করে বাদ দেওয়া।
● রেডিয়েশন অর্থাৎ বিকিরণ চিকিৎসা। এই পদ্ধতিতে তেজস্ক্রিয় রে দিয়ে ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোকে পুড়িয়ে দেওয়া হয়।
● কেমোথেরাপি অর্থাৎ বিশেষ ধরনের কিছু ওষুধ শিরার মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে বা মুখে খাইয়ে ক্যানসার আক্রান্ত কোষগুলোকে মেরে ফেলা।
● এছাড়াও ইমুনোথেরাপি, হরমোন থেরাপি-সহ নানা ভাবে রোগটিকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা হচ্ছে।
শেষ কথা হল, নিজেরা সচেতন না হলে, নেশা থেকে দূরে না থাকলে, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং জীবন যাত্রার পরিবর্তন না ঘটালে—এ রোগ কিন্তু বাড়তেই থাকবে।
শেষ কথা হল, নিজেরা সচেতন না হলে, নেশা থেকে দূরে না থাকলে, খাদ্যাভ্যাসের পরিবর্তন এবং জীবন যাত্রার পরিবর্তন না ঘটালে—এ রোগ কিন্তু বাড়তেই থাকবে।
* এগুলো কিন্তু ঠিক নয় (Health Tips): ডাঃ অমিতাভ ভট্টাচার্য (Amitava Bhattacharrya), বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিজ্ঞান লেখক। পেশায় কান নাক গলা (ক্যানসার) বিশেষজ্ঞ হলেও মানুষটি আদতে ভীষণ আড্ডাবাজ এবং নাটক প্রাণ। এ পর্যন্ত ছোট বড় মিলিয়ে শতাধিক নাটক লিখেছেন। পরিচালনা করেছেন ৩০টিরও বেশি নাটক। দূরদর্শন এবং আকাশবাণীর অভিনয় পুরস্কার পেয়েছেন। বেলঘরিয়া থিয়েটার আকাডেমি নামে নিজে একটি নাটকের দল পরিচালনা করেন। দে’জ পাবলিশিং থেকে এ পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ৫২। নানা সামাজিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে নিজেকে জড়িয়ে রাখেন বছর ভর।