শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি: প্রতীকী।

প্রতিষেধক প্রস্তুকারক সংস্থা মডার্না প্রথম কোভিড-১৯ এর ভ্যাকসিন প্রথম তৈরি করেছিল। সম্প্রতি সেই সংস্থার প্রধান মেডিক্যাল অফিসার তথা বিজ্ঞানী ডাঃ পল বার্টন জানিয়েছেন, এই দশকের শেষের দিকে ক্যানসার, হার্ট অ্যাটাক বা অটো ইমিউন ডিজিজ—যেগুলোর এখনও পর্যন্ত সেরকম কোনও কার্যকরী ভ্যাকসিন নেই তার ভ্যাকসিন বাজারে চলে আসবে। এর ফলে বহু মানুষ এই সব মারণ রোগের হাত থেকে নিস্তার পাবেন। ডাঃ বার্টন আশা করছেন নিরাময় যোগ্য নয়, এমন বহু রোগেরই ভ্যাকসিন ২০৩০ সালের মধ্যে বাজারে চলে আসবে।
সম্প্রতি পল বার্টন ‘দ্য গার্ডিয়ান’-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, ‘‘আগামী বছর পাঁচেকের মধ্যেই এই সব রোগের জন্য টিকা তৈরি হয়ে যাবে। টিকায় ব্যবহৃত এমআরএনএ ক্যানসার কোষগুলি শনাক্ত করে ধ্বংস করে দেবে। আবার ভালো কোষগুলির কোনও ক্ষতিও করবে না। এই ধরনের এই টিকায় একটি অণু থাকবে, যা কোষকে প্রোটিন তৈরি করতে নির্দেশ দেয়।’’ তবে এই ভ্যাকসিনগুলি অত্যন্ত ব্যক্তিগত অর্থাৎ কিনা ব্যক্তি বিশেষে নির্দিষ্ট হওয়ার জন্য একটু ব্যয়বহুল হবে। ডাঃ বার্টনের কথায়, সাম্প্রতিক কালে কোভিডের প্রতিরোধে যেভাবে এমআরএমএ ভ্যাকসিন তৈরি হয়েছে, তা যে শুধু সংক্রামক রোগের জন্য তা নয়। তিনি মতে, বিভিন্ন ধরনের ক্যানসার, কার্ডিওভাসকুলার ডিজিজ এবং বিভিন্ন বিরল রোগ—যেগুলির জন্য এই মুহূর্তে এমন কোন ওষুধ নেই সে সবের জন্য এই এমআরএনএ ভ্যাকসিন অত্যন্ত কার্যকরী হবে। যদিও এখনও তেমনভাবে সাফল্য আসেনি, তবে বর্তমানে ক্যানসার প্রতিরোধে এমআরএন-এর ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা নিয়ে সমগ্র বিশ্বে জোরদার গবেষণা চলছে। আশা করা যাচ্ছে, ২০৩০ সালের মধ্যে সাফল্য পাওয়া যাবে।
আরও পড়ুন:

প্রসঙ্গ স্বাস্থ্য বিজ্ঞান: জাপানের মতো এ দেশের তরুণ তরুণীরাও হিকিকোমোরি-র সমস্যায় ভুগছেন না তো?

হাত বাড়ালেই বনৌষধি: কাঁচা মিঠে আমের এই সব গুণাগুণ জানতেন?

