মঙ্গলবার ৯ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী।

স্ট্রেস বা মানসিক চাপ সাময়িকভাবে রক্তচাপ বাড়িয়ে দিতে পারে। আবার এই মানসিক চাপ কমলে রক্তচাপ স্বাভাবিক অবস্থায়ও ফিরে আসে। এখনও বিজ্ঞানীরা নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন না যে, চাপের ফলে দীর্ঘমেয়াদী ভাবে রক্তচাপ বেড়ে থাকতে পারে। তবে দেখা গিয়েছে, উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত রোগীদের ক্ষেত্রে মানসিক চাপ রক্তচাপকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকবে। আমাদের হার্টের অবস্থাও ভালো থাকবে। নানান কার্ডিওভাসকুলার সমস্যার হাত থেকে আমরা বাঁচতে পারব। সপ্তাহে তিন থেকে পাঁচ দিন অন্তত ৩০ মিনিট নিয়মিত শরীরচর্চা করলে স্ট্রেস অনেকটাই কমে। তাই যাঁরা উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত তাঁরা নিয়মিত শরীরচর্চা করলে চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন। স্বাভাবিক ভাবে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থেকে। ফলে নানান শরীরিক সমস্যার হাত থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।
 

রক্তচাপের উপর মানসিক চাপের প্রভাব

যখন আমরা কোনও চাপের মধ্যে থাকি, তখন আমাদের শরীর থেকে বিভিন্ন ধরনের হরমোন নিঃসৃত হতে থাকে। আর এই হরমোনগুলির প্রভাবে আমাদের হৃদস্পন্দন বেড়ে যায়। এতে রক্তবাহ সংকুচিত হয়। এই দুইয়ের মিলিত প্রভাবে সাময়িক ভাবে আমাদের রক্তচাপ বৃদ্ধি পায়।

এখনও পর্যন্ত এরকম কোনও প্রমাণিত তথ্য পাওয়া যায়নি যে, স্ট্রেস বা চাপ সরাসরি ভাবে প্রভাব ফেলে রক্তচাপ বৃদ্ধি করতে পারে। কিন্তু দীর্ঘদিন মানসিক চাপের মধ্যে থাকলে রক্তচাপ বেড়ে যায় এবং হার্ট অ্যাটাক ও স্ট্রোকের সম্ভাবনা দেখা যায়।

বর্তমান পরিস্থিতিতে আমরা প্রত্যেকেই সব সময় কিছু না কিছু চাপের মধ্যে থাকি, তা সে পাশাগত হোক বা পারিবারিক, মানসিক বা শারীরিক যাই হোক না কেন। আর দীর্ঘদিন এই অবস্থার মধ্যে থাকার ফলে যে শারীরিক পরিবর্তন দেখা যায়, তা আমাদের রক্তবাহগুলিকে ধীরে ধীরে নষ্ট করতে থাকে। আর এর ফলে ডায়াবেটিস, স্ট্রোক বা হার্ট অ্যাটাকের মতো রোগের সম্ভাবনাকে ক্রমশ বাড়তে থাকে।

একবার এই ধরনের কোন রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে বিভিন্ন রকমের ওষুধ আমাদের নিয়মিত খেতে হয়, যেটা নতুন করে একটা চাপের কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর জন্যে আমরা নিয়মিত ওষুধ খাওয়াটাও মাঝে মাঝে ভুলে যাই, যা আমাদের স্বাস্থ্যের পক্ষে ক্ষতিকর।

আরও পড়ুন:

প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান: বাড়তি রক্তচাপ চিন্তা বাড়াচ্ছে? উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে কী করবেন, কী করবেন না

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-২৬: যিনি নিরূপমা তিনিই ‘অনুপমা’

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১: শচীন ও মীরা দেব বর্মনের ঘর আলো করে এল এক ‘দেব শিশু’

 

মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার কয়েকটি সহজ উপায়

দেখা গিয়েছে, মানসিক চাপ-সহ উচ্চ রক্তচাপে আক্রান্ত ব্যক্তির মানসিক চাপ কমানো সম্ভব হলে তাঁর রক্তচাপের সমস্যাও অনেকটাই কমে। তবে সবার ক্ষেত্রে চাপ বা স্ট্রেস কমানোর সঙ্গে সঙ্গেই রক্তচাপ সমানভাবে নাও কমতে পারে। কিন্তু স্ট্রেসকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে রক্তচাপও নিয়ন্ত্রণে থাকে, তাই অনেক ধরনের শারীরিক সমস্যাও এড়ানো যায়। প্রতিদিন কিছু সহজ উপায় অবলম্বন করলে আমরা আমাদের শারীরিক ও মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে পারি।
 

