শনিবার ২৩ নভেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

আজকের আলোচনার বিষয়, ডায়াবেটিস হলে কীভাবে মনিটরিং করতে হয়৷ অর্থাৎ ডাক্তারবাবু একবার প্রেসক্রিপশন লিখে দেওয়ার কতদিন অন্তর ফলোআপ করতে হবে? কী কী টেস্ট করতে হবে? কেন ফলোআপটা খুব জরুরি? ইত্যাদি৷ যাঁরা ডায়াবেটিসে ভোগেন তাঁরা চিকিৎসা করাতে গিয়ে কতকগুলো ভুল করেন৷ যেমন কেউ কেউ একই ওষুধ টানা অনেকদিন ধরে খেয়ে যান৷ এতে বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যার উৎপত্তি হতে পারে৷ একই ওষুধ টানা খেলে সেটি হয়তো আর কাজ নাও করতে পারে৷ আবার এমন হল যে, ওষুধ বেশি কাজ করছে। ফলে আপনার ব্লাড সুগার খুব কমে যাচ্ছে। একে চিকিৎসার পরিভাষায় হাইপোগ্লাইসেমিয়া বলা হয়। অর্থাৎ ব্লাড সুগার নেমে যাচ্ছে। কিংবা দীর্ঘদিন একই ওষুধ খাওয়ার ফলে আপনার কিডনির সমস্যা হতে শুরু করেছে। আপনি সেটা বুঝতেই পারলেন না৷ এবার ক্রমে সেটি আরও বাড়াবাড়ি পর্যায়ে পোঁছে গেল৷ মনে রাখতে হবে, কিডনির সমস্যা হলে কিছু কিছু ওষুধ পরিবর্তন করতে হয়৷ একইভাবে পরিস্থিতি অনুযায়ী ওষুধ পরিবর্তন করতে হয় কারও হার্ট বা চোখের সমস্যা থাকলে৷ এই জন্যই দরকার নিয়মিত মনিটরিংয়ের৷

আমরা সাধারণত তিন থেকে ছ-মাস অন্তর মনিটরিং করতে বলি৷ প্রত্যেক তিন মাস অন্তর কী কী টেস্ট করা উচিত? রক্তের ফাস্টিং ব্লাড সুগার, দুপুরবেলা খাওয়ার দু’ঘণ্টা পরে পোস্টপ্রান্ডিয়াল ব্লাড সুগার, এইচবিএওয়ানসি অর্থাৎ তিন মাসের পর এই পরীক্ষাগুলো করতে হবে৷ এছাড়াও ক্রিয়েটিনিন টেস্ট করতে বলা হয়। এর সাহায্যে কিডনির কর্মক্ষমতা বোঝা যায়৷ সেই সঙ্গে ‘ইউরিন এসিআর’ টেস্ট করতে হয়। এই টেস্টের মাধ্যমে দেখা হয় ইউরিন থেকে প্রোটিন বেরিয়েছে কি না। অর্থাৎ প্রতি তিন মাস অন্তর এই টেস্টগুলো করা খুবই জরুরি৷ যদি একান্তই তিন মাস অন্তর করা সম্ভব না হয়, তাহলে ছ-মাস অন্তর অবশ্যই করতে হবে। এই সব টেস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী ওষুধ বা ইনসুলিনের ডোজের পরিবর্তন করা হয়৷
তাছাড়া বছরে একবার একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞকে দিয়ে চোখের পেছনটা অর্থাৎ রেটিনা ভালো করে পরীক্ষা করতে হবে৷ আর বছরে একবার ইসিজি বা ইকো-কার্ডিওগ্রাফি অর্থাৎ হার্টের স্ক্যান করতে পারলে ভালো হয়। এতে আমরা বুঝতে পারি, হার্টের কোনও সমস্যা হচ্ছে কি না। আপনারা হয়তো জানেন, ডায়াবেটিসকে আমরা ‘সাইলেন্ট কিলার’ বলি৷ অর্থাৎ যাঁর ডায়াবেটিস নেই তাঁর হার্টের সমস্যা বা হার্ট অ্যাটাক হলে বুকে ব্যথা হতে পারে৷ কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীদের বুকে ব্যথা ছাড়াও হার্ট অ্যাটাক হতে পারে। এছাড়াও ডায়াবেটিস থাকলে হার্টের যে বড় বড় রক্তসঞ্চালনকারী ধমনীগুলি আছে সেগুলোতে প্রদাহ হয়। ফলস্বরূপ সেগুলো আস্তে আস্তে সরু হয়ে যায়৷ স্বাভাবিকভাবেই আমাদের অজান্তেই রক্ত সঞ্চালন কমে হার্টের কর্মক্ষমতা অর্থাৎ পাম্পিং করার ক্ষমতা কমে যায়৷ তার ফলে অচিরেই হার্ট ফেলিওর হয়৷ এটা হচ্ছে কি না তার একটা আগাম পূর্বাভাস পেতে গেলে অবশ্যই বছরে আমাদের একবার করে ইসিজি এবং ইকো-কার্ডিওগ্রাফি করে দেখতে হবে৷ এর সঙ্গে আমাদের বছরে একবার করে রক্তে লিপিডের মাত্রা দেখা উচিত৷ লিপিডের মধ্যে প্রধানত তিনটি জিনিস আমরা দেখি৷ একটা হচ্ছে রক্তে এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা৷ ডায়াবেটিস থাকলে অবশ্যই আমাদের এলডিএল কোলেস্টেরলের মাত্রা ১০০-র নীচে রাখতে হবে৷ আর একটা হচ্ছে এইচডিএল কোলেস্টেরল অর্থাৎ ভালো কোলেস্টেরল৷ এই ভালো কোলেস্টেরল ছেলেদের ৪৫ এবং মেয়েদের ক্ষেত্রে ৫৫ ওপর রাখতে পারলে ভালো হয়৷ আরেকটা হচ্ছে ট্রাইগ্লিসারাইড৷ যেটার মাত্রা ১৫০-এর নীচে রাখতে হবে৷ এই মাত্রার পরিমাণ যদি ঠিকঠাক না থাকে তাহলে অবশ্যই ওষুধ খেতে হবে৷ এই ধরনের সমস্যার সমাধানে খুব ভালো ওষুধ আছে৷ যেগুলোকে বলা যায় জীবনদায়ী ওষুধ৷ এতে আপনার হার্টের সমস্যা নাও হতে পারে। অর্থাৎ হার্টের সমস্যা প্রতিরোধ করার জন্য এইসব ওষুধ খাওয়া খুব জরুরি৷

উপরে যে টেস্টগুলোর কথা বললাম, এর মধ্যে কিছু কিছু টেস্ট বছরে একবার, কয়েকটি ছ-মাস অন্তর, আবার কোনও কোনওটা তিন মাস অন্তর করতে হবে৷ সাধারণত তিন মাস অন্তর করলে ভালো হয়৷ কিন্তু আপনার যদি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে অর্থাৎ এইচবিএওয়ানসি-এর মাত্রা সাতের নীচে থাকে তাহলে ছয় মাস অন্তর মনিটরিং করলেও চলবে৷ অন্যথায় তিন মাস অন্তর মনিটরিং করলে ডায়াবেটিসজনিত কারণে হার্ট, নার্ভ, কিডনি, চোখের সমস্যা এড়িয়ে চলতে পারবেন। শুধু তাই নয়, সচেতনভাবে আলোচ্য নিয়মগুলি মেনে চললে ভবিষ্যতে অঙ্গহানি হওয়ার সম্ভাবনাও অনেকটাই কমে যাবে৷

Skip to content