গা ছমছমে ভৌতিক উপন্যাস: মিস মোহিনীর মায়া, পর্ব-২: কপালে জমেছে ঘাম, শুকিয়ে গিয়েছে জিভ, পেছন থেকে ভেসে আসছে গা ছমছমে শব্দ

চেনা দেশ অচেনা পথ, পর্ব-১৮: কোষার ভান্ডার ছররি থেকে কুঠাঘাট হয়ে কুরদার

ক্যানসার আক্রান্ত কোন ব্যক্তিকে ভ্যাকসিন দিতে হলে চিকিৎসকরা প্রথমে ওই ব্যক্তির যেখানে ক্যানসার বা টিউমার আছে তার বায়োপসি নিয়ে সেখান থেকে অ্যান্টিজেনটি সনাক্ত করে সেখান থেকে এমআরএনএ তৈরি করবেন। এই কারণেই এই ধরনের ভ্যাকসিনগুলি ব্যক্তি বিশেষে খুবই নির্দিষ্ট হবে। আর তার খরচও কিছুটা বেশি হবে। এই এমআরএনএ ভ্যাকসিন আক্রান্ত ব্যক্তি মধ্যে প্রয়োগ করলে সেগুলি ব্যক্তির ইমিউন রেসপন্সকে বাড়িয়ে দিয়ে তাঁর প্রতিরোধ করার ক্ষমতা অনেক অংশেই বাড়িয়ে দেবে।
আরও পড়ুন:

বৈষম্যের বিরোধ-জবানি, পর্ব-১৯: উন্নয়নের কাণ্ডারী নির্ণয়ে পিতৃতান্ত্রিক পক্ষপাতিত্ব

স্বাদে-আহ্লাদে: আম দিয়ে তৈরি এই লোভনীয় স্বাদের আচার খেয়েছেন?

রহস্য উপন্যাস: পিশাচ পাহাড়ের আতঙ্ক, পর্ব-১৩: আচমকা রাতের পার্টিতে হাজির পুলিশ

 

ক্যানসার ইমিউনো থেরাপি

ক্যানসার চিকিৎসায় বর্তমানে ইমিউনো থেরাপি একটি যুগান্তকারী চিকিৎসা পদ্ধতি হিসেবে সারা বিশ্বে স্বীকৃত। এই এমআরএনএ ভ্যাকসিন ক্যানসারের বিরুদ্ধে একটি যুগান্তকারী এবং শক্তিশালী ইমিউনো থেরাপিউটিক চিকিৎসা হিসেবে বিজ্ঞানী মহলে গণ্য হচ্ছে। কারণ এ ধরনের ভ্যাকসিন খুবই উচ্চ প্রতিরোধ ক্ষমতা সম্পন্ন এবং রোগ নিরাময়ে দ্রুত কার্যকর হবে।

তাছাড়া নির্দিষ্ট ক্যাসানারের জন্য এই ভ্যাকসিন অতি দ্রুত পরিকল্পনা ও পরীক্ষা করে খুবই নির্দিষ্ট ভাবে একসঙ্গে অনেক উৎপাদন করা সম্ভব হবে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নতিকে কাজে লাগিয়ে ক্যানসার এবং অন্যান্য বিরল রোগের জন্য এমআরএনএ ভ্যাকসিনের নকশা এবং তার কার্যকারিতা নিয়ে বিশেষভাবে গবেষণা চলছে। বর্তমানে বেশ কয়েকটি এমআরএনএ ভ্যাকসিন বিভিন্ন ফেজের ক্লিনিকাল ট্রায়ালের মধ্যে আছে মডার্না এবং বায়ো-এন-টেক (BioNTech) নামক দুটো ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারক সংস্থার দুটি পার্সোনালাইজড আ্যন্টিটিউমার ভ্যাকসিন যথাক্রমে mRNA-4157 এবং BNT122 ফেস টু ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের মধ্যে আছে। দ্বিতীয় ভ্যাকসিনটি কোলোরোক্টাল ক্যানসারের জন্য ফেস টু ট্রায়াল চলছে। এই ভ্যাকসিনগুলির কার্যকারিতা খুবই ভালো এবং অত্যন্ত নিরাপদ, যেমন কোভিড ভ্যাকসিনের ক্ষেত্রে আমরা দেখেছি।

আরও পড়ুন:

উত্তম কথাচিত্র, পর্ব-৩৪: স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নের ‘রাত-ভোর’

পঞ্চমে মেলোডি, পর্ব-১০: কিশোর কণ্ঠের উপর যেন এক অলিখিত দাবি ছিল পঞ্চমের

এগুলো কিন্তু ঠিক নয়, পর্ব-১৯: পাকা আম খাবেন, নাকি কাঁচা আম?

