শনিবার ৫ অক্টোবর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

হোমিওপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি তো অনেক হল। নামজাদা বিউটি প্রোডাক্টের পেছনেও কম সময় ব্যয় হল না, এবার না হয় একটু প্রাচীন পন্থাই অবলম্বন করে দেখুন। আয়ুর্বেদ ভারতের এক প্রাচীনতম ভেষজবিদ্যা, যার একসময় খ্যাতি ছিল সমগ্র দেশময়। সেই প্রাচীন বিখ্যাত ভেষজবিদ্যার সাহায্যে কীভাবে শরীর এবং সৌন্দর্যের খেয়াল রাখা সম্ভব? এইসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই এবার থেকে আপনাদের সঙ্গে থাকছেন আয়ুর্বেদাচার্য ডাঃ বিশ্বজিৎ ঘোষ তার বিশেষ ধারাবাহিক ভিষগবাণী নিয়ে।

আয়ুর্বেদ চিকিৎসাবিজ্ঞানের প্রায় সমস্ত সংহিতায় হলুদের গুণাবলি নিয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া রয়েছে। মূলত ধন্বন্তরি নিঘন্টু মতে হলুদ ‘কণ্ডু কুষ্ঠ ব্রনাতহন্তি দেহবর্ণবিধায়িনী’ অর্থাৎ হলুদ ত্বকজ বিকারনাশক, ব্রণনাশকারী ও বর্ণপ্রসাদক। গ্রামে-গঞ্জে আজও প্রায় সমস্ত শুভ অনুষ্ঠানে, বিশেষত বিবাহে গায়ে হলুদের চল বর্তমান যা অত্যন্ত বিজ্ঞানসম্মত। কারণ হলুদ তিক্তকটুরসযুক্ত রুক্ষ গুণসম্পন্ন ঔষধি অন্যদিকে হলুদের মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিব্যাক্টেরিয়াল ও অ্যান্টিইনফ্লামেটোরি ক্ষমতা বর্তমান থাকায় রোগপ্রতিরোধে সাহায্য করে।

ব্রণর সমস্যায় হলুদ
যাদের ব্রণর সমস্যা আছে তাদের ক্ষেত্রে হলুদের অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক প্রয়োগ যথেষ্ট কার্যকরী।
যেমন: সকালে খালিপেটে একটুকরো কাঁচা হলুদ বা হলুদের রস দুই থেকে তিন চামচ সেবনীয়, সঙ্গে নিমপাতা ও হলুদ বাটা একসঙ্গে মিশিয়ে ব্রণতে প্রলেপ দিলে রক্তবিকার জনিত দূষিত ব্রণও দ্রুত আরোগ্য লাভ করে, তবে নজর রাখুন নিয়মিত পেট পরিষ্কার ও সুপথ্যে।

বলিরেখা দূর করতে হরিদ্রা
জৌলুসহীন ত্বক বা মুখের বলিরেখার জন্য হলুদগুঁড়ো, টমেটোর রস কাঁচা দুধের সঙ্গে মিশিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করুন। এতে ত্বকের উজ্জ্বলতা যেমন ফিরে আসে সঙ্গে বলিরেখাও মিলিয়ে যায়। দীর্ঘস্থায়ী ফল পেতে এর পাশাপাশি অনিদ্রা ও মানসিক উদ্বেগ থেকে দূরত্ব বজায় রাখুন।

চোখের নীচে কালিমা থেকে মুক্তি দেয় হলুদ
চোখের নীচের কালো দাগ সব সৌন্দর্যের বড় অন্তরায়। এক্ষেত্রে হলুদগুঁড়ো দুধের সরের সঙ্গে মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে নিন। এটি চোখের চারপাশে প্রলেপ দিয়ে রাখুন মিনিট পনেরো তারপর গোলাপ জলে ধুয়ে ফেলুন।সঙ্গে রাত্রিজাগরণ ও অন্ধকারে দীর্ঘক্ষণ মোবাইল বা ল্যাপটপ ব্যবহার না করাই শ্রেয়।

তারুণ্য বজায় রাখতে হলুদ
চিরযৌবন প্রাপ্তির আশা প্রায় সবাই করে থাকেন। সেক্ষেত্রে কাঁচা হলুদ ও কাঁচা আমলকীর পেস্ট বানিয়ে মাখুন। সঙ্গে মিশিয়ে নিতে পারেন কয়েকফোঁটা গ্লিসারিন।
এটি একদিকে যেমন ত্বকের আর্দ্রতা বজায় রাখে অন্যদিকে লোমকূপের গভীরে গিয়ে ত্বকে পুষ্টি জোগায়। অন্যদিকে প্রত্যহ পরিমাণমতো ব্রেকফাস্ট জরুরি কারণ আয়ুর্বেদ মতে সপ্তধাতুর পুষ্টির ক্ষেত্রে জঠরাগ্নির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

চর্ম রোগের ব্রহ্মাস্ত্র হলুদ
এলার্জি, শীতপিত্ত, ছুলি বা একজিমা জাতীয় ত্বকজ সমস্যায় স্নানের পূর্বে কাঁচা হলুদ ও দূর্বা বাটা মাখুন। সমস্যা পুরনো হয়ে থাকলে এক চামচ ত্রিফলা চূর্ণের সঙ্গে ১/৪ ভাগ হলুদগুঁড়ো মিশিয়ে দিন পনেরো সেবন করুন।

দাগের সমস্যায় হলুদ
অনাকাঙ্ক্ষিত দাগ বা ক্ষতরোপণ হওয়ার পর দাগ থেকে গেলে এক চামচ গাওয়া ঘিয়ের সঙ্গে হলুদ মিশিয়ে পেস্ট বানিয়ে মাখুন। রোজ দুইবার ব্যবহার করলে তা ধীরে ধীরে কমে যায়। তৈলাক্ত ত্বকের ক্ষেত্রে ঘিয়ের পরিবর্তে ঘৃতকুমারীর রস ব্যবহার করা যায়।

ঠোঁটের যত্নে হলুদ
গোলাপি ঠোঁট কাঙ্ক্ষিত মুখেরা মধুর সঙ্গে হলুদগুঁড়ো ও চিনি মিশিয়ে ঠোঁটের উপর আলতো করে মাখবেন। তবে ধূমপান কিন্তু নৈব নৈব চ।

সবশেষে কিন্তু ত্বকের বাহ্যিক যত্ন ও পরিচর্চার পাশাপাশি খাওয়াদাওয়ার প্রতিও লক্ষ রাখা অত্যন্ত জরুরি।
বেশি লবণযুক্ত খাদ্যদ্রব্য, ফাস্টফুড, অতিরিক্ত ভাজাভুজি ইত্যাদি ত্বকের পক্ষে হানিকারক, তাই যতটা পারা যায় এগুলো এড়িয়ে চলতে হবে।

লেখক : আয়ুর্বেদ মেডিকেল অফিসার
(উত্তর চণ্ডীপুর সদর উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র, মানিকচক, মালদা)

 


Skip to content