রোজকার কাজের জন্য চাই রুটিন

অতিরিক্ত কাজের বোঝা যদি চাপ সৃষ্টি করে, তাহলে একটি কাজের রুটিন তৈরি করে নিলে কাজ শেষ করতে সুবিধা হবে। যে কাজগুলো আগে প্রয়োজনীয় সেগুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে তুলনায় কম প্রয়োজনীয় কাজগুলিকে তালিকার পরের দিকে রাখতে হবে। আবার অপ্রয়োজনীয় কাজ থাকলে সেগুলিকে বাদ দিতে হবে।

আরও পড়ুন:

মহাকাব্যের কথকতা, পর্ব-১: আর্ষ মহাকাব্যের স্রষ্টাদ্বয়ের কথা

গল্পকথায় ঠাকুরবাড়ি, পর্ব-৫৪: ঠাকুরবাড়িতে দোলে আসত নাচিয়ে, নাচের তালে তালে হত আবিরের আলপনা

চলো যাই ঘুরে আসি: দ্রোণস্থলীর দেবতা টপকেশ্বর মহাদেব

 

নিয়মিত ডিপ ব্রিদিং

ধীরে ধীরে গভীর নিশ্বাস-প্রশ্বাস নেওয়া চাপ কমাতে অনেকটাই সাহায্য করে। প্রতিদিনের কাজের ফাঁকে সুযোগ বুঝে অন্তত ১০ থেকে ১৫ মিনিট ডিপ ব্রিদিং করলে পারলে খুবই উপকার পাওয়া।
 

যোগব্যায়াম ও মেডিটেশন

নিয়মিত যোগাভ্যাস ও মেডিটেশন স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানোর ক্ষেত্রে খুবই কার্যকারী। সুস্থ-সবল থাকতে হলে সারাদিনে অন্তত আধ ঘণ্টা সময় নিজের জন্য রেখতেই হবে। আর ওই সময়েই আপনাকে যোগব্যায়াম ও মেডিটেশনে কাজটি সেরে ফেলতে হবে। ব্যস, এতেই শরীর-মন ঝরঝরে থাকবে।
 

পর্যাপ্ত ঘুম

স্বাভাবিক শরীর স্বাস্থ্যের জন্য আমাদের অন্তত ৭ থেকে ৮ ঘণ্টা ঘুম দরকার। রাতে শোয়ার আগে মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার বন্ধ রাখতে হবে। ররং ঘিম না আসলে পছন্দের বই পড়ুন। অথবা মনের মতো গান শুনুন। এতে ঘুম ভালো হয়।

আরও পড়ুন:

দশভুজা: দু’শো বছর আগে হলে তিনি ইঞ্জিনিয়ারের বদলে সতী হতেন

স্বাদে-গন্ধে: একঘেয়ে কাতলা? স্বাদবদল করুন ‘কমলা কাতলা’ রেসিপিতে! রইল সহজ রেসিপি

ডায়েট ফটাফট: ওজন কমাতে ব্রেকফাস্ট-লাঞ্চ-ডিনারের মাঝে ‘হেলদি স্ন্যাকস’ খাচ্ছেন তো?

 

মানসিক চাপ এড়ানোর কৌশল বার করতে হবে

আমরা প্রত্যেকেই কোনও না কোনও সময় এমন পরিস্থিতির শিকার হই, যা আমাদের নিয়ন্ত্রণে থাকে না। অথচ তার ফলে আমরা নানান মানসিক চাপের সম্মুখীন হই। এরকম পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে পরিস্থিতি মোকাবিলা করতে হবে। শান্ত মাথায় সেখান থেকে বেরিয়ে আসার উপায় খুঁজে নিতে হবে। না হলে অযথা সেই চাপ শারীরিক ক্ষতি করবে। আর তখন আমরা সেই পরিস্থিতি থেকেও বেরিয়ে আসার রাস্তা খুঁজেও বার করতে পারব না।
 

আত্মবিশ্বাস হারালে চলবে না

অন্যের সঙ্গে তুলনা না করে নিজের উপর আত্মবিশ্বাস রেখে নিজের অবস্থায় কতটা ভালো আছি, সেটা আমাদের দেখা দরকার। অন্যের অবস্থার সঙ্গে তুলনা করতে গিয়ে অনেক সময় আমরা নিজের অজান্তেই নিজের ওপর চাপ সৃষ্টি করে ফেলি। তা না করে বরং নিজের ক্ষমতা অনুযায়ী পরিস্থিতির কীভাবে মোকাবিলা করা যায় তা নিয়ে ভাবনা চিন্তা করতে হবে। এতে চাপ অনেকটাই কমে।

* প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান (health-science): ড. দোলন দাস, (Dolan Das) শারীরবিদ্যার অধ্যাপিকা, কল্যাণী মহাবিদ্যালয়।

Skip to content