মঙ্গলবার ৩ ডিসেম্বর, ২০২৪


ছবি প্রতীকী, সংশ্লিষ্ট সংস্থার সৌজন্যে।

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় ডায়াবেটিসে শরীরচর্চার প্রয়োজনীয়তা৷ একটা কথা আমরা ডায়াবেটিস রোগীদের বলে থাকি যে, আমাদের রোজ ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট পর্যন্ত হাঁটতে হবে৷ আমরা সব সময়ই বলি যে, না হেঁটে সুগার নিয়ন্ত্রণ করা, না পড়ে পরীক্ষা দেওয়ার মতো ব্যাপার৷ অনেকে আবার শারীরিক অসুস্থতার কারণে অনেক সময় হাঁটাহাঁটি করতে পারেন না৷ বিশেষত বয়স্ক লোকেরা, যাঁদের হাঁটুর সমস্যা আছে বা হাঁটতে গেলে কোমরে ব্যথা লাগে বা অনেক প্রতিবন্ধকতা আছে বাইরে বেরোনোর৷ কোভিডের সময় তাঁদেরকে আমরা বলেছি, আপনারা বাড়ির মধ্যেই সমতল জায়গায় প্রত্যেকবার খাওয়ার পরে ১৫-২০ মিনিট ধরে হাঁটাহাঁটি করুন৷ কেন না খাবার পর সঙ্গে সঙ্গে বিশ্রাম না নিয়ে একটু হাঁটাহাঁটি করলে খাবার হজম ভালো হবে। সঙ্গে ডায়াবেটিসও নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷

ডায়াবেটিসে কেন শরীরচর্চা খুব জরুরি?

আমরা সাধারণত তিন ধরনের খাবার খাই—
কার্বোহাইড্রেট
প্রোটিন
ফ্যাট৷

প্রোটিন নিয়ে আমাদের কোনও সমস্যা নেই৷ প্রোটিন থেকে ডায়াবেটিসে ব্লাড সুগারের মাত্রা বাড়তে পারে না৷ ফ্যাট থেকে ডায়াবেটিসের ব্লাড সুগার বাড়ে না ঠিকই কিন্তু টোটাল ক্যালোরির ১০ শতাংশের বেশি খেলে আমাদের শরীরে মেদ জমতে পারে এবং তাতে করে আমাদের শরীরের যে অবশিষ্ট ইনসুলিনটা আছে সেটা কাজ করতে পারবে না৷ ফলে ব্লাড সুগার বেড়ে যাবে৷ কিন্তু ব্লাড সুগার আমাদের শরীরে সরাসরি বাড়ায় কার্বোহাইড্রেট বা মিষ্টি জাতীয় পদার্থ থেকে৷ চিকিৎসরা বলেন যে, আপনি কার্বোহাইড্রেট তখনই খাবেন যখন আপনি শরীরচর্চা করেন, নিয়মিত কঠোর পরিশ্রম করে জীবন যাপন করেন অর্থাৎ নিয়মিত হাঁটাচলা করেন, বাজারে যান বা অন্যান্য কাজ করেন৷ যদি নিয়মিত শরীরচর্চা না করেন তাহলে কিন্তু আপনাকে কার্বোহাইড্রেট খাওয়াটা কমাতে হবে৷ তার কারণ কার্বোহাইড্রেট আমরা খাই শক্তি বা এনার্জি পাওয়ার জন্য৷ কার্বোহাইড্রেট আমাদের প্রয়োজনীয় শক্তির উৎস৷ শরীরে যে মাংসপেশিগুলো আছে সেগুলো কাজ করার জন্য ব্লাড সুগার থেকে গ্লুকোজ দ্রুত টেনে নেয়৷

ডায়াবেটিস রোগীদের সঙ্গে সাধারণ মানুষের পার্থক্য

আমরা যখন শরীরচর্চা বা হাঁটাহাঁটি বা সাঁতার কাটছি, জিমে গিয়ে ওয়েট লিফটিং বা সাইকেলিং করছি তখন মাশল যে রক্ত থেকে গ্লুকোজ টানছে সেটা কিন্তু ইনসুলিনের ওপর নির্ভরশীল নয়৷ অর্থাৎ ইনসুলিন না থাকলেও আমাদের মাংসপেশিতে গ্লুকোজ ঢুকবে। কিন্তু আমরা যখন বিশ্রামে থাকি বা যখন কিছু করছি না, তখন একজন সাধারণ লোক যাঁদের শরীরে ডায়াবেটিস নেই তাঁর যেহেতু শরীরে ইনসুলিন আছে সেহেতু তা রক্তে গ্লুকোজকে মাংসপেশিতে ঢোকাতে সাহায্য করে৷ যেটা ডায়াবেটিস রোগীদের হবে না৷ অর্থাৎ ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে ইনসুলিন কম আছে বা নেই বলে যখন বিশ্রাম নিচ্ছে তখন কিন্তু মাংসপেশিতে গ্লুকোজ ঢুকবে না৷ ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়েই চলবে৷ এই কারণেই আমরা বলি যে, নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে৷ আপনি অনেক ভাবেই শরীরচর্চা করতে পারেন৷ নিয়মিত আধঘণ্টা সাঁতার কাটতে পারেন৷ সাঁতার ডায়াবেটিসের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যায়াম৷ অনেকে যোগ ব্যায়াম করেন, যোগা করেন৷ যোগ ব্যায়ামে বডি ফিটনেস বাড়ে কিন্তু ব্লাড সুগার কমাতে অতটা সাহায্য করবে না যতটা করবে জগিং করলে বা দৌড়লে৷ আপনার বয়স যদি কম হয় তাহলে আপনি জিমে গিয়ে বিভিন্নভাবে শরীরচর্চা করতে পারেন৷ বয়স্ক মানুষ বা যাঁদের হাঁটুর সমস্যার ফলে দৌড়তে পারেন না, তাঁরা যে তিনবার খাবার খান, সকালে টিফিন, দুপুরবেলা খাওয়া ও রাত্রিবেলা খাওয়ার পরে সমতল জায়গায় হাঁটলে হাঁটুর ওপর চাপ পড়বে না৷ আমাদের সমতলে হাঁটতে কোনও অসুবিধা নেই৷ দরকার হলে নিকাপ পরে নিতে পারেন৷ এছাড়াও যাঁরা নিয়মিত হাঁটতে পারছেন না যখন বসে থাকেন তখন হাতের বা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ নাড়াচাড়া করবেন৷ এইগুলো আমরা করতে বলি কারণ মাংসপেশিকে যত আপনি সচল রাখবেন বা মাংসপেশির কাজ বাড়াতে পারবেন তত মাংসপেশি আপনার রক্ত থেকে সুগারটাকে কেড়ে নিয়ে মাংসপেশির নিজের খাবার হিসেবে ব্যবহার করবে৷ ফলে আপনার রক্তে সুগার নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷ সুতরাং বুঝতে পারছেন, বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়ে বোঝনোর চেষ্টা করলাম ডায়াবেটিসে নিয়মিত শরীরচর্চা করা কেন জরুরি৷ তাই চেষ্টা করবেন নিয়মিত শরীরচর্চা করার৷ তাহলেই ব্লাড সুগার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকবে৷


Skip to content