সোমবার ৮ জুলাই, ২০২৪


ছবি প্রতীকী

প্রচণ্ড গরমে নাজেহাল আট থেকে আশি—সবাই৷ এই সময়টা সবাইকে একটু সাবধানে থাকতে হবে৷ কারণ, অত্যধিক গরমে বিভিন্ন ধরনের অসুখ-বিসুখ দেখা যায়৷ তাই আজ আমরা এই পর্বে মূলত গরমের সময় যেসব অসুখ-বিসুখ হয়, সেসব অসুখ কারও হলে, তার কী করণীয় জেনে নেব৷ মনে রাখতে হবে—করোনা কিন্তু এখনও পুরোপুরি যায়নি৷ তার ওপর নতুন উপদ্রব মাঙ্কি পক্সের চোখরাঙানি৷ তাই এখন জ্বরে ভুগলে করোনা টেস্ট করে নেওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ৷ এছাড়াও এখন ভাইরাল ফিভার হতে পারে৷ বিশেষত ইনফ্লুয়েঞ্জা বা প্যারা ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস থেকে এই ভাইরাল জ্বর হয়৷ উপসর্গ অনুযায়ী এর চিকিৎসা করতে হয়৷ অর্থাৎ তিন থেকে পাঁচ দিন অব্দি আপনার জ্বর থাকতে পারে৷ তারপর আস্তে আস্তে কমে যায়৷ জ্বরের সঙ্গে হাঁচি, কাশি, মাথাব্যথা বা গা হাত পা ব্যথা হতে পারে৷ এ সময় বেশি করে জল খেতে হবে৷ প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ খেতে হবে৷

তবে দয়া করে কোনও ব্যথার ওষুধ বা অ্যান্টিবায়োটিক খাবেন না৷ ভাইরাসঘটিত জ্বরে এই ধরনের ওষুধের কোনও প্রভাব নেই৷ উলটে আপনার ক্ষতিও হতে পারে৷ যদি তিন থেকে পাঁচ দিনের বেশি জ্বর হয় তখন আমাদের অন্যান্য কারণ ভাবতে হবে৷ যেমন গরমকালে পেটের রোগ থেকে অনেক সময় জ্বর হতে পারে৷ টাইফয়েড থেকেও জ্বর হয়৷ টাইফয়েডে জ্বর কিন্তু উত্তরোত্তর বাড়তে থাকে৷ অর্থাৎ প্রথম দিন যখন জ্বর এসেছিল তার চার দিন পরে কিন্তু আস্তে আস্তে বেড়ে যাচ্ছে এমনও হতে পারে৷ প্রথম যদি ১০০ ডিগ্রি হয়, দ্বিতীয় দিন ১০১, তারপর ১০২ ডিগ্রি জ্বর, এইভাবে বাড়তে থাকে৷ সারাদিনই কমবেশি জ্বর আসে৷ আবার কখনও জ্বর একেবারেই কমে না৷ এর সঙ্গে পেটের সমস্যাও হয়৷ যেমন প্রথমদিকে কোষ্ঠকাঠিন্য বা ডায়েরিয়া হতে পারে৷ টাইফয়েড, পেটের রোগ—জ্বরের অন্যতম প্রধান কারণ৷ এটা এই গরমের সময়ই হয়৷

টাইফয়েডকে এড়িয়ে চলতে হলে প্রথমেই বাইরে থেকে আনা জলজাতীয় খাবার খাওয়া বন্ধ করতে হবে৷ যেমন শরবত, লস্যি, আইসক্রিম, কুলফি৷ এসব থেকে অনেক সময় শরীরের মধ্যে সংক্রমণ ঢুকে পড়ে৷ এই তীব্র গরমে বাড়ি থেকে বাইরে বেরোলে সঙ্গে ওআরএস বা ইলেকট্রল মেশানো জল রাখুন৷ বাইরে যতটুকু সময় থাকছেন অল্প অল্প সেই জল পান করুন৷ বাইরের কাটাফল একদম খাবেন না৷
এই সময় কারও কারও হেপাটাইটিস হয়৷ হেপাটাইটিস-এ এবং হেপাটাইটিস-বি দুটি কিন্তু জলবাহিত রোগ৷ তাই বাইরে তেমন প্রয়োজনে ভালো মানের সিলড করা জলের বোতল কিনে খেতে পারেন৷ ডায়াবেটিস বা অন্য কোনও রোগ না থাকলে ভালো ফ্রুটজুসও খাওয়া যেতে পারে৷ আমাদের সব সময়ই চেষ্টা করা উচিত বাড়ি থেকে জল নিয়ে যাওয়ার৷ আমরা যেটা প্রায়ই ভুল করি, সেটা হল, ডায়েরিয়া হলেই ওষুধের দোকান থেকে অ্যান্টিবায়োটিক কিনে খেয়ে নিই৷ এরকম একেবারেই করা উচিত নয়৷

ডায়েরিয়ার প্রধান চিকিৎসা কিন্তু ওআরএস বা ইলেকট্রলের জল৷ ডায়েরিয়া সব সময় ব্যাকটেরিয়া থেকে হয় না, ভাইরাস থেকেও হতে পারে৷ এই ভাইরাসঘটিত রোগ ছোট থেকে বড় সবারই হতে পারে৷ ওআরএস খেলেই কিন্তু চব্বিশ থেকে আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যে ডায়েরিয়া কমে যাবে৷ অ্যান্টিবায়োটিক খাবার কোনও দরকারই পড়ে না৷ অপ্রয়োজনে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে বারণ করার কারণ, ভবিষ্যতে বড় কোনও জীবাণু সংক্রমণের জন্য অ্যান্টিবায়োটিকের দরকার পড়লে তখন কিন্তু অ্যান্টিবায়োটিক নাও কাজ করতে পারে৷

মনে রাখা দরকার দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাওয়ার জন্য সাময়িকভাবে ডায়েরিয়া সেরে গেলেও জীবণুটা কিন্তু আপনার পেটের মধ্যে থেকেই যাবে৷ সেই জীবণু আবার কিছুদিন বাদে ভয়ংকরভাবে ফিরে আসবে৷ অতএব চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাবেন না৷

গ্রীষ্মকালে মূলত টাইফয়েড, ডায়রিয়া এবং হেপাটাইটিস—এই তিন ধরনের অসুখই হয়৷ তাই এদের প্রতিরোধ করতে আপনারা এসব পরামর্শ মেনে চললে উপকার পাবেন, ভালো থাকবেন৷

ছবি: সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে

যোগাযোগ: ৯৮৩১৬৭১৫২৫

Skip to content