ছবি: প্রতীকী।
কিন্তু বর্তমানে কোভিড পরবর্তী সময়ে জাপানের আমজনতার মধ্যে এই সমস্যা ক্রমাগত বাড়তে দেখা যাচ্ছে। সে দেশের প্রায় ১৫ লক্ষ কর্মক্ষম মানুষ এই বিশেষ ধরনের সামাজিক অনীহায় আক্রান্ত হয়ে নিজেদেরকে এক ঘরে করে ফেলছেন। এই প্রবণতা জাপানের জনসংখ্যার উপর বেশ বড় রকমের মানসিক এবং সামাজিক সমস্যার সৃষ্টি করছে, যা জাপান সরকারের বিশেষ উদ্বেগের কারণও হয়ে দাঁড়িয়েছে।
হিকিকোমোরি কী?
হিকিকোমোরি হল এমন এক সমস্যা যাতে লোকজন পুরোপুরি সমাজ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। সমাজের মূল স্রোত থেকে নিজেদেরকে গুটিয়ে নিয়ে একপ্রকার বানপ্রস্থে চলে যেতে চাওয়া। তীব্র অবসাদ, কারণে-অকারণে উৎকণ্ঠা এবং মানুষজনকে এড়িয়ে চলার প্রবণতা থেকে সামাজিক ভয় বা সোশ্যাল ফোবিয়া এই সমস্যায় আক্রান্তদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। এরা প্রায় সবাই নিজেদেরকে গৃহবন্দি করে ফেলছেন। আর কোভিড অতিমারির পরে জাপানে এই সংখ্যাটি উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।
কেন জাপানিরা নিজেদেরকে সমাজ বিচ্ছিন্ন করছেন?
হিকিকোমোরির প্রবণতা জাপানিদের মধ্যে বেড়ে যাওয়ার অনেকগুলি কারণ দেখা গিয়েছে। এর একটি প্রধান কারণ হল—
প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান: উদ্বেগের সমস্যায় ভুগছেন? এতে আপনার পরিপাকতন্ত্রের ক্ষতি হচ্ছে না তো?
এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৮: শুঁটকি মাছে কি আদৌ কোনও পুষ্টিগুণ আছে?
গা ছমছমে ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-১: জলের তলায় তার শরীরের কোনও অস্তিত্ব নেই!
এছাড়া জাপানের সমাজ ব্যবস্থায় পারিবারিক কাঠামোও এই হিকিকোমোরির পেছনে খানিকটা ভূমিকা নিয়েছে। জাপানের পরিবারের সন্তানদের ওপর বৃদ্ধ বাবা-মায়ের দায়িত্ব নেওয়ার একটি বাধ্যতামূলক চাপ রয়েছে, যাকে বলে ফেলিয়াল পিটি (filial piety)। সে দেশের সন্তানদের ওপর এটি বাড়তি মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি জাপানের কর্মসংস্কৃতিও খুবই কঠিন। সেখানে দীর্ঘ কাজের সময়, প্রচণ্ড মানসিক চাপ এবং কর্মজীবনে অগ্রগতির সুযোগ তেমন না থাকায় তরুণ প্রজন্ম হিকিকোমোরির শিকার হয়ে পড়ছে।
বাঙালির মৎস্যপুরাণ, পর্ব-৫৩: বায়োফ্লক পদ্ধতিতে সফলভাবে মাছচাষ করছে ওড়িশা, অন্ধ্রপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা ও তামিলনাড়ু
বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৮: গৃহ-সহায়িকার পাঁচালি এবং আমাদের ভদ্র সমাজ
চলো যাই ঘুরে আসি: পাহাড়ের উপর ছবির মতো সুন্দর শ্রবণবেলাগোলা— চন্দ্রগুপ্ত মৌর্যের এক অজানা অধ্যায়
পরিণতি?
এর পরিণতি খুবই মারাত্মক। কারণ শুধু আক্রান্ত ব্যক্তির উপর প্রভাব পড়ছে না, প্রভাবিত হচ্ছে সমগ্র সমাজ ব্যবস্থারও। এর ফলে মানুষের একাকীত্ব বাড়ছে। সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়ার ফলে কর্মহীন হয়ে পড়ার সম্ভাবনা ভবিষ্যতে বাড়বে। ফল স্বরূপ অর্থনৈতিক চাপও উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে। সব মিলিয়ে মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পূর্ণরূপে বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।
সমস্যার সমাধানে কী করছে জাপান সরকার?
জাপান সরকারে বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। ইতিমধ্যেই সরকারের তরফ থেকে সমস্যার সমাধানে নানা পদক্ষেপ করা হয়েছে। যেমন কাউন্সিলিং, একাকীত্বে ভোগা মানুষদের পাশে দাঁড়ানো এবং সরকারের পক্ষ থেকে হিকিকোমোরিতে আক্রান্ত ব্যক্তি বা পরিবারকে অর্থনৈতিক সাহায্য দিয়ে সমাজের মূল স্রোতে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে।
দশভুজা: জীবনে যা কিছু করেছি, প্রত্যয়ের সঙ্গে করেছি: কানন দেবী/২
পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-৯: ‘মেরা কুছ সামান…’ গানে সুর দেওয়ার প্রস্তাবে গুলজারকে পত্রপাঠ বিদায় জানান পঞ্চম
উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৩: হৃদয়পুরের লক্ষ্যপূরণ ‘কঙ্কাবতীর ঘাট’
ভারতীয়দের মধ্যেও কি দেখা যাচ্ছে হিকিকোমোরি?
আমাদের দেশের তরুণ প্রজন্মের মধ্যেও বিগত কয়েক বছরের একাকিত্বের সমস্যা ক্রমশই বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষত শহুরে জীবনে ছোট পরিবারের (নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি) মধ্যে বড় হওয়া তরুণ প্রজন্মের মধ্যে এই সমস্যা আরও বেশি। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে স্মার্টফোন এবং কম্পিউটারের ব্যবহার যত বাড়ছে, ততই এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীরা সামাজিক মেলামেশার কমিয়ে দিয়ে নিজেদেরকে গৃহবন্দি করে ফেলছে।
এর ফলে এই প্রজন্মের তরুণ-তরুণীদের মধ্যে নানান রকম মানসিক সমস্যা দেখা যাচ্ছে। যেমন অনিদ্রা, উদ্বেগ, হতাশা, মানসিক চাপ ইত্যাদি তাদের মধ্যে দেখা যাচ্ছে। যদিও ভারতীয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, মনোবিদ ও সামাজবিজ্ঞানীরা এখনও হিকিকোমোরির মতো মারাত্মক একাকিত্বের ভোগা ভারতীয় জনসংখ্যাকে চিহ্নিত করেননি। তবে আগাম সতর্কতা অবলম্বন না করলে ভবিষ্যতে জাপানের মতো আমাদের দেশেও হয়তো এই রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করবে।