 

ক্যানসার চিকিৎসায় এমআরএমএস ভ্যাকসিনের ব্যবহার হয়

মেসেঞ্জার আরএনএ বা এমআরএনএ একটি জেনেটিক উপাদান, যা আমাদের ডিএনএ থেকে নির্দেশাবলী কপি করে এবং প্রোটিন তৈরি করতে ব্যবহার করে শরীরের বিভিন্ন কাজ সম্পাদন করতে প্রয়োজন হয়। প্রচলিত ভ্যাকসিনগুলির তুলনায় এমআরআইনে ভ্যাকসিনের পার্থক্য হল, প্রচলিত ভ্যাক্সিনে মৃত বা দুর্বল ভাইরাস ব্যবহার করা হয়। আর এমআরএন-এ ভ্যাকসিনে ক্যানসার অ্যান্টিজেন তৈরির নির্দেশাবলী-সহ এমআরএন-এর ব্যবহার করা হয়। যখন এই ভ্যাকসিন মানুষের দেহে ইঞ্জেক্ট করা হবে তখন এই ভ্যাকসিনে থাকা এমআরএনএ দেহের কিছু কোষকে অ্যান্টিজেন তৈরি করতে নির্দেশ দেবে যা, ইমিউন প্রতিক্রিয়াকে অনেকটাই বাড়িয়ে দিতে সাহায্য করবে। যেহেতু এমআরএনএ ভ্যাকসিনগুলি খুব স্পেসিফিক বা নির্দিষ্ট হবে তাই বিজ্ঞানীরা এমআরএনএ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে সমস্ত ক্যানসার বা টিউমার কোষের অনন্য জেনেটিক সিকোয়েন্স বা মিউট্রিশনকে শনাক্ত করে নির্দিষ্ট ভ্যাকসিন তৈরি করতে পারবেন।

এর ফলে এটি ইমিউন সিস্টেমকে চিহ্নিত করে শুধু ক্যান্সার আক্রান্ত কোষগুলিতে কাজ করবে, স্বাস্থ্যকর কোষগুলিতে কোনওরকম প্রভাব ফেলবে না। আর যেহেতু শরীরে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও কম হবে ভবিষ্যতে ক্যানসার চিকিৎসায় কেমোথেরাপির একটি আকর্ষণীয় বিকল্প হিসেবে এই এমআরএনএ ভ্যাকসিন কাজ করবে। কোভিড-১৯ অতিমারি কালে ভ্যাকসিন গবেষণার ক্ষেত্রে এমআরএনএ ভ্যাকসিন সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ একটি গবেষণা যা ভবিষ্যতে ক্যানাসার চিকিৎসার ক্ষেত্রে অত্যন্ত শক্তিশালী একটি বিকল্প হয়ে দাঁড়াতে চলছে।

প্রতি মুহূর্তে ঘটে যাওয়া খবরাখবর ও শিক্ষা, স্বাস্থ্য, ফ্যাশন, লাইফস্টাইল, সাজগোজ, গল্প, উপন্যাস, বিনোদন, বেড়ানো, খাওয়া-দাওয়া, দেশ-বিদেশের হালহকিকত প্রভৃতি বিষয়ে বিশেষজ্ঞের বিশেষ কলম পড়তে চোখ রাখুন সময় আপডেটস-এর পাতার বিভিন্ন বিভাগে। প্রতি ক্লিকেই মন ভালো করা প্রতিবেদন সাজানো রয়েছে। চলতে থাকুন সময়ের সঙ্গে — সময়, অসময়ে, সবসময়ে

Skip to content