শুক্রবার ২২ নভেম্বর, ২০২৪


সম্প্রতি স্বাধীনতার ৭৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে বাঁচবো-র পরিচালনায় পাথরপ্রতিমার পঞ্চমের বাজার এলাকায় বাঁচবো বিকশিত স্কুলের নিজস্ব ভবনে আয়োজন করা হয়েছিল মেগা স্পেশালিটি স্বাস্থ্য শিবির। এই স্বাস্থ্য শিবিরে ছিলেন মেডিসিন, কার্ডিওলজি, নিউরো সাইক্রিয়াট্রি, স্ত্রীরোগ, অস্থিরোগ, জেরিয়াট্রিক, দন্ত ও মুখমণ্ডল, ডিমেনশিয়া ও সাধারণ বিষয়ক বিশেষজ্ঞ এগারো জন চিকিৎসক। এছাড়াও ছিল নার্সিং, হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট ও প্যারামেডিকেল টিম। এই শিবির সংঘঠিত করতে বাঁচবো-র এই উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছিল রাজ্যের অন্যতম চিকিৎসকদের সংগঠন ‘প্রোটেক্ট দ্য ওয়ারিয়র্স’ এবং বার্ধক্য চিকিৎসকদের সর্বভারতীয় সংগঠন ‘জেরিয়াট্রিক সোসাইটি অফ ইন্ডিয়া’-র পশ্চিমবঙ্গ শাখা।
একই সঙ্গে এই শিবিরে ছিল চক্ষু ও চোখের দৃষ্টি শক্তি পরীক্ষা শিবির। ‘পিয়ারলেস আই কেয়ার’-এর সহযোগিতায় চক্ষু শিবিরটি সম্পন্ন হয়। এর জন্য উপস্থিত ছিলেন চার জন অপ্টোমেট্রিস্ট। শিবিরের দু’ দিন আগে থেকে চলা প্রাকৃতিক দুর্যোগ ও মুষলধারে বৃষ্টির পরেও প্রায় তিন শতাধিক মানুষ এসেছিলেন এই শিবিরে। বাঁচবো-র সুন্দরবন স্কুলের স্থানীয় কার্যনির্বাহী সদস্য চৈতন্য দত্ত, যিনি মূলত রোগীদের নাম নথিভুক্তির দায়িত্বে ছিলেন তাঁর কথায়, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে রোগীর সংখ্যা বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যেত। এক একজন রোগী নূন্যতম দু’ বা তিন ধরনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের দেখানোর এই সুযোগ গ্রহণ করেছেন।
শিবিরে উপস্থিত ছিলেন মেদিনীপুর মেডিক্যাল কলেজের অধ্যাপক ডাঃ কৃষ্ণেন্দু রায়, বাঁকুড়া সম্মিলনী মেডিক্যাল কলেজের সহযোগী অধ্যাপক ডাঃ রিভু বসু, রায়গঞ্জ মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাঃ অরিজিৎ দাস, স্ত্রী রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ রমা গুহ, নিউরো সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ নীলাঞ্জন চন্দ্র, বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ ধীরেশকুমার চৌধুরী, অস্থি রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ কার্তিক নসিপুরি, ম্যাক্সিলো ফেসিয়াল সার্জন ডাঃ দেবাঙ্কুর রায়, সাধারণ রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ গণেশ চন্দ্র মন্ডল এবং চক্ষু রোগ বিশেষজ্ঞ ডাঃ দেবলীনা দে দাস। ছিলেন বিশিষ্ট ডিমেনশিয়া কেয়ার বিশেষজ্ঞ ও ফিজিওথরাপিস্ট জয়ন্ত ঘোষ।
শিবির চলাকালীন ডিমেনশিয়া নিয়ে সচতনতা মূলক বক্তব্যও রাখেন তিনি সাথে বিশিষ্ট বার্ধক্য বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ ধীরেশ কুমার চৌধুরী। বিনামূল্যে এত জন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ গ্রহণ করার সুযোগের পাশাপাশি বেশ কিছু রোগীকে চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী বিনামূল্য ইসিজি করা হয়। পরামর্শ গ্রহণকারী প্রত্যেক রোগীকেই বিনামূল্যে ওষুধ দেওয়া হয়।
বাঁচবো-র পক্ষ থেকে ওষুধ বিতরণের দায়িত্বে থাকা সুশীল শর্মার কথায়, এক একজন রোগীকে নূন্যতম প্রায় দুইশো টাকা মূল্যের ওষুধ দেওয়া হয়েছে। ওষুধ ক্রয়ের জন্য সহযোগিতা করেছে ‘অল ইন্ডিয়া উইমেন্স কনফারেন্স’-এর টালিগঞ্জ শাখা ও বিভিন্ন ওষুধ সংস্থার প্রতিনিধিরা। অধ্যাপক ডাঃ কৃষ্ণেন্দু রায় জানান, এখানকার রোগীদের জন্য ভীষণ জরুরি ছিল এই ধরনের শিবির। অনেকেই আর্থিক কারণে কলকাতা বা ডায়মন্ড হারবারে গিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের পরামর্শ নিতে পারেন না। তাঁরা একটা বড় সুযোগ পেলেন এই শিবিরে, তাও আবার সম্পূর্ণ বিনামূল্যে।
অনেক প্রবীণ- প্রবীণা এই শিবিরে এসেছিলেন দূরদূরান্ত অঞ্চল থেকে। উৎসাহ প্রদানের জন্য উপস্থিত ছিলেন পাথরপ্রতিমার বিধায়ক তথা সুন্দরবন উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান সমীরকুমার জানা। তিনি দীর্ঘদিন ধরে চলা শিক্ষা, সংস্কৃতি ও স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে সুন্দরবনের মানুষের জন্য বাঁচবো-র উদ্যোগের ভুয়সী প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে কলকাতা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গার বিদগ্ধ মানুষ ও চিকিৎসকদের বাঁচবো-র মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে তাঁদের বিভিন্ন সময় উপস্থিতির জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পাথরপ্রতিমার পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি আব্দুর রেজ্জাক ও স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান কাশীনাথ বেরা। চক্ষু পরীক্ষার পর প্রায় পঞ্চাশ জন রোগীর জন্য স্বল্প মূল্যে চশমা এবং কলকাতায় নিয়ে এসে ছানি অপারেশনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বেসরকারি উদ্যোগে এতজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে সুন্দরবনে এই ধরনের শিবির সম্ভবত প্রথমবার হল।
বাঁচবো-র প্রধান ডাঃ ধীরেশকুমার চৌধুরী জানিয়েছেন, আগামী দিনে চেষ্টা করা হবে বছরে তিন থেকে চারটি এই ধরনের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের নিয়ে শিবিরের আয়োজন করার। তিনি এও বলেন, ‘অ্যাকলারিস’-এর সহযোগিতায় গড়ে ওঠা প্রতি মাসের জেরিয়াট্রিক ওপিডি-তে এলাকার প্রবীণ-প্রবীণাদের নিয়মিত চিকিৎসার সুযোগ নিচ্ছেন।

Skip to content