সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

ভারতে প্রতি বছর বহু শিশু জলে ডুবে যায়। এদের মধ্যে এক তৃতীয়াংশ শিশুর মৃত্যু হয়। এই দুর্ঘটনা গ্রামাঞ্চলে বেশি হয়। কারণ, গ্রামের পুকুর, ডোবা, জলাশয়, কুয়োগুলোর বেশিরভাগই অসুরক্ষিত। আর একটি ব্যাপার, অভিভাবকদের শিশুদের জলে ডোবার ক্ষেত্রে সুরক্ষা প্রদানে উদাসীনতা। শিশুদের মধ্যে শূন্য থেকে চার বছর এবং ১৬ থেকে ১৮ বছর বয়সের শিশুরাই সাধারণত জলে বেশি ডোবে। বয়সন্ধিক্ষণের শিশুদের মধ্যে সাধারণত ছেলেরাই জলে বেশি ডোবে।
 

তাহলে কী করণীয়?

কোনও শিশু জলে ডুবে গেলে তাকে তৎক্ষণাৎ জল থেকে তোলার জন্য খুব পারদর্শী লোকের দরকার হয় না। মোটামুটি ভালো সাঁতার জানা একজন ব্যক্তিই তৎক্ষণাৎ তাঁকে জল থেকে তুলতে পারেন। সঠিক জ্ঞান এবং সদিচ্ছা থাকলে দ্রুত জলে ডোবা শিশুকে উদ্ধার করে বাঁচানো সম্ভব।
জল থেকে তুলে শিশুকে শুকনো জায়গায় নিয়ে আসতে হবে।
প্রথমেই কাত করে শুইয়ে দিয়ে পিঠে আস্তে আস্তে চাপড় দিয়ে জল বের করার চেষ্টা করতে হবে।
তারপর দেখতে হবে শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে কিনা, আর হৃদস্পন্দন ঠিক আছে কিনা। যদি না থাকে তবে মুখের সঙ্গে মুখ লাগিয়ে (মাউথ টু মাউথ) কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। তার আগে নাক, মুখ সাকার জাতীয় কিছু দিয়ে পরিষ্কার করে দিতে হবে।
‘মাউথ টু মাউথ ব্রিদিং’-এ কাজ না হলে বুঝতে হবে শ্বাসনালীতে জল-কাঁদা ঢুকে আছে। ছোট শিশু হলে পা উপরের দিকে তুলে ঝাঁকাতে হবে। বড় বাচ্চা হলে উপুর করে শুইয়ে পেট ধরে উপরের দিকে তুলে ঝাঁকালে নাক, মুখ, পাকস্থলী, শ্বাসনালী ও ফুসফুসের জল বেরিয়ে যাবে। তারপর আবার ‘মাউথ টু মাউথ’ শ্বাস-প্রশ্বাস দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
শিশু যদি বমি করতে চায় তবে তাকে কাত করে ধরে বমি করতে সাহায্য করতে হবে। এতে তাঁর ভিতরের জল বেড়িয়ে আসবে।
জলে ডোবা শিশুর মৃত্যুর প্রধান কারণ হল ভয়। শিশুর জ্ঞান ফিরলে তাকে সাহস জোগাতে হবে। বলতে হবে তোমার কোনও ভয় নেই, সব ঠিক হয়ে যাবে।
রোগীর হাত পা, ঠান্ডা থাকলে গরম সেঁক দিতে হবে। জ্ঞান ফিরলে গরম দুধ খাওয়াতে হবে।
শিশুর শ্বাস-প্রশ্বাস ফিরিয়ে আনার চেষ্টা সন্তোষজনক হোক বা না-ই হোক, যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কারণ শিশু তাৎক্ষণিক সুস্থ হয়ে উঠেছে মনে হলেও পরবর্তী সম্ভাব্য সংক্রমণের জন্য অবশ্যই হাসপাতালে ভর্তি করাতে হবে।
কাছাকাছি যেখানে অন্তত অক্সিজেন দেওয়ার ব্যবস্থা আছে, সেখানে আগে পাঠাতে হবে।
জলে ডোবা শিশুর চার মিনিটের অধিক সময় শ্বাস বন্ধ থাকলে মৃত্যু হয়েছে বলে ধরা হয়।

 

কাদের সাফল্যের হার ভালো

বয়স তিন বছরের বেশি।
পাঁচ মিনিটের আগে যদি জল থেকে তোলা যায়।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে যদি শ্বাস-প্রশ্বাস ফিরিয়ে আনা যায়।

 

কীভাবে জলে ডোবা থেকে প্রতিরোধ করা যায়?

শিশুদের বাবা-মা এবং শিক্ষকদের জলে ডুবে যাওয়া প্রতিরোধের জন্য প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাঁদের শেখাতে হবে জলে ডুবে গেলে কীভাবে শিশুদের তৎক্ষণাৎ জল থেকে তুলে পরিস্থিতি সামাল দিতে হবে। সুইমিংপুল, জলাশয়, ডোবা বা কুয়োতে শিশুরা যাতে পড়ে না যায়, তার জন্য চারদিকে ফেন্সিং অর্থাৎ বেড়া দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। সাঁতারের যারা প্রশিক্ষক তাঁরা যাতে জল থেকে তাড়াতাড়ি শিশুকে তুলে শ্বাস-প্রশ্বাস চালুর ব্যবস্থা করতে পারে, তার জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অভিভাবকরা যাতে তাঁদের শিশুদের কোনও জলাশয়ের কাছে একা ছেড়ে না দেন, সে জন্য তাঁদেরকে বোঝাতে হবে। ছোটবেলা থেকে শিশুদের সাঁতার শেখাতে হবে।

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩০২৯৪৯৩২


Skip to content